যোগদা সৎসঙ্গ সোসাইটি অফ ইন্ডিয়া/সেল্ফ-রিয়লাইজেশন ফেলোশিপ-এর বোর্ড অফ ডিরেক্টরস আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছেন, মৃণালিনী মাতা যিনি ২০১১-এর জানুয়ারি থেকে গত মাসে দেহাবসানের আগে পর্যন্ত এই দায়িত্ব পালন করে এসেছেন তাঁরই উত্তরাধিকারী রূপে স্বামী চিদানন্দ গিরি যোগদা সৎসঙ্গ সোসাইটি অফ ইন্ডিয়া/সেল্ফ-রিয়লাইজেশন ফেলোশিপের অধ্যক্ষ এবং আধ্যাত্মিক প্রধান নির্বাচিত হয়েছেন। এসআরএফ বোর্ড অফ ডিরেক্টরদের সর্বসম্মত ভোটের মাধ্যমে ২০১৭-র ৩০শে আগস্ট বুধবার তাঁকে নিযুক্ত করা হয়েছে।
২০১০-এ দেহত্যাগের আগে প্রয়াত এসআরএফ অধ্যক্ষ শ্রী দয়ামাতা মৃণালিনী মাতাকে দৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে জানিয়েছিলেন যে মৃণালিনী মাতার উত্তরাধিকারী রূপে স্বামী চিদানন্দই ওয়াইএসএস/এসআরএফ-এর অধ্যক্ষ এবং আধ্যাত্মিক প্রধান হবেন। মৃণালিনী মাতা ৩রা আগস্ট, ২০১৭-তে তাঁর দেহাবসানের কিছু মাস আগে এ বিষয়টি অনুমোদন করেন এবং দয়ামাতার সুপারিশের সঙ্গে তিনি যে সহমত এ বিষয়ে বোর্ড অফ ডিরেক্টরস-এর কাছে নিশ্চিত করেন।
স্বামী চিদানন্দ গত ৪০বছর ধরে সেল্ফ-রিয়লাইজেশন ফেলোশিপের একজন সন্ন্যাসী এবং গত আট বছর ধরে এসআরএফ এবং ওয়াইএসএস বোর্ডস অফ ডিরেক্টরস-এর একজন সদস্য। তাঁর সন্ন্যাস জীবনের শুরু থেকে তিনি শ্রী মৃণালিনী মাতার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ভাবে কাজ করে এসেছেন, শ্রীশ্রী পরমহংস যোগানন্দের রচনা ও অন্য এসআরএফ প্রকাশনার সম্পাদনা এবং প্রকাশের কাজে সহায়তা করে তাঁর প্রজ্ঞা নিঃসৃত গুরুর ঐক্যে শিক্ষা লাভ করেছেন।
ঈশ্বরের সেবা এবং এসআরএফ-এর কাজে বোধোদয়
১৯৫৩-তে অ্যানাপোলিস, মেরিল্যান্ড-এ জন্মগ্রহণ করে স্বামী চিদানন্দ ১৯৭০-এর শুরুর দিকে, তিনি যখন স্যান ডিয়েগোতে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান ও দর্শনের ছাত্র ছিলেন তখনই প্রথমবার শ্রীশ্রী পরমহংস যোগানন্দের শিক্ষা এবং এনসিনিটাসে সেল্ফ-রিয়লাইজেশন ফেলোশিপের সংস্পর্শে আসেন। ভারতবর্ষের আধ্যাত্মিকতার প্রতি বহু দিনের অনুভূত আগ্রহের দ্বারা আকর্ষিত হয়ে তিনি এনসিনিটাসে এসআরএফ-এর আশ্রম কেন্দ্রে আসেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের খুব কাছেই উত্তরদিকের এই স্থানটি উপকূল অঞ্চলে বসবাসকারী সম্প্রদায় এবং বহু ছাত্রদের কাছে এক বিশেষ পরিচিত স্থান ছিল।
কিছু মাস পরে অটোবায়োগ্রাফি অফ এ য়োগির একটি বই তাঁর কাছে এসে পৌঁছোয় এবং তৎক্ষণাৎ তিনি এর পাতায় পাতায় বর্ণিত মহাজ্ঞান এবং দিব্য চেতনার দ্বারা বিমোহিত হন। তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ বছরে তিনি সেল্ফ-রিয়লাইজেশন ফেলোশিপ লেসন্স — এর জন্য নাম লেখান এবং এনসিনিটাসে এসআরএফ-এর বিভিন্ন কাজে অংশগ্রহণ করতে শুরু করেন। তিনি স্বামী আনন্দময়ের বক্তৃতার দ্বারা গভীরভাবে অনুপ্রাণিত হন, যিনি সেই সময় ওখানকার প্রধান সচিব ছিলেন এবং স্বামী আনন্দময়ের ব্যক্তিগত উপদেশ দ্বারাও উপকৃত হয়েছিলেন। সেই পবিত্র পরিবেশে যেখানে পরমহংসজির স্পন্দন সবসময় উদ্ভাসিত হচ্ছে, তিনি সেখানে আবাসিক সন্ন্যাসী ও সন্ন্যাসিনী দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন এবং প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই তাঁর মধ্যে একজন সন্ন্যাসী শিষ্য রূপে ঈশ্বর সাধনায় এবং শ্রীশ্রী পরমহংস যোগানন্দজির কাজে জীবন সম্পূর্ণরূপে সমর্পণ করার আকাঙ্ক্ষা জাগরিত হয়েছিল।
স্বামী চিদানন্দ ১৯শে নভেম্বর ১৯৭৭-এ একজন সন্ন্যাস প্রার্থী হিসেবে এনসিনিটাস আশ্রমে প্রবেশ করেন এবং নবীন সন্ন্যাসীদের ভারপ্রাপ্ত প্রশিক্ষক স্বামী প্রেমময়ের কঠোর অথচ স্নেহময় সাহচর্যে দেড় বছর অতিবাহিত করেন। স্বামী প্রেমময়ই শ্রী মৃণালিনী মাতাকে প্রথম এসআরএফ-এর সম্পাদকীয় বিভাগে এই যুবক সন্ন্যাসীকে গ্রহণ করার পরামর্শ দেন। ১৯৭৯-র এপ্রিল মাসে তাঁর সন্ন্যাস প্রশিক্ষণ সম্পূর্ণ করার পর স্বামী চিদানন্দকে মাউন্ট ওয়াশিংটনে এসআরএফ-এর আন্তর্জাতিক সদর দপ্তরে স্থানান্তরিত করা হয় এবং অবিলম্বে প্রকাশনা বিভাগে সম্পাদনার দায়িত্বে নিযুক্ত করা হয় মৃণালিনী মাতা এবং তাঁর প্রধান সহ সম্পাদক শ্রী সহজ মাতার অধীনে, যাদের দুজনকেই গুরুদেব ব্যক্তিগতভাবে তাঁর রচনা ও বক্তৃতা ভবিষ্যতে প্রকাশের জন্য সম্পাদনা করার প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন।
১৯৯৬-তে সহজ মাতার দেহাবসানের অব্যবহিত পরে তৎকালীন অধ্যক্ষ শ্রী দয়ামাতা তাঁকে ওয়াইএসএস/এসআরএফ ইন্টারন্যাশনাল পাবলিকেশন কাউন্সিলে নিযুক্ত করেন যেখানে ২০১০-এ দয়ামাতাজির দেহাবসান পর্যন্ত তিনি দয়ামাতা এবং মৃণালিনী মাতাকে সাহায্য করেন। এই সময় তিনি বরিষ্ঠ এই দুজন সাক্ষাৎ শিষ্যকে তাঁদের বহু কাজের প্রস্তুতি ও প্রকাশনাতে সহায়তা করেন। এই কাজের মধ্যে ছিল পরমহংসজির বৃহদায়তন আধ্যাত্মিক ভাষ্য (গড টকস্ উইথ অর্জুন: দ্য ভগবদ গীতা ও দ্য সেকেন্ড কামিং অফ ক্রাইস্ট: দ্য রেসারেকশন অফ দ্য ক্রাইস্ট উইদিন ইউ) এছাড়াও ১৯৮০ হতে অদ্যাবধি প্রকাশিত হওয়া অন্যান্য এসআরএফ প্রকাশনা। বছরের পর বছর ধরে দয়ামাতা, মৃণালিনী মাতা এবং সহজ মাতার সান্নিধ্যে প্রগতিমূলক নিবিড় প্রশিক্ষণ পাওয়ার পর মৃণালিনী মাতার দেহান্তে তিনি ওয়াইএসএস/এসআরএফ প্রকাশনার প্রধান সম্পাদক রূপে তাঁর উত্তরাধিকারী মনোনীত হন।
১৯৯৭-তে শ্রী দয়ামাতা স্বামী চিদানন্দকে সন্ন্যাসব্রতের শপথ গ্রহণ করান। তাঁর সন্ন্যাস নাম চিদানন্দের অর্থ হল “অনন্ত দিব্য চেতনার (চিৎ) মধ্য দিয়ে আনন্দ”। সেল্ফ-রিয়লাইজেশন ফেলোশিপের একজন স্বীকৃত সন্ন্যাসী রূপে তিনি ইউনাইটেড স্টেটস, কানাডা, ইউরোপ এবং ভারতে তাঁর বক্তৃতা সফর এবং নিভৃতাবাস কর্মসূচি তৎসহ লস অ্যাঞ্জেলসে এসআরএফ বিশ্ব সমাবর্তন অনুষ্ঠানে তিনি পরমহংস যোগানন্দজির শিক্ষার প্রচার করেন। ২০০৯-তে শ্রী দয়ামাতা তাঁকে ওয়াইএসএস এবং এসআরএফ বোর্ড অফ ডিরেক্টরস-এর একজন সদস্য নিযুক্ত করেন এবং তিনি অধ্যক্ষের নির্দেশনার অধীনে এসআরএফ-এর বিভিন্ন কার্যাবলী দেখাশোনার জন্য ম্যানেজমেন্ট কমিটির একজন সদস্য হয়ে বহু বছর দায়িত্ব পালন করেছেন।
“আমাদের আত্মার পরম প্রিয়রূপে একত্রে ঈশ্বর অন্বেষণ…”
নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর ওয়াইএসএস/এসআরএফ সন্ন্যাসীদের স্বামী চিদানন্দজি বলেছিলেন: “বিনীতভাবে জানাই গুরুদেব পরমহংস যোগানন্দই চিরকাল এই প্রতিষ্ঠানের শীর্ষে থাকবেন এই চেতনা সঙ্গে নিয়ে আমি আপনাদের সকলের কাছে প্রার্থনা ও সাহায্যের অনুরোধ জানাচ্ছি যাতে আমাদের প্রিয় দয়ামাতা এবং মৃণালিনী মাতার ইচ্ছা পূর্ণ করতে তাঁদের পদচিহ্ন ধরে এগিয়ে যেতে পারি। গুরুদেবের প্রেমের বিশুদ্ধ এক নিমিত্ত হওয়ার জন্য তাঁদের অঙ্গীকার — তাঁর ইচ্ছা ও নির্দেশের সঙ্গে মিলিত প্রতিটি চিন্তা, সিদ্ধান্ত ও কর্মের জন্য তাঁদের যে ঈপ্সা সেই দিব্য উদাহরণ আমার সমগ্র আশ্রম জীবনের অনুপ্রেরণা; পবিত্র দায়িত্ব পালনের এক অনুভূতি নিয়ে আপনাদের সকলের সাহায্য, প্রার্থনা, সুনাম এবং দিব্য সখ্যতার আশ্বাসে আমি আগামী সময়ে ঈশ্বর এবং গুরুর মহান কার্যের সেবাদান করার জন্য সানন্দে প্রতীক্ষা করছি।
“আপনারা প্রত্যেকে তাঁর নির্বাচিত শিষ্য, আমি আপনাদের পদধূলি নিয়ে স্বীকার করছি যে এটি শুধুমাত্র আমাদের গুরুদেবের চেলাদের এক ঐক্যবদ্ধ আধ্যাত্মিক পরিবার যেখানে আমরা একসঙ্গে ওয়াইএসএস/এসআরএফ-এর মহান কাজকে দিব্য প্রেম, আনন্দ এবং আত্মনিবেদনের ভাব দ্বারা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি—আমাদের গুরু যেভাবে আমাদের সকলকে নির্দেশ দিয়েছেন সেই ভাব নিয়ে ঈশ্বরকে আমাদের আত্মার পরম প্রিয়রূপে অন্বেষণ করা এবং তিনি যা ভবিষ্যতবাণী করেছিলেন আগামী দিনে এইটিই তাঁর প্রতিষ্ঠানের প্রাণ ও শক্তি হবে। জয় গুরু! জয় মা!”
বিশ্বব্যাপী ওয়াইএসএস/এসআরএফ-এর আধ্যাত্মিক পরিবারকে, স্বামী চিদানন্দ নিম্নলিখিত বার্তাটি দিতে চেয়েছেন:
“প্রিয়জনেরা, ঈশ্বর এবং গুরুর প্রেম সঙ্গে নিয়ে আমি আপনাদের সকলকে স্বাগত জানাই এবং আমাদের সকলের ওপর তাঁদের অবিচ্ছিন্ন আশীর্বাদ প্রার্থনা করি যেন আমরা এই আশীর্বাদধন্য ক্রিয়াযোগ ধ্যানের পথে চলতে ও পরমহংস যোগানন্দজি আনীত দিব্যজগতের সঙ্গে সুর মিলিয়ে জীবনযাপন করতে পারি। তাঁর নামে আমি বিনীতভাবে কৃতজ্ঞ যে, আমি আপনাদের সকলকে, ওয়াইএসএস/এসআরএফ আশ্রমের সকল সন্ন্যাসী ও সন্ন্যাসিনীদের সেবা করার সুযোগ পেলাম। বিশ্বব্যাপী ঈশ্বর অন্বেষী এক গোষ্ঠী হয়ে — সাধারণ ভক্তের বা সন্ন্যাসের পথ যাই হোক না কেন — আসুন আমরা সবাই এই শিক্ষার আধ্যাত্মিক আশীর্বাদের প্রতি কৃতজ্ঞতায় এবং আমাদের নিজেদের সাধনা এবং ঈশ্বর ও মহাত্মাদের সঙ্গে অন্তরের সংযোগ গভীরতর করার সংকল্প নিয়ে ঐক্যবদ্ধ হই। আপনারা প্রত্যেকে তাঁদের নিরবিচ্ছিন্ন আশীর্বাদ অনুভব করুন। জয় গুরু!”