শ্রীশ্রী পরমহংস যোগানন্দের রচনা থেকে উদ্ধৃতাংশ
প্রকৃত সাফল্য
সাফল্য কোনো সরল ব্যাপার নয়; এটি শুধুমাত্র তোমার অর্থের পরিমাণ ও পার্থিব সম্পত্তি দ্বারা নির্ধারিত হয় না। সাফল্যের অর্থ আরও অনেক গভীর। অন্তরের শান্তি ও মানসিক নিয়ন্ত্রণ সবরকম পরিস্থিতিতে তোমাকে কতটা আনন্দিত করে সেটাই এর পরিমাপ। এটাই প্রকৃত সাফল্য।
তোমার সাফল্য ও সুখের গোপন রহস্য তোমার অন্তরেই আছে। অন্তরে না খুঁজে শুধু বাইরে সাফল্য ও সমৃদ্ধি লাভ করলেও তুমি প্রকৃত সফল নও। একজন অসুখী কোটিপতি সফল নন। আমি এটা বলছি না যে লক্ষ লক্ষ ডলার থাকলে তুমি সফল হতে পারবে না। তুমি ধনী হও বা নির্ধন, জীবনে আনন্দ থাকলে তুমি প্রকৃতই সফল।
উদ্যমী ইচ্ছাশক্তির ব্যবহার
তুমি অসম্ভব মনে না করলে সবই সম্ভব।
নশ্বর জীবের সীমাবদ্ধতা তোমার থাকলেও ঈশ্বরের সন্তান রূপে তুমি অসীম….ঈশ্বরে মনোযোগ কেন্দ্রীভূত রাখলে যে কোনো ক্ষেত্রে প্রয়োগের উপযোগী সব শক্তিই তোমার করায়ত্ত্ব হবে।
ইচ্ছা তোমার মধ্যে ঈশ্বরের প্রতিচ্ছবির এক সাধন। প্রকৃতির সকল শক্তির নিয়ন্ত্রক তাঁর অসীম শক্তি তোমার ইচ্ছার মধ্যে নিহিত। তুমি যেমন তাঁর প্রতিরূপ, সেই শক্তিও তেমন তোমার যে কোনো প্রত্যাশা পূরণে সমর্থ।
ভালো কাজের জন্য মনস্থ করলে, উদ্যমী ইচ্ছাশক্তির ব্যবহারে তুমি তা সুসম্পন্ন করতে পারবে। পরিস্থিতি যেমনই হোক না কেন, তুমি ক্রমাগত চেষ্টা করতে থাকলে, ঈশ্বর তোমার ইচ্ছাকে পুরস্কৃত করার যথাযথ পথ তৈরি করে দেবেন। জিশু এই সত্যটাই উল্লেখ করে বলেছিলেন: “তোমার বিশ্বাস সন্দেহাতীত হলে…পর্বতকে স্থানচ্যুত হয়ে সমুদ্রে নিক্ষিপ্ত হতে বললে সেটাই হবে।” অনাকাঙ্খিত কিছু হলেও, তুমি ক্রমাগত ইচ্ছাশক্তির প্রয়োগ করতে থাকলে, এতে সাফল্য আসবে ও নিরাময় হবে আর অন্যদের সাহায্য করার ক্ষমতা তৈরি হবে এবং সর্বোপরি ঈশ্বরের সাথে একত্ব প্রতিষ্ঠিত হবে।
নশ্বর মানুষের মগজ “নেতিবাচক” ভাবনাপূর্ণ। বিশেষ চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ও অভ্যাস বিশিষ্ট একটি পরিবারে জন্মগ্রহণ করে, এর দ্বারা প্রভাবিত হয়ে সে ভাবে বিশেষ কিছু কাজ সে করতে পারবে না; যেমন: বেশি হাঁটতে পারবে না, এটা খেতে পারবে না, ওটা সহ্য করতে পারবে না ইত্যাদি। ঐ সকল “নঞর্থক” ভাবনা ছাই করে দিতে হবে। আর তুমি যা চাও তা সব অর্জন করার শক্তি তোমার মধ্যেই নিহিত আছে, ইচ্ছাতেই সে শক্তি নিহিত থাকে।
উদ্যমী ইচ্ছাশক্তির সঙ্গে তুমি নির্দিষ্ট সংকল্পে নিবিষ্ট থাকলে, শেষপর্যন্ত তা সুস্পষ্ট বাহ্যিক রূপ ধারণ করে।
উদ্যমী ইচ্ছাশক্তির সাথে সংকল্পে থাকার অর্থ যতক্ষণ না ক্রিয়াশীল শক্তি জাগরিত হচ্ছে ততক্ষণ তাকে ধারণ করে থাকা। ইচ্ছাশক্তির সাহায্যে একটা সংকল্প ক্রিয়াশীল হলে তা তোমার সৃষ্ট মানসিক প্রতিলিপি অনুযায়ী উদ্ভাসিত হতে পারে।
কিভাবে তোমার ইচ্ছা বিকশিত হতে পারে? তোমার ধারণায় তুমি সম্পন্ন করতে পারবে না এমন একটা বিষয় বেছে নাও, তারপর সর্বশক্তি দিয়ে ঐ একটা কাজ করতে চেষ্টা করো। সাফল্য পাবার পরে আরও বড়ো কিছু চেষ্টা করো আর এইভাবে তোমার ইচ্ছাশক্তির অভ্যাস চালিয়ে যাও। তোমার বাধা বেশি কঠিন হলে গভীরভাবে প্রার্থনা করো: “প্রভু, আমার সব বাধা জয় করার শক্তি দাও।” তুমি যাই হও বা যেই হও, অবশ্যই তোমার ইচ্ছাশক্তি ব্যবহার করো। অবশ্যই তোমার মন তৈরি করে নিতে হবে। কর্মে ও ধ্যানে সর্বত্রই এই ইচ্ছাশক্তি ব্যবহার করো।
তোমার নিজের মনেই সাফল্য বা ব্যর্থতা নির্ধারিত হয়। এমনকি সমাজের নেতিবাচক মতামত সত্ত্বেও তোমাকে প্রতিকূলতার মধ্যে ফেলে রাখা যাবে না এমন প্রত্যয় তোমার ঈশ্বরপ্রদত্ত সর্বজয়ী ইচ্ছা দ্বারা প্রতিষ্ঠিত করতে পারলে, তুমি উপলব্ধি করতে পারবে এক গুপ্ত দৈব শক্তি তোমার মধ্যে আসছে; আর দেখবে সেই প্রত্যয় ও শক্তির আকর্ষণ তোমার জন্য নতুন এক পথ উন্মুক্ত করে দিচ্ছে।
ব্যর্থতায় সদর্থক আচরণ
ব্যর্থতার সময়কালই সাফল্যের বীজবপনের প্রকৃষ্ট সময়। পরিস্থিতির ঘাত-প্রতিঘাতে তুমি ক্ষতবিক্ষত হলেও মাথা উঁচু করে থাকো। যতবারই তুমি অসফল হও না কেন, সবসময় আর একবার চেষ্টা করো। যখন তুমি মনে করছ যে আর লড়তে পারবে না অথবা তোমার সর্বশক্তি দিয়ে চেষ্টা করে ফেলেছ, তবুও তোমার প্রচেষ্টা সাফল্যের শিরোপা না পাওয়া পর্যন্ত সংগ্রাম করো।
জয়ের মনস্তত্ব কিভাবে ব্যবহার করতে হয় শেখো। অনেকে উপদেশ দেন, “ব্যর্থতার কথা ভুলে যাও।” তবে, শুধুমাত্র এতে কাজ হয় না। প্রথমত, তোমার ব্যর্থতা ও তার কারণ বিশ্লেষণ করো, অভিজ্ঞতা থেকে উপকৃত হও আর তারপর এই ব্যাপারে সব ভাবনা সরিয়ে ফেলো। বার বার অসফল হয়েও যে সচেষ্ট থাকে, যে অন্তরে অপরাজেয় থাকে, সেই প্রকৃতপক্ষে সফল।
জীবনে অন্ধকার ঘনিয়ে আসতে পারে, দুঃসময় আসতে পারে, অব্যবহারে সুযোগ হারিয়ে যেতে পারে — তবুও কখনই ভাববে না, “আমি শেষ হয়ে গেলাম, ঈশ্বর আমায় ত্যাগ করেছেন।” এরকম ধরনের মানুষের জন্য কেউ বা কি করতে পারে? পরিবার তোমায় ত্যাগ করতে পারে; সৌভাগ্য মরুভূমি মনে হতে পারে; মানুষ ও প্রকৃতির সমস্ত শক্তি তোমার বিরুদ্ধে দানা বাঁধতে পারে; তবুও তোমার মধ্যে দৈব উদ্যোগের উৎকর্ষের কারণে অতীতে তোমার নিজ ভুল কর্মের কারণে সৃষ্ট ভাগ্যের প্রত্যেক আক্রমণ প্রতিহত করে বিজয়সুখ পেতে পারবে।
যতবারই তুমি অসফল হও না কেন, চেষ্টা চালিয়ে যাও। যাই ঘটুক না কেন, “পৃথিবী দুভাগ হয়ে গেলেও আমি আমার যথাসাধ্য করে যাবো,” — এমন অপরিবর্তনীয় দৃঢ়সংকল্প তোমার থাকলে, তুমি উদ্যমী ইচ্ছাশক্তি ব্যবহার করছ আর সফল হবে। এই উদ্যমী ইচ্ছাশক্তিই কাউকে ধনী বানায়, কাউকে শক্তিশালী আর কাউকে ঋষি।
মনঃসংযোগ — সাফল্যের চাবিকাঠি
একাগ্রতার অভাবই জীবনের অসাফল্যের মূল কারণ। মনঃসংযোগ এক সন্ধানী আলোর মতো; অনেক বড়ো এলাকা নিয়ে এর রশ্মি ছড়িয়ে থাকলে নির্দিষ্ট কোনো বস্তুতে কেন্দ্রীভূত করার ক্ষমতা দুর্বল হয়ে যায়, তবে একটা সময়ে একটা জিনিসের ওপর কেন্দ্রীভূত করলে শক্তিশালী হয়। সব মহান ব্যক্তিরা একাগ্র মানুষ। তাঁরা একটা সময়ে তাঁদের সম্পূর্ণ মন একটা বিষয়েই রাখেন।
প্রত্যেকেরই মনঃসংযোগের বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি জানা উচিত (যোগদা সৎসঙ্গ পাঠমালা-তে শেখানো হয়) যার দ্বারা সে চিত্তবিক্ষেপের বিষয় থেকে তার একাগ্রতা সরিয়ে নিয়ে নির্দিষ্ট সময়ে একটি মাত্র বিষয়ের ওপর কেন্দ্রীভূত করতে পারে। মনঃসংযোগের শক্তির সাহায্যে মানুষ মনের অপ্রকাশিত শক্তির ব্যবহার করে তার অভীষ্ট বিষয় লাভ করতে পারে আর ব্যর্থতার প্রবেশের সব দ্বার রুদ্ধ করতে পারে।
কেন্দ্রীভূত শক্তির সঙ্গে আমাদের সন্নিহিত সমস্যা বা কর্তব্যের ওপর নজর দেওয়া এবং সুনিপুনভাবে তাকে কার্যকর করা উচিত। এটাই আমাদের জীবনদর্শন হওয়া বাঞ্ছনীয়।
বেশিরভাগ মানুষই উদাসীনভাবে সব কাজকর্ম করে। তাদের মনঃসংযোগের মাত্র এক দশমাংশ তারা ব্যবহার করে। তাই তাদের সাফল্যে পৌঁছোবার শক্তি থাকে না….সবকিছু মনোযোগের শক্তি দিয়ে [করবে]। ধ্যানের মাধ্যমেই এই শক্তি পূর্ণমাত্রায় অর্জন সম্ভব। ঈশ্বরে নিবেশিত শক্তির ব্যবহার করলে তুমি তা সর্বত্র প্রয়োগ করে সফল হতে পারবে।
সৃজনশীলতা
পরমাত্মার সৃজনশীল শক্তির সাথে নিজেকে সমন্বিত করো। অসীম চৈতন্যের সাথে তুমি সংযুক্ত থাকবে, যা তোমাকে সমস্ত সমস্যা সমাধানে পথনির্দেশ করবে। তোমার সত্তার উদ্যমী উৎস থেকে শক্তির অবিচ্ছিন্ন প্রবাহিত ধারায় তুমি যে কোনও ক্ষেত্রে সৃজনশীলতার সাথে কার্য সমাধা করতে পারবে।
নিজেকে প্রশ্ন করো: “আর কেউ কখনও করেনি এমন কোনও প্রচেষ্টা কি আমি করেছি?” এই উদ্যোগ নেবার জন্য এটাই হল ভিত্তি। এখনো পর্যন্ত এমন না ভেবে থাকলে, তুমিও আরও শত শত মানুষের দলে যারা ভাবে যেভাবে তারা চলছে তার থেকে আলাদা কোনো কিছু করার ক্ষমতা তাদের নেই। বলতে পারো তারা স্বপ্নচারী; অবচেতন মন থেকে আসা যুক্তি তাদের এক অশ্বশক্তি ক্ষমতাযুক্ত অল্পচেতন মানুষ করে রেখেছে।
তোমার জীবন তন্দ্রাচ্ছন্ন এক ঘোরের মধ্যে দিয়ে অতিবাহিত হলে, নিজেকে জাগিয়ে তুলতে প্রত্যয়ের সাথে বলো: “আমার মধ্যে মানবজাতির শ্রেষ্ঠ গুণ — কর্মোদ্যোগ আছে। প্রত্যেক মানুষের মধ্যেই কিছু শক্তিস্ফুলিঙ্গ থাকে যার দ্বারা সে পূর্বে সৃষ্টি হয়নি এমন নতুন কিছু সৃষ্টি করতে সক্ষম। তবুও দেখি নিজেকে প্রকৃতির রূপে সম্মোহিত হতে দিলে কত সহজে বিশ্বব্যাপী ছড়ানো সীমাবদ্ধ নশ্বর বোধে আমি বিভ্রান্ত হয়ে যেতে পারি!
উদ্যোগ কী? তোমার মধ্যে থাকা অসীম সৃষ্টিকর্তার এক স্ফুলিঙ্গ, সৃজনশীল কর্মশক্তি। পূর্বে অনাবিষ্কৃত এমন অনেক কিছু সৃষ্টি করার ক্ষমতা এটা তোমাকে দিতে পারে। এটা তোমাকে নতুন ধারায় কিছু করার প্রেরণা দেয়। উদ্যোগী মানুষের সাধন উল্কার মতো চমৎকার হতে পারে। আপাতদৃষ্টিতে যা ছিল না এমন কিছু সৃষ্টি করে তিনি প্রদর্শন করেন যা অসম্ভব মনে হয় পরমাত্মার মহান সৃষ্টিশক্তির প্রয়োগে তা সম্ভব হতে পারে।
যে সৃষ্টি করে, সে পরিস্থিতি, ভাগ্য, এমনকি দেবতাদেরও দোষারোপ করে সুযোগের জন্য অপেক্ষা করে না। ইচ্ছাশক্তি, প্রচেষ্টা ও অনুসন্ধানী বিচারবুদ্ধির জাদুদণ্ড দিয়ে সে সুযোগ আয়ত্তে আনে বা তৈরি করে নেয়।
কোনো তাৎপর্যপূর্ণ পরিকল্পনা শুরু করার আগে শান্তভাবে বসে ইন্দ্রিয় ও চিন্তাকে নিশ্চল করে গভীর ধ্যানমগ্ন হও। তবেই তুমি পরমপিতার সুমহান সৃজনশীল শক্তির দ্বারা পরিচালিত হতে পারবে।
তুমি কিছু সৃষ্টি করতে চাইলে বাইরের উৎসের ওপর নির্ভর করবে না; গভীরে ডুব দিয়ে অনন্ত উৎসের সন্ধান করো। ব্যবসায় সাফল্যের সবরকম পদ্ধতি, সবরকম আবিষ্কার, সংগীতের সবরকম অনুরণন এবং সমস্ত প্রেরণাদায়ী ভাবনা ও রচনা ঈশ্বরের বিবরণীতে লিপিবদ্ধ।
সর্বাঙ্গীন সাফল্যের সৃষ্টি

কোনো মহতি গুরু কখনই তোমাকে অমনযোগী হতে উপদেশ দেন না; তাঁরা তোমাকে বিচার-বিবেচনাপূর্ণ হতে শেখান। শরীরের জন্য খাদ্য ও পোশাক জোগাতে তোমাকে অবশ্যই কাজ করতে হবে। একটা কর্তব্য পালন করতে গিয়ে অন্য একটা কর্তব্য অস্বীকার করলে সঠিক কর্তব্যপালন হয় না। হাজার হাজার ব্যবসায়ী সম্পদ সংগ্রহের ব্যস্ততায় ভুলে যায় যে তারা হৃদরোগেরও সৃষ্টি করছে! সমৃদ্ধির কর্তব্যপালন করতে গিয়ে শরীরের প্রতি কর্তব্য অবহেলা করলে, এটা কর্তব্যপালন হল না। সবারই একটা সামঞ্জস্যপূর্ণ উপায় বিকশিত করতে হবে। বুদ্ধি ক্ষুদ্র হলে অপূর্ব শরীর গঠনে বিশেষ নজর দেওয়া অনর্থক। মনেরও উন্নতিসাধন আবশ্যক। অসাধারণ স্বাস্থ্য, সমৃদ্ধি ও প্রজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও তুমি সুখী না হলে জীবনে এখনও সাফল্য অর্জন করনি। যেদিন সত্যই বলতে পারবে “আমি সুখী, আমার থেকে এই সুখ কেউ কেড়ে নিতে পারবে না”, সেদিন তুমি রাজা — তোমার নিজের মধ্যে ঈশ্বরের প্রতিচ্ছবি আবিষ্কার করেছ।
সাফল্যের আরেকটা বৈশিষ্ট্য হল, আমরা কেবল নিজেদের জন্যেই সামঞ্জস্যপূর্ণ ও কল্যাণময় সুফল লাভ করি না, অন্যরাও এই সুফলের ভাগ পায়।
![]()
জীবন মূলত সেবাপ্রধান হওয়া উচিত। এই আদর্শ ব্যতীত তোমার ঈশ্বরপ্রদত্ত প্রজ্ঞা লক্ষ্যে পৌঁছোতে পারে না। সেবাকার্যে লিপ্ত হলে নিজের ক্ষুদ্র সত্তা ভুলে পরমাত্মার বিরাট সত্তার উপলব্ধি করতে পারবে। সঞ্জীবনী সূর্যকিরণ যেমন সবার প্রতিপালন করে, সেরকম তুমিও দীনহীন ও দুর্দশাগ্রস্ত প্রাণে আশার কিরণ ছড়িয়ে, হতাশ প্রাণে সাহস জাগিয়ে তুলে তাদের বিফল মননে নতুন শক্তির আলো জ্বালাও। যখন তুমি উপলব্ধি করবে যে জীবন কর্তব্যপালনের এক আনন্দময় সংগ্রাম আর সেইসাথে এক বহমান স্বপ্ন এবং তুমি অন্যদের সহৃদয়তা ও শান্তি দিয়ে সুখী করার আনন্দে পরিপূর্ণ হয়ে গেলে ঈশ্বরের দৃষ্টিতে তোমার জীবন সফল।
প্রাচুর্য ও সমৃদ্ধি

শুধুমাত্র নিজেদের সমৃদ্ধি খোঁজা ব্যক্তিরা পরিশেষে নিঃস্ব থেকে যায় অথবা অবিন্যস্ত মানসিকতায় ভুগতে বাধ্য হয়, আর বিপুল বিশ্বকে নিজের গৃহ মনে করে সমাজ ও বিশ্বের জন্য যত্ন নেওয়া ও কাজ করা ব্যক্তিরা…তাঁদের নিজস্ব বৈধ সমৃদ্ধি পেয়েই যায়। এটা একটা অমোঘ ও নিগূঢ় নিয়ম।
অত্যল্প হলেও অন্যদের সাহায্য করতে প্রতিদিন কিছু সুকর্ম করবে। ঈশ্বরের সাথে প্রেম করতে চাইলে মানুষকে তোমায় ভালোবাসতেই হবে। সবাই ঈশ্বরের সন্তান। তুমি অভাবগ্রস্তকে দ্রব্য দান করে, দুঃখীজনকে মানসিকভাবে সান্ত্বনা দিয়ে, সন্ত্রস্তকে সাহস জুগিয়ে, দুর্বলকে দিব্য বন্ধুত্ব ও নৈতিক সমর্থন দিয়ে সাহায্য করতে পারো। অন্যদের পরমাত্মার প্রতি আগ্রহী করে সদগুনের বীজ বপন করে দিতে পারো আর তাদের মনে গভীর ঈশ্বরপ্রেম ও গভীর বিশ্বাস জাগিয়ে দিতে পারো। পৃথিবী ছেড়ে যাবার সময় সব বস্তুগত সম্পদ পিছনে পড়ে থাকবে, শুধুমাত্র তোমার প্রতিটি সুকর্ম তোমার সাথে যাবে। কদর্যভাবে জীবনযাপন করা সম্পদশালী ব্যক্তিরা, কাউকে সাহায্য না করা স্বার্থপর ব্যক্তিরা পরজন্মে সম্পদ লাভ করে না। অধিক থাক বা সামান্য, যারা দান ও ভাগ করে, সেই ব্যক্তিরাই সম্পদ আকর্ষণ করবে। এটাই পরমপিতার নিয়ম।
দৈবী প্রাচুর্যকে প্রবল সঞ্জীবনী ধারার মতো ভাবো; তুমি যতটা পাবার অধিকারী ততটাই পাবে। তুমি একটা টিনের কাপ ধরলে সেটুকুই মাত্র পাবে। তুমি একটা বাটি ধরলে সেটুকুই পূর্ণ হবে। দৈবী প্রাচুর্য ধারণ করার জন্য তুমি কিরকম পাত্র? হতে পারে তোমার পাত্র ত্রুটিপূর্ণ; সেরকম হলে সমস্ত ভয়, ঘৃণা, সন্দেহ ও হিংসা সরিয়ে রেখে সংশোধন করে শান্তি, স্থিরতা, ভক্তি ও প্রেমের বিশুদ্ধ ধারায় পরিষ্কার করতে হবে। সেবা ও উদারতার বিধান দৈবী প্রাচুর্য মেনে চলে। দাও আর তারপর পাও। দুনিয়াকে তোমার শ্রেষ্ঠটুকু দাও আর সর্বশ্রেষ্ঠ ফেরত আসবে তোমার কাছে।
সাফল্যের জন্য সংকল্প
আমার প্রয়োজনের সময়ে প্রয়োজনীয়টুকু এনে দিতে সর্বব্যাপী শুভ শক্তির ওপর পরিপূর্ণ আস্থায় আমি এগিয়ে যাব।
আমার মাঝে অসীম সৃষ্টিশীল শক্তি সমাহিত। কিছু সিদ্ধিলাভ বিনা আমি মৃত্যুর কোলে যাব না। আমি একজন পুণ্যাত্মা, এক বিচারবুদ্ধিসম্পন্ন সৃষ্টি। আমি পরমাত্মার শক্তি, আমার সত্তার উদ্যমী উৎস। কর্মজগতে, চিন্তাজগতে, জ্ঞানের জগতে আমি আপ্তবাক্য রচনা করব। আমি আর আমার পরমপিতা এক। আমি আমার সৃষ্টিশীল পিতার মতই যা ইচ্ছা সৃষ্টি করতে পারি।
দিব্য প্রাচুর্যের জন্য সংকল্প
আমি ভিক্ষুকের মতো সীমিত পার্থিব সম্পদ, স্বাস্থ্য আর জ্ঞান চাইব না। আমি তোমার সন্তান, আর তাই তোমার অফুরন্ত ধন থেকে এক দৈব পুত্রের ভাগ দাবি করি।
পরমপিতা, এই আমার প্রার্থনা: আমার অধিকারে কি আছে, তা নিয়ে আমি ভাবি না, বরং প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় যা কিছু আমার ইচ্ছায় অর্জন করার ক্ষমতা দাও।
আরও পড়ুন
- সাফল্য লাভের নিয়ম — শ্রীশ্রী পরমহংস যোগানন্দ
- টু বি ভিকটোরিয়াস ইন লাইফ — শ্রীশ্রী পরমহংস যোগানন্দ
- "সাফল্যের জন্য মনঃশক্তির কেন্দ্রীকরণ," জার্নি টু সেল্ফ-রিয়লাইজেশন — শ্রীশ্রী পরমহংস যোগানন্দ
- "বিজনেস, ব্যালেন্স, এণ্ড ইনার পীস: রিস্টোরিং ইক্যুইলিব্রিয়াম টু দ্য ওয়ার্ক উইক," জার্নি টু সেল্ফ-রিয়লাইজেশন — শ্রীশ্রী পরমহংস যোগানন্দ
- "অনুপ্রাণনা," মানুষের চিরন্তন অন্বেষণ — শ্রীশ্রী পরমহংস যোগানন্দ
- "দ্য মাইণ্ড: রিপোযিটারি অফ ইনফাইনাইট পাওয়ার," দ্য ডিভাইন রোমান্স — শ্রীশ্রী পরমহংস যোগানন্দ
















