নিউ টেস্টামেন্টের ওপর পরমহংস যোগানন্দের দুই খন্ডের ভাষ্য থেকে উদ্ধৃতাংশ:
এই পৃষ্ঠাগুলোতে খ্রিস্ট চেতনার সাথে প্রকৃত সংযোগের মাধ্যমে স্বজ্ঞাতভাবে উপলব্ধ জিশুর কথিত বাক্যের সত্যতার এক আধ্যাত্মিক ব্যাখ্যা আমি বিশ্বমাঝে উপস্থাপন করছি। … এগুলো খ্রিস্টান বাইবেল, ভারতের ভগবদগীতা ও সকল কালোত্তীর্ণ প্রকৃত শাস্ত্রের অন্তর্নিহিত যথার্থ ঐক্য প্রকাশ করে।
বিশ্বের উদ্ধারকগণ বৈরী মতবাদের ভেদাভেদ লালন করতে আসেন না; তাঁদের শিক্ষা সেই উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা উচিত নয়। নিউ টেস্টামেন্টকে “খ্রিস্টান” বাইবেল বলাটাও একটা মিথ্যাভাষণ হবে, কারণ এটা কোনো একটা মাত্র সম্প্রদায়ের সম্পত্তি নয়। সমগ্র মানবজাতির কল্যাণ ও উন্নতির জন্যই জ্ঞান। খ্রিস্ট চেতনা যেমন সর্বজনীন, তেমনই জিশু খ্রিস্ট সবার জন্য… ।
দ্য সেকেন্ড কামিং অফ ক্রাইস্ট গ্রন্থের এই শিরোনামে আক্ষরিক অর্থে জিশুর প্রত্যাবর্তনের কথা বলছি না… ।হাজার হাজার খ্রিস্টকে পৃথিবীতে পাঠালেও মানবজাতিকে মুক্ত করতে পারবেন না যদি না তারা তাদের নিজস্ব চেতনাকে খ্রিস্টের মতো পরিশুদ্ধ ও বিকশিত করে জিশুর মধ্যে উদ্ভাসিত খ্রিস্ট চৈতন্যের পুনর্জাগরণে সক্ষম হয়… ।এই চৈতন্যের উন্মেষ, ধ্যানে চিদানন্দের উপলব্ধিকেই আসলে খ্রিস্ট চৈতন্যের পুনরাগমন বলা যাবে—আর এটা ভক্তের নিজের চেতনার মাঝেই সংঘটিত হবে।
“একমাত্র জাত পুত্র”: খ্রিস্ট চৈতন্য
জিশু ও খ্রিস্ট শব্দদুটির মধ্যে বিশেষ পার্থক্য আছে। তাঁর স্বীকৃত নাম ছিল জিশু; তাঁর সম্মানসূচক উপাধি ছিল “খ্রিস্ট”। জিশু নামে তাঁর ছোট্ট মানবদেহে সৃষ্টির প্রতিটি অংশে ও প্রতিটি কণায় সর্বব্যাপী পরমপিতার সর্বজ্ঞ বুদ্ধিমত্তার সুবিশাল খ্রিস্ট চেতনা নিয়ে তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন। সৃষ্টিতে নিখুঁতভাবে প্রতিফলিত তুরীয় পরম আত্মা বা পিতা ঈশ্বরের এই চৈতন্যই তাই “ঈশ্বরের একমাত্র জাত পুত্র” নামে অভিহিত।
এটাই ছিল সন্ত জনের বলা পরমপিতার প্রেম ও আনন্দে পরিপূর্ণ সেই অসীম চৈতন্যের কথা, যখন তিনি বলেন “যতজন তাঁকে [খ্রিস্ট চৈতন্য] অর্জন করেছেন, তাঁদেরকে তিনি ঈশ্বরের পুত্র হওয়ার ক্ষমতা দিয়েছেন।” …
সহস্রাব্দ ধরে ভারতের যোগী ও ঋষিদের, আর জিশুর জ্ঞাত ছিল—যে কোনো ঈশ্বরসন্ধানী নিজের মধ্যে পরমপিতার সর্বজনীন চৈতন্য অর্জন করতে যথাযথ ধ্যানের বিজ্ঞান-এর মাধ্যমে তার চেতনার পরিধি অসীম জ্ঞানে বিস্তৃত করতে পারে।
ভিডিও: “খ্রিস্ট চৈতন্য: আমাদের প্রত্যেকের লক্ষ্য”
সেন্ট জনের উপরোল্লিখিত উক্তির উপর পরমহংস যোগানন্দ যে প্রগাঢ় গুরুত্ব দিয়েছেন এবং যোগদা সৎসঙ্গ পাঠমালার শিক্ষা ও প্রক্রিয়াগুলির অনুশীলনে আমাদের নিজেদের মধ্যে জিশুর মতো উদ্ভূত সেই অসীম চৈতন্য উপলব্ধি করা অবশ্যই সম্ভব তা পরমহংসজি কী ভাবে আমাদের শিখিয়েছেন সেই ব্যাপারে ইস্টার উপলক্ষ্যে স্মারক ধ্যানের এই স্বল্পদৈর্ঘ্যের ভিডিওতে ওয়াইএসএস/এসআরএফ অধ্যক্ষ স্বামী চিদানন্দ গিরি আলোকপাত করেছেন।
জিশুর রূপক কাহিনীর গুপ্ত সত্য
শিষ্যেরা এসে তাঁকে বললেন, “আপনি ওদের কাছে কেন রূপকের মাধ্যমে কথা বলেন?” উত্তরে তিনি তাঁদের বলেন, “যেহেতু স্বর্গরাজ্যের নিগূঢ় তত্ত্ব তোমাদের জানার জন্য দেওয়া হলেও ওদের এটা দেওয়া হয় নি… । তাই আমি ওদের রূপকের মাধ্যমে বলি: কারণ এরা দেখেও দেখে না, শুনেও শোনে না, আর এরা বুঝতেও পারে না।”
জিশুর শিষ্যরা যখন তাঁকে জিজ্ঞাসা করেন তিনি কেন রূপকের সূক্ষ্ম উপমায় মানুষকে শিক্ষা দেন, উত্তরে তিনি বলেন “কারণ তোমরা যারা আমার প্রকৃত শিষ্য আধ্যাত্মিকতাপূর্ণ জীবনযাপন করো আর আমার শিক্ষা অনুসারে সুশৃঙ্খলভাবে তোমাদের কাজকর্ম করো, ধ্যানের মাঝে তোমাদের অন্তর্জাগরণের যোগ্যতাবলে স্বর্গের সেই গূঢ় রহস্যের সত্যতা এবং কিভাবে পরমপিতার সাম্রাজ্য, স্পন্দনশীল মহাজাগতিক বিভ্রান্তির আড়ালে প্রচ্ছন্ন মহাজাগতিক চেতনা অধিগম্য তা বুঝতে পারো। তবে সাধারণ মানুষ গভীর প্রজ্ঞা নিহিত সত্য হৃদয়ঙ্গম করতে বা চর্চা করতে সক্ষম নয়, তাদের গ্রহণ ক্ষমতা অনুপযোগী। রূপকগুলিতে, আমার প্রেরিত জ্ঞান থেকে তাদের বোধগম্যতা অনুসারে সহজ সত্যগুলো কুড়িয়ে নিতে পারে। তারা যা গ্রহণ করতে পারে তার ব্যবহারিক প্রয়োগে মুক্তির পথে তারা কিছুটা অগ্রসর হয়।”…
সুগ্রাহীগণ কিভাবে আত্মোপলব্ধি করে যেখানে নিস্পৃহ যারা “দেখেও দেখে না, শুনেও শোনে না, আর এরা বুঝতেও পারে না”? স্বর্গ এবং ঈশ্বরের রাজ্যের চরম সত্য, ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য উপলব্ধির অন্তরালে এবং যুক্তিবাদী মনের চিন্তাধারার বাইরে যে বাস্তবতা রয়েছে, তা কেবল অন্তর্জ্ঞান দ্বারাই গ্রহণ করা যায়—আত্মার অন্তর্নিহিত জ্ঞান, সুস্পষ্ট সর্বাঙ্গীণ উপলব্ধি জাগ্রত করে।
প্রাচ্যের খ্রিস্ট জিশু—একজন পরম যোগী
পৃথিবীতে অনেক ভ্রান্তভাবে খ্রিস্ট ব্যাখ্যায়িত হয়েছেন। এমনকি তাঁর শিক্ষার সরল মূলতত্ত্বগুলি বিকৃত করা হয়েছে আর সেগুলির গূঢ়তত্ত্বের গভীরতা বিস্মৃত হয়েছে। অন্ধবিশ্বাস, কুসংস্কার ও বদ্ধমূল ধারণায় সেগুলি ক্রুশবিদ্ধ হয়েছে। গণহত্যার যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে, খ্রিস্টধর্মের মনুষ্যসৃষ্ট মতবাদের কর্তৃত্বের স্পর্ধায় ভিন্নমতাবলম্বী ও মতবিরোধী মানুষকে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। অজ্ঞানতার অন্ধকার থেকে শাশ্বত শিক্ষাকে কিভাবে রক্ষা করা যায়? প্রাচ্যের একজন খ্রিস্ট হিসাবে জিশুকে আমাদের জানা দরকার, একজন মহোত্তম যোগী যিনি ঈশ্বরোপলব্ধির সর্বজনীন বিজ্ঞানের সম্পূর্ণ দক্ষতা প্রকট করেন, আর তাই উদ্ধারক হিসাবে পরমপিতার হয়ে বলতে ও সক্রিয় হবার অধিকারী। খুব বেশিভাবে তাঁর পাশ্চাত্যকরণ করা হয়েছে।
গুহ্য সত্য ঈশ্বর-সাধনার সর্বজনীন ধর্মকে প্রকাশ করে
শাস্ত্রের বাহ্যিক পাঠ ধর্মের সার্বজনীনতাকে গোঁড়ামির মধ্যে নিমজ্জিত করে। গুহ্য সত্যের উপলব্ধিতে একতার এক দৃশ্যপট ভেসে ওঠে… .দিব্য অবতারগণ কোনো নতুন বা স্বতন্ত্র ধর্ম নিয়ে আসেন না বরং ঈশ্বরোপলব্ধির একই ধর্মের পুনরুদ্ধারে আসেন।

তাঁর নামে অনেক চার্চ ও মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, এগুলির প্রায় সবই সমৃদ্ধ ও প্রভাবশালী, কিন্তু ঈশ্বরের সাথে সেই প্রকৃত সংযোগ কোথায়—যার ওপর তিনি জোর দিয়েছেন? জিশু চেয়েছেন প্রথম ও সর্বাগ্রে মানব হৃদয়ে মন্দির প্রতিষ্ঠিত হোক, তারপর বাহ্যিকভাবে সকল উপাসনালয়ে প্রতিষ্ঠিত হোক। পরিবর্তে বিরাট বিরাট অট্টালিকায় বিস্তৃত জনসমাবেশে গিৰ্জাতন্ত্রের শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে, তবে কিছু মানুষ আছেন যারা গভীর প্রার্থনা আর ধ্যানের মাধ্যমে সত্যই খ্রিস্টের সাথে সংস্পর্শে আছেন।
জিশুর বাণীর মর্মার্থ পুনরাবিষ্কার
ব্যক্তিগত প্রার্থনা ও ঈশ্বরসংযোগের অভাব আধুনিক খ্রিস্টানদের ও খ্রিস্টান সম্প্রদায়কে জিশুর শেখানো ঈশ্বরের প্রকৃত ধারণা থেকে বিচ্যুত করেছে, এটা তেমনই অন্যসব ঈশ্বর-প্রেরিত দৈবজ্ঞ সূচিত ধর্মীয় পথের জন্যেও সত্য যাঁদের অনুসারীরা প্রকৃত ঈশ্বর-সাধনার থেকে মতবাদ আর আচার-অনুষ্ঠানের পথে ভেসে চলেছে। ওই পথগুলিতে, তারা মতবাদ ও ভিন্নমতের মানুষদের মাঝে দেওয়াল তুলে আলাদা করতেই ব্যস্ত, সেখানে গূঢ় আত্ম-উন্নতির প্রশিক্ষণ নেই। যথার্থভাবে ঈশ্বরকে উপলব্ধি করতে পারা দৈবজ্ঞ মানুষেরা ঔদার্যপূর্ণ সমাবেশের ধারণার জন্য নয় বরং যথার্থ ঈশ্বরপ্রেমীদের ও সব ধর্মমতের সন্তদের প্রতি সশ্রদ্ধ দৈব সখ্যতায় সবাইকে তাঁদের প্রেমের পথে অন্তর্ভুক্ত করেন।

হৃদয়ের সদগুণের মেষপালক, বন্ধু বা শত্রুর জন্য সমভাবে ত্যাগ, আত্মোৎসর্গ, ক্ষমা, প্রেমের উদাহরণের মাধ্যমে আর সর্বোপরি ঈশ্বরপ্রেমে কাউকে প্রত্যাখ্যান না করে, ভুবনভোলানো সর্বজনীন প্রেমে মুক্তির পথে তাঁকে অনুসরণ করতে সবার জন্য দুবাহু বাড়িয়ে দিয়েছেন। বেথলেহেম-এ জাবনার গামলায় ছোট্ট শিশু রূপে আর অসুস্থদের সুস্থ করে, মৃতকে জীবিত করে, ভ্রান্তির ক্ষতে প্রেমের প্রলেপ দান করে মানুষের মাঝে একজন উদ্ধারক হয়ে জিশুর মধ্যে খ্রিস্ট বাস করেছেন যাতে তারাও দেবতাদের মতো জীবনযাপন করতে পারে।
পরমপিতার বর্ণনাতীত প্রেম
“তোমরা যদি আমার প্রতি বিশ্বস্ত থাকো আর আমার বাণী তোমাদের মধ্যে থাকে, তোমরা যা ইচ্ছা চাইতে পারো আর তোমাদের জন্য তারই ব্যবস্থা হবে… ।
“পিতা যেমন আমায় ভালোবাসেন, আমিও তেমন তোমাদের ভালোবাসি: তোমরা আমার প্রেমের মাঝে থাকবে। তোমরা যদি আমার বাণী মেনে চলো, আমার প্রেমে বিশ্বস্ত থাকবে; যেমন আমি পিতার আদেশ মেনে চলি আর তাঁর প্রেমে বিশ্বস্ত আছি। একথা তোমাদের বলছি যাতে তোমাদের হৃদয়ে আমার আনন্দ থাকে আর তোমাদের পরিপূর্ণ আনন্দ হয়।”
জিশু তাঁর শিষ্যদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, “তোমরা যদি আমার প্রতি বিশ্বস্ত থাকো আর আমার বাণী তোমাদের মধ্যে থাকবে”—যদি তাদের চেতনা খ্রিস্ট চেতনার সাথে এবং মহাজাগতিক স্পন্দনের প্রবাহের সাথে ছন্দবদ্ধ থাকত—তারা সর্বজনীন সৃষ্টিনীতির পরিচালনায় অবর্ণনীয় বিস্ময় প্রদর্শনে সক্ষম হোত… ।
এরপর জিশু তাদের বহুমূল্য বাণী দান করেন, ভক্তদের হৃদয়ে এর চেয়ে প্রিয় কথা আর ছিল না, তিনি তাদের সেই একই পবিত্র, পক্ষপাতহীন, অমর প্রেমে প্রীতিপূর্ণ রাখেন, যেভাবে পরমপিতা তাঁকে প্রীতিপূর্ণ রাখেন…এই পংক্তিগুলিতে জিশু যে প্রেমের কথা বলেছেন তা ধারণা করতে চেষ্টা করো… ।
সকল পবিত্র হৃদয়ের সেই পরম-প্রেম অনুভব করতে, আনন্দের উচ্ছ্বাসে আত্মহারা হতে — সত্তার মাঝে বয়ে যাওয়া স্বর্গসুখের এক প্রবাহ, পরমানন্দময় শক্তির হাজার মিলিয়ন ভোল্টের এক প্রবাহ, এত মহান, এত প্রবল যা ধরে রাখা সম্ভব হয় না। এই দৈব আবেগ বর্ণনার উর্দ্ধে — অসীম লাবণ্যের অনির্বচনীয় মহিমার সাথে আলাপন, এক অবর্ণনীয় সৌন্দর্য, এক চিরন্তন আশ্রয়। এটাই পরমপিতার প্রেম যা জিশু অনুভব করেছেন আর যার মাঝে তাঁর শিষ্যদের আশ্রয় দিয়েছেন: “পিতা আমায় যেমন ভালোবাসেন, তোমাদেরও আমি সেরকম ভালোবাসি: তোমরা আমার প্রেমের মাঝে থাকবে।”

এই পবিত্র অনুষ্ঠানে জিশুর বাণীর একটি প্রতিলিপি সুসমাচার কর্তৃক সংরক্ষিত আছে; তবে পাঠককে বুঝতে হবে — আর নিজের মধ্যে অনুভব করার চেষ্টা করতে হবে যেন তারা নিজেরাই উপস্থিত ছিলেন — ওই বাণীর পিছনে পরমপিতার সুস্পষ্ট স্পন্দনশীল উপস্থিতি বিদ্যমান ছিল। দৈব সাহচর্যের (সৎসঙ্গ) সময়ে, যেমন তাঁর শিষ্যদের সাথে শেষ নৈশভোজে, যাঁরা সুগ্রাহী, তাঁরা চেতনার উন্নীতস্তরে অনুভব করেছিলেন গুরুদেব যখন কথা বলছিলেন তাঁদের হৃদয় ও মনে ঈশ্বর-উপলব্ধি বয়ে যাচ্ছিল। হৃদয়মন্দিরে গভীর সশ্রদ্ধ ধ্যানে যখনই সে গুরুদেবের করুণা প্রার্থনা করে এই অনুভূতি মহোত্তমভাবে ভক্তদের চেতনাকে রঞ্জিত করে।
জিশুর পুনরুত্থান এবং তাঁর চিরন্তন উপস্থিতি
ভারতের সিদ্ধ যোগীগণ যুগযুগান্তের শুরু থেকেই পুনরুত্থানকে খুব ভালোভাবেই বুঝেছেন। জিশু নিজে একজন সিদ্ধ যোগী ছিলেন: যিনি জীবন ও মৃত্যুতে, ঈশ্বর-সাধনা ও ঈশ্বর-সংযোগের অধ্যাত্মবিজ্ঞান জেনেছেন ও দক্ষতা অর্জন করেছেন, যিনি বিভ্রম থেকে ঈশ্বরের সাম্রাজ্যে মুক্তির পদ্ধতি জেনেছেন। জিশু তাঁর জীবন ও মৃত্যু জুড়ে তাঁর শরীর ও মন এবং প্রকৃতির অদম্য শক্তির ওপর তাঁর সম্পূর্ণ কর্তৃত্ব দেখিয়েছেন। আমরা প্রকৃত অর্থে পুনরুত্থান বুঝতে পারি যখন সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত যোগবিজ্ঞানের অন্তর্নিহিত তত্ত্ব হৃদয়ঙ্গম করতে পারি যেভাবে জিশু তাঁর ক্রুশবিদ্ধ শরীরে পুনরুত্থিত হয়ে ঈশ্বরের জ্যোতিতে মুক্ত হয়ে গেছেন… ।
অন্য কোনো বিজ্ঞানে মানুষের মধ্যে ঈশ্বরের চেতনার উৎপত্তি, এর ক্রমবিকাশ আর আত্মার পরলৌকিক উত্থানের বিশদ বিবরণ নেই। মানব চেতনার আধ্যাত্মিক ক্রমবিকাশ ত্বরান্বিত করার নির্দিষ্ট পদ্ধতি, আর অভ্যন্তরীণ মেরুদণ্ডীয় পথ উন্মুক্ত করে, কূটস্থ হয়ে পবিত্র আত্মা, খ্রিস্ট চেতনা এবং পরমপিতা, ঈশ্বরের মহাজাগতিক চেতনায় আত্মার উত্তরণে অন্ধকার যুগে হারিয়ে যাওয়া ক্রিয়াযোগ এই আধুনিক যুগে সামনে আনা হয়েছে।
তোমার অন্তরেই ঈশ্বরের সাম্রাজ্য
জিশু খ্রিস্টের “তোমার অন্তরেই ঈশ্বরের সাম্রাজ্য”-তে প্রবেশের শিক্ষা আর ভগবদগীতায় যোগশিক্ষায় ‘রাজসত্ত্বা’-র পুনরুদ্ধারে ভগবান কৃষ্ণের বলা কথায় এক চমৎকার সামঞ্জস্য আছে, শরীরী রাজ্যের ন্যায়সঙ্গত শাসকের মর্যাদায় মানুষের মধ্যে ঈশ্বরের প্রতিফলন, আত্মিক চেতনার দৈবভাবের পূ্র্ণ উপলব্ধি। ভক্ত দৈবচেতনার অন্তঃসাম্রাজ্যে স্থির হলে আত্মার জাগ্রত স্বজ্ঞাত ধারণা বস্তু, শক্তি ও চেতনার আবরণ ভেদ করে হৃদয়ে হৃদয়ে ঈশ্বরসত্ত্বা উন্মোচিত করে… ।
ঈশ্বর-সংযোগের রাজকীয় উপায় হল রাজযোগ, নিজের মধ্যেই প্রচ্ছন্ন থাকা ঈশ্বরের সাম্রাজ্যের যথাযথ উপলব্ধির বিজ্ঞান। অন্তর্মুখী যাত্রায়, প্রকৃত গুরুর থেকে দীক্ষার সময় প্রাপ্ত শুদ্ধ যোগ প্রক্রিয়ার অনুশীলনে শিষ্য তুরীয় চেতনার স্বর্গরাজ্যের প্রবেশদ্বার মেরুদন্ড ও মস্তিষ্কে জীবনীশক্তি ও চেতনার সূক্ষ্ম ও কারণ চক্রগুলি জাগ্রত করে সেই সাম্রাজ্য আবিষ্কার করতে পারেন। এরকম জাগরণ যিনি আয়ত্ত্ব করেছেন তিনি সর্বব্যাপী ঈশ্বরকে তাঁর অসীম স্বরূপে, নিজ আত্মার পবিত্রতায়, এমনকি পরিবর্তনশীল জড়রূপ ও শক্তির মায়াবী আবরণের মধ্যেও উপলব্ধি করেন।

আপাতদৃষ্টিতে সাধারণ মনে হলেও, এই শিক্ষায় জিশুর উত্তরণ অতি গভীর ছিল—সাধারণের অনুমানের থেকে অনেক গভীর… . [তাঁর শিক্ষায়] যোগের সম্পূর্ণ বিজ্ঞান হল ধ্যানের মাধ্যমে দৈবসংযোগের সর্বোৎকৃষ্ট পথ।