আধ্যাত্মিক পরম্পরা

যোগদা সৎসঙ্গ সোসাইটি অফ ইন্ডিয়া (সেল্ফ-রিয়লাইজেশন ফেলোশিপ) এর শিক্ষা প্রণালী ভগবান কৃষ্ণের শেখানো প্রকৃত যোগ সাধনা এবং জিশু খ্রিস্টের শেখানো প্রকৃত খ্রিস্টধর্মের ওপর প্রতিষ্ঠিত। ওয়াইএসএস/এসআরএফ-এর আধ্যাত্মিক পরম্পরার এই দুজন মহান অবতার এবং সমসাময়িক উচ্চকোটির গুরুগণ: মহাবতার বাবাজি, লাহিড়ী মহাশয়, স্বামী শ্রী যুক্তেশ্বরজি এবং পরমহংস যোগানন্দজি (ওয়াইএসএস/এসআরএফ এর শেষ গুরু) নিয়ে গঠিত।

যোগদা সৎসঙ্গ সোসাইটি অফ ইন্ডিয়ার আধুনিক বিশ্বে আধ্যাত্মিক ক্রিয়াযোগ বিজ্ঞানের প্রচারের উদ্দেশ্যে এই মহাত্মাদের প্রত্যেকের ভূমিকা রয়েছে। (বিশদ জানতে ফটোতে ক্লিক করুন।)

যোগদা সৎসঙ্গ সোসাইটি অফ ইন্ডিয়ার সকল সদস্য (সন্ন্যাসী এবং সাধারণ সদস্য) যারা ক্রিয়াযোগের পবিত্র দীক্ষা নিয়েছেন তারা সকলেই পরমহংস যোগানন্দজির শিষ্য। তাঁকে তারা নিজেদের ব্যক্তিগত গুরুর মতই শ্রদ্ধা ও ভক্তি করেন এবং ওয়াইএসএসের শিষ্যেরা তাঁর গুরু পরম্পরাকেও একই ভাবে শ্রদ্ধা করেন। গুরু-শিষ্য সম্বন্ধ বিষয়ে আরও পড়ুন।

গুরু পরম্পরা — গুরুর আধ্যাত্মিক উত্তরাধিকার হস্তান্তর

এমন একজন শিষ্য যাকে গুরুর আধ্যাত্মিক উত্তরাধিকার হস্তান্তর করার জন্য মনোনীত করা হয়েছে যাতে তিনি তাঁর গুরু যে ঐতিহ্যের অধিকারী সেই উত্তরাধিকার বহন করে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন, একেই বলে গুরু-পরম্পরা। এইভাবে পরমহংস যোগানন্দজির সাক্ষাৎ গুরু পরম্পরা হল মহাবতার বাবাজি, লাহিড়ী মহাশয় এবং স্বামী শ্রীযুক্তেশ্বর।

দেহাবসানের আগে পরমহংস যোগানন্দজি বলেছিলেন তিনি যে ওয়াইএসএস শৃঙ্খলার গুরুদের মধ্যে শেষতম হবেন, এ হল ঈশ্বরেরই ইচ্ছে। তাঁর সোসাইটিতে তাঁর পরবর্তী কোনো শিষ্য বা প্রধান কখনও গুরু উপাধি গ্রহণ করবেন না। (এই দিব্য নির্দেশ ধর্মের ইতিহাসে বিরল নয়। গুরু নানক যিনি ভারতবর্ষে শিখ ধর্মের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, তাঁর দেহত্যাগের পরও গুরুর স্বাভাবিক উত্তরাধিকারী পরম্পরা চলছিল। দশম গুরু ঘোষণা করলেন তিনিই এই গুরু পরম্পরার শেষ গুরু হবেন এবং এরপর শিক্ষাই তাঁদের গুরু হবেন।)

পরমহংস যোগানন্দজি আশ্বস্ত করেছিলেন যে, তাঁর যাওয়ার পরও তিনি তাঁর প্রতিষ্ঠিত সংগঠন যোগদা সৎসঙ্গ সোসাইটি অফ ইন্ডিয়া/সেল্ফ-রিয়লাইজেশন ফেলোশিপের মাধ্যমে কাজ করে যাবেন। তিনি বলেছেন, “যখন আমি থাকব না তখন শিক্ষাই গুরু হবেন।…এই শিক্ষার মধ্যে দিয়েই তোমরা আমার সঙ্গে এবং যে মহান গুরুগণ আমায় পাঠিয়েছেন তাঁদের সঙ্গে যুক্ত থাকবে।”

ওয়াইএসএস/এসআরএফ নেতৃত্বের উত্তরাধিকার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে, তিনি বলেন, “আত্মতত্ত্ববিদ কোনো নারী বা পুরুষই সবসময় এই প্রতিষ্ঠানের মুখ্য হবেন। আগে থেকেই গুরু এবং ঈশ্বর তাঁদের জানেন। তাঁরা সমস্ত আধ্যাত্মিক এবং প্রাতিষ্ঠানিক বিষয়ে আমার আধ্যাত্মিক উত্তরাধিকারী এবং প্রতিনিধিরূপে সেবা করবেন।”

গুরুর উত্তরসুরী

শ্রীশ্রী রাজর্ষি জনকানন্দ

রাজর্ষি জনকানন্দ পরমহংস যোগানন্দজির উত্তরাধিকারী হয়ে ১৯৫২-তে ওয়াইএসএস/এসআরএফ – এর সভাপতির পদ বরণ করেন। জেমস জে. লিন নামে ১৮৯২-এর ৫-ই মে আর্চিবল্ড, লুইসিয়ানায় তাঁর জন্ম হয়; ১৯৩২-এ কানসাস সিটিতে গুরুদেবের বক্তৃতামালা চলাকালীন তাঁর সঙ্গে পরমহংস যোগানন্দজির প্রথমবার দেখা হয়।

ক্রিয়াযোগে তাঁর দ্রুত উন্নতির কারণে, পরমহংসজি তাঁকে ভালোবেসে “সন্ত লিন” বলে উল্লেখ করতেন। ১৯৫১-তে যোগানন্দজি তাঁকে রাজর্ষি জনকানন্দ (প্রাচীন ভারতের আধ্যাত্মিকতার জন্য বিখ্যাত রাজা জনকের নামে) এই সন্ন্যাস উপাধিতে ভূষিত করেন এবং ওয়াইএসএস/এসআরএফ – এর কার্যের দায়িত্বভার তুলে দেন।

রাজর্ষি জনকানন্দের বিষয়ে আরও পড়ুন।

১৯৫৫-র ২০ শে ফেব্রুয়ারি রাজর্ষি জনকানন্দ, একজন মহান পাশ্চাত্য যোগীর দৃষ্টান্তসূচক জীবনের সমাপ্তি ঘটে।

Yogananda blessing Rajarsi Janakananda

শ্রীশ্রী দয়ামাতা

শ্রীশ্রী দয়ামাতা রাজর্ষি জনকানন্দের উত্তরসূরি হয়ে ১৯৫৫-তে ওয়াইএসএস/এসআরএফ-এর সভাপতির পদ গ্রহণ করেন।

Daya Mata with Paramahansa Yogananda

ফে রাইট নামে ১৯১৪-র ৩১ শে জানুয়ারি তিনি সল্টলেক সিটিতে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৩১-এ পরমহংস যোগানন্দজি যখন সেখানে বক্তৃতা দিতে আসেন সেই সময় গুরুদেবের সঙ্গে তাঁর দেখা হয়। তার কিছু পরেই, তিনি সন্ন্যাসিনী রূপে আশ্রমে যোগ দেন।

কুড়ি বছরেরও বেশি সময় ধরে শ্রী দয়ামাতা তাঁর ঘনিষ্ঠ শিষ্যদের একটি ছোটো বৃত্তের একজন ছিলেন যারা তাঁর সঙ্গে সবসময় থাকতেন। যত দিন যেতে লাগল তিনি তাঁকে আরও আরও দায়িত্ব দিতে লাগলেন, ১৯৩০-এ যখনও তিনি বেশ ছোটো ছিলেন তিনি ব্যক্তিগতভাবে তাঁকে ওয়াইএসএস/এসআরএফ এর বোর্ড অফ ডিরেক্টরের একজন সচিবের পদে নিয়োগ করেন। তাঁর জীবনের শেষ অধ্যায়ে যোগানন্দজি তাঁকে এসআরএফ-এর আন্তর্জাতিক সদর দপ্তরের দায়িত্বে নিযুক্ত করেন এবং সারা বিশ্বে তাঁর শিষ্যদের প্রকাশ্যে দয়ামাতা আগামী দিনে যে ভূমিকা পালন করতে চলেছেন সে বিষয়ে বলতে শুরু করেন। তাঁর যাবার ঠিক আগে তিনি তাঁকে বলেন: “এবার আমার কাজ শেষ আর তোমার শুরু।”

শ্রী দয়ামাতার বিষয়ে আরও পড়ুন

তাঁর বিশ্বব্যাপী সোসাইটির ভবিষ্যৎ প্রধান হিসেবে পরমহংসজি দয়ামাতাকে নির্বাচন করেছিলেন, ১৯৬২-তে দয়ামাতা যখন ভারতে তীর্থ করতে এসেছিলেন সেই সময় মহাবতারের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাতের সময় মহাবতার বাবাজি তা নিশ্চিত করেছিলেন।

শ্রী দয়ামাতা ৫৫বছরেরও বেশি সময় ধরে ওয়াইএসএস/এসআরএফ-এর অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করে ২০১০-এর ৩০শে নভেম্বর দেহ রাখেন।

শ্রীশ্রী মৃণালিনী মাতা

২০১৭-র ৩রা আগস্ট আমাদের সকলের প্রিয় সঙ্ঘমাতা এবং প্রেসিডেন্ট শ্রীশ্রী মৃণালিনী মাতা চিরশান্তিতে এই পৃথিবী ছেড়ে চির আনন্দলোকে আত্মার মুক্তির পথে যাত্রা করেন। হাজার হাজার সত্য অন্বেষণকারীর জন্যে জ্ঞানের আলো, প্রেম ও সহানুভূতিপূর্ণ পরমহংস যোগানন্দজির শিক্ষা যাদের জীবন বদলে দিয়েছে, শ্রী মৃণালিনী মাতা সত্তর বছরেরও বেশি সময় ধরে গুরুদেবের আধ্যাত্মিক এবং মানবকল্যাণমূলক কাজে সেবার জন্য নিজেকে উৎসর্গ করেছিলেন।

 শ্রী মৃণালিনী মাতার সম্পর্কে আরও জানুন।

স্বামী চিদানন্দ গিরি

যোগদা সৎসঙ্গ সোসাইটি অফ ইন্ডিয়া/সেল্ফ-রিয়লাইজেশন ফেলোশিপ বোর্ড অফ ডিরেক্টরেরা আনন্দের সঙ্গে আপনাদের জানাচ্ছে যে শ্রী মৃণালিনী মাতার উত্তরসূরি হিসেবে স্বামী চিদানন্দ গিরি যোগদা সৎসঙ্গ সোসাইটি অফ ইন্ডিয়া/ সেল্ফ-রিয়লাইজেশন ফেলোশিপ (ওয়াইএসএস/এসআরএফ) এর অধ্যক্ষ এবং আধ্যাত্মিক প্রধান নির্বাচিত হয়েছেন। শ্রী মৃণালিনী মাতা ২০১১-র জানুয়ারি মাস থেকে গত মাসে তাঁর দেহাবসানের আগে পর্যন্ত এই পদের দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৭-র ৩০শে আগস্ট বুধবার এসআরএফ এর বোর্ড অফ ডিরেক্টরদের সর্বসম্মতিক্রমে তাঁর নিয়োগ হয়।

 স্বামী চিদানন্দ গিরি বিষয়ে আরও জানুন

এই শেয়ার করুন