প্রায়শ জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন

যোগ কি?

যোগ কথার অর্থ হল স্বতন্ত্র চৈতন্য বা আত্মার সঙ্গে বিশ্বজনীন চৈতন্য বা পরমাত্মার “মিলন”। এখন যদিও যোগ এর বিভিন্ন শাখা আছে এবং বেশিরভাগ সময় যোগ বলতে সরল শারীরিক ব্যায়াম অভ্যাসকে মনে করা হয়, যোগ অভ্যাসের গভীর উদ্দেশ্য হল অসীমের সঙ্গে স্বতন্ত্র আত্মার মিলন।

কি ধরণের যোগ শিক্ষা দিয়ে থাকেন?

পরমহংস যোগানন্দজি রাজযোগ-এর পথ শিক্ষা দিয়েছিলেন, যার মধ্যে রয়েছে ধ্যানের সুনির্দিষ্ট, বিজ্ঞান সম্মত পদ্ধতির অভ্যাস — ক্রিয়াযোগ নামে যা পরিচিত — একজনের প্রচেষ্টার শুরুর থেকেই তাকে তার পরম লক্ষ্য যা হল আত্মার সঙ্গে পরমাত্মার মিলন সে বিষয়ে ধারণা করতে সাহায্য করে। শুধু তাই নয় ক্রিয়াযোগের পথ হল একটি সম্পূর্ণ দর্শন এবং জীবনযাপনের পদ্ধতি। ক্রিয়াযোগ অভ্যাস করলে একজন তার মানসিক এবং শারীরিক প্রক্রিয়াকে প্রশান্ত করতে পারে যাতে তার চেতনা সীমাবদ্ধতা ছাড়িয়ে মুক্ত হয়ে ঈশ্বরের সর্বত্র বিদ্যমানতা ও আনন্দকে উপলব্ধি করতে পারে।

ওয়াইএসএস-এ শিক্ষার মধ্যে কি হঠযোগের আসন শেখান হয়?

ওয়াইএসএস পাঠমালায় যদিও হঠযোগের ভঙ্গিমা বা আসন বিষয়ে কিছু নির্দেশ দেওয়া নেই, পরমহংস যোগানন্দজি এর অভ্যাসে উৎসাহ দিতেন কারণ এগুলি খুবই উপকারী।

আমি কিভাবে ক্রিয়াযোগ বিষয়ে আরও জানতে পারি এবং পরমহংস যোগানন্দের শিক্ষা অধ্যয়ন করতে পারি?

আমাদের পরামর্শ, আপনি আমাদের অবাধে প্রাপ্ত রচনার অংশ পড়ে দেখুন, আত্মোপলব্ধির মাধ্যমে উন্নততম সাফল্যলাভ এবং যদি এখনো না পড়ে থাকেন পরমহংস যোগানন্দজির কালজয়ী আধ্যাত্মিক গ্রন্থ যোগী-কথামৃত, তাহলে অবশ্যই পড়ুন। আপনি যদি শ্রী যোগানন্দের শিক্ষা অধ্যয়ন করতে আগ্রহী হন, আপনি যোগদা সৎসঙ্গ পাঠমালার জন্য আবেদন করতে পারেন।

যোগদা সৎসঙ্গ সোসাইটি পাঠমালায় কি আছে?

ঘরে-বসে পাঠের জন্য বিস্তারিত ভাবে ওয়াইএসএস পাঠমালাতে ধ্যানের ক্রিয়াযোগ বিজ্ঞান সহ ধাপে ধাপে যোগ পদ্ধতি শিখতে পরমহংস যোগানন্দজির দেওয়া নির্দেশাবলি ছাড়াও সম্যক জীবনযাপন শিক্ষার বিভিন্ন দিক নিয়েও তাঁর শিক্ষা প্রণালী এখানে বিবৃত রয়েছে।

এই জগতের দায়দায়িত্ব আমার এত সময় নিয়ে নিচ্ছে সেখানে কিভাবে আমি আমার আধ্যাত্মিক লক্ষ্য পূরণ করতে পারি?

যাদের অগণিত এবং সময়সাপেক্ষ দায়িত্ব কর্তব্য পালন করতে গিয়ে অনেকটা সময় চলে যায় পরমহংস যোগানন্দজি তাদের সমস্যার কথা খুব ভালো বুঝতেন। তিনি এমন এক জীবনপথের শিক্ষা দিয়েছেন যেখানে ধ্যান এবং ন্যায়সঙ্গত কর্মের একটা ভারসাম্য রয়েছে। আপনারা দেখবেন তাঁর শিক্ষা ভীষণভাবে বাস্তবানুগ এবং তিনি যে সব বিষয়ে আলোচনা করেছেন সেগুলি আপনার সাংসারিক এবং কাজের জগতের দায়িত্ব সহ দৈনন্দিন জীবনযাপনের ক্ষেত্রে খুবই উপযোগী। সবার ওপরে এটি আমাদের ঈশ্বরকে কিভাবে পাওয়া যায় সে বিষয়ে শিক্ষা দেয় — আমাদের সমস্ত কাজের মধ্যে কিভাবে পরিপূর্ণ আনন্দময় ঈশ্বরের সঙ্গে যুক্ত থাকা যায় তা শেখায়। একটা সময়সূচি তৈরি থাকলে প্রতিদিন একটা নির্দিষ্ট সময় সরিয়ে রেখে ওয়াইএসএস-এর আধ্যাত্মিক প্রক্রিয়া অভ্যাস করার ক্ষেত্রে তা সাহায্য করবে। শুধু কতটা সময় দেওয়া হচ্ছে তা নয়, আন্তরিকতা এবং গভীর প্রচেষ্টার সঙ্গে অভ্যাসই আপনাকে ঈশ্বরের সঙ্গে অন্তরের যোগসূত্রের এক অনুভূতি এনে দেবে।

আমার আধ্যাত্মিক উন্নতি হচ্ছে কিনা আমি কিভাবে জানতে পারব?

আধ্যাত্মিক উন্নতি হল এক ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। সবথেকে সুনিশ্চিত লক্ষ্মণ হল আমাদের নিজেদের ভেতরে যে সদর্থক পরিবর্তন হয়: যেমন ক্রমবর্ধমান মঙ্গল এবং নিরাপত্তা, প্রশান্তি, আনন্দ, আন্তরিক সহানুভূতিশীলতার অনুভূতি, বদ অভ্যাস থেকে মুক্তি এবং ঈশ্বরের প্রতি ক্রমবর্ধমান ভালোবাসা ও আকাঙ্ক্ষা। পরমহংস যোগানন্দ বলেছেন অধ্যবসায়ের মধ্যেই আছে আধ্যাত্মিক সাফল্যের যাদু। কখনও কখনও যাদের দারুণ অগ্রগতি হচ্ছে তাদের কাছে প্রমাণ হিসেবে হয়তো সামান্য বা কোনোই আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতা থাকে না। প্রকৃতপক্ষে বেশিরভাগ সময় যখন আমরা দৃঢ়ভাবে আধ্যাত্মিক প্রচেষ্টা চালাই আবার যখন সাহসিকতার সঙ্গে দৈনন্দিন জীবনের সমস্যার মোকাবিলা করি আমরা যদি তখন ঈশ্বরের স্পষ্ট প্রতিক্রিয়া নাও বুঝি, তখনই আমরা সবচেয়ে বেশি উন্নতি করি। প্রকৃত অগ্রগতি, বিশেষ দর্শন বা অভিজ্ঞতার থেকে আমাদের দৈনন্দিন আচরণ, চিন্তা, কার্যবিধির মধ্যে দিয়েই বেশি প্রতিফলিত হয়।

ওয়াইএসএস- এর যোগ প্রক্রিয়া অভ্যাস করার সঙ্গে সঙ্গে কি আমি অন্যান্য ধর্মীয় বিষয়ক পাঠ ও পদ্ধতির অভ্যাস চালিয়ে যেতে পারি?

পরমহংস যোগানন্দ তাঁর শিক্ষা ক্ষেত্রে সকল ধর্মের বিশ্বাসী মানুষকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি ব্যাখ্যা করেছেন তাঁর শেখানো যোগের বিজ্ঞানসম্মত প্রক্রিয়া কোনো বিশেষ মতবাদ গ্রহণের মাধ্যমে আসেনি তা এসেছে ঈশ্বরের সঙ্গে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার মাধ্যমে। তিনি সাবধান করেছেন, বিভিন্ন পথের আধ্যাত্মিক পদ্ধতি একসঙ্গে মিশিয়ে ফেললে লঘু ফল পাওয়া যাবে। দৃঢ়ভাবে একটাই পথ অনুসরণ করলে এবং নির্ধারিত পদ্ধতি প্রয়োগ করলে সেটাই আপনাকে সবচেয়ে দ্রুত আপনার আধ্যাত্মিক লক্ষ্যে পৌঁছে দেবে।

আপনারা কি ধ্যানের ক্লাস নেন?

ধ্যান শেখার জন্য আমাদের পরামর্শ হল ওয়াইএসএস পাঠমালায় নিজেকে নিবন্ধিত করা। ঘরে-বসে পাঠের এই বিস্তারিত ক্রমে পরমহংস যোগানন্দজির জীবৎকালে বিভিন্ন ক্লাসে দেওয়া উপদেশ সংকলিত করা হয়েছে। ওয়াইএসএস পাঠমালায় বিস্তারিত ভাবে ধাপে ধাপে ধ্যানের ক্রিয়াযোগ বিজ্ঞান সম্পর্কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তারই সঙ্গে রয়েছে কিভাবে জীবনযাপন করা উচিত সে বিষয়ে নানা উপদেশ।

আমি কখন ক্রিয়াযোগ পেতে পারি?

যোগদা সৎসঙ্গ পাঠমালার প্রাথমিক পাঠক্রমের যারা ছাত্রছাত্রী তারা নিজেদের ব্যক্তিগত রিপোর্ট জমা দিয়ে (পাঠমালা ১৭য় আছে) ক্রিয়াযোগ পাওয়ার আবেদন রাঁচিতে যোগদা সৎসঙ্গ শাখা মঠে করতে পারেন। (আগের সংস্করণের পাঠমালার ছাত্রছাত্রীরা যারা ওই পাঠক্রমের ৫২ নম্বর পাঠমালা পর্যন্ত ১ম এবং ২য় ধাপ পার করেছেন, তারাও আবেদনের যোগ্য।)

আধ্যাত্মিক উন্নতি লাভ করতে হলে কি একজন জীবিত গুরু প্রয়োজন?

পরমহংস যোগানন্দজি ব্যাখ্যা করেছেন জড়দেহে থাকুন বা না থাকুন, সকল প্রকৃত গুরুই জীবিত। তিনি বলেছেন, “তাঁরা একই স্তরে জীবিত থাকুন বা না থাকুন তাঁদের চেতনা তাঁদের শিষ্যদের সঙ্গে একসুরে বাঁধা আছে। প্রকৃত গুরুর প্রতিভাসের একটি অন্যতম জরুরি গুণ হল তাঁর সর্ববিদ্যমানতা।” পরমহংস যোগানন্দ নিজে যারা তাঁর কাছে আধ্যাত্মিক পথনির্দেশ প্রার্থনা করেন তাদের এখনও সাহায্য এবং আশীর্বাদ করে চলেছেন।

ওয়াইএসএস গুরু শ্রেণীতে পরমহংস যোগানন্দের পরবর্তী উত্তরাধিকারী কি কেউ আছেন?

দেহত্যাগের আগে পরমহংসজি বলে গেছেন, যোগদা সৎসঙ্গ সোসাইটি অফ ইন্ডিয়া/সেল্ফ-রিয়লাইজেশন ফেলোশিপ এর গুরু পরম্পরায় তিনি যে শেষ গুরু হবেন এটি ঈশ্বরেরই ইচ্ছা। “আমি যখন থাকব না” তিনি বলেছেন, “শিক্ষাই গুরু হবেন; এই শিক্ষার মধ্যে দিয়েই আপনারা আমার সঙ্গে এবং যে মহান গুরুরা আমাকে পাঠিয়েছেন তাঁদের সঙ্গে যুক্ত থাকবেন।” সুতরাং পরমহংস যোগানন্দের মত অনুসারে পরবর্তীকালে কখনই কোনো শিষ্য গুরু উপাধি নেবেন না বা সেই ভূমিকা পালন করবেন না। ধর্মের ইতিহাসে এই ধরণের দিব্য নির্দেশ বিরল নয়। ভারতবর্ষে শিখ ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা গুরু নানকের দেহত্যাগের পর, স্বাভাবিক গুরু পরম্পরা চলছিল। দশম গুরু ঘোষণা করলেন তিনিই এই গুরু পরম্পরার শেষ গুরু হবেন, এবং এখন থেকে তাঁদের শিক্ষাকেই গুরু বলে মান্য করতে হবে। পরমহংসজি আশ্বাস দিয়েছিলেন যে তাঁর প্রতিষ্ঠিত যোগদা সৎসঙ্গ সোসাইটি অফ ইন্ডিয়া/সেল্ফ-রিয়লাইজেশন ফেলোশিপ-এর মধ্যে দিয়ে তিনি তাঁর কাজ অব্যাহত রাখবেন।

ওয়াইএসএস/এসআরএফ-এর বর্তমান অধ্যক্ষ কে?

ওয়াইএসএস/এসআরএফ-এর বর্তমান অধ্যক্ষ ও আধ্যাত্মিক প্রধান শ্রীশ্রী স্বামী চিদানন্দ গিরি, চল্লিশ বছর ধরে তিনি যোগদা সৎসঙ্গ সোসাইটি / সেল্ফ-রিয়লাইজেশন ফেলোশিপের একজন সন্ন্যাসী। ওয়াইএসএস/এসআরএফ-এর প্রাক্তন অধ্যক্ষ শ্রী দয়ামাতা ২০১০-এ দেহ রাখার আগে, প্রত্যয়ের সঙ্গে মৃণালিনী মাতাকে জানিয়েছিলেন যে মৃণালিনী মাতার পরে স্বামী চিদানন্দজিই হবেন ওয়াইএসএস/এসআরএফ-এর অধ্যক্ষ এবং আধ্যাত্মিক প্রধান। ২০১৭-র ৩রা আগস্ট দেহ রাখার কয়েক মাস আগে মৃণালিনী মাতা একথা নিশ্চিত জানিয়েছিলেন এবং দয়ামাতার এই প্রস্তাবে যে তাঁর মত আছে সেকথা তিনি বোর্ড অফ ডিরেক্টর্সকেও সুনিশ্চিত করেছিলেন। ২০১৭-র ৩০শে আগস্ট স্বামী চিদানন্দজি বোর্ড অফ ডিরেক্টর্স-এর দ্বারা এই পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন।

ওয়াইএসএস/এসআরএফ-এর পদ্মফুল প্রতীক চিহ্নের অর্থ কি?

যোগদা সৎসঙ্গ সোসাইটি অফ ইন্ডিয়া/সেল্ফ-রিয়লাইজেশন ফেলোশিপের এই সনাক্তকরণ চিহ্নটি আধ্যাত্মিক চক্ষুকে বোঝায়, দুই ভ্রুর মধ্যবর্তী স্থানে সোনালি পদ্মফুলের মধ্যে একটি শুভ্র নক্ষত্র যার চারদিকে ঘিরে রয়েছে নীলাভ এবং সোনালি আলোর বলয়। এটি একজন ধ্যানী ভক্তের দিব্য চেতনার চক্ষুকে উন্মীলিত করার লক্ষ্যকে সূচিত করে, ঠিক যেমন প্রস্ফুটিত পদ্ম জাগরিত আধ্যাত্মিক চেতনার প্রাচীন প্রতীক।

এই শেয়ার করুন