একত্রে ঈশ্বর অন্বেষণ

পরমহংস যোগানন্দ প্রণীত

সম্মিলিত ধ্যানের উপযোগিতা সম্পর্কিত তাঁর লেখা এবং ভাষণ থেকে উদ্ধৃতি 

ওয়াইএসএস ধ্যানকেন্দ্র, মুম্বাই

আত্মোপলব্ধির ক্রমবর্ধমান ব্যাপ্তির মাধ্যমে ঈশ্বরপ্রাপ্তির লক্ষ্যে আত্মজনকে আকর্ষণ করার জন্যই এই পৃথিবীতে যোগদা সৎসঙ্গ সোসাইটি অফ ইন্ডিয়া/সেল্ফ-রিয়লাইজেশন ফেলোশিপের উদ্ভব। ওয়াইএসএস/এসআরএফ, বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে চিরন্তন সুখপ্রাপ্তির দিকে মানবজাতিকে ধাপে ধাপে এগিয়ে যাওয়ার পথনির্দেশ দিয়ে থাকে। ওয়াইএসএস/এসআরএফ-এর শিক্ষাপদ্ধতির অভ্যাস চিরন্তন সুখের আলয়ে পৌঁছোনর জন্য রাজযোগযুক্ত ধ্যানপ্রক্রিয়ার পথনির্দেশ অনুসারে মেরুদন্ডবাহিত পথে আত্মোপলব্ধির মাধ্যমে সর্বধর্মের মহামিলনস্থলে আমাদের পৌঁছে দেয়।

ঈশ্বরের সাথে যোগসূত্র স্থাপনের প্রক্রিয়া যাদের জানা থাকে তারা ধ্যানপ্রক্রিয়ায় পারদর্শী ধর্মপ্রাণ ব্যক্তিদের সান্নিধ্যেও তাঁকে কাছে পেতে পারেন। এমন অনেকে যারা কোনো বিশেষ ধর্মমতে বিশ্বাসী, তারা অনেকেই ঈশ্বরের সাথে যোগসূত্র স্থাপনে সফলকাম হন না। এই ধর্মবাদীদের প্রাপ্তি ঈশ্বরের প্রতি একটি অবাস্তব বিশ্বাস এবং আধ্যাত্মিক জীবন সম্পর্কে এক অস্পষ্ট ধারণা মাত্র; যা কখনও কখনও ধর্মতাত্ত্বিক যুদ্ধে পর্যবসিত হয়। কিন্তু যখন কেউ গভীর ধ্যানমগ্ন ভক্তদের সান্নিধ্যে সার্বজনীন স্বাধীনতাপ্রাপ্তির সাথে সাথে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে ঈশ্বরের সাথে যোগসূত্র স্থাপন করেন, তিনি পারস্পরিক সাহচর্যের মাধ্যমে আত্মোপলব্ধিলাভ করেন।

আধ্যাত্মিক সঙ্গলাভের উপকারিতা

ওয়াইএসএস ধ্যানকেন্দ্র, চন্ডিগড়

প্রকৃত ধর্ম যাঁরা আপন জীবনে দেখেছেন, অনুভব করেছেন এবং উপলব্ধি করেছেন, তাঁদের সাহচর্য ছাড়া আমাদের পক্ষে জানা সম্ভব নয় ধর্ম কী এবং কীভাবে ধর্ম সার্বজনীন ও প্রয়োজনীয়।

অনাদিকাল থেকে ভারতবর্ষের ঈশ্বরসন্ধানী সাধকগণ মুনি-ঋষিদের সাথে যুক্ত হওয়ার চেষ্টা করতেন, অথবা তাঁদের প্রতিকৃতির সামনে অন্যান্য আধ্যাত্মিক উচ্চাকাঙ্ক্ষীদের সাথে বসে ধ্যান করতেন। উচ্চস্থানীয় গুরুগণ কর্তৃক অনুমোদিত বহু যুগ ধরে প্রচলিত এই প্রথার একটি সুগভীর আধ্যাত্মিক কারণ ছিল। যোগসাধনায় প্রাথমিক শিক্ষার্থীগণের মন ধ্যান থেকে বিক্ষিপ্ত হওয়া, মনে এলোমেলো চিন্তা ভিড় করা, অস্থিরতা এবং পুরোনো অভ্যাসে ফিরে যাওয়ার তাড়না ছিল স্বাভাবিক ব্যাপার। মায়ার প্রভাব অতিক্রম করা নতুন শিক্ষার্থীদের পক্ষে সহজ নয়। সেইজন্য যারা সর্বগুণান্বিত হতে ইচ্ছুক, মুনিঋষিগণ তাদের উচ্চস্থানীয় সাধকদের সংস্পর্শে থাকার পরামর্শ দিতেন।

যাদের সাথে আমাদের মেলামেশা, আমরা তাদের গুণ অর্জন করি শুধুমাত্র কথোপকথনের মাধ্যমেই নয়, বরং তাদের থেকে বিচ্ছুরিত প্রবল আকর্ষণশক্তির প্রভাবেও এটা হয়ে থাকে। তাদের আকর্ষণশক্তির ব্যাপ্তির মধ্যে অবস্থান করলে আমরা প্রভাবিত হই।

যদি কেউ শিল্পী হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেন, তাহলে তার শিল্পীদের সাথে সংশ্লিষ্ট থাকা উচিত। যদি সফল ব্যবসায়ী হওয়ার বাসনা থাকে, তাহলে তার ব্যবসাক্ষেত্রে সফল ব্যক্তিদের সাথে সম্পর্কস্থাপন করা উচিত। তিনি যদি আধ্যাত্মিকতায় পারদর্শীতা অর্জন করতে চান, তাহলে তাকে ঈশ্বরভক্তগণের সংসর্গে থাকতে হবে।

ঈশ্বরপ্রাপ্তিই লক্ষ্য

ওয়াইএসএস ধ্যানকেন্দ্র, আহমেদাবাদ

ঈশ্বরের সাথে যোগাযোগ স্থাপন যোগদা সৎসঙ্গ সোসাইটি অফ ইন্ডিয়া/সেল্ফ-রিয়লাইজেশন ফেলোশিপ কেন্দ্র-র প্রধান লক্ষ্য। ভক্তবৃন্দ তাঁর জন্য একত্রিত হলে পরমপিতা যে কত খুশি হন তা তোমাদের কল্পনার অতীত। ভারতীয় ভক্তবৃন্দ এই জন্য কোনো ভবন নির্মাণ না করে যে কোনো স্থানে একত্রিত হয়ে তাঁর উদ্দেশ্যে ধ্যান করতে পারেন।

ভারতীয় তপস্বীগণ প্রবর্তিত বিজ্ঞানসম্মত প্রণালীগুলির অনুশীলনের ওপরই যোগদা সৎসঙ্গ সোসাইটি অফ ইন্ডিয়া/সেল্ফ-রিয়লাইজেশন ফেলোশিপ গুরুত্ব আরোপ করে থাকে। এই মর্মে ধর্মার্থীগণের সাহচর্যে অন্তর্বাহিত উন্নতপথ অবলম্বন করে আত্মোপলব্ধি অভিমুখে একত্রে অগ্রসর হওয়ার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে।

ধ্যানমন্ডলীর সংগঠন কোনো একটি উদ্দেশ্য বা ব্যক্তিবিশেষের গুণকীর্তনের জন্য না করে শুধুমাত্র ঈশ্বরপ্রাপ্তির লক্ষ্যে সমবেত ধ্যানসাধনা ও সংহতির জন্যই করা উচিত।

প্রতিটি মানবাত্মা ঈশ্বরের সন্তান এবং তাঁর ইচ্ছার প্রতিচ্ছবি, কিন্তু অহংকারের বশবর্তী হয়ে সে নিজের ইচ্ছাকে দিব্যপ্রেরণা থেকে বিচ্যুত করে তাকে সীমাবদ্ধ করে দেয়। অন্যান্য সাধকদের সাথে সম্মিলিত হয়ে প্রবল ইচ্ছাশক্তি সহযোগে ভক্ত তার আপন ইচ্ছাকে ঐশ্বরিক ইচ্ছার সাথে যুক্ত করে। ঈশ্বরের সাথে নিজের অভিন্নতা স্মরণ রেখে সে পুনরুদ্ধার করে নেয় তার ঐশ্বরিক উপলব্ধির ঐতিহ্য। প্রার্থনা, ধ্যান, ঐশ্বরিক আলাপন এবং আধ্যাত্মিক সাহচর্যের মাধ্যমে প্রত্যেক ভক্তের উচিত তার দিব্য ইচ্ছাশক্তির উপলব্ধিকে শক্তিশালী করা।

জিশু বলেছেন: “যখন দু-তিনজন আমাকে স্মরণ করে সম্মিলিত হয়, তখন আমি তাদের মধ্যেই অবস্থান করি” (ম্যাথু ১৮:২০, বাইবেল)। যখন দু-তিনজন একযোগে ঈশ্বরে মনোনিবেশ করে, তখন একজনের সুতীব্র একাগ্রতা অন্যজনের অপেক্ষাকৃত দুর্বল একাগ্রতাকে উদ্দীপিত করে। কিন্তু যে ব্যক্তিরা ঈশ্বরের নামে একত্রিত হয়ে গল্পগুজব করে, ওপর ওপর প্রার্থনা করার সাথে মনে অন্য কিছু চিন্তা করে অথবা ঈশ্বরের সাথে আন্তরিক যোগাযোগ স্থাপন না করে যন্ত্রবৎ শাস্ত্রীয় আচার পালন করে, তারা কখনই বিশ্বব্রহ্মাণ্ড পরিব্যাপ্ত কূটস্থ চৈতন্য অনুভব করতে পারে না।

সম্মিলিত ধ্যানের আশীর্বাদ

ওয়াইএসএস ধ্যানকেন্দ্র, ধারওয়াদ

সম্মিলিত ধ্যান নব্য এবং অভিজ্ঞ আধ্যাত্মিক উচ্চাকাঙ্খী সাধকগণের সুরক্ষার্থে একটি বলয়স্বরূপ। সম্মিলিত ধ্যানে সমষ্টিগত আকর্ষণশক্তির পারস্পরিক আদানপ্রদানে প্রত্যেক সদস্যের আত্মোপলব্ধির মাত্রা বৃদ্ধি পায়।

আমি যখন শ্রীযুক্তেশ্বরজির কাছে শিক্ষার্থীরূপে গিয়েছিলাম, তাঁর একটি উপদেশ আমার এখনও ভালোভাবে মনে আছে। তিনি বলেছিলেন: “উত্তম সঙ্গে ধ্যান করবে। তারা তোমার মানসিক দুধ থেকে আত্মোপলব্ধির মাখন তুলে নিতে সাহায্য করবে। দুধ পার্থিব মায়াপ্লুত জলে মিশ খেয়ে যায় এবং ওর ওপর ভেসে থাকতে পারে না। মাখন ছলনারূপি জলের ওপর অনায়াসে ভেসে থাকতে পারে।”

গুরুদেবের সাবধানবাণী কত না কার্যকরী ছিল! আমার শুরু করা সমিতি থেকে যারা দূরে সরে থাকল, তারা সকলেই ক্রিয়াযোগ অভ্যাসে অনেকটা এগিয়ে থাকা সত্ত্বেও বহির্জগতের মায়া অথবা পূর্বজন্ম থেকে আহৃত বস্তুবাদী প্রবণতার জালে আটকা পড়ে গেল।

যারা গোষ্ঠীর সাথে জুড়ে রইল তারা ঈশ্বরপ্রাপ্তির লক্ষ্যে ক্রমাগত অগ্রসর হতে থাকল, কারণ সাময়িক দুর্বলতা অথবা অন্যমনস্কতার সময় আমরা পরস্পরকে সাহায্য করতাম। কালো মেঘ যেভাবে হঠাৎ নির্মল আকাশ পরিব্যাপ্ত করে ফেলে, আত্মার দ্যুতিও কখনও কখনও আধ্যাত্মিক আলস্যে ঢাকা পড়ে যায়। উত্তম গোষ্ঠীর সাহচর্যের সাহায্যে আমাদের কালো মেঘকে দূরে সরিয়ে দিতে হবে।

আত্মোপলব্ধিলাভে উৎসুক ব্যক্তিদের সাথে বন্ধুত্বস্থাপন করে তাদের সাথে একত্রে ধ্যান করে কেনই বা তুমি নিজের আধ্যাত্মিক স্পন্দন আরও শক্তিশালী করে তুলবে না? এই প্রক্রিয়া তোমার আধ্যাত্মিক প্রত্যয়কে দৃঢ়তর করবে; তুমি লক্ষ্য করবে যে তোমার জীবনের বহু অনতিক্রম্য বাধা তোমার ধ্যানের স্রোতস্বিনীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে বা গুঁড়িয়ে যাচ্ছে। ঈশ্বরের প্রতি তোমার ভক্তি ও ভালোবাসার সাথে এক হয়ে যাচ্ছে অন্যদের প্রতি তোমার অনুরক্তি ও ভালোবাসা। তুমি এক স্বর্গীয় আনন্দ বিকিরণ করবে যার সংস্পর্শে এসে সকলে উপকৃত হবে।

তোমার আধ্যাত্মিক উন্নতি ব্যাহত অথবা ক্ষয়প্রাপ্ত হলে অন্যান্য ভক্তদের সাথে একত্রে ঈশ্বর অথবা অন্য কোনো মহাপুরুষের ধ্যান তোমাকে সেই বিপদ থেকে রক্ষা করবে। অন্য ভক্তদের আধ্যাত্মিক স্পন্দন তোমার আন্তরিক স্পন্দন বাড়িয়ে তোলার শক্তি ধারণ করে। অন্য ভক্তদের সাথে একত্রে ধ্যান তোমার নিজস্ব বিবর্তন ত্বরান্বিত করতে সাহায্য করে। আত্মোপলব্ধির সোপান অতিক্রম করতে তারা তোমাকে সাহায্য করে; এবং পরে তুমিই দৃষ্টান্তস্বরূপ হয়ে অন্যদের সাহায্য করতে পারবে।

মধুচক্র সৃষ্টি করে তাকে ভগবানরূপী মধু দিয়ে পরিপূর্ণ করা

ওয়াইএসএস ধ্যানকেন্দ্র, হায়দ্রাবাদ

মধুর জন্য প্রয়োজন মৌচাক। মধুশূন্য মৌচাক বৃথা। প্রাচ্য আধ্যাত্মিক মধু সংগ্রহ করতে ভালোবাসে; পাশ্চাত্য ভালোবাসে আধ্যাত্মিক মৌচাকের বিশাল সংস্থা গঠন করতে। বিশাল মৌচাক তৈরি করার চেয়ে আধ্যাত্মিক মধু সংগ্রহ করার কাজ অধিকতর তাৎপর্যপূর্ণ। কিন্তু ভক্তদের ঈশ্বরান্বেষণে একজোটে আকর্ষিত করতে সংস্থার প্রয়োজন। যদি ওয়াইএসএস/এসআরএফ সংস্থা না থাকত, তাহলে তোমরা ওয়াইএসএস/এসআরএফ আয়োজিত শিক্ষাব্যবস্থার সুযোগ গ্রহণ করতে পারতে না।

নিজেদের জন্য নিজস্ব আত্মোপলব্ধি অর্জন করা তোমাদের সর্বপ্রথম লক্ষ্য। কিন্তু আধ্যাত্মিক সংস্থার কাজে অবহেলা কোরো না, কারণ এটা হবে একধরণের স্বার্থপরতা এবং এই অবহেলা হবে তোমার আত্মিক উন্নতির হানিকারক। মধুচক্র সংস্থাগুলির সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আহরিত সত্যকে ভবিষ্যৎ ও পরবর্তী প্রজন্মের ভ্রাতা ও ভগিনীদের জন্য সংরক্ষিত করে রাখা প্রয়োজন। কিন্তু মনে রাখবে, ব্যক্তিগত ও সম্মিলিত ধ্যান ব্যতিরেকে ধার্মিক সংস্থা অর্থহীন। তোমাদের প্রাথমিক প্রচেষ্টা হবে নিজস্ব আত্মোপলব্ধির বেদিতে ঈশ্বরের সংস্থাপন; অতঃপর তোমার আধ্যাত্মিক সংস্থায় সকলের সম্মিলিত হৃদয়ে তাঁকে প্রতিষ্ঠিত করা।

আমার ভালো লাগে যখন গুটিকতক ভক্তকেও ঈশ্বরের অপরিসীম ভালোবাসার জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠতে দেখি। তাঁর অপর্যাপ্ত ভালোবাসা গ্রহণ করার জন্য এবং নিঃস্বার্থভাবে তাঁর সেবা করার জন্যই তোমাকে এই পৃথিবীতে পাঠানো হয়েছে। এইটিই একমাত্র মুক্তির পথ এবং প্রকৃত সুখপ্রাপ্তির একমাত্র পথ। ঈশ্বরের জন্য কাজ করো এবং প্রতিদিন রাত্রে তাঁর ধ্যান করো। দলগত ধ্যানের সময় উপস্থিত ভক্তদের সাথে সম্মিলিত-ধ্যান করো; গৃহে থাকার সময় একা অথবা ঈশ্বরলাভে উৎসুক যে কোনও ভক্তের সাথে ধ্যান করো।

দলগত ধ্যানের প্রবণতা

ওয়াইএসএস ধ্যানকেন্দ্র, লখনউ

আধুনিক যুগে অন্যান্য সব বিষয়ের চেয়ে যোগবিজ্ঞান বেশি আলোচিত হবে। ধার্মিক প্রবণতা মন্দির-গির্জা থেকে সরে স্থান নেবে স্কুলবাড়ি অথবা কোনো নির্জন স্থানে, যেখানে মানুষ উপস্থিত হবে শুধুমাত্র ধর্মোপদেশ শোনার জন্য নয়, বরং ধ্যানের মাধ্যমে যথার্থ ঈশ্বরপ্রাপ্তির জন্য।

বিশাল ও ব্যয়বহুল গির্জা অথবা মন্দিরে বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত ধর্মযাজক অথবা পুরোহিতের প্রধান লক্ষ্য অধিক থেকে অধিকতর ধার্মিক “খরিদ্দার” যোগাড় করার প্রচেষ্টায় যোগ না দিয়ে আমাদের উচিৎ নির্জন স্থানে ছোটোখাটো ধ্যানকেন্দ্র স্থাপনা করা যেখানে গুটিকতক সত্যসন্ধানী ধ্যান করতে আসবে এবং গভীর ধ্যানে পারদর্শী আন্তরিক ভক্তগণের সংস্পর্শে থেকে ঈশ্বরের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করতে শিখবে।

এই ধরণের মন্ডলীতে পরস্পরের সাথে সত্যবিষয়ক আলোচনায় কালক্ষেপ না করে উচিৎ হবে ওয়াইএসএস/এসআরএফ-এর ক্রমবর্ধনশীল প্রক্রিয়া অনুসরণ করে ধ্যান করা, ঈশ্বরের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করা এবং শান্তি ও প্রজ্ঞা সম্পর্কিত অন্তরস্থ ধর্মোপদেশ শোনা।

প্রত্যেক কেন্দ্রে গভীর ধ্যানজনিত নিরবতা পালন করা উচিৎ। প্রত্যেকের উচিৎ কম কথা বলা। ভারতবর্ষে আশ্রম প্রশিক্ষণ কালে আমার গুরু শ্রীযুক্তেশ্বরজি কখনো-সখনো উপদেশ দিতেন। বেশিরভাগ সময় আমরা কোনোরকম কথাবার্তা না বলে তাঁকে ঘিরে বসে থাকতাম। আমরা একটু নড়াচড়া করলেও তিনি আমাদের তিরস্কার করতেন।

শুধু ভালো ভালো বই পড়া এবং ভাষণ ও সঙ্গীতের আবহে সময় কাটানো ধর্মীয় সংস্থাগুলি জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ উৎসব সঞ্চালক ঈশ্বরের উপস্থিতির অভাবে এক একটি ধর্মতত্ত্ব সম্পর্কিত সামাজিক ক্লাব মাত্র। যে সংস্থা ঈশ্বরচিন্তায় সম্মিলিত হয় এবং ধ্যান-মন্দিরে তাঁকে আবাহন করে, তারাই শুধু তাঁর উপস্থিতির আশীর্বাদ লাভ করে।

ঈশ্বর উপলব্ধির খবর আপনা আপনিই ছড়িয়ে পড়ে। ধ্যানপ্রক্রিয়া অভ্যাস করার জন্য মণ্ডলীগুলির সম্মেলন এই জন্য খুব জরুরি। স্বগৃহে অর্জিত স্বতন্ত্র আত্মোপলব্ধি মণ্ডলী আয়োজিত সভায় পূর্ণতালাভ করে যা গোষ্ঠীর ভক্তদের মধ্যে এক নব জাগরণ সৃষ্টি করে যার প্রভাবে তারা নিজেরাই সংস্থা খুঁজে নেয়, সংস্থাকে আর তাদের খোঁজার দায়িত্ব থাকে না।

সম্মিলিত ধ্যানসভা লোকজনকে একতাবদ্ধ করে রাখে ভক্তদের নিজস্ব আত্মোপলব্ধির জোরে; কোনো জননেতা, সঙ্গীতানুষ্ঠান অথবা উৎসবের প্রভাবে নয়। এরপর সম্মিলিত ভক্তি নিয়ে প্রায়শ ঈশ্বরের আরাধনায় তারা নিজেরাই উৎসাহ বোধ করে। ঐশ্বরিক শক্তি সংঘবদ্ধ অন্তঃকরণের মাধ্যমে প্রবল শক্তি সহকারে ব্যক্তিগত আত্মায় প্রবাহিত হয়।

ওয়াইএসএস গোষ্ঠীর সাথে ঈশ্বরানুসন্ধান করুন

ওয়াইএসএস ধ্যানকেন্দ্র, বেঙ্গালুরু

সর্বত্রই ওয়াইএসএস/এসআরএফ-এর ধ্যানকেন্দ্র থাকা উচিৎ।

আমার পরমগুরু লাহিড়ী মহাশয় সাংসারিক জীবনের সমস্ত দায়িত্বভার বহন করেছিলেন, কিন্তু সর্বব্যাপী পরব্রহ্মের সাথে যোগাযোগ রক্ষায় কখনো ক্ষান্ত দেননি। ভারতে ক্রিয়াযোগের প্রবর্তক এবং গ্রহণক্ষম অন্বেষকদের শিক্ষাদাতা মহান এই যোগাবতার বলেছিলেন যে আধ্যাত্মিক মুক্তির জন্য জিশুখ্রিস্ট সদৃশ মহাত্মার সঙ্গলাভ অথবা তাঁকে ধ্যান করা, উদগ্রীব সত্যার্থীদের সঙ্গ এবং নিষ্ঠার সাথে ধ্যান অভ্যাস অপরিহার্য।

যখনই তুমি ওয়াইএসএস/এসআরএফ মন্দির অথবা কেন্দ্রে যাবে, তোমার যাওয়ার উদ্দেশ্য যেন একটাই থাকে: ঈশ্বরের সঙ্গলাভ। কথা শুনতে যেও না, গান শুনতেও যেও না। ধ্যানে তাঁর উপস্থিতি অনুভব করতেই শুধু যেও!

সর্বদা মনে রেখো, যখন কোনো নতুন ভক্ত আধ্যাত্মিক পথে তার যাত্রা শুরু করে, ইচ্ছাশক্তির চেয়েও পরিবেশ বেশি শক্তিশালী হয়!

আমি তোমাদের জানাতে চাই যে তোমার উপস্থিতি ও প্রচেষ্টার প্রয়োজন রয়েছে। তুমি কি তাহলেও কেন্দ্র আধিকারিকগণকে সর্বতোভাবে তোমার কর্তব্যনিষ্ঠ সেবা প্রদান করবে না এবং এখনই এবং চিরকাল সংস্থা অথবা কেন্দ্রের সেবায় যুক্ত থাকবে না? আমি আছি তোমার চিন্তনে ও মননে, কারণ ঈশ্বর আমাকে তোমাদের উদ্দেশ্যে এই কথাগুলি লিখতে প্রবুদ্ধ করেছেন। তোমার মন আমার সাথে এবং মহাত্মাদের সাথে সংযুক্ত রাখো এবং তোমার জীবন সেইমতো উন্নত হবে।

সম্মিলিত ধ্যান নব্য এবং অভিজ্ঞ আধ্যাত্মিক উচ্চাকাঙ্খী সাধকগণের সুরক্ষার্থে একটি বলয়স্বরূপ। সম্মিলিত ধ্যানে সমষ্টিগত আকর্ষণশক্তির পারস্পরিক আদানপ্রদানে প্রত্যেক ভক্তের আত্মোপলব্ধির মাত্রা বৃদ্ধি পায়।

কতিপয় অন্যান্য ওয়াইএসএস ধ্যানকেন্দ্র/মন্ডলী:

শিমলা, হিমাচল প্রদেশ
হায়দ্রাবাদ, তেলেঙ্গানা
নাগেরকয়েল, তামিলনাডু
ব্যাঙ্গালোর, কর্নাটক
বিলাসপুর, ছত্তিসগড়
কোচিন, কেরালা
হিসার, হরিয়ানা
জম্মু, জম্মু ও কাশ্মীর

এই শেয়ার করুন