যোগদা সৎসঙ্গ সোসাইটি অফ ইন্ডিয়া/সেল্ফ-রিয়লাইজেশন ফেলোশিপের সংস্করণগুলিই একমাত্র সেই সংস্করণ, যেখানে লেখকের সমস্ত ইচ্ছাকে যোগী-কথামৃতর চূড়ান্ত পাঠ্যে একত্রিত করা হয়েছে — যা তিনি ব্যক্তিগতভাবে ১৯২৪ হতে ১৯৫২-তে দেহত্যাগ করার আগে পর্যন্ত যাঁর সঙ্গে কাজ করেছেন সেই সম্পাদকের কাছে প্রকাশ করেছিলেন এবং যাঁর উপর তিনি তাঁর রচনার প্রকাশনার যাবতীয় বিষয়ের দায়িত্ব অর্পণ করেছিলেন।
পাঠকেরা মাঝে মাঝে যোগী-কথামৃত বইটির বর্তমান সংস্করণ ও ১৯৪৬-এ প্রকাশিত প্রথম সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য নিয়ে জানতে চান।
পরমহংসজির জীবদ্দশায় তাঁর আত্মজীবনীর তিনটি সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছিল। ১৯৫১-তে প্রকাশিত তৃতীয় সংস্করণে তিনি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন করেছিলেন — পাঠ্যটি বিস্তৃতভাবে সংশোধন করেন, কিছু অংশ বাদ দেন, কিছু ব্যাখ্যা বিস্তৃত করেন এবং একটি নতুন চূড়ান্ত অধ্যায় “১৯৪০ – ১৯৫১” যুক্ত করেন, (যা বইটির দীর্ঘতম অধ্যায়গুলির একটি)। তৃতীয় সংস্করণের পরেও তিনি কিছু সংশোধন করেছিলেন, যা সপ্তম সংস্করণের আগে অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব হয়নি, যেটি ১৯৫৬-তে প্রকাশিত হয়েছিল।
প্রকাশকের নিম্নোক্ত মন্তব্যটি যোগী-কথামৃতর সপ্তম সংস্করণে মুদ্রিত হয়েছিল, যা বইটির জন্য লেখকের অভিপ্রায়ের ইতিহাস তুলে ধরে:
“১৯৫৬-র এই আমেরিকান সংস্করণে ১৯৪৯-এর লন্ডন, ইংল্যান্ড সংস্করণের জন্য পরমহংস যোগানন্দ দ্বারা কৃত সংশোধন এবং ১৯৫১-তে করা অতিরিক্ত সংশোধন অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ১৯৪৯-এর ২৫ শে অক্টোবরে ‘লন্ডন সংস্করণের জন্য মন্তব্য’-তে পরমহংস যোগানন্দ লিখেছিলেন: ‘এই বইটির লন্ডন সংস্করণের আয়োজন আমাকে পাঠ্যটি সংশোধন এবং কিছুটা বিস্তৃত করার সুযোগ দিয়েছে। শেষ অধ্যায়ে নতুন কিছু তথ্যের পাশাপাশি, আমি বেশ কয়েকটি পাদটীকা যোগ করেছি, যেখানে আমি আমেরিকান সংস্করণের পাঠকদের পাঠানো প্রশ্নের উত্তর দিয়েছি।’
“১৯৫১-তে লেখক যে পরবর্তী সংশোধন করেছিলেন, তা চতুর্থ (১৯৫২) আমেরিকান সংস্করণে প্রকাশিত হওয়ার কথা ছিল। তখন যোগী-কথামৃত বইটির স্বত্ব নিউ ইয়র্কের একটি প্রকাশনা সংস্থার হাতে ছিল। ১৯৪৬-এ নিউ ইয়র্কে বইটির প্রতিটি পৃষ্ঠা ইলেক্ট্রোটাইপ প্লেটে তৈরি করা হয়েছিল। ফলে, একটি কমা যোগ করতেও পুরো পাতার ধাতব প্লেট কেটে যেখানে সেই বাঞ্ছিত কমাটি আছে এমন একটি নতুন লাইন যোগ করে জোড়া লাগাতে হত । এত প্লেট লাগানোর খরচের জন্য নিউ ইয়র্ক প্রকাশক ১৯৫১-র সংশোধনগুলো চতুর্থ সংস্করণে অন্তর্ভুক্ত করেননি।
“১৯৫৩-র শেষের দিকে সেল্ফ-রিয়লাইজেশন ফেলোশিপ (এসআরএফ) নিউ ইয়র্ক প্রকাশকের কাছ থেকে যোগী-কথামৃতর সমস্ত স্বত্ব কিনে নেয়। এসআরএফ ১৯৫৪ এবং ১৯৫৫-তে বইটির পুনর্মুদ্রণ করে (পঞ্চম ও ষষ্ঠ সংস্করণ); কিন্তু ওই দুই বছরে অন্যান্য দায়িত্বের কারণে এসআরএফ-এর সম্পাদকীয় বিভাগ লেখকের সংশোধনগুলো ইলেক্ট্রোটাইপ প্লেটে অন্তর্ভুক্ত করার বিশাল কাজ হাতে নিতে পারেনি। অবশেষে এই কাজ সম্পন্ন হয়ে সপ্তম সংস্করণে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।”
১৯৪৬ থেকে ১৯৫৬-র মধ্যে যে সব পরিবর্তন, বর্জন, সংযোজন করা হয়েছিল, তা ছিল সম্পূর্ণভাবে পরমহংসজির নির্দেশনায়। সম্পাদনার অন্য পরিমার্জনগুলি — যা সব ক্ষেত্রেই খুব সামান্য ছিল — যা তাঁর দীর্ঘদিনের সম্পাদক তারা মাতাকে দেওয়া নির্দেশনা অনুসারে পরে যোগ করা হয়েছিল, যিনি ২৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে তাঁর সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করেছিলেন এবং তাঁর নির্দেশানুসারে তাঁর লেখাগুলোর মরণোত্তর প্রকাশের জন্য যার উপর তাঁর সম্পূর্ণ বিশ্বাস ছিল।
এর কারণ পরমহংসজি পরিষ্কারভাবে উপলব্ধি করেছিলেন যে, এই বই ভবিষ্যতে ক্রমশ আরও বিস্তৃত পাঠকগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছোবে, তিনি তাঁর সম্পাদকদের নির্দেশ দিয়েছিলেন — বইটিকে সময়োপযোগী রাখার জন্য দরকার হলে পাদটীকা, ছবি, শিরোনাম ইত্যাদি যুক্ত করতে।
১৯৫৬-র পর থেকে যে পরিবর্তনগুলো হয়েছে, তা যে কোনো প্রকাশক সাধারণভাবে বহু দশক ধরে ছাপা হওয়া বইয়ে করে থাকেন (উদাহরণ, লেখকের অন্যান্য বইয়ের তালিকা সংস্করণ করা; বর্তমান পাঠকদের সুবিধার জন্য কিছু পাদটীকার সংযোজন যা লেখকের দ্বারা নয়, স্পষ্টভাবে প্রকাশকের সংযোজন বলে চিহ্নিত; লেখক ও তাঁর কার্যক্রমের অতিরিক্ত চিত্র; প্রচ্ছদ ও পশ্চাৎ পৃষ্ঠার প্রয়োজনীয় পরিবর্তন ইত্যাদি)।
যোগী-কথামৃতর প্রথম দিকের সংস্করণে লেখকের উপাধি “পরম হংস” লেখা হয়েছিল, কারণ সাধারণ অভ্যাস অনুসারে বাংলায় সাধারণত নীরব বা আধা-নীরব ‘অ’-এর ব্যবহার করা হয় না। তবে এই উপাধির বৈদিক পবিত্র তাৎপর্য সঠিকভাবে প্রকাশের জন্য, পরবর্তী সংস্করণগুলোতে সংস্কৃতানুগ লেখচিত্র “পরমহংস” ব্যবহার করা হয়েছে — যেখানে পরম অর্থ “সর্বোচ্চ বা শ্রেষ্ঠ” এবং হংস অর্থ “রাজহংস” — যা নির্দেশ করে সেই ব্যক্তিকে, যিনি তাঁর প্রকৃত আত্মার সর্বোচ্চ উপলব্ধি ও সেই আত্মার সঙ্গে ঈশ্বরের ঐক্য উপলব্ধি করেছেন।
১৯৪৬-এর প্রথম সংস্করণের তুলনায়, যোগদা সৎসঙ্গ সোসাইটি অফ ইন্ডিয়া/সেল্ফ- রিয়লাইজেশন ফেলোশিপের বর্তমান সংস্করণে পরমহংস যোগানন্দ ও তাঁর কার্যক্রম সংক্রান্ত অতিরিক্ত ২০টি ছবির পৃষ্ঠা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যা সংস্থার সংরক্ষণাগার থেকে সংগৃহীত হয়েছে, যাতে আগ্রহী পাঠকরা লেখক ও তাঁর কার্যক্রম সম্পর্কে আরও সম্যক ধারণা লাভ করতে পারেন।