প্রার্থনার শক্তির সদ্ব্যবহার

শ্রীশ্রী পরমহংস যোগানন্দের রচনা থেকে উদ্ধৃতি

Diya and incense used in prayers.তোমার প্রার্থনার উত্তর পাওনি বলে হয়ত তুমি অতীতে হতাশ হয়েছিলে। তবে বিশ্বাস হারাবে না…পরমপিতা হৃদয়হীন নির্বাক স্বত্বা নন। তিনি নিজেই প্রেমময় স্বত্বা। কিভাবে ধ্যানে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করতে হয় তুমি জানলে, তিনি তোমার আবদারের উত্তর দেবেন।

পরমপিতার কাছে শুধুমাত্র ন্যায়সঙ্গত প্রত্যাশা রাখা প্রার্থনার প্রথম নিয়ম। দ্বিতীয় হল, ভিক্ষুকের মতো না হয়ে, তাঁর সন্তান হিসাবে সেগুলির পূর্ণতার জন্য প্রার্থনা: “আমি তোমার সন্তান। তুমিই আমার পিতা। তুমি আর আমি এক।” তুমি গভীরভাবে ও ক্রমাগত প্রার্থনা করতে থাকলে তোমার নিজের অন্তরে আনন্দের ফোয়ারা অনুভব করবে। সেই আনন্দ উদ্ভূত না হওয়া পর্যন্ত সন্তুষ্ট হোয়ো না; যখন তোমার হৃদয় সেই তৃপ্তিদায়ক আনন্দের প্লাবন অনুভব করবে, তুমি জানবে যে ঈশ্বরের সাথে তোমার প্রার্থনা সম্পৃক্ত হয়েছে। তখন পরমপিতার কাছে প্রার্থনা করো: “পিতা, এই আমার প্রয়োজন। আমি এটা পেতে চাই; সঠিক ভাবনা আর সঠিক কাজ করতে আমাকে পথ দেখাও, সাফল্য পেতে আমাকে সাহায্য করো। আমার বিচারবুদ্ধি দিয়ে, প্রত্যয়ের সাথে এগিয়ে যাব, তবে তুমি আমার ভাবনা, ইচ্ছা আর সক্রিয়তাকে, আমার সঠিক কর্তব্য কর্মে চালিত করো।”

তুমি নিজে তাঁর সন্তান, সেই মতো অন্তরঙ্গভাবে তোমার প্রার্থনা করা উচিত। আগন্তুক বা একজন ভিক্ষুকের মতো অহং থেকে তোমার প্রার্থনায় ঈশ্বরের আপত্তি নেই, তবে তুমি দেখতে পাবে ওই চেতনাতেই তোমার প্রচেষ্টা আবদ্ধ থেকে গেছে। পরমপিতা চান না যে তাঁর সন্তান হিসাবে তোমার জন্মগত যে দৈব অধিকার, তোমার ইচ্ছাশক্তি, তা তুমি ত্যাগ করো।

প্রয়োজনের ধরণের উপর নির্ভর করে, কাঙ্খিত ফল নিয়ে আসতে হলে জানতে হয় কখন ও কিভাবে প্রার্থনা করতে হবে। যখন সঠিক পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয় তখন তা ঈশ্বরের নিজস্ব অনুশাসনকে গতিশীল করে তোলে; বিজ্ঞানসম্মতভাবে এই অনুশাসনগুলির পালন ফল প্রদান করে।

অনেকসময় প্রার্থনায় ভিক্ষাবৃত্তির অনুভূতি নিহিত থাকে। আমরা ঈশ্বরের সন্তান, ভিখারি নই আর তাই আমাদের পবিত্র উত্তরাধিকারের অধিকারী। যখন আমাদের হৃদয় ও পরমপিতার মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক স্থাপিত হয়, আমাদের ন্যায়সঙ্গত প্রার্থনাগুলির পরিপূর্ণতার আবদার করার অধিকার আমাদের থাকে।

যে কোনো বিষয়ের জন্য নিরন্তর আকাঙ্ক্ষা, যা অক্ষয় উৎসাহ এবং অটুট সাহস ও বিশ্বাসের সাথে মানসিকভাবে জপ করা হয়, তা এক গতিশীল শক্তিতে পরিণত হয় যা মানুষের চেতন, অবচেতন ও অতিচেতন শক্তিসমূহের সম্পূর্ণ আচরণকে এমনভাবে প্রভাবিত করে যে কাঙ্ক্ষিত বস্তু লাভ হয়। মানসিক জপের অন্তর্নিহিত সাধনা অবশ্যই নিরন্তর হতে হবে, বিপত্তিতে নিরুৎসাহ হলে চলবে না। তবেই কাঙ্ক্ষিত বস্তু বাস্তবায়িত হবে।

আরও পড়ুন

এই শেয়ার করুন