
ধ্যানের জন্য একটি স্থান প্রস্তুত করুন
ধ্যানের সময় নিজেকে নির্জন এবং নির্বিঘ্ন রাখার জন্য একটি নীরব, শান্ত স্থান খুঁজে বের করুন। শুধুমাত্র আপনার ধ্যানের অভ্যাসের জন্য নিজের একটি নিভৃত স্থান তৈরি করুন।
সোজা চেয়ারে অথবা দৃঢ় কোনো স্থানে পদ্মাসনে বসুন — সেই স্থানে একটি পশমের কম্বল এবং/অথবা রেশমের কাপড় বিছিয়ে নিন। এটি আপনার আসনকে সূক্ষ্ম পার্থিব শক্তির নিম্নমুখী টানের প্রভাব থেকে বিচ্ছিন্ন রাখবে।
সঠিক দেহভঙ্গিমা
ধ্যানে সফলতার জন্য দেহভঙ্গির নির্দেশাবলি
সোজা মেরুদণ্ড
ধ্যানের জন্য প্রথম ও অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল সঠিক ভঙ্গিমা। মেরুদণ্ড সোজা রাখতে হবে। কারণ ধ্যানের সময় সাধক তার মন এবং প্রাণশক্তিকে সুষুম্না নাড়ির মধ্যে দিয়ে মস্তিষ্কের উচ্চতর চেতনার কেন্দ্রে নিয়ে যেতে চায়, সেই জন্য মেরুদণ্ডের স্নায়ুর ওপর কোনো চাপ বা সংকোচন থাকা উচিত নয়।
হাতলবিহীন সোজা চেয়ারে বসুন
যাদের পা নমনীয়, তারা মেঝেতে অথবা শক্ত বিছানায় কুশনের ওপর পা ভাঁজ করে বসে ধ্যান করতে পারেন।
তবে পরমহংস যোগানন্দ এই আসনটি সুপারিশ করেছেন: একটি সোজা, হাতলবিহীন চেয়ারে বসুন যাতে আপনার পা সম্পূর্ণভাবে ভূমি স্পর্শ করে। মেরুদণ্ড সোজা রাখুন, পেট ভেতরে, বুক বাইরে, কাঁধ পেছনে এবং চিবুক ভূমির সমান্তরাল রাখুন। হাতের তালু দুটো ওপরের দিকে রেখে উরুর ওপর রাখুন — যেখানে উরু ও পেটের সংযোগস্থল — যাতে শরীর সামনের দিকে ঝুঁকে না পড়ে।
যদি সঠিক ভঙ্গিতে বসা হয়, তাহলে দেহ স্থির এবং শান্ত থাকবে, যাতে একেবারে নড়াচড়া না করে চুপচাপ বসে থাকা সম্ভব হয়।
এখন, চোখ বন্ধ করুন এবং বিনা চাপ প্রয়োগ করে ধীরে ধীরে আপনার দৃষ্টিকে উপরের দিকে তুলুন এবং ভ্রূমধ্যবিন্দুতে দৃষ্টিকে স্থির করুন — এটি মনোসংযোগের কেন্দ্র এবং ঐশ্বরিক উপলব্ধির আধ্যাত্মিক চক্ষুর আসন।
পরমহংস যোগানন্দের রচনা থেকে:

“যদি কোনও নবীন যোগী ধ্যানের জন্য শক্ত মেঝের ওপর বসেন, তবে তার শরীর এবং ধমনীর ওপর চাপের কারণে তার পা অসাড় হয়ে যেতে পারে। যদি তিনি মেঝের ওপরে বা শক্ত বিছানার ওপরে স্প্রিং প্যাড বা গদির ওপরে একটি কম্বল বিছিয়ে বসেন, তবে তার পায়ে অস্বস্তি হবে না। একজন পশ্চিমী ব্যক্তি, যিনি চেয়ারের ওপর উরুগুলি শরীরের সাথে সমকোণে রেখে বসতে অভ্যস্ত, তিনি নীচে পশমের কম্বল এবং রেশমের কাপড় বিছানো একটি চেয়ারের ওপর ধ্যান করতে আরও স্বচ্ছন্দ বোধ করবেন, এবং তার পা মেঝেতে পাতা থাকবে। যে পশ্চিমী যোগীরা, বিশেষত যুবকেরা, প্রাচ্যদেশীয়দের মতো মেঝের ওপর বসতে পারেন, তারা পায়ের পাতা মুড়ে বসতে পারার ক্ষমতার কারণে তাদের হাঁটু নমনীয় রাখতে পারবেন। এই ধরনের যোগীরা পদ্মাসনে বা আরও সহজ ভঙ্গিতে পা মুড়ে ধ্যান করতে পারেন।
“কেউই যেন পদ্মাসনে ধ্যান করার চেষ্টা না করেন যদি তিনি সেই ভঙ্গিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ না করেন। কোনো রকম চাপ দিয়ে ধ্যান করলে মন শরীরের অস্বস্তির দিকেই থাকবে। ধ্যান সাধারণত বসা অবস্থায়ই অনুশীলন করা উচিত। স্পষ্টতই, দাঁড়িয়ে ধ্যান করলে (যদি না তিনি উন্নত সাধক হয়ে থাকেন), মন অন্তর্মুখী হলে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আবার শুয়ে ধ্যান করাও উচিত নয়, কারণ এতে ঘুমের “অভ্যস্ত” অবস্থা ফিরে আসতে পারে।
“শরীর ও মনের স্থিরতা আনয়নকারী সঠিক দৈহিক ভঙ্গি যোগীকে জড়জগৎ থেকে পরব্রহ্মে মন স্থানান্তরিত করতে সাহায্য করে।”
— পরমহংস যোগানন্দ, গড টকস উইথ অর্জুন: দ্য ভগবদগীতা
