একটি কালোত্তীর্ণ আধ্যাত্মিক সৃষ্টি

Paramahansa Yogananda writing

পরমহংস যোগানন্দের আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্বের আলোক বিচ্ছুরণের সাক্ষ্য রেখেছেন, তাঁর আত্মজীবনীর অগণিত পাঠক।

পঁচাত্তর বছর আগে প্রথম প্রকাশিত এই গ্রন্থটি এক শ্রেষ্ঠ রচনা হিসেবে সমাদৃত হয়েছিল। গ্রন্থটি কেবল এক অকাট্য মহৎ জীবনের গল্পই তুলে ধরেনি, বরং প্রাচ্যের আধ্যাত্মিক চিন্তাধারা – বিশেষ করে ঈশ্বরের সাথে সরাসরি ব্যক্তিগত যোগাযোগের অনন্য বিজ্ঞানের একটি আকর্ষণীয় ভূমিকা তুলে ধরেছে, এযাবৎকাল যা মাত্র কতিপয় মনুষ্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। যোগী-কথামৃত পুস্তকটি বিশ্বজুড়ে আজ আধ্যাত্মিক সাহিত্যের একটি কালোত্তীর্ণ সৃষ্টি রূপে স্বীকৃত।

যোগী-কথামৃত প্রেক্ষাপটের অসাধারণ ইতিহাস

এই গ্রন্থের রচনার ভবিষ্যদ্বাণী অনেক আগেই করা হয়েছিল। আধুনিক যুগে যোগের নবজাগরণের অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব, ঊনবিংশ শতাব্দীর শ্রদ্ধেয় গুরু শ্রীশ্রী লাহিড়ী মহাশয় ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন:

‎ আমার মৃত্যুর প্রায় পঞ্চাশ বছর পর, আমার জীবনের এক বিবরণী লেখা হবে, কারণ, পাশ্চাত্যে যোগের প্রতি গভীর আগ্রহ তৈরি হবে। যোগের বার্তা বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়বে। এটি মানুষের বিশ্ব ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করবে; যা মানবতার প্রত্যক্ষ উপলব্ধির ওপর ভিত্তি করে একই পিতার সন্তানের ঐক্য বন্ধন।

বহু বছর পরে, লাহিড়ী মহাশয়ের মহান শিষ্য স্বামী শ্রীযুক্তেশ্বর শ্রী যোগানন্দকে এই ভবিষ্যদ্বাণীটি বর্ণনা করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন “এই বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া এবং সেই পবিত্র জীবনী লেখার ক্ষেত্রে তোমার ভূমিকা অবশ্যই পালন করতে হবে।”

লাহিড়ী মহাশয়ের মৃত্যুর ঠিক পঞ্চাশ বছর পর, ১৯৪৫-এ পরমহংস যোগানন্দ তাঁর গুরুর নির্দেশানুযায়ী যোগী-কথামৃত গ্রন্থটি সম্পূর্ণ করেন: যা লাহিড়ী মহাশয়ের অসাধারণ জীবনের ইংরেজিতে প্রথম বিস্তারিত উপস্থাপনা প্রদান এবং বিশ্বের দর্শকদের কাছে ভারতের প্রাচীন অধ্যাত্ম বিজ্ঞানের পরিচয় জ্ঞাপন।

একটি পনেরো বছরের প্রেমপূর্ণ শ্রম

পরমহংস যোগানন্দ যোগী-কথামৃত প্রকল্পটির কাজ করেছেন বহু বছর ধরে। তাঁর প্রথমদিকের অন্তরঙ্গ শিষ্যদের এক জন, শ্রীশ্রী দয়ামাতা স্মরণ করেন:

daya-mata-bliss

‎ “১৯৩১-এ যখন আমি মাউন্ট ওয়াশিংটনে আসি, তখন পরমহংসজি ইতিমধ্যেই আত্মজীবনী লেখা শুরু করে দিয়েছিলেন। একবার যখন আমি তাঁর লেখালিখির কাজে সচিবের দায়িত্বে ছিলাম, তখন তাঁর লেখা প্রথম অধ্যায়গুলির মধ্যে একটি দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল –এটি ছিল ‘ব্যাঘ্র স্বামী’। তিনি আমাকে এটি সংরক্ষণ করতে বলেছিলেন এবং বলেছিলেন যে এটি তাঁর লেখা একটি বইতে যাবে। বইটির বেশিরভাগ অংশই পরে, ১৯৩৭ থেকে ১৯৪৫-এর মধ্যে রচিত হয়েছিল।”

১৯৩৫-এর জুন থেকে ১৯৩৬-এর অক্টোবর পর্যন্ত, শ্রী যোগানন্দ তাঁর গুরু স্বামী শ্রী যুক্তেশ্বরের সাথে শেষ সাক্ষাতের জন্য (ইউরোপ এবং প্যালেস্টাইন হয়ে) ভারতে ফিরে এসেছিলেন। সেখানে থাকাকালীন, তিনি আত্মজীবনীর জন্য অনেক তথ্য সংগ্রহ করেছিলেন, সেই সাথে ছিল তাঁর জানা নানা সাধু ও ঋষিদের জীবনের কাহিনী, যা তিনি এত আকর্ষণীয়ভাবে বর্ণনা করেছেন।

‎ পরে তিনি লিখেছিলেন, “শ্রীযুক্তেশ্বরের নির্দেশানুসারে লাহিড়ী মহাশয়ের জীবনী লেখার কথা, আমি কখনও ভুলিনি। ভারতে থাকাকালীন যোগাবতারের সরাসরি শিষ্য ও আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে যোগাযোগ —তাঁদের সঙ্গে কথোপকথনের বিশাল বিবৃতি সংরক্ষণ, সাল তারিখ সহ তার সত্যতা যাচাই করা, ফোটোগ্রাফ, পুরনো চিঠিপত্র, প্রমাণাদি যথাসম্ভব সংগ্রহ করেছি।”

১৯৩৬-এর শেষের দিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে আসার পর, তিনি দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার উপকূলে এনসিনিটাস-এ তাঁর অনুপস্থিতিতে নির্মিত আশ্রমে তাঁর বেশিরভাগ সময় কাটাতে শুরু করেন। বহু বছর আগে তিনি যে বইটি লেখা শুরু করেছিলেন তা সম্পূর্ণ করার জন্য এটি একটি আদর্শ স্থান প্রমাণিত হয়েছিল।

শ্রী দয়ামাতা স্মরণ করেন, “আমার স্মৃতিতে এখনও সমুদ্রতীরবর্তী সেই শান্তিপূর্ণ আশ্রমে কাটানো দিনগুলি উজ্জ্বল। তাঁর এত বেশি দায়িত্ব এবং প্রতিশ্রুতি ছিল যে তিনি প্রতিদিন আত্মজীবনী লেখার জন্য কাজ করতে পারতেন না; সাধারণত তিনি সন্ধ্যার সময় এবং অবসর সময় এটির জন্য উৎসর্গ করতেন।”

১৯৩৯ বা ‘৪০-এর দিকে, তিনি পুরো সময় বইটিতে মনোনিবেশ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। এবং পুরো সময় ছিল – এক ভোর থেকে পরের দিন ভোর পর্যন্ত! আমাদের শিষ্যদের একটি ছোটো দল – তারা মাতা; আমার বোন, আনন্দ মাতা; শ্রদ্ধা মাতা; এবং আমি তাঁকে সহায়তা করার জন্য উপস্থিত ছিলাম। প্রতিটি অংশ টাইপ করার পরে, তিনি এটি তাঁর সম্পাদিকা তারা মাতাকে দিতেন।

“কি মূল্যবান সেসব স্মৃতি! তিনি যখন লিখতেন, তখন তিনি অন্তরে সেই পবিত্র অভিজ্ঞতাগুলিকে পুনরুজ্জীবিত করতেন, যা তিনি লিপিবদ্ধ করছিলেন। তাঁর ঐশ্বরিক উদ্দেশ্য ছিল সাধু ও মহান গুরুদের সান্নিধ্যে এবং নিজস্ব ব্যক্তিগত ঈশ্বরোপলব্ধিতে প্রাপ্ত আনন্দ এবং প্রকাশিত সত্য সবার সঙ্গে ভাগ করে নেওয়া। প্রায়শই তিনি কিছুক্ষণের জন্য থেমে যেতেন, তাঁর দৃষ্টি থাকত কূটস্থে; দেহ স্থির হয়ে যেত ঈশ্বরের সাথে গভীর যোগাযোগের সমাধি অবস্থায়। পুরো ঘরটি ঐশ্বরিক প্রেমের এক অসাধারণ শক্তিশালী আভায় ভরে যেত। আমাদের শিষ্যদের জন্য, কেবল এই সময়ে উপস্থিত থাকা মানে চেতনার উচ্চতর অবস্থায় উন্নীত হওয়া।

“অবশেষে, ১৯৪৫-এ, আনন্দের দিনটি এলো, গ্রন্থটির সমাপ্তি। পরমহংসজি শেষ কথাগুলি লিখেছিলেন, ‘প্রভু, আপনি এই সন্ন্যাসীকে একটি বৃহৎ পরিবার দিয়েছেন’; তারপর তাঁর কলমটি রেখে আনন্দের সাথে বললেন:

“এবার সব শেষ হল। এই বই লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন বদলে দেবে। আমি যখন চলে যাব তখন এটি আমার বার্তাবাহক হবে।”

এরপর একজন প্রকাশক খুঁজে বের করার দায়িত্ব শ্রী তারা মাতার উপর বর্তায়। ১৯২৪-এ সান ফ্রান্সিসকোতে ধারাবাহিক বক্তৃতা এবং ক্লাস পরিচালনা করার সময় পরমহংস যোগানন্দের সাথে তারা মাতার সাক্ষাৎ হয়েছিল। বিরল আধ্যাত্মিক অন্তর্দৃষ্টির অধিকারী, তিনি তাঁর সবচেয়ে উন্নত শিষ্যদের মধ্যে একজন হয়ে ওঠেন। তিনি তাঁর সম্পাদকীয় দক্ষতাকে সর্বোচ্চ সম্মান করতেন এবং বলতেন যে, তাঁর দেখা সকলের মধ্যে তিনি ছিলেন সবচেয়ে উজ্জ্বল মনের একজন।

তিনি ভারতের শাস্ত্রীয় জ্ঞান সম্পর্কে তার বিশাল জ্ঞান এবং বোধগম্যতার প্রশংসা করেছিলেন এবং একবার মন্তব্য করেছিলেন: “আমার মহান গুরু শ্রীযুক্তেশ্বরজি ছাড়া, এমন আর কেউ নেই যার সাথে আমি ভারতীয় দর্শন সম্পর্কে আলোচনা করে এত আনন্দ পাই।”

তারা মাতা পাণ্ডুলিপিটি নিউ ইয়র্ক সিটিতে নিয়ে গেলেন। কিন্তু প্রকাশক খুঁজে বের করা সহজ কাজ ছিল না। প্রায়শই দেখা যায়, একটি মহান কাজের প্রকৃত মর্যাদা প্রথমে প্রথাগত মানুষদের দ্বারা স্বীকৃতি নাও পেতে পারে। নবসৃষ্ট পারমাণবিক যুগে মানবতার সামগ্রিক চেতনাকে পদার্থ, শক্তি এবং চিন্তার সূক্ষ্ম ঐক্যের ক্রমবর্ধমান বোধগম্যতার সাথে প্রসারিত করা সত্ত্বেও, তৎকালীন প্রকাশকরা “হিমালয়ে এক প্রাসাদ সৃষ্টি” এবং “দুই দেহধারী সাধু”- র মতো অধ্যায়গুলির স্বীকৃতিতে খুব কমই প্রস্তুত ছিলেন!

বছরখানেক ধরে, তারা মাতা প্রকাশনা সংস্থাগুলিতে ঘোরাঘুরি করার সময় আসবাবপত্রশূন্য ঠান্ডা স্যাঁতস্যাঁতে এক ফ্ল্যাটে থাকতেন। অবশেষে তিনি সাফল্যের খবর সহ একটি কেবল পাঠাতে সক্ষম হলেন। নিউ ইয়র্কের এক স্বনামধন্য প্রকাশক, ফিলোসফিক্যাল লাইব্রেরি, আত্মজীবনীটি প্রকাশনার জন্য গ্রহণ করে। শ্রী যোগানন্দ বলেছিলেন, “[তিনি] এই বইটির জন্য যা করেছেন তা আমি বর্ণনা করতে অক্ষম…, কিন্তু তিনি ব্যতীত বইটি কখনও প্রকাশ করা যেত না।”

এক বিস্ময়কর অভ্যর্থনা

বিশ্ব সংবাদমাধ্যম এবং পাঠকবর্গ প্রশংসার ঝড় তুলে বইটিকে স্বাগত জানিয়েছে।

কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটি প্রেস তাদের রিভিউ অফ রিলিজিয়ন্স-এ লিখেছে, “যোগের এই উপস্থাপনা ইংরেজি বা অন্য কোনও ভাষায় আগে কখনও লেখা হয়নি।”

দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস এটিকে “একটি বিরল বিবরণ” বলে ঘোষণা করেছে।
নিউজউইক রিপোর্ট করেছে, “যোগানন্দের আত্মজীবনীতে বস্তুজগতের চেয়ে অধ্যাত্মজগতের প্রাধান্য বেশি… এটি এক আধ্যাত্মিক জীবনধারার আকর্ষণীয় এবং সুস্পষ্ট টীকাযুক্ত অধ্যয়ন, যা প্রাচ্যের মনোমুগ্ধকর শৈলীতে চতুরতার সাথে বর্ণিত হয়েছে।”

দ্রুত দ্বিতীয় সংস্করণ প্রস্তুত করা হল, এবং ১৯৫১-তে তৃতীয় সংস্করণ। বইটির কিছু অংশ সংশোধন ও আধুনিকীকরণ করে, বর্তমানে প্রযোজ্য নয় এমন কিছু সাংগঠনিক কার্যকলাপ এবং পরিকল্পনা বর্ণনাকারী কিছু অনুচ্ছেদ মুছে ফেলার পাশাপাশি, পরমহংস যোগানন্দ ১৯৪০-১৯৫১ পর্যন্ত ঘটনাসমূহকে অন্তর্ভুক্ত করে একটি চূড়ান্ত অধ্যায় যোগ করলেন, যা বইটির দীর্ঘতম অধ্যায়গুলির মধ্যে অন্যতম।

নতুন অধ্যায়ের পাদটীকায় তিনি লিখেছেন, “এই বইয়ের (১৯৫১) তৃতীয় সংস্করণের ৪৯তম অধ্যায়ে অনেক নতুন উপাদান যুক্ত করা হয়েছে। প্রথম দুটি সংস্করণের বেশ কয়েকজন পাঠকের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে, আমি এই অধ্যায়ে ভারত, যোগ এবং বৈদিক দর্শন সম্পর্কে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিয়েছি।”

পরমহংস যোগানন্দ অতিরিক্ত কিছু সংশোধন করেছিলেন যা সপ্তম সংস্করণে (১৯৫৬) অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল এবং এটি এই সংস্করণে প্রকাশকের মন্তব্যে বর্ণিত হয়েছে। যোগদা সৎসঙ্গ সোসাইটি অফ ইন্ডিয়া/সেল্ফ রিয়লাইজেশন ফেলোশিপ-এর সকল সাম্প্রতিক সংস্করণে এই বইয়ের চূড়ান্ত লেখ্য বিষয়ে যোগানন্দের অভিপ্রায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

শ্রী যোগানন্দ ১৯৫১-র সংস্করণে প্রকাশিত একটি লেখকের মন্তব্যে লিখেছেন, “হাজার হাজার পাঠকের চিঠি পেয়ে আমি তীব্রভাবে অনুপ্রাণিত হয়েছি। তাদের মন্তব্য এবং বহু ভাষায় অনূদিত বইটি, এই সত্য আমাকে বিশ্বাস করতে উৎসাহিত করেছে যে,পাশ্চাত্যবাসী এই পৃষ্ঠাগুলিতে ‘প্রাচীন যোগ বিজ্ঞান কি আধুনিক মানুষের জীবনে কোনো মূল্যবান স্থান পেয়েছে?'” — এই প্রশ্নের একটি ইতিবাচক উত্তর খুঁজে পেয়েছে।”

একটি প্রবহমান উত্তরাধিকার

কালের ধারায় “হাজার হাজার পাঠক” লক্ষ লক্ষ হয়ে উঠেছে এবং যোগী-কথামৃত-র স্থায়ী এবং সর্বজনীন আবেদন ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। ৭৫ বছরেরও বেশি সময় আগে প্রথম প্রকাশিত হওয়ার পর, এটি এখনও আধ্যাত্মিক এবং অনুপ্রেরণামূলক সর্বাধিক বিক্রীত পুস্তকের স্থান পাচ্ছে — একটি বিরল ঘটনা! বহু ভাষায় অনূদিত, এটি বর্তমানে প্রাচ্য দর্শন ও ধর্ম থেকে শুরু করে ইংরেজি সাহিত্য, মনোবিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান, নৃতত্ত্ব, ইতিহাস, এমনকি বাণিজ্য প্রশাসন-এর মতো বিভিন্ন বিষয়ে পঠনপাঠনের জন্য সারা বিশ্বের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ব্যবহৃত হচ্ছে। লাহিড়ী মহাশয়ের এক শতাব্দীরও বেশি সময় আগে ভবিষ্যদ্বাণী অনুসারে, যোগের বার্তা এবং ধ্যানের প্রাচীন ঐতিহ্য প্রকৃতপক্ষে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে।
বইটির অন্তিম অধ্যায়ে, পরমহংস যোগানন্দ সেই গভীর আশ্বাসের কথা লিখেছেন যা যুগ যুগ ধরে বিশ্বের সমস্ত ধর্মের সাধু-ঋষিরা নিশ্চিত করেছেন:

“ঈশ্বর হলেন প্রেম; সৃষ্টির জন্য তাঁর পরিকল্পনা কেবল প্রেমের মধ্যেই নিহিত থাকতে পারে। জ্ঞানগর্ভ যুক্তির পরিবর্তে, সেই সরল চিন্তা কি মানুষের হৃদয়কে সান্ত্বনা দেয় না? পরম সত্যের গভীরে পৌঁছনো প্রতিটি সাধক সাক্ষ্য দিয়েছেন যে একটি ঐশ্বরিক সার্বজনীন পরিকল্পনা বর্তমান এবং এটি সুন্দর এবং আনন্দে পরিপূর্ণ।”

যোগী-কথামৃত বইটি যখন দ্বিতীয় অর্ধ শতাব্দীতে পা রাখছে, তখন আমাদের আশা যে এই অনুপ্রেরণামূলক গ্রন্থের সকল পাঠক — যারা প্রথমবারের মতো এটির মুখোমুখি হচ্ছেন এবং যাদের জন্য এটি জীবনের পথে দীর্ঘকালীন সঙ্গী হয়ে উঠেছে — তারা তাদের আত্মাকে জীবনের আপাত রহস্যের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা অতীন্দ্রিয় সত্যের প্রতি গভীর বিশ্বাসের জন্য উন্মুক্ত দেখতে পাবেন।

এই শেয়ার করুন