পরমহংস যোগানন্দের জীবনব্যাপী প্রচারকার্যসমূহের অন্যতম ছিল বিশ্বের সকল প্রকৃত ধর্মের অন্তস্থিত অভিন্ন ও মৌলিক সত্যকে প্রচার করা এবং প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য — উভয় সত্য সন্ধানীদের ঈশ্বরানুভূতির সার্বজনীন বিজ্ঞান প্রদান করা, যা প্রত্যেক মানুষের মধ্যে সুপ্ত সহজাত দৈবিক সত্ত্বার এক গভীর সচেতনতায় জাগ্রত হওয়ার উপায়।
পরমহংসজি তাঁর বক্তৃতা ও রচনার মাধ্যমে বিশ্বের সর্ব ধর্মের একত্ব প্রচার করেন। এদের মধ্য দিয়ে তিনি প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মহান ধর্মশাস্ত্রসমূহের অন্তর্নিহিত আধ্যাত্মিক সত্যের উদঘাটন করে দেখিয়েছেন কিভাবে এইসকল পবিত্র সাহিত্য ঈশ্বরমিলনের সর্বজনীন পথে তাঁর সন্ধানীদের পরিচালিত করে।
এই পৃষ্ঠাগুলিতে আমরা নিউ টেস্টামেন্টের (বাইবেলের নতুন ভাগ) চারটি গসপেল (জিশুর উপদেশাবলি), ভারতের ভগবদগীতা এবং দ্য রুবাইয়াত অফ ওমর খৈয়ম (যদিও সাধারণত ধর্মশাস্ত্ররূপে বিবেচ্য নয়, রুবাইয়াত — গূঢ় অর্থবহ কবিতাগুচ্ছের জনপ্রিয় সংকলন যা ইসলামিক ঐতিহ্য অনুসারে সুফি নির্দেশিত গোপন ঐশ্বরিক সত্যের পরিচায়ক।)-এর ওপর যোগানন্দের উচ্চ প্রশংসিত ভাষ্যের কিছু উদ্ধৃতাংশ তুলে ধরব।
আমরা পরমহংস যোগানন্দের রচনা থেকে আরও অংশ এখানে সংযুক্ত করতে থাকলে আপনাকে এই বিভাগে প্রত্যাবর্তনের জন্য আমন্ত্রণ জানাই। এছাড়াও আমরা প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য ধর্মশাস্ত্রের মূলগত একত্ব বিষয়ে যোগানন্দের গুরুদেব, স্বামী শ্রীযুক্তেশ্বরের অসামান্য গ্রন্থসমূহের ওপর আলোকপাত করব।
“নিখিল মহাবিশ্বের জ্ঞান গীতায় পরিপূর্ণ। অতলস্পর্শী অথচ জ্ঞানগর্ভ ভাষায় সুব্যক্ত… গীতার জ্ঞান মানবিক কর্ম ও আধ্যাত্মিক প্রচেষ্টার সকল স্তরে প্রতীত ও প্রযুক্ত হয়েছে…। ঈশ্বরের কাছে প্রত্যাবর্তনের যাত্রাপথে গীতা তার আলোক বিকীর্ণ করবে।”
— পরমহংস যোগানন্দ

“স্থান কাল নির্বিশেষে সকল ধর্মগুরুগণ তাঁদের ঈশ্বরানুসন্ধানে সফল হয়েছেন। সাধুসন্তগণ এক প্রকৃত উদ্দীপ্ত অবস্থা, নির্বিকল্প সমাধিতে প্রবেশ করে সকল নাম ও রূপের অন্তরালে সেই পরম সত্যকে উপলব্ধি করেছেন। তাঁদের প্রজ্ঞা ও আধ্যাত্মিক নির্দেশনা বিশ্বের ধর্মশাস্ত্রে পরিণত হয়েছে। এই ধর্মশাস্ত্র সকল বৈচিত্রময় শাব্দিক ব্যঞ্জনায় আপাতদৃষ্টিতে ভিন্ন হলেও কোথাও উন্মুক্ত ও সুস্পষ্টরূপে, আবার কোথাও প্রচ্ছন্ন অথবা প্রতীকীরূপে — পরমাত্মার সেই অভিন্ন মৌলিক সত্যকেই প্রকাশিত করে।
“আমার গুরুদেব, শ্রীরামপুরের জ্ঞানাবতার স্বামী শ্রীযুক্তেশ্বর (১৮৫৫—১৯৩৬), সনাতন ধর্ম এবং খ্রিস্ট ধর্মশাস্ত্রের মধ্যস্থ অন্তর্নিহিত ঐক্য বিশেষভাবে উপলব্ধি করেছিলেন। তাঁর মনের নির্মল স্থানে স্থাপিত পবিত্র ধর্মগ্রন্থসমূহকে অন্তর্দৃষ্টিমূলক যুক্তির দ্বারা সূক্ষ্ম বিশ্লেষণ এবং ধর্মপ্রবক্তা কর্তৃক প্রদত্ত প্রকৃত সত্যকে প্রক্ষেপিত রচনা ও ভ্রান্ত ভাষ্য থেকে পৃথক করতে সমর্থ হয়েছিলেন।”
— পরমহংস যোগানন্দ

“রুবাইয়াত-এর আধ্যাত্মিক ব্যাখ্যার ওপর কাজ করার সময় আমি সত্যের অনন্ত গোলকধাঁধাঁয় প্রবেশ করে বিস্ময়ে আপ্লুত হয়ে গেছিলাম। এই কবিতা সংকলনে নিহিত খৈয়মের আধ্যাত্মিক এবং ফলিত দর্শন আমাকে ‘দ্য রিভিলেসন অফ সেন্ট জন দ্য ডিভাইন’-এর কথা মনে করিয়ে দেয়।‘”
— পরমহংস যোগানন্দ