“আত্মানুভূতি হল দেহ, মন ও আত্মা দিয়ে এটা উপলব্ধি করা যে আমরা সর্বত্র বিদ্যমান ঈশ্বরের সঙ্গে এক...”
—পরমহংস যোগানন্দ
পরমহংস যোগানন্দজি, সহস্র সহস্র বছর আগে ভারতবর্ষ থেকে উদ্ভূত পবিত্র আধ্যাত্মিক বিজ্ঞান ক্রিয়াযোগের বিশ্বজনীন শিক্ষা ভারতবর্ষ ও তার প্রতিবেশী দেশগুলিতে প্রচারের উদ্দেশ্যে ১৯১৭-তে যোগদা সৎসঙ্গ সোসাইটি (ওয়াইএসএস) প্রতিষ্ঠা করেন। এই অসাম্প্রদায়িক শিক্ষা হল একটি সম্পূর্ণ দর্শন এবং পূর্ণাঙ্গ সাফল্য ও সমৃদ্ধি লাভ করার জন্য জীবনযাত্রার এক প্রণালী, সেই সঙ্গে জীবনের চূড়ান্ত লক্ষ্য আত্মার সঙ্গে পরমাত্মার মিলন লাভ করার ধ্যান পদ্ধতির বিমূর্ত রূপ।
পরমহংস যোগানন্দজি প্রণীত লক্ষ্য এবং আদর্শ-তে যেমন বিবৃত আছে, ওয়াইএসএস-র প্রার্থনা, বিভিন্ন ধর্মের মানুষের মধ্যে এক উন্নততর বোধ এবং মঙ্গলার্থভাবের উন্মেষ। এর লক্ষ্য হল সকলকে তাদের জীবনে মানবাত্মার সৌন্দর্য, মহত্ব এবং পবিত্রতার অনুভব এবং আরও স্পষ্ট করে তার প্রকাশে সাহায্য করা।
ভারতবর্ষের বাইরে ও তার প্রতিবেশী দেশেতে পরমহংস যোগানন্দের শিক্ষা, পাশ্চাত্যে থাকার সময় ১৯২০-তে পরমহংসজি যে সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন সেই সেল্ফ-রিয়লাইজেশন ফেলোশিপ (এসআরএফ) এর মাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে।
আজকের দিনেও তাঁর জীবৎকালের মতই ওয়াইএসএস, পরমহংস যোগানন্দজির শিক্ষা মুদ্রিত যোগদা সৎসঙ্গ পাঠমালা-র মাধ্যমে সকলের কাছে উপলব্ধ করেছে। ঘরেবসে পাঠ করার উপযুক্ত বিস্তারিত এই পাঠমালাক্রমে ক্রিয়াযোগ বিজ্ঞানের সমস্ত ধ্যান প্রক্রিয়ার বিষয় তৎসহ যোগানন্দজির শেখানো সম্যক জীবনযাপনের অন্যান্য বিষয়ে নির্দেশ দেওয়া আছে।

রাঁচি, দক্ষিণেশ্বর, নয়ডা, দ্বারহাট এবং চেন্নাই-তে ওয়াইএসএস-এর পাঁচটি আশ্রম আছে। এছাড়া ভক্তদের জন্য আটটি নিভৃতাবাস রয়েছে, ইগতপুরী, সিমলা, পুনে, ডিহিকা, পুরী, শ্রীরামপুর, তেলাড়ি, কোয়েম্বাটরে এবং এর সঙ্গে ভারতবর্ষ ও নেপাল জুড়ে ২০০টির বেশি কেন্দ্র এবং মন্ডলী রয়েছে।
শ্রীশ্রী দয়ামাতা, পরমহংস যোগানন্দজির জীবনকালের অন্যতম প্রথম এবং ঘনিষ্ঠ শিষ্যা যিনি ১৯৫৫ থেকে ২০১০-এ দেহত্যাগের আগে পর্যন্ত যোগদা সৎসঙ্গ সোসাইটি অফ ইন্ডিয়া/সেল্ফ-রিয়লাইজেশন ফেলোশিপ- এর আধ্যাত্মিক প্রধান এবং অধ্যক্ষ ছিলেন। শ্রীশ্রী মৃণালিনী মাতা ছিলেন যোগানন্দজির আর একজন ঘনিষ্ঠ শিষ্যা, ২০১১ থেকে ২০১৭-র দেহত্যাগের আগে পর্যন্ত তিনি এই পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। শ্রীশ্রী স্বামী চিদানন্দ গিরি হলেন ওয়াইএসএস/এসআরএফ-এর বর্তমান আধ্যাত্মিক প্রধান ও অধ্যক্ষ।
ওয়াইএসএস-এর অধিকাংশ নারী পুরুষ ভক্তেরা পেশা এবং পারিবারিক দায়িত্ব পালন করে, যোগদা সৎসঙ্গের শিক্ষা প্রণালীর মাধ্যমে ধ্যানের সঙ্গে কাজকর্মের সাম্যাবস্থা বজায় রাখতে শেখেন। যোগানন্দজির শিক্ষার মধ্যে দিয়ে তারা বিবাহ এবং পারিবারিক জীবনকে আধ্যাত্মিকতাপূর্ণ করে তোলা এবং ব্যবসা ও পেশাগত প্রচেষ্টায় সাফল্য এবং উন্নতি করার পথনির্দেশ লাভ করেন। এইভাবে তারা সার্থক সেবাপরায়ণতায় তাদের সমাজ, দেশ এবং বৃহত্তর পৃথিবীর জন্য অবদান রাখেন।
পরমহংসজির ইচ্ছানুযায়ী তাঁর যোগদা সৎসঙ্গ সোসাইটির কাজ ভারতবর্ষের প্রাচীন সন্ন্যাসী পরম্পরার ঐতিহ্য অনুসারে তাঁর প্রতিষ্ঠিত সন্ন্যাসী পরম্পরার নির্দেশ অনুযায়ী হয়ে থাকে। ওয়াইএসএস-এর সন্ন্যাসীরা যোগদা সৎসঙ্গের ভক্ত ও মিত্রদের আধ্যাত্মিক প্রয়োজনে সাহায্য করার দায়িত্ব নিয়ে প্রথাগতভাবে সংসার ত্যাগ করার শপথ নিয়ে থাকেন।
ভারতীয় উপমহাদেশে যোগদা সৎসঙ্গ সোসাইটি অফ ইন্ডিয়া-র বহু সেবামূলক কাজের মধ্যে কিছু হল:
- পরমহংস যোগানন্দজি এবং তাঁর সন্ন্যাসী শিষ্যদের রচনা, বক্তৃতা, এবং বক্তব্যের রেকর্ডিং মুদ্রিত ও ইবুক আকারে প্রকাশ করা।
- আশ্রম, নিভৃতাবাস এবং ধ্যানকেন্দ্র পরিচালনা করা — ওয়াইএসএস অনলাইন ধ্যানকেন্দ্র সহ — যেখানে সকল সম্প্রদায়ের মানুষ সৌহার্দ্যপূর্ণ সৎসঙ্গের জন্য এক হতে পারেন।
- পরমহংস যোগানন্দজির শিক্ষার প্রতি নিবেদিত একটি ওয়েবসাইট এবং ইউটিউব চ্যানেল চালানো যেখানে তাঁর সন্ন্যাসী শিষ্যদের ভিডিও বার্তাও অন্তর্ভুক্ত আছে। ওয়াইএসএস ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম এবং টুইটারে তার সোশ্যাল মিডিয়া উপস্থিতিও বজায় রাখে।
- যোগদা সৎসঙ্গ, দেহ, মন এবং আত্মার আরোগ্যকারী একটি পত্রিকা।
- ওয়াইএসএস সন্ন্যাসী সম্প্রদায়ের সন্ন্যাসীদের আধ্যাত্মিক প্রশিক্ষণ
- নিয়মিত বক্তৃতা সফর, বিভিন্ন অঞ্চলে সাধনাসংগম সহ ক্লাস পরিচালনা করা। সাধনাসংগম হল কয়েকদিন ব্যাপী এক আধ্যাত্মিক অনুষ্ঠান যেখানে পরমহংস যোগানন্দর ক্রিয়াযোগ ধ্যান প্রক্রিয়া এবং শিক্ষায় গভীরভাবে মনোনিবেশ করা হয়।
- ছোটোদের জন্য ধ্যান এবং আধ্যাত্মিক জীবনযাপনের ওপর অনুষ্ঠান
- চিঠি, টেলিফোন এবং ব্যক্তিগতভাবে স্বতন্ত্র আধ্যাত্মিক সহায়তা প্রদান
- বিভিন্ন দাতব্য কর্ম এবং সমাজ কল্যাণমূলক কাজে সহায়তা করা
- বিশ্বব্যাপী প্রার্থনা চক্রের কাজ পরিচালনায় সহায়তা করা, যাদের শারীরিক, মানসিক বা আধ্যাত্মিক সহায়তা দরকার তাদের এবং বিশ্ব শান্তি ও সম্প্রীতি রক্ষার্থে প্রার্থনা করার জন্য নিবেদিত বিভিন্ন ভক্তমন্ডলী ও ব্যক্তিদের নেটওয়ার্ক।
