যোগদা সৎসঙ্গ আশ্রম, দক্ষিণেশ্বর

Dakshineswar (kolkata) Ashram near Ganges

২১, উপেন্দ্রনাথ মুখার্জী রোড, দক্ষিণেশ্বর, কলকাতা – ৭০০০৭৬
ফোন: +91 (33) 2564 5931, +91 (33) 2564 6208, +91 8420873743, +91 9073581656
যোগদা সৎসঙ্গ সোসাইটি অফ ইন্ডিয়ার রেজিস্ট্রিকৃত অফিস।
ইমেইল: [email protected]

ওয়েবসাইট লিংক: dakshineswar.yssashram.org

পরমহংস যোগানন্দ তাঁর ১৯৩৫-৩৬-এ ভারত সফরের সময় কলকাতা থেকে রাজর্ষি জনকানন্দকে লিখেছিলেন, “তুমি জেনে খুশি হবে যে আমি বাংলার মুকুট, কলকাতা শহরে একটি স্থায়ী কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করার জন্য অবিরাম কাজ করে যাচ্ছি আর মনে হচ্ছে আমি প্রায় সফল হতে চলেছি।” (রাজর্ষি জনকানন্দ-এ গ্রেট ওয়েস্টার্ন য়োগি)। পরে তিনি তাঁর যোগী কথামৃত-তে লিখেছিলেন, “১৯৩৯-এ দক্ষিণেশ্বরে ঠিক গঙ্গার তীরে যোগদা মঠ নামে একটি প্রকাণ্ড মঠ প্রতিষ্ঠিত হয়। কলকাতার মাইলকয়েক উত্তরে এই আশ্রমটি শহরবাসীদের পক্ষে একটি পরম রমণীয় শান্তিময় স্থান। যোগদা সৎসঙ্গ সোসাইটি, তার বিদ্যালয় এবং ভারতবর্ষের বিভিন্ন স্থানে তার কেন্দ্র ও আশ্রমগুলির প্রধান কার্যালয় হচ্ছে দক্ষিণেশ্বর মঠ।”

মঠটি আগে দুই একর জমির ওপর বিস্তৃত আস্তাবলসহ একটি ‘বাগান বাড়ি’ ছিল, যেখানকার আস্তাবলকে পরে কাজের জায়গায় রূপান্তরিত করা হয়েছিল। একটি বিশাল পুকুর ছিল যার এখনও যত্ন নেওয়া হচ্ছে। সাম্প্রতিক কালে, আমাদের ঈশ্বরপ্রতিম গুরুর পরিকল্পনা অনুসারে ভারত ও বিদেশ থেকে আসা দর্শনার্থী ভক্তদের সুবিধার্থে একটি অতিথিশালা, রান্নাঘর এবং খাবারের জায়গা যোগ করা হয়েছিল।

দক্ষিণেশ্বর জায়গাটি কলকাতার উত্তরে হুগলি নদীর (মা গঙ্গা এখানে এই নামে পরিচিত) পূর্ব তীরে অবস্থিত। দক্ষিণেশ্বর নামটি এখানকার বিখ্যাত কালী মন্দির থেকে এসেছে যা দক্ষিণমুখী। এখানকার আবহাওয়া সাধারণত উষ্ণ এবং আর্দ্র তবে নভেম্বর-ফেব্রুয়ারিতে ঠাণ্ডা থাকে।

এই মঠটি শ্রীশ্রী দয়া মাতাজি এবং শ্রীশ্রী মৃণালিনী মাতাজির উপস্থিতিধন্য, যাঁরা তাঁদের বহু ভারত সফরের সময় এখানে থেকে ছিলেন।

ব্যক্তিগত এবং পরিচালিত উভয়প্রকার আধ্যাত্মিক নিভৃতাবাসের জন্য ভক্তরা এখানে সাদর আমন্ত্রিত। তবে অগ্রিম বুকিং থাকা অত্যাবশ্যক। যে সব ভক্তেরা ব্যক্তিগত কাজে কলকাতায় আসেন, তাঁরা আশ্রমের বাইরে থাকুন, তবে কাজ শেষ হয়ে গেলে আশ্রম দেখতে আসতে পারেন, বা ব্যক্তিগত আধ্যাত্মিক নিভৃতাবাসের জন্য আশ্রমে থাকতে পারেন।

কলকাতায় বিশেষ দেখার জায়গার মধ্যে একটি হল ৪ নং গড়পাড় রোডে গুরুদেবের বাড়ি। তাঁর সাধনার প্রথম দিকে তিনতলার চিলেকোঠার ঘরটি তাঁর ধ্যান, অশ্রু বিসর্জন এবং আবেগঝঞ্ঝার সাক্ষী ছিল। তাঁর হিমালয়ে পলায়নের অসফল প্রচেষ্টার সময় এই ঘরের জানালা থেকেই তিনি তাঁর যাত্রার জন্য আবশ্যকীয় জিনিসপত্রর গাঁটরিটি নীচে ছুঁড়ে দিয়েছিলেন। পরে মাস্টার মহাশয়ের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি এই ঘরে বসেই ধ্যান করেছিলেন যতক্ষণ না জগন্মাতা তাঁর সামনে উপস্থিত হয়ে তাঁকে আশ্বাসন দিয়েছিলেন – “আমি তোমায় সর্বদাই ভালোবেসেছি! সর্বদাই আমি তোমায় ভালোবাসব!”

১৯২০-তে বাবাজি গুরুদেবের ঘরে তাঁকে দর্শন দিয়েছিলেন। আমেরিকা যাওয়ার আগে গুরুদেব ঈশ্বরের অনুমতি পাওয়ার সংকল্প করেছিলেন। তিনি ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত প্রার্থনা করেছিলেন। বাবাজি তাঁকে আশ্বাস দিয়েছিলেন “পাশ্চাত্যে ক্রিয়াযোগের বার্তা ছড়িয়ে দেবার জন্য আমি তোমাকেই বেছে নিয়েছি।” ২৫-শে জুলাইয়ের সেই দিনটি, ওয়াইএসএস/এসআরএফ-এর ভক্তদের দ্বারা বাবাজি স্মৃতি দিবস হিসেবে পালিত হয়। দোতলার এই ঘরটিতে কিছু পুরোনো পারিবারিক ছবিও রাখা আছে। গুরুদেবের বাড়িটির রক্ষণাবেক্ষণ তাঁর ভাই সনন্দ লাল ঘোষের বংশধরেরা ভালোভাবেই করে থাকেন, এঁরা ভক্তদের শিষ্টতার সঙ্গে স্বাগত জানিয়ে থাকেন।

পীতাম্বর ভট্টাচার্য লেনে ওয়াইএসএস গড়পাড় রোড কেন্দ্রটি হল তাঁর বাল্যবন্ধু তুলসী বোসের বাড়ির ঠিক পিছনে, যেখানে গুরুদেব বাল্যাবস্থায় ধ্যান করতেন। প্রতি শনিবারে এখনও সন্ধ্যা ৪:৩০-৭:৩০ পর্যন্ত এখানে ধ্যান পরিচালনা করা হয়। ৫০ আমহার্স্ট স্ট্রিট সেই বাড়ি যেখানে গুরুদেবের মা পরলোকগমন করেন। পরে বহু বছর মাস্টার মহাশয় এখানে বাস করেছিলেন। গুরুদেব এবং তাঁর ভাই এখানে মাস্টার মহাশয়ের সঙ্গে বসে ধ্যান করার সময় তাঁদের মায়ের দিব্য দর্শন পেয়েছিলেন। আপার সার্কুলার রোডে (এ.পি. সি. রোড) ভাদুড়ী মহাশয়ের (লঘিমাসিদ্ধ সাধু) বাড়িটিও, যা এখন নগেন্দ্র মঠে পরিণত হয়েছে, ভক্তদের জন্য খোলা আছে।

শ্রীরামপুর দক্ষিণেশ্বর থেকে প্রায় ২০ কিমি দূরে। গুরুদেবের কলেজ জীবনের সাথে যুক্ত বেশিরভাগ জায়গাই রাই ঘাট লেনে (বুড়ো বিবি লেন) শ্রীযুক্তেশ্বরজির আশ্রমের কাছাকাছি ছিল। পুরোনো আশ্রমটির জায়গায় এখন একটি স্মৃতিমন্দির রয়েছে। কাছেই গুরুদেবের কাকা সারদাপ্রসাদ ঘোষের বাড়ি, যেখানে গুরুদেব কিছুকাল ছিলেন। গুরুদেবের খুড়তুতো ভাই, প্রভাসচন্দ্র ঘোষ, গুরুদেবের ঘরটিকে একটি মন্দিরে রূপান্তরিত করেছেন এবং নাম দিয়েছেন আনন্দলোক।

গঙ্গার দিকে কয়েক মিনিট হেঁটে গেলেই রাই ঘাট, যে জায়গায় (বটগাছ সহ) ‘দ্য হোলি সায়েন্স’ বইটি লেখা শেষ করার পর শ্রীযুক্তেশ্বরজিকে বাবাজি দর্শন দিয়েছিলেন।

রাই ঘাট থেকে কয়েক পা দূরে গঙ্গার ওপর ছাত্রদের জন্য পন্থী বোর্ডিং হাউস, যেখানে গুরুদেব কয়েক বছর ছিলেন। পুরোনো কাঠামোর কিছু অংশ এখনও রয়ে গেছে।

কিছুদূরে শ্রীরামপুর কলেজও গঙ্গার ধারে। গুরুদেব এখানেই বি. এ. পড়েছিলেন। কলেজ ভবনের ভেতরে প্রবেশ করা যায়, এমনকি তিনি যে সব ক্লাসঘরগুলিতে পড়াশোনা করেছিলেন সেখানেও প্রবেশ করা সম্ভব।

১৮৫৫-তে নির্মিত দক্ষিণেশ্বরের বিখ্যাত কালী মন্দিরটি আমাদের আশ্রম থেকে প্রায় এক কি.মি. দূরে। নয়টি চূড়াবিশিষ্ট মন্দিরের গর্ভগৃহে ভবতারিণী (যিনি তাঁর ভক্তদের ভবসাগর পার করে নিয়ে যান) মূর্তিতে মা কালী বিরাজিত। মা শায়িত শিবের বুকে দণ্ডায়মান। উভয় মূর্তিই এক হাজার পাপড়ি বিশিষ্ট পালিশ করা রূপোর পদ্মের ওপর অধিষ্ঠিত।

এই মন্দিরের সাথে গুরুদেবের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কথা তাঁর আত্মজীবনীতে ভালোভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, একবার যখন তিনি তাঁর জ্যেষ্ঠ ভগিনী রমা এবং তাঁর স্বামী সতীশকে এই মন্দিরে নিয়ে গিয়েছিলেন, তখন গুরুদেবের একটি দিব্যদর্শন হয়েছিল। প্রকৃতপক্ষে, গুরুদেব প্রায়ই মন্দির দর্শনে যেতেন এবং ধ্যান করতেন – প্রথমে মন্দিরের সামনের বারান্দায়, তারপর শ্রীরামকৃষ্ণের ঘরে এবং তারপর কয়েক ঘন্টা ধরে পঞ্চবটির বটগাছের নীচে যেখানে শ্রীরামকৃষ্ণ জ্ঞানজ্যোতি প্রাপ্ত হয়েছিলেন। পঞ্চবটিতে ধ্যান করাকালীন গুরুদেবও সমাধি লাভ করেছিলেন।

২০ একর মন্দির প্রাঙ্গণে নদীর ধার দিয়ে শিবের ভিন্ন ভিন্ন রূপের উদ্দেশ্যে নির্মিত ১২টি শিবমন্দির রয়েছে, এছাড়া একটি রাধা-কৃষ্ণের মন্দির এবং গঙ্গার ওপর একটি স্নানের ঘাট রয়েছে। সেই ঘরটিও আছে যেখানে শ্রীরামকৃষ্ণ তাঁর জীবনের শেষ ১৪ বছর কাটিয়েছিলেন, এখানে তাঁর ব্যবহৃত বেশ কিছু জিনিসপত্রও রাখা আছে। আরেকটি ঘর আছে যেখানে শ্রীশ্রীমা সারদা দেবী থাকতেন। ভৈরবী ব্রাহ্মণী যোগেশ্বরী বকুলতলা ঘাটে শ্রীরামকৃষ্ণকে ‘তন্ত্র সাধনায়’ তাঁর শিষ্য করেছিলেন। বকুলতলার উত্তরে পঞ্চবটি নামক প্রশস্ত খোলা জায়গা, যেখানে শ্রীরামকৃষ্ণের নির্দেশনায় বট, অশ্বত্থ, নিম, আমলকি এবং বিল্ব বা বেলের ৫টি গাছ লাগানো হয়েছিল। এখানেই শ্রীরামকৃষ্ণ ১২ বছর ধরে সাধনা করেছিলেন, এই সময় শ্রী তোতাপুরীর তত্ত্বাবধানেও তিনি সাধনা করেছিলেন।

এইসব স্থান এবং বেলুড় মঠ, স্বামী বিবেকানন্দের বাড়ি প্রভৃতি অন্যান্য স্থান পরিদর্শনে আশ্রমের সেবকরা আনন্দের সাথে ভক্তদের সাহায্য এবং সহায়তা করে থাকেন।

এই শেয়ার করুন