সন্ন্যাস জীবনের চারটি পর্যায়

থাকি তোমার চরণতলে
জীবন আমার, অঙ্গ আমার, আমার ভাবনা আর কথা।
সবই তোমার; কারণ সবই তোমার।

— পরমহংস যোগানন্দ

ওয়াইএসএস আশ্রমে সন্ন্যাস জীবনের চারটি পর্যায় আছে, এগুলি সর্বত্যাগীর জীবন ও সন্ন্যাসব্রত অঙ্গীকারের ক্রমশ গভীরতর প্রয়াসকে উপস্থাপিত করে। এই পর্যায়গুলি নির্দিষ্ট সময়ের নয়। পারতপক্ষে প্রত্যেক সন্ন্যাসীর আধ্যাত্মিক উন্নতি ও এই জীবনে ব্যক্তিগতভাবে ত্যাগে নিজেকে আরও সম্পূর্ণরূপে উৎসর্গ করার তৎপরতার ওপর বিবেচিত হয়।

নবীন প্রবেশার্থী:

সাধারণত তিন বছরব্যাপী প্রথম ধাপটি নবীন প্রবেশার্থীদের জন্য নিরূপিত। নবীন প্রবেশার্থীদের দলগত ও ব্যক্তিগত ধ্যান, প্রার্থনার অনুরোধকারীদের জন্য প্রার্থনা, ভক্তিমূলক ভজন, আধ্যাত্মিক অধ্যয়ন, আত্মসমীক্ষা, চিত্তবিনোদন ও তাদের দায়িত্ব দেওয়া যে কোনো ক্ষেত্রে সেবা ইত্যাদি আশ্রমিক নিত্যকর্মের সূচি মেনে চলতে হয়।

সর্বত্যাগীকে সন্ন্যাসের আদর্শ ও জীবনধারা সম্পর্কে এক পরিপূর্ণ ধারণা দেবার জন্য প্রবেশার্থীদের আশ্রমিক কর্মসূচিগুলি পরিকল্পিত। প্রবেশার্থীকে মনোভাব ও অভ্যাস উন্নত করে তার আধ্যাত্মিক জীবনকে আরও গভীরতর করতে এবং পরমাত্মা ও গুরুর সাথে একাত্ম হতে সাহায্য করার ওপর এটি জোর দেয়। আশ্রমিক জীবনের এই প্রথম ধাপটি সর্বত্যাগীকে তার আত্মত্যাগের পথে চলার অভিপ্রায়ের গভীরতা পরিমাপ করতে ও সাথে সাথে সর্বত্যাগীর আধ্যাত্মিক উন্নতির জন্য দায়িত্বপ্রাপ্তদের তাকে ক্রমাগত সন্ন্যাসের আদর্শের আরও গভীরতর অনুধাবনের জন্য সহায়তায় সম্মতি দেয়।

Postulants in a Spiritual Study Session

বরিষ্ঠ প্রবেশার্থী:

নবীন প্রবেশার্থী পর্যায়ের শেষে আশ্রমিক জীবনের জন্য সুসংহত বলে প্রবেশার্থী নিজে ও তার উপদেষ্টা উভয়ই নিশ্চিত হলে ওই প্রবেশার্থী বরিষ্ঠ প্রবেশার্থী কর্মসূচিতে যোগদানের আমন্ত্রণ পান। প্রত্যাশা করা যায়, নবীন প্রবেশার্থী পর্যায়ে শেখা মূলতত্ত্বের প্রয়োগে ত্যাগব্রতী তার বরিষ্ঠ প্রবেশার্থী পর্যায়ে সন্ন্যাসধর্ম পালনের ক্রমবর্ধমান উপলব্ধির প্রকাশে সমর্থ হবে। প্রতিষ্ঠানকে আরও সেবা করার দায়িত্ব নেওয়ার সুযোগও তার ওপর ন্যস্ত হয়।

ব্রহ্মচর্য

Brahmacharya Stage of YSS Monastic Lifeবেশ কয়েকবছর পরে একজন বরিষ্ঠ প্রবেশার্থী ওয়াইএসএস সন্ন্যাসী রূপে পরমাত্মার সন্ধান ও সেবায় জীবন উৎসর্গ করার ক্রমবর্ধমান আকাঙ্খা ও সক্ষমতাকে প্রদর্শন করতে পারলে ব্রহ্মচর্য ব্রতের জন্যে আমন্ত্রিত হন। (ব্রহ্মচর্য একটি সংস্কৃত শব্দ,আত্মার সঙ্গে পরমাত্মার একাত্মতার উদ্দেশ্যে নিজের চিন্তা ও কর্মের সংযম ও আত্মনিয়ন্ত্রণকে নির্দেশ করে।) এই ব্রত শিষ্যের যোগদা সৎসঙ্গ সোসাইটি অফ ইন্ডিয়ার আশ্রমে জীবনের শেষক্ষণ পর্যন্ত সারল্য, কৌমার্য্য, আনুগত্য ও বিশ্বস্ততার সাথে সন্ন্যাসী হয়ে থাকার গভীর অভিপ্রায়কে সূচিত করে।

এই ব্রত গ্রহণের পর ত্যাগব্রতী একজন ব্রহ্মচারী রূপে পরিগণিত হন। আইনগত নাম ত্যাগ করে, একটি বিশেষ আধ্যাত্মিক আদর্শ বা গুণ, যার তিনি উদাহরণ হতে বা অর্জন করতে চান তেমন একটি সংস্কৃত নাম গ্রহণ করেন। একজন ব্রহ্মচারী জানেন তাঁকে আশ্রমের বৃহত্তর দায়িত্ব পালন করতে হতে পারে — ভক্তিমূলক অনুষ্ঠান পরিচালনার প্রশিক্ষণ, বিশেষ বিশেষ কাজের দায়িত্ব অথবা সন্ন্যাসীদের আধ্যাত্মিক পথপ্রদর্শকদের নির্দেশিত যে কোনো রকম সেবার দায়িত্ব।

সন্ন্যাস

সর্বশেষ ব্রত সন্ন্যাস, ঈশ্বর, গুরু, পরমগুরুগণ ও যোগদা সৎসঙ্গ সোসাইটি অফ ইন্ডিয়ার প্রতি ত্যাগব্রতীর সম্পূর্ণ ও সারাজীবনের অঙ্গীকার নির্দেশ করে; যোগদা সৎসঙ্গ সোসাইটি অফ ইন্ডিয়ার সর্বত্যাগী সন্ন্যাসী রূপে ওয়াইএসএস সন্ন্যাসীর ব্রত ও আদর্শ বিশ্বস্তভাবে পালনের অঙ্গীকার করেন। সমস্ত তুচ্ছ বাসনাকে পরিহার করে যোগদা সৎসঙ্গের পথে শুধুমাত্র ঈশ্বরবোধে জীবনধারণ এবং নিঃশর্ত আত্মোৎসর্গ ও আনুগত্যে পরমাত্মার সেবায় সন্ন্যাসীর আন্তরিক দৃঢ়সংকল্পকে সূচিত করে। বহুবছর আশ্রমিক জীবনযাপন করার পরে ব্রহ্মচারীরা নিজেদের ও তাদের ঊর্ধ্বস্থদের কাছে নিজেকে এই পরম অঙ্গীকারের জন্য প্রস্তুত প্রমাণ করলে তবেই সন্ন্যাস ব্রত পান। এই ব্রত প্রাচীন ভারতের স্বামী সম্প্রদায়ের সন্ন্যাসীদের নেওয়া ব্রতের অনুসারী হয়।

ঈশ্বরে সম্পূর্ণ উৎসর্গীকৃত জীবনধারণের সাথে সাথে সন্ন্যাসী চারিত্রিক পরিপূর্ণতা, সেবা, সর্বোপরি ঈশ্বরপ্রেমে আরও সযত্নে সচেষ্ট হন। তিনি পরমহংস যোগানন্দের শিক্ষা ও সোসাইটির উচ্চ আদর্শের দৃষ্টান্তের পবিত্র দায়িত্ব গ্রহণ করেন আর সেই দৃষ্টান্তের মাধ্যমে অন্যান্যদের ঈশ্বরীয় অনুসন্ধানের জন্য অনুপ্রেরণা ও উৎসাহ দান করেন।

২০১৫ মার্চে রাঁচিতে নূতন প্রশাসনিক ভবন “সেবালয়” -এর সমর্পণ অনুষ্ঠানে ওপর থেকে দক্ষিণাবর্তে, স্বামী শ্রদ্ধানন্দ, স্বামী শুদ্ধানন্দ, স্বামী ললিতানন্দ, স্বামী স্মরণানন্দ, স্বামী মাধবানন্দ, ও স্বামী ঈশ্বরানন্দ
From left: Swamis Santoshananda (SRF), Madhavananda (YSS), Shraddhananda (YSS) and Bhumananda (SRF)
স্বামী শ্রদ্ধানন্দ (ডানদিক থেকে দ্বিতীয়) ও স্বামী মাধবানন্দ (বামদিক থেকে দ্বিতীয়) -এর সাথে ইউনাইটেড স্টেটস-এর এসআরএফ আশ্রম থেকে পরিদর্শনে আসা স্বামী সন্তোষানন্দ (বাঁদিকে) ও স্বামী ভূমানন্দ (ডানদিকে)

পরমহংস যোগানন্দের আশ্রমে আত্মোন্নতি, ধ্যান ও মানবতার সেবায় উৎসর্গীকৃত জীবনযাপনের সুযোগ সম্বন্ধে আরও জানতে আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে আপনাদের আমন্ত্রণ জানাই।

এই শেয়ার করুন