“আত্মসমীক্ষণ — আধ্যাত্মিক উন্নতির জন্য অলৌকিক উপকরণ” প্রসঙ্গে স্বামী চিদানন্দ গিরি

নিম্নলিখিত অংশটি যোগদা সৎসঙ্গ সোসাইটি/সেল্ফ-রিয়লাইজেশন ফেলোশিপ-এর অধ্যক্ষ এবং আধ্যাত্মিক প্রধান স্বামী চিদানন্দ গিরি কর্তৃক প্রদত্ত বক্তৃতা “দ্য ভগবদ্গীতা: মাস্টারফুল গাইড ফর এভরিডে স্পিরিচ্যুয়াল লিভিং” থেকে উদ্ধৃত।

ভারতের উন্নত যোগের শ্রেষ্ঠ ধর্মগ্রন্থ ভগবদ্গীতার প্রথম শ্লোকে আমরা আত্মসমীক্ষণের মহান গুরুত্বের উল্লেখ পাই।

এটি শুরু হয়, “কুরুক্ষেত্রের রণক্ষেত্রে মুখোমুখি সমবেত” — (অহংকারের প্রতীক) অশুভ শক্তি কুরু এবং (আত্মার প্রতীক) শুভশক্তি পাণ্ডব, একে অপরের মুখোমুখি — “তারা আজ কী করল?” আজকের রণক্ষেত্রে কে জয়ী হল? এরপর পরমহংস যোগানন্দ তাঁর গীতার ভাষ্য গড টকস উইথ অর্জুন-এ আত্মসমীক্ষণ বিজ্ঞানের সুন্দর প্রাঞ্জল ব্যাখ্যা করেছেন।

আমাদেরকে পরিবর্তিত করার লক্ষ্যে আত্মসমীক্ষণ একটি অলৌকিক উপকরণ। দিনের শেষে একবার শান্ত মনে সারাদিনের ঘটনাক্রমের পর্যালোচনা করা — কীভাবে আমরা প্রতিক্রিয়া জানিয়েছি, কীভাবে আমরা সাড়া দিয়েছি, কীভাবে আমরা আরও ভালোভাবে পরিস্থিতি সামলাতে পারতাম, বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া ও অভিজ্ঞতা থেকে আমরা কী কী শিক্ষাগ্রহণ করলাম — সার্বিক উন্নতিসাধনের লক্ষ্যে এটি একটি বিস্ময়কর উপকরণ।

কিন্তু এটি কিছু মানুষের জন্য খুব কার্যকরী হলেও অন্যান্য মানুষের পক্ষে অতীব কঠিন কাজ হয়ে পড়ে কেন? একথা কি কখনও চিন্তা করে দেখেছেন? পরমহংসজি কথিত “মানসিক দ্বন্দ্বে জয়ী” হতে জীবনযুদ্ধের এই অমোঘ অস্ত্রটিকে স্বেচ্ছায় গ্রহণ করতে কখনও কি আপনি নিজেকে অসমর্থবোধ করেছেন?

আমার মনে হয় কারণটি খুবই সহজ বিষয়, এবং তা হল আত্মসমীক্ষণের ওপর আমাদের মনোভাব।

একদিকে যেমন আমাদের মধ্যে কয়েকজন যারা আত্মসমীক্ষণে নিজের সামান্যতম ভুলভ্রান্তি লক্ষ্য করলেই কাতর হয়ে পড়েন, “আমি কী সাংঘাতিক লোক! আমি এত বোকার মতো কাজ করলাম কীভাবে?” ইত্যাদি ইত্যাদি। এটা আত্মসমীক্ষণ নয়। এই মনোভাব নিয়ে আমরা যদি আত্মসমীক্ষণ করার চেষ্টা করি, তাহলে আমরা আত্মসমীক্ষণকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছি, এবং এর সুযোগ গ্রহণ করছি না।

কিন্তু অপরপক্ষে, যারা আপন কর্ম, মনোভাব, অভ্যাস পর্যালোচনা — এবং সেই সঙ্গে তাদের জীবনের গতিপথ — আমাদের সকলের মধ্যে নিহিত ঐশ্বরিক সম্ভাবনার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বলেন, “আমি কীভাবে আমার প্রচ্ছন্ন সম্ভাবনাকে জাগরিত করতে পারি? আমি কীভাবে বাধাকে অতিক্রম করে জীবনকে আরও আনন্দময়, প্রেমময়, আরও জ্ঞানপ্রবুদ্ধ, আরও শান্তি ও নিরাপত্তার মধ্যে থাকতে পারি?” এই পদ্ধতির অনুসরণ আমাদের আত্মসমীক্ষণের প্রক্রিয়া বদলে দেয়।

আত্মসমীক্ষণের এই প্রক্রিয়া অবলম্বন করার একটি পরামর্শই আমি দিয়ে থাকি: এটা কোনো জটিল ব্যাপার নয়। আপনি নিজেই এই প্রক্রিয়াকে সরল এবং নিজস্ব করে তুলতে পারেন।

জীবনে আপনি আধ্যাত্মিক, মানসিক, এমনকি বৈষয়িক যা কিছু অর্জন করতে চান, আপনার লক্ষ্য, বিশেষ দক্ষতা অর্জনের ইচ্ছা, এবং প্রাত্যহিক জীবনকে সুসংবদ্ধ করার প্রচেষ্টার: যেমন ধ্যানসাধনা এবং অন্যান্য উদ্দেশ্য যেমন সেবার মনোভাব অথবা সহৃদয়তা, অথবা অন্যদের প্রতি সঠিক মনোভাবের বিবরণ লিপিবদ্ধ করুন।

আমাদের প্রত্যেকের জন্যই এগুলি বিভিন্ন প্রকৃতির হলেও আমরা তালিকাটি তৈরি করতেই পারি এবং প্রতিদিন একবার করে পর্যালোচনাও করতে পারি — ব্যাস এটুকুই। এটি কোনো গুপ্ত বা জটিল বিষয় নয়।

আরও অনেক কিছু আপনারা করতে পারেন। অতঃপর আপনারা একবার পড়ে দেখতে পারেন যে পরমহংস যোগানন্দজি আপনার তালিকাভুক্ত বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে কী কী বলেছেন; এবং একটি সংকল্প উক্তির সাথে নিজের উন্নতিসাধনের লক্ষ্যে অগ্রসর হতে পারেন। দিনে একবার করে তালিকাটিতে চোখ বুলিয়ে নেওয়া ছাড়া আপনি যদি কিছু নাও করেন, তাহলেও জানবেন যে আপনি মানসিক বিভ্রমের বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালিয়ে নিজেকে পরিবর্তিত এবং উন্নত করে চলেছেন।

কথিত আছে যে “ঋষিগণ যা করেন তা অসাধারণ; কিন্তু তাঁরা সেটা সর্বক্ষণই করে থাকেন।” আমাদের একটা হুঁশ আছে যে আমরা কীভাবে জীবনযাপন করতে চাই। এটা শুধুমাত্র মনের মধ্যে রেখে দেওয়া।

সুতরাং, আত্মসমীক্ষণের অলৌকিক সরঞ্জামটিকে প্রাত্যহিক আত্মবীক্ষণের একটি উত্তম অভ্যাসে গড়ে তুলুন: প্রতিদিন সন্ধ্যায় ধ্যান করার পর তালিকাটির ওপর একবার চোখ বুলিয়ে নিন। সঠিক মনোভাব নিয়ে এটি অভ্যাস করলে ঈপ্সিত লক্ষ্যপ্রাপ্তি সহজতর হবে — এবং আনন্দ যা আপনি অনুভব করবেন।

আপনার ঈপ্সিত লক্ষ্যপ্রাপ্তি এবং পার্থিব ও আধ্যাত্মিক সাফল্য সুনিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় আত্মসমীক্ষণের সরঞ্জামের প্রয়োগ বিষয়ে আমরা আরও কিছু অতিরিক্ত উপাদান উত্থাপিত করতে মনস্থ করেছি:

  • ২০২১-এ আয়োজিত এসআরএফ বিশ্ব সমাবর্তনে স্বামী ইষ্টানন্দ গিরি প্রদত্ত বক্তৃতা “ইন্ট্রোস্পেকশন — এক্সপ্লোরিং দ্য ওয়ার্কিংস অফ ইওর ইনার সেল্ফ” এর একটি ভিডিও
  • ২০২১-এ এসআরএফ-এর সাপ্তাহিক অনলাইন অনুপ্রেরণামূলক অনুষ্ঠানে স্বামী গোবিন্দানন্দ গিরি প্রদত্ত ভাষণ “ইন্ট্রোস্পেকশন — কি টু সেল্ফ-ডিসকভারি”-এর একটি ভিডিও
  • যোগদা সৎসঙ্গ পাঠমালার ছাত্রদের ধ্যান এবং আধ্যাত্মিক জীবনযাপন কল্পে ঘরে-বসে পাঠের জন্য পরমহংস যোগানন্দের সম্পূরক পাঠ সংখ্যা ৬৯, “দ্য আর্ট অফ ইন্ট্রোস্পেকশন এণ্ড সাইকোলজিক্যাল সেল্ফ-অ্যানালিসিস”

এই শেয়ার করুন