“আত্মা রূপে আপনি চিরনবীন — এই সত্যকে প্রকাশ করুন” প্রসঙ্গে শ্রী দয়ামাতা

৯ই এপ্রিল, ২০২৪

শ্রীশ্রী দয়ামাতা ১৯৫৫ থেকে ২০১০-এ তাঁর জীবনাবসান পর্যন্ত যোগদা সৎসঙ্গ সোসাইটি অফ ইন্ডিয়া/সেল্ফ-রিয়লাইজেশন ফেলোশিপ-এর প্রিয় সংঘমাতা ও অধ্যক্ষ ছিলেন। তাঁর দ্বিমাসিক চিঠিপত্র বহু দশক ধরে ওয়াইএসএস-এর ভক্তদের কাছে পথনির্দেশনা ও অনুপ্রেরণার মূল্যবান উৎস ছিল। এখানে উপস্থাপিত চিঠিটি ২০০১-এ প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল, যেখানে তিনি সস্নেহে যৌবনের প্রকৃত উৎস ও আমাদের জীবনে তা আনন্দের সাথে প্রতিফলিত করার উপায় সম্বন্ধে স্মরণ করিয়ে দেন।

প্রিয় ভক্তগণ,

আজকের দিনে মানুষের প্রধান লক্ষ্য হল যৌবনকে দীর্ঘায়িত করা। কিন্তু তারা কেবল বাইরে দেখতে তরুণ এবং তরুণোচিত কাজ করতে পারার ওপর মনোনিবেশ করে। পরমহংস যোগানন্দ তাঁর জীবনে প্রদর্শন করেছিলেন যে যৌবন হল একটি উন্নীত চেতনার অবস্থা যা জীবনের প্রাণশক্তি এবং সাধনার ক্ষমতাকে পুষ্ট করে।

তিনি এমন এক জগতে বাস করতেন যেখানে দিব্য চিন্তাই বাস্তব ও তিনি আমাদের শেখাতেন সেই সব চিন্তার অভ্যাস করতে যার কারণে আমাদের দেহ ও মন আমাদের প্রকৃত সত্তাকে ব্যক্ত করে: “তুমিই আত্মা, তাই তুমি চিরনবীন। এই চিন্তা দিয়ে নিজের চেতনাকে প্রভাবিত করো:‘আমি আত্মা, চিরনবীন পরমাত্মার এক প্রতিফলন। যৌবন, উচ্চাভিলাষ ও সাফল্যলাভের ক্ষমতা আমাকে সতেজ করে রেখেছে।’”

যাঁরা তাঁদের দৈনন্দিন জীবনে ঈশ্বরকে নিয়ে এসেছেন, তাঁরাই সবচেয়ে প্রাণবন্ত ও “জীবন্ত” ব্যক্তি।

শারীরিক উপায়ে তারুণ্য ধরে রাখার চেষ্টা, যতক্ষণ তারা ঈশ্বরের স্বাস্থ্যবিধির ওপর প্রতিষ্ঠিত, ততক্ষণ সেগুলি মূল্যবান, যদিও অবশ্যম্ভাবীরূপে ক্ষণস্থায়ী। প্রকৃত যৌবন শারীরিক সুস্থতা রক্ষার চেয়ে অনেক বেশি কিছু। এটি মন ও আত্মার এক প্রাণশক্তি যা অন্তর থেকে বিকিরিত হয় — এক আনন্দ যা ঈশ্বরের শাশ্বত শক্তি ও পরমানন্দের সাথে আমাদের গভীর অন্তর্নিহিত সংযোগ অনুভবের ফলে জন্মায়।

আমি ভক্তদের মধ্যে তারুণ্যোচিত প্রবল উৎসাহের আত্মিক সদগুণ দেখতে খুব ভালোবাসি, যা জীবনের অভিজ্ঞতার সর্বোত্তম সদ্ব্যবহার করার ইতিবাচক মনোভাব ও দৈহিক সীমাবদ্ধতা দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হতে অস্বীকার করার মধ্য দিয়ে প্রকাশ পায়।

আমরা কিশোরই হই বা “প্রবীণ নাগরিক”, যখন আমরা আমাদের মন ও ক্ষমতার সকল সম্ভাবনাকে বিকশিত করতে সদা উৎসাহী হই, যখন আমাদের হৃদয় সর্বদা দান ও সেবা করতে প্রস্তুত থাকে, যখন পরিস্থিতির ভালো-মন্দ নির্বিশেষে আমরা ঈশ্বরে বিশ্বাস রাখি, তখন আমরা প্রকৃতপক্ষে অন্তরের “যৌবনের ঝর্ণা” থেকে পান করছি।

পরমহংসজিকে তাঁর বয়স জিজ্ঞাসা করলে তিনি আনন্দের সঙ্গে বলতেন:“আমার কোনো বয়স নেই; আমার বয়স এক – অনন্ত।” তোমার বাহ্যিক কায়াকে অতিরিক্ত গুরুত্ব দিও না; এটি পৃথিবীতে তোমার বহু সাময়িক প্রবাসের সময় ধারণ করা অসংখ্য পার্থিব পোশাকের মধ্যে একটি।

দিনের মধ্যে বারবার এবং বিশেষত যখন মন ধ্যানে অন্তর্মুখী হয়ে একাগ্র হয়, তখন নিজেকে স্মরণ করিয়ে দিন যে আপনি একটি আত্মা যিনি ঈশ্বরের চিরন্তন জীবনে সমৃদ্ধ, তাঁর অবিনশ্বর যৌবন ও সৌন্দর্যে ভূষিত। পরমহংসজি বলেছিলেন: “পরমপিতার সঙ্গে তোমার একত্ব অনুভব করো…। অনুভব করো যে তাঁর মহিমা তোমার দেহ, মন ও আত্মায় তাঁর অসীম অমরত্ব অঙ্কিত করছে।”

ঈশ্বর আপনাদের ভালোবাসেন,

দয়ামাতা

এই শেয়ার করুন