পরমহংস যোগানন্দের “প্রাণশক্তির রহস্য”

৯ই এপ্রিল, ২০২৪

পরমহংসজি তাঁর বই এবং পাঠমালাতে দেখিয়েছেন কীভাবে আমরা প্রত্যেকে আমাদের শরীর ও মনে — প্রাণশক্তির বাহ্যিক ভৌত উৎস (সঠিক খাদ্য, সঠিক শ্বাসতন্ত্র, পর্যাপ্ত সূর্যালোক) এবং সেইসাথে অভ্যন্তরীণ উৎসের (দৈব প্রাণশক্তি এবং আত্মা ও পরমাত্মা থেকে আসা চেতনা) সচেতন ব্যবহারের মাধ্যমে অসাধারণ প্রাণশক্তি বজায় রাখা শিখতে পারি।

নিম্নলিখিত উদ্ধৃতাংশে পরমহংস যোগানন্দের বলা নীতিমালা তাঁর সংগৃহীত বক্তৃতা ও রচনার দ্বিতীয় খন্ড দ্য ডিভাইন রোমান্স-এর“হাউ টু ওয়ার্ক উইদাউট ফ্যাটিগ” থেকে সংগৃহীত।

প্রাণশক্তি সরবরাহের জন্য খাদ্য একটি গৌণ উৎস মাত্র। শরীরকে ঘিরে থাকা মহাবিশ্বের সর্বব্যাপী মহাজাগতিক ধীশক্তি থেকে শরীরে শক্তির সর্বাধিক প্রবাহ আসে…।

[ভারী] আহারকে শক্তিতে রূপান্তরিত করতে শরীরের কয়েক ঘন্টা সময় লাগে, কিন্তু যা কিছু তোমার ইচ্ছাশক্তিকে উদ্দীপিত করে তা তৎক্ষণাৎ শক্তি উৎপন্ন করে।

যোগদা সৎসঙ্গ সোসাইটি অফ ইন্ডিয়ার শক্তিসঞ্চার ব্যায়াম পদ্ধতি ইচ্ছাশক্তির প্রয়োগে মহাজাগতিক উৎস থেকে প্রাণশক্তি সঞ্চার করতে আর সেই শক্তিকে শরীরের লক্ষ কোটি কোশে কোশে বিতরণ করতে শেখায়।

অনাবশ্যকীয় কাজকর্ম, অসংযত আবেগ ও অপ্রকৃত জীবনযাপনের অভ্যাসে প্রাণশক্তি ক্রমাগত অপচয় হতে থাকে। তুমি শান্ত থাকলে খুব কম প্রাণশক্তি ব্যবহার করো, তবে যখন ক্রুদ্ধ থাকো বা ঘৃণাপূর্ণ অথবা অন্য কোনো আবেগঘন অবস্থায় থাকো, তখন প্রচুর প্রাণশক্তির ব্যবহার করো। কোনো সূক্ষ্ম যন্ত্র পরিচালনায় যথাযথ যত্ন প্রয়োজন হয়; শরীরযন্ত্র ব্যবহারের ক্ষেত্রেও একই মনোভাব প্রয়োগ করা উচিত…।

সুতরাং প্রাণশক্তির রহস্য হল তোমার প্রাণশক্তির ক্ষয় রোধ করা আর ইচ্ছাশক্তির সাহায্যে শরীরে নতুন প্রাণশক্তি যোগান দেওয়া। কীভাবে?

প্রথমত, তোমাকে স্বেচ্ছায় সক্রিয় হতে হবে। কোনো কাজ করার যোগ্য হলে সেটা স্বেচ্ছায় করা বিধেয়। তুমি যখন স্বেচ্ছায় কাজ করবে, তখন তোমার কর্মশক্তি বেশি থাকবে কারণ তখন তুমি মস্তিষ্কের সঞ্চিত শক্তিই কেবল ব্যবহার করছ না বরং শরীরে অনেক বেশি মহাজাগতিক শক্তি আকর্ষণ করছ…।

আমাদের কাজের জন্য, খাদ্য, অক্সিজেন ও সূর্যালোক থেকে পরিশোষণ করা বেশিরভাগ প্রাণশক্তির প্রবাহ আমরা শরীরকোশের ভৌত সরবরাহ থেকে পাই। সচেতন ইচ্ছাশক্তি ব্যবহার করে অদৃশ্য মহাজাগতিক উৎস থেকে পর্যাপ্ত প্রাণশক্তি আমরা শোষণ করি না।

ইচ্ছাশক্তি ও উদ্যম একসাথে চলে

ইচ্ছাশক্তির সচেতন প্রয়োগ আর কল্পনার মধ্যে পার্থক্য আছে। কল্পনা হল আমাদের চিন্তার এক রূপ, যার বাস্তব রূপ আমরা দেখতে চাই।

তুমি দিনরাত আরও বেশি প্রাণশক্তিতে ভরপুর হয়ে উঠছো কল্পনা করতে থাকলে তুমি কিছুটা শক্তি অর্জন করবে, কারণ কল্পনা করতে কিছুটা হলেও ইচ্ছাশক্তির প্রয়োজন হয়। পক্ষান্তরে, যখন কেউ প্রাণশক্তি ইচ্ছে করে, শক্তি তৎক্ষণাৎ সেখানে আসে।

মনে করো তুমি রেগে গিয়ে কাউকে সজোরে আঘাত করলে; আবেগের ফলে উদ্দীপিত ইচ্ছাশক্তি ওই কাজের জন্য জীবনীশক্তি আকর্ষণ করে: তবে সাথেসাথেই সেই শক্তিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়, আর তোমার জীবনীশক্তির হ্রাস হয়।

তবে তুমি যদি সুনির্দিষ্টভাবে ক্রমাগত তোমার শরীরে প্রাণশক্তি ইচ্ছা করো এবং যোগদা সৎসঙ্গ ব্যায়াম প্রদ্ধতির অনুশীলন দ্বারা সচেতন প্রাণশক্তি নিয়ন্ত্রণে ইচ্ছাশক্তি প্রয়োগ করো, তবে মহাজাগতিক উৎস থেকে অফুরন্ত প্রাণশক্তি আকর্ষণ করতে পারো।

শরীর শুধুমাত্র গুচ্ছ গুচ্ছ কোশের সমাহার, তাই এর শক্তির অভাব হলে আর তুমি ইচ্ছাশক্তির সাহায্যে এভাবে সারা শরীরকে তেজোময় করলে তৎক্ষণাৎ অবিরতভাবে ওই কোশগুচ্ছ আবার পুনরুজ্জীবিত হতে থাকে। ইচ্ছাশক্তিই হল দৈব উৎস থেকে শরীরে আরও প্রাণশক্তি প্রবেশের চাবি।

এইজন্যে ইচ্ছাশক্তি হল তারুণ্য ও প্রাণশক্তি বজায় রাখার এক শক্তিশালী উপাদান। তুমি যদি নিজেকে বৃদ্ধ বলে বিশ্বাস করো, ইচ্ছাশক্তি অচল হয়ে যায় আর তুমি বৃদ্ধসুলভ হয়ে পড়ো।

কখনও নিজেকে ক্লান্ত বলবে না; এটা ইচ্ছাশক্তিকে অচল করে দেয় আর তুমি ক্লান্ত হয়ে পড়ো। বলো, “আমার শরীর বিশ্রাম চায়।” তোমার শরীর যেন তার সীমাবদ্ধতাকে তোমার সত্তার ওপর চাপিয়ে দিতে না পারে। আত্মাকে অবশ্যই দেহকে শাসন করতে হবে, কারণ আত্মা দেহ দ্বারা সৃষ্ট নয় এবং দেহের ওপর নির্ভরশীলও নয়। আত্মার ইচ্ছাতেই নিহিত রয়েছে সমস্ত শক্তি।

ঈশ্বর ইচ্ছা করলেন, আর আলোর উদ্ভব হল — সেই মহাজাগতিক সৃজনশীল শক্তি যা আকাশে, আমাদের শরীরে এবং অন্যান্য সমস্ত রূপে ঘনীভূত হয়েছিল। ইচ্ছাই আলো, কারণ আলো ছিল ঈশ্বরের ইচ্ছার প্রথম প্রকাশ। আর তিনি দেখলেন এই আলো বা তড়িৎ শক্তি জীবনরূপ সৃষ্টি করার এক পরিপূর্ণ একক।

Tপদার্থই আলো নাকি আলোই পদার্থ এবিষয়ে বিজ্ঞানীরা চিন্তাভাবনা করছেন। প্রথমে আলো এসেছিল আর পদার্থের মৌলিক কাঠামো গঠন করে।

সুতরাং, আমাদের বুঝতে হবে যেখানেই ইচ্ছাশক্তি, সেখানেই প্রাণশক্তি। এটা খুবই সহজ নিয়ম। প্রাণশক্তি শুধুমাত্র ভৌত উৎস থেকে আসে এমন ধারণায় আমরা এতটাই অভ্যস্ত যে ইচ্ছাশক্তির প্রতিক্রিয়ায় তাৎক্ষণিক সাড়া দেওয়া মহাজাগতিক উৎসকে বিশ্বাস করতে আর তা থেকে প্রাণশক্তি নিতে ব্যর্থ হই।

যোগদা সৎসঙ্গ পদ্ধতি শিখলে এর মাধ্যমে তুমি নিজের ইচ্ছাশক্তি প্রয়োগ করে সরাসরি অসীম মহাজাগতিক উৎস থেকে প্রাণশক্তি আহরণ করতে পারবে, ক্লান্তিতে আর ভুগবে না।

পরমহংস যোগানন্দের ওয়াইএসএস শক্তিসঞ্চার ব্যায়াম এবং ক্রিয়াযোগ মার্গের অংশ হিসেবে শেখানো ধ্যানের সম্পূর্ণ বিজ্ঞান শিখতে, আমরা আপনাকে যোগদা সৎসঙ্গ পাঠমালা সম্পর্কে জানতে এবং তার জন্য আবেদন করার কথা বিবেচনা করতে আমন্ত্রণ জানাই — এটি পরমহংসজির একটি বিস্তৃত ঘরে বসে পাঠ যা দেহ, মন ও আত্মার প্রাণশক্তি এবং সর্বোচ্চ কল্যাণ সৃষ্টির জন্য তাঁর “সম্যক জীবনযাপন”-এর বিশদ শিক্ষা প্রদান করে।

তিনি অটোবায়োগ্রাফি অফ এ য়োগি-তে লিখেছেন, “ক্রিয়াযোগের সহজ ও নির্ভুল পদ্ধতিগুলির ক্রমিক ও নিয়মিত বর্ধিত অনুশীলনের মাধ্যমে মানবদেহ দিনে দিনে জ্যোতির্ময়তায় রূপান্তরিত হয়ে পরিশেষে অসীম মহাজাগতিক শক্তিকে প্রকাশ করার উপযুক্ত হয়ে ওঠে।”

এই শেয়ার করুন