
ভারতের বাংলার শ্রীরামপুরে ১৮৫৫-র মে মাসের ১০ তারিখে স্বামী শ্রীযুক্তেশ্বর জন্মগ্রহণ করেন। শ্রীযুক্তেশ্বর লাহিড়ী মহাশয়ের শিষ্য ছিলেন আর জ্ঞানাবতার অর্থাৎ জ্ঞানের অবতারের আধ্যাত্মিক মর্যাদা অর্জন করেছেন।
শ্রীযুক্তেশ্বর উপলব্ধি করেছিলেন প্রাচ্যের আধ্যাত্মিক ঐতিহ্য আর পাশ্চাত্যের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সমন্বয় আধুনিক বিশ্বের আধিভৌতিক, মানসিক ও আধ্যাত্মিক ক্লেশ প্রশমিত করতে বিশেষ ভূমিকা নিতে পারে। ১৮৯৪ সালে লাহিড়ী মহাশয়ের গুরু মহাবতার বাবাজির অসাধারণ সাক্ষাৎকারের পর তাঁর এই ধারণা আরও দৃঢ় হয়।
বাবাজি তাঁকে বলেন, “স্বামীজি, আমার অনুরোধে তুমি খ্রিস্টীয় আর হিন্দু ধর্মশাস্ত্রের মূলগত ঐক্য প্রদর্শন করে একটি ছোট্ট বই লেখো না কেন? মানুষের সাম্প্রদায়িক বিভেদের জন্য তাদের মৌলিক ঐক্য এখন সংশয়াকুল হয়েছে। এই দুই শাস্ত্র থেকে সমভাবের উক্তিসকল পাশাপাশি উদ্ধৃত করে দেখিয়ে দাও যে, ঈশ্বরের সন্তানেরা সবাই একই সত্য বলে গেছেন।”
শ্রীযুক্তেশ্বর স্মৃতিচারণ করলেন: “নীরব নিশীথে, বাইবেল আর সনাতন ধর্মশাস্ত্রের তুলনামূলক বিচার আরম্ভ করলাম। প্রভু জিশুখ্রিস্টের বাণী উদ্ধৃত করে দেখালাম যে, বেদের অন্তর্নিহিত সত্যের সঙ্গে তাঁর শিক্ষা মূলত এক। আমার পরমগুরুর কৃপাতেই আমার বই দি হোলি সায়েন্স-এর রচনা খুব অল্প সময়ের মধ্যেই শেষ হয়ে যায়।”
স্বামী শ্রীযুক্তেশ্বরের কাছে পরমহংস যোগানন্দ তরুণ বয়সে এসেছিলেন। এই মহান গুরু তাঁর তরুণ শিষ্যকে জানান, ১৮৯৪ সালের সাক্ষাতে মহাবতার বাবাজি তাঁকে বলেন: “স্বামীজি, পূর্ব-পশ্চিমের সুসঙ্গত ভবিষ্যৎ আদানপ্রদানের কাজে তোমায় অংশ গ্রহণ করতে হবে। বছরকয়েক বাদে আমি তোমার কাছে একটি শিষ্যকে পাঠাব যাকে পশ্চিমে যোগ প্রচারের কাজে তোমাকে তৈরী করে নিতে হবে। সেখানে বহু ধর্মপিপাসু আত্মার আকুল আহ্বান বন্যার মতো আমার কাছে এসে পৌঁছোচ্ছে। আমি অনুভব করছি যে, আমেরিকা আর ইউরোপে বহু সম্ভাব্য সাধুসন্তরা জাগরিত হবার জন্যে অপেক্ষা করছেন।”
এই বর্ণনা করে শ্রীযুক্তেশ্বরজি যোগানন্দজিকে বলেন, “বৎস, তুমিই সেই শিষ্য, যাকে বাবাজি মহারাজ বহু বছর আগে আমার কাছে পাঠিয়ে দেবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।”
শ্রীযোগানন্দ পাশ্চাত্যে তাঁর বিশ্বজনীন অভিযান শুরু করার জন্য শ্রীযুক্তেশ্বরের আধ্যাত্মিক শিক্ষা ও অনুশাসনে প্রস্তুত হয়েছেন। শ্রীযুক্তেশ্বর তাঁর অধ্যাত্ম ঐতিহ্য ও আশ্রমের সম্পত্তির একমাত্র উত্তরাধিকারি রূপে পরমহংস যোগানন্দকে মনোনীত করেন।
আমেরিকায় পনেরো বছর বাস করার পর পরমহংসজির ভারত সফরকালে ১৯৩৬-এর ৯মার্চ স্বামী শ্রীযুক্তেশ্বর মহাসমাধি প্রাপ্ত হন।