“যোগীরা কীভাবে আত্মসম্মানের উৎসের সঙ্গে যুক্ত হন” – স্বামী চিদানন্দ গিরি

৯ জুন, ২০২৩

ওয়াইএসএস/এসআরএফ-এর অধ্যক্ষ ও আধ্যাত্মিক প্রধান স্বামী চিদানন্দ গিরি-র “পার্থিব জগতে বাস করেও ঈশ্বর-সংযোগ বজায় রাখা” শীর্ষক প্রবন্ধ থেকে এই ‘ব্লগ পোস্ট’-টি নেওয়া হয়েছে, যা ২০২৩-এর আসন্ন যোগদা সৎসঙ্গ পত্রিকায় প্রকাশিত হবে।

আমরা যে প্রাথমিক মাধ্যম দিয়ে তথ্য সংগ্রহ করি তা হল ইন্দ্রিয়: আমরা দেখি, শুনি, আস্বাদন করি, স্পর্শ করি, অনুভব করি — এগুলিই হচ্ছে আমাদের অন্তর্চেতনা ও বাহ্য-জগতের মধ্যে আদান-প্রদান।

এ এক নিষ্ক্রিয় বা সচেতন প্রক্রিয়া — যে কোনো একটি হতে পারে। যোগী একে এক সচেতন প্রক্রিয়া করে তুলতে চায়, কারণ যে যোগী, যে ভক্ত, সে জানে যে একে আপন নিয়ন্ত্রণে না আনা, জগতকে আমাদের চেতনার ওপর প্রভুত্ব করতে দেওয়ার পরিণাম খুব দুঃখজনক ও কার্যত বেদনাদায়ক হতে পারে।

বহু মানুষের মধ্যে তীব্র একাকিত্ববোধ বা অযোগ্য হওয়ার বোধ থাকে, বা তাদের মনে হয় যে কেউ তাদের ভালোবাসে না। এই তীব্র একাকিত্ববোধের কারণ কী? এইসকল মানুষের মধ্যে এত ফাঁকা “শূন্যতা” কেন?

এর উত্তর খুবই সরল। তারা একা, কারণ তারা কখনও আপন সত্তার সঙ্গে বন্ধুত্ব করার সময় বের করে নি।

আমি অবশ্যই উচ্চতর সত্তার কথা বলছি, বিচিত্র মানসিক গঠন, অভ্যাস ও সীমাবদ্ধতাযুক্ত ক্ষুদ্র অহং-এর কথা নয়, আমি প্রকৃত সত্তা, অর্থাৎ আত্মার কথা বলছি।

আমাদের শক্তি ও আত্মসম্মানের উৎস

যখন আমাদের প্রকৃত সত্তার সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলা না হয়, তখন কী হয়? আত্মা হচ্ছে প্রকৃত প্রেম, আমাদের শক্তি ও আত্মসম্মানের উৎস। আমরা যদি তা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকি ও উচ্চতর সত্তার সঙ্গে কোনো সম্পর্ক বা যোগাযোগ স্থাপনের চেষ্টা না করি, তার পরিণাম এই হয় যে প্রেম, স্বীকৃতি, অন্যের থেকে নিজেদের গুরুত্বের কথা শোনার ইচ্ছার মতো আমাদের প্রয়োজন ও বাসনা অপূর্ণ থেকে যায়। এ বড়ই বেদনাদায়ক।

প্রত্যেক মানুষের মধ্যে বিরাজমান এই সুন্দর দিব্য গুণাবলি সম্বন্ধে সচেতনতার অভাবে, মানুষ লক্ষ রকমের বিভিন্ন বাহ্যিক উপায়ে পরিপূর্ণতালাভের পেছনে ধাবিত হতে বাধ্য হয়।

প্রকৃতপক্ষে, এ সবই কয়েকটি আদিম, আবেগপ্রবণ ক্রন্দনে পর্যবসিত হয়: “কেউ কি আমায় ভালোবাসবে না? কেউ কি আমায় গুরুত্ব দেবে না? কেউ কি আমার প্রতি ভালোবাসা বা ভালোলাগা ব্যক্ত করবে না বা আমায় প্রাধান্য দেবে না? যতদিন মানুষ বাহ্যিক উৎস থেকে এই স্বীকৃতিলাভের প্রচেষ্টা করবে, তা অধরাই থেকে যাবে; তার অন্তরে সর্বদাই এক একাকিত্ববোধ ও শূন্যতা রয়ে যাবে।

ধ্যানের মাধ্যমে যে বিশাল পরিবর্তন (ও আশা !) আসে

তবে সুসংবাদ হল এই যে আন্তরিক, নিয়মনিষ্ঠ, প্রণালীবদ্ধ ও বিজ্ঞানসম্মত ধ্যানের অভ্যাস করলে — এইভাবে নিজের প্রকৃত উচ্চতর সত্তাকে বুঝতে শুরু করলে, এর পরিবর্তন হতে পারে। এখান থেকেই প্রকৃত আত্মসম্মান আসে।

আমরা আমাদের গণমাধ্যম, শিক্ষাবিদ ও সমাজের নেতৃবৃন্দের কাছ থেকে শুনি যে জীবনে ভিত্তি বা দিশা খুঁজে পায়নি, বিশেষকরে এমন তরুণ-তরুণীদের মধ্যে আত্মসম্মান সংক্রান্ত সমস্যা আছে। তারা যদি না জানে যে ভালোবাসা ও দেবত্বের উৎস তাদের অন্তরেই আছে, তাদের মধ্যে শূন্যতার সৃষ্টি হয় ও সেই শূন্যতা তাদের অন্তহীন খোঁজের দিকে — সামাজিক মাধ্যম, বিনোদন, চিত্তবিক্ষেপকারী ও বহির্মুখী কাজকর্ম নিয়ে অবিরাম মাতামাতির দিকে ঠেলে দেয়।

এমন নয় যে তাদের এই ধরণের কাজকর্ম ভুল – এ কেবল অনর্থক — অন্তরের রিক্ততার সেই শূন্যতাকে পূর্ণ করতে তা অপারগ।

আমি মনে করি যে আপনাদের মধ্যে যারা ধ্যানের অভ্যাস করছেন, তারা জগতের জন্য আশার উৎস, কারণ প্রত্যেকে যারা নিত্য এই ধ্যান পদ্ধতি ব্যবহার করে আত্মার সাথে, অন্তরে দিব্য উপস্থিতির সাথে যোগাযোগ স্থাপনের উদ্দেশ্যে সময় ব্যয় করে, তারা আজকের জগতের শূন্যতা, নেতিবাচকতা ও একাকিত্ববোধের বিকল্পের এক শক্তিশালী উদাহরণস্বরূপ।

আধ্যাত্মিক চেতনাই হচ্ছে সমাধান, ধ্যানই হচ্ছে সমাধান।

এই শেয়ার করুন