শ্রীশ্রী পরমহংস যোগানন্দ রচিত আধ্যাত্মিক ধ্যান থেকে উদ্ধৃত কিছু প্রার্থনা
হে পরমাত্মা, আমার আত্মাকে তোমার মন্দির করো, কিন্তু আমার হৃদয়কে তোমার প্রিয় আবাস করে তোলো, যেখানে তুমি স্বচ্ছন্দে ও চিরন্তন জ্ঞানগোচর হয়ে আমার সঙ্গে বাস করবে।

হে মা ভগবতী, আমার অন্তরের ভাষায় প্রার্থনা জানাচ্ছি: আমি যেন তোমার উপস্থিতি অনুভব করতে পারি। তুমিই সর্ববিষয়ের সারাৎসার। আমি যেন আমার সমস্ত সত্তায়, প্রতিটি চিন্তার ভিতর, তোমাকে দেখতে পাই। আমার অন্তরকে জাগ্রত করো মা!

হে বিরামহীন আনন্দদাতা! তুমি আমাকে যে স্বর্গীয় সুখ দিয়েছ, তারজন্য কৃতজ্ঞতাস্বরূপ আমি সকলকে প্রকৃত সুখে সুখী করতে চেষ্টা করব। আমার অধ্যাত্ম আনন্দের মাধ্যমে আমি সকলের সেবা করব।

হে স্বর্গস্থ পিতা, দারিদ্রে বা সৌভাগ্যে, রোগে বা নীরোগে, অজ্ঞতায় বা জ্ঞানে, তোমাকে যেন স্মরণ করি–এই শিক্ষাই আমাকে দাও। আমার এই অবিশ্বাসের চোখ দুটিকে খুলে দাও এবং পলকমধ্যে তোমার আরোগ্যকারী আলোকে দেখতে দাও।

হে জ্যোতির্ময় দিব্য আলোক! আমার হৃদয়কে জাগ্রত করো, আমার আত্মাকে বিমুক্ত করো, আমার অন্ধকারকে প্রদীপ্ত করো, নিস্তব্ধতার আবরণ ছিন্ন করো, এবং তোমার মহিমায় আমার শূন্য দেউল পূর্ণ করো।

হে স্বর্গস্থ পিতা, তোমার প্রাণশক্তি দ্বারা আমার দেহকে এবং তোমার অধ্যাত্মশক্তি দ্বারা আমার মনকে পূর্ণ করো। তোমার আনন্দ এবং তোমার অমৃতত্বের দ্বারা আমার আত্মাকেও পূর্ণ করো।

হে পিতা, তোমার অসীম এবং সর্ব-নিরাময়কারি শক্তি আমার মধ্যে নিহিত রয়েছে। আমার অজ্ঞতার অন্ধকারের মধ্যে তোমার জ্যোতিকে প্রকাশিত করো।

হে অক্ষয় শক্তি, তুমি আমার মধ্যে সচেতন ইচ্ছা, সচেতন প্রাণশক্তি, সচেতন স্বাস্থ্য, ও সচেতন অনুভূতিকে জাগ্রত করো।

হে পরমাত্মা, প্রতিটি পরীক্ষা ও সংকটে উদ্বিগ্ন না হয়ে আমি যেন তাতে সহজেই আনন্দের সন্ধান পাই–এই আশীর্বাদ আমাকে করো।

হে পিতা, আমি যখন আমার সমৃদ্ধির জন্য সচেষ্ট হবো তখন যেন অন্যদের সমৃদ্ধির কথাও মনে রাখি–এই শিক্ষা আমাকে দাও।

এই কথা আমাকে অনুভব করতে শেখাও যে, তুমিই সকল সম্পদের পশ্চাতে একমাত্র শক্তি, এবং তুমিই সকল বস্তুর অন্তর্নিহিত সার পদার্থ। প্রথমে তোমাকে উপলব্ধি করে, তারপর আর সবকিছু আমি তোমার ভেতরেই দেখতে পাবো।

হে অজেয় প্রভু, যতক্ষণ না আমার ইচ্ছার ক্ষুদ্র আলোকশিখা তোমার সর্বশক্তিমান ইচ্ছার মহাজাগতিক অগ্নিরূপে প্রজ্বলিত হয়ে উঠছে, ততক্ষণ আমার ইচ্ছাশক্তিকে যেন বিরামহীন ভাবে সৎকর্মে নিযুক্ত করতে পারি–এই শিক্ষা আমায় দাও।

আধ্যাত্মিক ধ্যান
এই বইটি ৩০০ টিরও বেশি সর্বজনীন প্রার্থনা, সংকল্পবাক্য, এবং মানসচিত্রায়ণের একটি সংগ্রহ যা প্রারম্ভিক এবং অভিজ্ঞ ধ্যান অভ্যাসকারী উভয়ের জন্যই আত্মার সীমাহীন আনন্দ, শান্তি এবং সহজাত স্বাধীনতা জাগ্রত করার জন্য একটি অপরিহার্য সহায়িকা। এখানে ধ্যান অভ্যাসের প্রাথমিক নির্দেশাবলীও দেওয়া আছে। আধ্যাত্মিক ধ্যান সম্বন্ধে আরও পড়ুন।

দিব্যবাণী
কাব্যিক সুষমায় রহস্যময় প্রার্থনাসমূহ
সমস্ত ধর্মের মহান গীতিকার কবি-ঋষিদের ঐতিহ্য অনুসরণ করে পরমহংস যোগানন্দের দিব্যবাণী ভক্তিপথলভ্য পরমানন্দের অনুভবের দিকে এক অতীন্দ্রিয় জানালা খুলে দেয়।
তাঁর নিজের ঈশ্বর সংযোগের উচ্চাবস্থা থেকে সরাসরি উদ্ভূত আত্মজাগরণকারী প্রার্থনা এবং সংকল্পবাক্যের দ্বারা তিনি আধুনিক কালের অধ্যাত্মপিপাসুদের দেখিয়েছেন কিভাবে তারা নিজেরা ঈশ্বরের আনন্দময় উপলব্ধি লাভ করতে পারে।