
প্রিয়বরেষু,
আপনাদের এবং পরমহংস যোগানন্দজির সারা পৃথিবীব্যাপী আধ্যাত্মিক পরিবার এবং বন্ধুদের সকলকে পবিত্র ক্রিস্টমাসের শুভেচ্ছা জানাই! আমি প্রার্থনা করি আপনাদের হৃদয় এবং মন সেই শান্তি এবং আনন্দের স্পন্দনে উত্তোলিত হোক যা বছরের এই শুভ সময় স্বর্গরাজ্য থেকে বিচ্ছুরিত হয়।
বেথলেহেমে জিশু খ্রিস্টের জন্মের শত শত বছর পার হয়ে গেছে; তবু তাঁর শিক্ষা এবং চিরজীবী এই অবতারের দিব্য প্রেমের উদাহরণ আজকেও আত্মাকে মুক্তি দেওয়ার শক্তি বিকীর্ণ করে নৈতিক সাহসের বিশ্বজনীন ভাব দ্বারা পৃথিবীর সর্বত্র আত্মাদের অনুপ্রাণিত করে, সকলের প্রতি করুণা এবং ঈশ্বরকেন্দ্রিক জীবনযাপন শিক্ষা দেয়। আমরা যদি তাঁর শক্তি এবং মহিমার সঙ্গে নিজেদের সূর মেলাই, আমরা বুঝতে পারব তাঁর পার্থিব জন্মে তিনি যে দৈহিক নিরাময় করার অলৌকিক ক্ষমতা দেখিয়েছেন তার থেকে এখনও তিনি যে আধ্যাত্মিক রূপান্তর ঘটিয়ে চলেছেন তা অনেক গুণে মহৎ।
পুজ্য গুরুদেব আমাদের আশ্বস্ত করেছেন যে জিশুখ্রিস্ট মহাবতার বাবাজির সঙ্গে নতুন যুগে মানবতার জ্ঞানদীপ্ত চৈতন্য পুনরুজ্জীবনের জন্য কাজ করে চলেছেন। একসঙ্গে তাঁরা এই বিশ্বকে সেল্ফ-রিয়লাইজেশন ফেলোশিপ/যোগদা সৎসঙ্গ সোসাইটি অফ ইন্ডিয়ার ক্রিয়াযোগ শিক্ষা প্রদান করেছেন যার দ্বারা আমাদের নিজেদের চেতনায় অসীম অনন্ত খ্রিস্ট শিশুর আগমনের জন্য বেদিকাটিকে প্রস্তুত করতে পারি।
গুরুদেব একবার বলেছিলেন “আমরা শয্যায় শায়িত শিশু জিশুকে অসহায় ভাবি অথচ সেই ক্ষুদ্র আকৃতিতেই তিনি ছিলেন অসীম খ্রিস্ট, মহাবিশ্বের পরম জ্যোতি।” সেই সর্বব্যাপী খ্রিস্ট চৈতন্য [কূটস্থ চৈতন্য] যা সৃষ্টির সমস্ত অণু পরমাণুতে স্পন্দিত হচ্ছে তার মধ্যে সেই শক্তি আছে যা আমাদের জীবনকে আলোকিত করতে পারে এবং সারা বিশ্বকে আরোগ্য করতে পারে।
আমরা কি করে সক্রিয়ভাবে মানবজাতির জন্য মহান খ্রিষ্টমাসের এই উপহারের অংশ হতে পারি? জিশুখ্রিস্ট যেভাবে বলেছিলেন, আমাদের সত্ত্বা দিয়ে খ্রিস্ট চৈতন্যের সেই দয়া ও প্রেমের ভাবকে আত্মভূত করে, সেই নম্রতা দিয়ে যেখানে জগতের স্বীকৃতি বা স্বতন্ত্র আত্মকেন্দ্রিকতার কোনো প্রয়োজন বোধ থাকে না এবং সর্বদোষ ক্ষমাকারী সেই প্রেম দিয়ে, যার জন্যে সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষার মধ্যেও তাঁর অন্তরকে কোনো শত্রুভাব স্পর্শ করতে পারেনি। পরমহংসজি আমাদের যেমন শিখিয়েছেন ধ্যানের আত্মস্থিত নিশ্চলতার মধ্যে ঈশ্বরের সঙ্গে যুক্ত থেকে আমরা গভীরতম ভাবে প্রেমের, আলোর এবং অন্তহীনতার প্রসারিত চেতনা অনুভব করতে পারি যা হল আসল খ্রিস্টমাস এবং তাকে আমাদের বাহ্যিক জীবনে প্লাবিত হতে দিতে পারি।
আমি আপনাদের আমার আন্তরিক প্রার্থনা জানাই এই পুণ্য লগ্নের প্রকৃত ভাব –খ্রিস্টের এবং সকল মহাসাধকের চিরজীবি সত্ত্বা আপনাদের হৃদয় এবং গৃহকে এখন এবং সারা বছর পরিপূর্ণ রাখুক।
ঈশ্বর, খ্রিস্ট ও গুরুর প্রেম ও আনন্দে,
স্বামী চিদানন্দ গিরি