জন্মাষ্টমী উপলক্ষ্যে পরমহংস যোগানন্দের আশ্রমের পক্ষ থেকে একটি বার্তা -২০২২

8 আগস্ট, 2022

প্রিয় আত্মন,

জন্মাষ্টমী উপলক্ষ্যে প্রতি বছর আমরা অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্মবার্ষিকী উদযাপন করি। এই পবিত্র দিনগুলোতে আমরা যখন ধ্যান করব এবং তাঁকে শ্রদ্ধাভক্তি সহকারে স্মরণ করব, আমরা যেন বিশেষ করে অনন্তকালব্যাপী তাঁর উপস্থিতি ও তাঁর অসীম প্রেমের প্রতি গ্রহণশীল হয়ে উঠতে পারি। সর্বব্যাপী পরমব্রহ্মের সঙ্গে অভিন্নস্বরূপ পূর্ণাবতার শ্রীকৃষ্ণ অনাদিকাল ধরে তাঁর অনন্ত কৃপা ও কল্যাণকর আশীর্বাদ আমাদের ওপর বর্ষণ করার জন্য আমাদের মাঝে সর্বদাই অধীর আগ্রহে উপস্থিত আছেন। এই কৃপা আজ আমাদের একান্তই প্রয়োজন।

পবিত্র ভগবদ্গীতা হল সেই সব মাধ্যমের অন্যতম যার মধ্য দিয়ে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ আজও আমাদের মধ্যে বেঁচে আছেন। আমাদের অতি আপন পরমহংস যোগানন্দজি গীতার অন্তর্নিহিত প্রজ্ঞাকে যেভাবে আত্ম-উন্মেষক ব্যাখ্যার মাধ্যমে মূর্ত করেছেন, সেভাবে আর কোথাও হয়নি। আমরা যদি ধ্যানে বসে শ্রদ্ধাভক্তি সহকারে আমাদের চিত্তকে অন্তর্মুখী করার পর শ্রীকৃষ্ণ ও তাঁর শিষ্য অর্জুনের পবিত্র কথোপকথনের সামান্য অংশও পাঠ করি, চেতনা-উত্তোলনকারী সত্যের এক স্পন্দনাত্মক প্রবাহ আমরা অনুভব করতে পারব যা পরমাত্মার উদ্দেশ্যে আমাদের যাত্রাকে সমৃদ্ধ ও আশীর্বাদধন্য করে তুলবে। এইভাবে গভীর একাগ্রতার সাহায্যে শাস্ত্রের মধ্যে নিহিত তাঁর উপস্থিতির সঙ্গে সম্পর্কস্থাপন করে আমরা বাস্তবিকই শ্রীকৃষ্ণের মধ্যে মূর্ত সেই ঐশ্বরিক শক্তিকে অনুভব করতে সক্ষম হব যা আত্মার মুক্তিলাভের মতো সর্বোচ্চ লক্ষ্যে না পৌঁছোনো পর্যন্ত আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে নিজস্ব কুরুক্ষেত্ররূপী যুদ্ধক্ষেত্রে সাহায্য করে আমাদের উন্নত করার চেষ্টা করতে থাকবে, ঠিক যেমন তিনি অর্জুনকে সহায়তা করে তাকে উন্নত করে তুলেছিলেন।

ঈশ্বর ও মহান গুরুগণ যারা এই বিশ্বের সুরক্ষা ও পথনির্দেশনার দায়িত্বে আছেন, তাঁদের সঙ্গে এক জীবন্ত সম্পর্ক গড়ে তুলতে হলে আন্তরিকতা ও নিয়মনিষ্ঠার সঙ্গে ধ্যানের গভীরে ডুব দেওয়াই হল সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ যাতে তাঁদের প্রেমময় সান্নিধ্যে আমরা আমাদের চেতনা সম্পূর্ণরূপে নিমজ্জিত করতে পারি। এরপর ওই পবিত্র গভীরতার মাঝে সকল চিত্তবিক্ষেপ থেকে মুক্ত হয়ে আমরা ঈশ্বরকে — তিনি যে রূপেই আমাদের প্রিয় হন না কেন — আমাদের সত্তার সর্বোত্তম ভালোবাসা, সমর্পণ ও ভক্তি নিবেদন করতে পারি। ভক্তের ওইরকম আকুল আহবান শুনতে পেলে ভগবান অবশ্যই ব্যক্তিগতভাবে সাড়া দেন।

আমি প্রার্থনা করি যতদিন আপনাদের ব্যক্তিগত জীবনের অনুপম সুর ওই শাশ্বত ঐশ্বরিক সঙ্গীতের মাঝে বিলীন না হয়ে যায়, আপনারা যেন অবিচলিত নিষ্ঠা ও ভালোবাসা সহ যোগেশ্বর শ্রীকৃষ্ণ ও অন্যান্য মহান গুরুগণের গভীর প্রজ্ঞা ও তাঁদের দেওয়া ধ্যানের শিক্ষা অনুসরণ করে যান।

জয় শ্রীকৃষ্ণ! জয় গুরু!

স্বামী চিদানন্দ গিরি

এই শেয়ার করুন