“শান্তির জীবন ধারা — যোগ এবং দিব্য দৃষ্টান্তের অনুসরণ” — শ্রী দয়ামাতা

৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

যোগদা সৎসঙ্গ সোসাইটি অফ ইন্ডিয়া/সেল্ফ-রিয়লাইজেশন ফেলোশিপের তৃতীয় অধ্যক্ষ, আমাদের প্রিয় শ্রীশ্রী দয়ামাতার লিখিত পরমহংস যোগানন্দের ইনার পিস: কী করে শান্তভাবে সক্রিয় এবং সক্রিয়ভাবে শান্ত থাকতে হয়-এর ভূমিকার কিছু উদ্ধৃতি নিম্নলিখিত পোস্টটির অন্তর্গত।

শান্তি, প্রশান্তি, অভ্যন্তরীণ সাম্যতা নিছক শব্দ, যতক্ষণ না আমরা প্রকৃতপক্ষে অন্যের মধ্যে তাদের অভিব্যক্তি দেখতে পাই বা নিজেদের মধ্যে তাদের প্রকাশকে অনুভব করি।

বিশ বছরের ওপর পরমহংস যোগানন্দের সংস্পর্শে থাকাকালীন প্রতিদিন তাঁর দেহ নির্গত শান্তির এক অনির্বচনীয় জ্যোতি অনুভব করে আমি ধন্য হতাম; তাঁর সান্নিধ্যে আসা প্রত্যেকের হৃদয়ে এক গভীর শান্তির কূপ স্থাপনা করতে এটি তাঁকে এক অসাধারণ ক্ষমতা দিয়েছিল।

প্রযুক্তিতে আমাদের যুগের অগ্রগতি আশ্চর্যজনক, কিন্তু প্রায়শই দেখা যায়, এর ফলে বাহ্যিক উন্নতি হয় ঠিকই, তবে আমাদের ব্যক্তিগত জীবনে বর্ধিত মানসিক চাপ ও জটিলতায় এর মাশুল গুণতে হয়। ভারসাম্যের সন্ধান যত বেশী অগ্রাধিকার পাচ্ছে, সারা বিশ্বের লোকেরা বুঝতে পারছে যে, সম্ভবত সবচেয়ে প্রয়োজনীয় “নতুন” বিজ্ঞান হল প্রাচীন: যোগ — শরীর, মন ও আত্মার সামঞ্জস্য বিধানে ও আভ্যন্তরীণ শান্তি অর্জনে যার নিরন্তর পদ্ধতি, প্রকৃত এক কার্যকরী ব্যবস্থা।

পরমহংস যোগানন্দের জ্ঞান-ভান্ডার থেকে আমাদের শেখানো হয়েছে যোগের সব থেকে মূল্যবান “ভঙ্গি”: যা তিনি প্রায়ই বলতেন — “ক্ষণভঙ্গুর পৃথিবীর বিপর্যয়ের মাঝে, অবিচলিত ভাবে দন্ডায়মান থাকা”। “শান্তি, যা শ্রেষ্ঠ উপলব্ধি” — সেই আভ্যন্তরীণ নিরাপত্তায় দৃঢ়ভাবে নোঙর করে থাকা প্রকৃত আধ্যাত্মিকতাই এই প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে পারে।

পরমহংস যোগানন্দের শেখানো শান্ত অন্তস্থিত প্রশান্তির পথে উৎসাহপূর্ণ সক্রিয় সাধনা থেকে ত্রস্ত প্রত্যাহারের প্রয়োজন হয় না। প্রকৃতপক্ষে পাশ্চাত্যে ভারতের ধ্যান শিক্ষাকে সফলভাবে এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্যে প্রয়োজন ছিল, তাঁর নিজের অসাধারণ বহির্মুখী কৃতিত্বের এক গতিময় সৃজনশীল ব্যক্তিত্ব।

প্রাথমিকভাবে তিনি কোনো নির্জনে বা অন্তরালে তাঁর কাজ শুরু করেননি, বরং শুরু হয়েছিল নিউ ইয়র্ক, শিকাগো, লস অ্যাঞ্জেলস শহরের কোলাহলে — গ্রহের সব থেকে শোরগোলপূর্ণ ও অশান্ত জায়গায়! তবে তিনি সর্বদাই আত্মার চিরন্তন প্রশান্তিতে আনন্দমগ্ন থাকতেন।

.

পরমহংসজির সম্পর্কে তাঁর অনুসরণকারীদের প্রিয় গল্পের মধ্যে একটি হল সেই শান্তির শক্তির স্বতঃস্ফূর্ত প্রদর্শন, (সৌভাগ্যক্রমে কখনও পুনরাবৃত্তি হয়নি)।

একবার নিউইয়র্ক শহরে রাস্তার ওপর তিনজন দস্যু বন্দুক হাতে তাঁর দিকে এগিয়ে এল। তিনি শুধু তাদের দিকে তাকিয়ে বললেন, “তোমরা অর্থ চাও? এই নাও।” তিনি তার ওয়ালেট তাদের দিকে বাড়িয়ে দিলেন।

অদ্ভূতভাবে, বন্দুকধারী লোকেরা চলৎ শক্তিহীন হয়ে পড়ল, তাঁর শরীর থেকে বিচ্ছুরিত আধ্যাত্মিক স্পন্দনে তারা তাঁর সামনে সম্পূর্ণ স্তম্ভিত হয়ে পড়ল।

তাদের মধ্যে একজন শেষে বলে উঠল “আমাদের ক্ষমা করে দিন, আমরা এ কাজ করতে পারব না।” তারা ফিরে দৌড় লাগাল।

যখনই তিনি কোনো জনসমক্ষে গেছেন, পাশ দিয়ে যাওয়া লোকজন থেমে যেত, তাঁর দিকে “হাঁ” করে তাকিয়ে থাকত এবং আমাদের জিজ্ঞেস করত, “কে ইনি? এই মানুষটি কে ?”

সর্বদাই তাঁকে ঘিরে থাকত এক শান্ত, স্পর্শনীয় স্পন্দন, যা মানুষকে তাঁর দিকে আকর্ষিত করত।

আত্মার শান্তি খন্ডিত ব্যক্তিগত ও পারিবারিক সম্প্রীতি বজায় রাখে, আমাদের সাম্প্রদায়িক বিচ্ছিন্নতাকেও সংশোধন করে দেয়।

যদি এটিকে জীবনের এক উপায় বলে নেওয়া যায়, তাহলে এর শক্তিতে আপনার অস্তিত্বে সাম্যতা ও নিরাময় আসবে। আপনার শান্তির এই স্পন্দন পথ অতিক্রমকারী সকলকে স্পর্শ করবে এবং আমাদের বিশ্ব পরিবারে দীর্ঘস্থায়ী শান্তি আনয়নে গভীরভাবে অবদান রাখবে।

এই শেয়ার করুন