প্রধান ভবন — যোগদা সৎসঙ্গ শাখা মঠ, রাঁচি

তাঁর গুরু, স্বামী শ্রীযুক্তেশ্বরজির দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে, পরমহংস যোগানন্দজি তরুণ শিষ্যদের আধ্যাত্মিক প্রশিক্ষণকে পদ্ধতিগত করতে শুরু করেন, একই সাথে তাদের সাধারণ শিক্ষাও প্রদান করতেন। কাশিমবাজারের মহারাজা, মাননীয় মণীন্দ্র চন্দ্র নন্দী মহাশয়ের উৎসাহী পৃষ্ঠপোষকতায়, ১৯১৭-র ২২শে মার্চ এটির আনুষ্ঠানিকভাবে সাংগঠনিক সূচনা করা হয়েছিল, মাত্র সাতজন বালক নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের ডিহিকায় যোগদা সৎসঙ্গ ব্রহ্মচর্য বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা করা হয়।

এক বছর পর, বিদ্যালয়ের দ্রুত প্রসারের কারণে ডিহিকার স্থানটি ছোটো হয়ে যাওয়ায় তখন মহারাজা অনুপ্রাণিত হয়ে তাঁর রাঁচি, ঝাড়খণ্ডে অবস্থিত ২৫ একর জমিসহ গ্রীষ্মকালীন প্রাসাদটি প্রদান করেন। ১৯১৮-তে বিদ্যালয়টি সেখানে স্থানান্তরিত হয়।

YSS Ranchi Ashram main building

১৯৩৫-এ, যখন পরমহংসজি ভারত সফরে এক বছরের জন্য আসেন, তিনি মহারাজার পুত্র, শ্রী শিরীষ চন্দ্র নন্দীর কাছ থেকে এই সম্পত্তি ক্রয় করেন। এই সম্পত্তি কেনার জন্য অর্থ এসেছিল তাঁর আমেরিকান শিষ্যগণের থেকে, তাঁর পিতা শ্রী ভগবতী চরণ ঘোষের থেকে এবং আমেরিকা ও ইউরোপে দেওয়া তাঁর বক্তৃতামালার সঞ্চিত তহবিল থেকে। পরমহংসজির প্রিয় ও মহান শিষ্য এবং ওয়াইএসএস/এসআরএফ-এর দ্বিতীয় অধ্যক্ষ রাজর্ষি জনকানন্দ মুক্ত হস্তে একটি দান করেন।

যোগদা সৎসঙ্গ শাখা মঠ, রাঁচির প্রধান ভবনের স্তম্ভে খোদাই করা রয়েছে সেই সকল ব্যক্তিদের নাম, যারা রাঁচি বিদ্যালয়কে একটি দৃঢ় ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠা করতে সহায়তা করেছিলেন। যদিও যোগানন্দজি তাঁর পিতার অবদানের বিষয়ে খুব কমই উল্লেখ করতেন, তাঁর সাহায্য সংগঠনের প্রতিষ্ঠায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

১৯৬৭-তে স্বামী শ্যামানন্দ গিরির তত্ত্বাবধানে ভবনটির একটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার সাধিত হয়েছিল। ১৯৭৯-র শেষের দিকে একটি কংক্রিটের ছাদ নির্মাণ করা হয়েছিল এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য ভবনটিকে সংস্কার ও সংরক্ষণ করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় মেরামত করা হয়েছিল। ভবনটির আসল স্থাপত্য নকশা, যার মধ্যে ঢালু ছাদ ছিল, তা সংরক্ষণ করা হয়েছিল এবং কাঠের আদি বিমগুলিও রয়ে গেছে, যা এখনও দেখতে পাওয়া যায়।

গোড়ার দিকের বছরগুলোতে বিদ্যালয়ের সূচনা ও উন্নয়ন

শুরুর দিকে, এই ভবনটি একশত ছাত্রের আবাসিক বিদ্যালয় ছিল। পরমহংস যোগানন্দজি বিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রম পরিকল্পনা করেছিলেন, যা শিক্ষার্থীদের শরীর, মন এবং আত্মার সর্বাঙ্গীণ বিকাশে সহায়ক হওয়ার উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছিল। এর মধ্যে ছিল কৃষি, শিল্প, বাণিজ্যিক এবং শিক্ষণ বিষয়সমূহ। ঋষিদের চিরন্তন শিক্ষাদর্শনের অনুকরণে, পরমহংসজি তাঁর বেশিরভাগ ক্লাসগুলি খোলা আকাশের নিচে পরিচালনা করতেন।

রাঁচিতে একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য ছিল শিষ্যদের ক্রিয়াযোগে দীক্ষা প্রদান। নিয়মিত আধ্যাত্মিক অনুশীলন, গীতা শ্লোক পাঠ এবং সরলতা, আত্মত্যাগ, সম্মান ও সত্যের গুণাবলির শিক্ষা ছিল দৈনিক কর্মসূচির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

প্রশাসনিক ও শিক্ষামূলক দায়িত্বের পাশাপাশি, পরমহংসজি ছাত্রদের জীবনে অভিভাবকের ভূমিকা পালন করতেন। ষাট বছর পর, যোগদা সৎসঙ্গ ব্রহ্মচর্য বিদ্যালয়ের এক ছাত্র শ্রী এস. কে. ডি. ব্যানার্জি আবেগভরে স্মরণ করেছিলেন: “পরমহংসজি আমাদের জন্য ছিলেন একজন পিতা আর আমরা ছিলাম তাঁর একনিষ্ঠ সন্তান। শুধুমাত্র তাঁর সান্নিধ্যে বাস করাই ছিল এক প্রকার আধ্যাত্মিক শিক্ষা। পরমহংসজি আমাদেরকে দেবত্বের পূর্ণতার লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রেরণা দিতেন।”

১৯২০-তে পশ্চিমে যাওয়ার সময়, পরমহংসজি স্কুলের অন্যান্য শিক্ষকদের কাছে শিশুদের দায়িত্ব অর্পণ করেছিলেন।

১৯৬৮-র মধ্যে, ওয়াইএসএস হাই স্কুলে প্রায় ১,৪০০ ছেলে এবং ৪০০ মেয়ে পাঠরত ছিল এবং দুটি কলেজে প্রায় ৮০০ শিক্ষার্থী ছিল। দ্রুত বৃদ্ধির কারণে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে আশ্রমের এলাকা থেকে সরিয়ে নেওয়া প্রয়োজন হয়। ১৯৮১-তে, ছেলেদের স্কুল এবং কলেজটি একটি নতুন স্থানে – জগন্নাথপুরে – স্থানান্তরিত করা হয়, যা আশ্রম থেকে প্রায় ১১ কিমি দূরে অবস্থিত। মূল ভবনটি তখন আধ্যাত্মিক সংগঠনের বাড়তে থাকা প্রয়োজন মেটানোর জন্য অফিসের স্থান হিসেবে ব্যবহার করা হোত।

মূল ভবনে বেশ কয়েকটি ছোটো ঘর এবং হল ঘর রয়েছে — একটি রিসেপশন ও বইয়ের ঘর, মাতৃ মন্দির, পরমহংস যোগানন্দজির কক্ষ, এবং শতবর্ষের ছবি প্রদর্শনী হল ঘর।

রিসেপশন কক্ষ এবং বই-এর ঘর

বাইরের বারান্দা সংলগ্ন একটি বড়ো কক্ষ, যা ভক্ত ও অন্যান্য দর্শনার্থীদের জন্য আশ্রমের রিসেপশন অফিস হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সমস্ত ওয়াইএসএস প্রকাশনা এখানে প্রদর্শিত হয় এবং একটি বই বিক্রির কাউন্টারও এখানে রয়েছে।

মাতৃ মন্দির

মাতৃ মন্দিরটি বারান্দার বাম দিকে অবস্থিত এবং এটি একটি বিশাল গালিচাকৃত হল। এই কক্ষটির নামকরণ করা হয়েছে ওয়াইএসএস/এসআরএফ-এর তৃতীয় অধ্যক্ষ ও সংঘমাতা শ্রীশ্রী দয়ামাতাজির সম্মানে। একবার শ্রী দয়ামাতাজি এক সৎসঙ্গের সময় একটি ডিভানের ওপর বসে ‘সমাধি’ অবস্থায় প্রবেশ করেছিলেন। মাতাজির ছবি এবং এই কক্ষটিতে রাখা দুটি ডিভানে কেবলমাত্র মায়ের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি নয়, বরং সমস্ত যোগদা ভক্তদেরকে এটি মনে করিয়ে দেয় যে গুরুপ্রদত্ত সাধনার নিয়মিত ও আন্তরিক অনুশীলনের মাধ্যমে তারাও আধ্যাত্মিক উচ্চতায় পৌঁছোতে পারেন। হলটি এখন ধ্যান, পরামর্শ এবং ক্লাস পরিচালনাতে ব্যবহৃত হয়।

পরমহংস যোগানন্দজির কক্ষ

মহান গুরুর এই কক্ষটি, যেখানে তিনি রাঁচিতে থাকাকালীন সময়ে (১৯১৮ থেকে ১৯২০) অবস্থান করেছিলেন, একটি পবিত্র স্মারকরূপে সংরক্ষিত করা আছে। এটি প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে সকলের ব্যক্তিগত ধ্যানের জন্য উন্মুক্ত থাকে। ভক্তগণ এখানে ধ্যান করার সময় বিশেষ এক আধ্যাত্মিক উন্নতি অনুভব করেন। যোগানন্দজির ব্যবহৃত কাঠের খাটের পাশাপাশি এই ঘরে গুরুদেবের হাত এবং পায়ের ছাপও প্রদর্শিত রয়েছে, যা এসআরএফ ইন্টারন্যাশনাল হেডকোয়ার্টার, লস এঞ্জেলস, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আনা হয়েছে।

প্রার্থনার প্রয়োজন আছে এমন প্রিয়জনদের নাম একটি প্রার্থনা বাক্সে রাখা যেতে পারে, যেটি খাটটির ওপর রাখা আছে। বিশ্বব্যাপী প্রার্থনা চক্রের অংশ হিসেবে, যা গুরুদেবের সময়কালে শুরু হয়েছিল, ওয়াইএসএস-এর সন্ন্যাসী এবং বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের ভক্তরা প্রতিদিন সকলের জন্য প্রার্থনা করেন যারা প্রার্থনার জন্য আবেদন করেন।

এছাড়াও, গুরুদেবের কিছু ব্যক্তিগত সামগ্রী এই কক্ষের বাইরে প্রদর্শনের জন্য রাখা হয়েছে।

যোগানন্দজির ব্যক্তিগত সামগ্রীর প্রদর্শনী

যোগানন্দজির কিছু ব্যক্তিগত সামগ্রী, যার মধ্যে রয়েছে একটি গোলাপ ফুল, যা মহাসমাধির পর তাঁর দেহের উপর রাখা ছিল, এই কক্ষের বাইরে প্রদর্শনের জন্য রাখা আছে। অন্যান্য স্মৃতিচিহ্নগুলোর মধ্যে রয়েছে তাঁর ব্যবহার করা একটি ছাতা, সন্ন্যাসীর পোশাক ও মোজা এবং এক টুকরো “লুচি” যা তিনি খেয়েছিলেন।

চিত্র প্রদর্শনী

রিসেপশন কক্ষের সামনে একটি চিত্র প্রদর্শনী অবস্থিত। ১৯১৭ থেকে ২০১৬-র মধ্যে যোগদা সৎসঙ্গ সোসাইটি অফ ইন্ডিয়ার শত বছরের যাত্রার একটি চিত্রময় ইতিহাস প্রদর্শিত হয়েছে।