কীভাবে অন্যদের জন্য প্রার্থনা করবে

আমাদের প্রার্থনা কীভাবে অন্যদের জীবনকে প্রভাবিত করে? যেভাবে প্রার্থনা আমাদের নিজেদের চেতনার মধ্যে স্বাস্থ্য, সাফল্য এবং ঐশ্বরিক সাহায্য গ্রহণ ক্ষমতার সদর্থক ধারণা রোপণের দ্বারা আমাদের জীবনকে উন্নীত করে, সেই একই ভাবে।

“আমার প্রার্থনা কীভাবে অন্যদের সাহায্য করতে পারে”, এই গভীর অনুপ্রেরণাদায়ী ছোট ভিডিওটিতে অন্যদের জন্য প্রার্থনা করতে পরমহংস যোগানন্দ কতখানি গুরুত্ব দিতেন তা ওয়াইএসএস/এসআরএফ-এর প্রিয় তৃতীয় অধ্যক্ষ এবং সঙ্ঘমাতা, শ্রী দয়ামাতা আলোচনা করেছেন। এছাড়া, একাগ্র প্রার্থনার অসাধারণ শক্তি কাজে লাগিয়ে ব্যক্তিজীবন এবং বিশ্বের গতিপথ উভয়কেই সদর্থকভাবে প্রভাবিত করতে তিনি সকলকে আহ্বান জানান।

ফলদায়ী প্রার্থনার নেপথ্যে যোগবিজ্ঞান

পরমহংস যোগানন্দ লিখেছেন:

“মানব মন যখন অস্থিরতার বিক্ষোভ বা ‘গোলযোগ’ থেকে মুক্ত হয়, তখন তা জটিল বেতার যন্ত্রের সমস্ত কাজ সম্পাদনে সক্ষম হয়ে ওঠে — চিন্তা প্রেরণ ও গ্রহণ এবং অনাকাঙ্ক্ষিত চিন্তাকে বর্জন করতে পারে। যেমন একটি বেতার সম্প্রচার কেন্দ্রের শক্তি তার ব্যবহারযোগ্য বৈদ্যুতিক প্রবাহের পরিমাণ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়, তেমনই একটি মানব বেতারযন্ত্রের কার্যকারিতা প্রতিটি ব্যক্তির ইচ্ছাশক্তির মাত্রার ওপর নির্ভর করে।”

ঈশ্বরের ইচ্ছার সঙ্গে নিজেদের ইচ্ছা সম্পূর্ণভাবে মিলিয়ে দিয়েছেন এমন তত্ত্ববিদ সন্তদের মন, দিব্য শক্তি প্রেরণের দ্বারা শরীর, মন এবং আত্মার তাৎক্ষণিক নিরাময় করতে সক্ষম। পরমহংস যোগানন্দের লেখা এবং বক্তৃতাতে এই ধরনের নিরাময়ের প্রচুর উদাহরণ পাওয়া যায়। তিনি ব্যাখ্যা করেছেন যে এদের অলৌকিক বলে মনে হলেও, দিব্য নিরাময়, সৃষ্টির সর্বজনীন নিয়মসমূহের বিজ্ঞানসম্মত সিদ্ধির স্বাভাবিক ফল। ঈশ্বরের অনবদ্য মহাতত্বের পরিপূর্ণতায় অন্যের শরীর এবং মনে প্রকট করার জন্য যথেষ্ট ইচ্ছাশক্তি এবং প্রাণশক্তি প্রেরণ করে, এই দিব্যজ্ঞানী মহাপুরুষগণ সেই প্রক্রিয়ারই অনুসরণ করেন যার দ্বারা বিশ্বের প্রতিটি বস্তু সৃষ্টি হয়েছিল।

যে কোনো মানুষ এই নীতি অনুসরণ করে প্রার্থনা করলে দেখবে যে তার প্রার্থনারও এক সুস্পষ্ট প্রভাব আছে। এবং যদিও একজন মহাপুরুষ যতটা শক্তি প্রেরণ করতে পারেন তার চেয়ে আমাদের ব্যক্তিক্ষমতা স্পষ্টতই কম, হাজার হাজার লোকের প্রার্থনা একজোট হয়ে শান্তি এবং দিব্য নিরাময়ের যে শক্তিশালী স্পন্দন উৎপন্ন করে, বাঞ্ছিত ফল প্রকট করার জন্য তার মূল্য অপরিসীম। এই উদ্দেশ্যেই পরমহংস যোগানন্দ যোগদা সৎসঙ্গ সোসাইটি অফ ইণ্ডিয়া/সেল্ফ-রিয়লাইজেশন ফেলোশিপ প্রার্থনা পরিষদ এবং বিশ্বব্যাপী প্রার্থনাচক্রের স্থাপনা করেছিলেন।

অন্যদের জন্য ফলদায়ী প্রার্থনা করতে পরমহংসজির একটি প্রক্রিয়া এখানে দেওয়া হল:

এই প্রতিকূল সময়ে, প্রার্থনার শক্তির মাধ্যমে আমরা নিজেদের ছাড়াও, আমাদের পরিবার, বন্ধুবান্ধব, প্রতিবেশী এবং বিশ্বের সেবা করার জন্য অনেক কিছু করতে পারি। যোগদা সৎসঙ্গ পাঠমালার গ্রাহক হয়ে আপনি পরমহংস যোগানন্দের শেখানো ফলদায়ী প্রার্থনার প্রক্রিয়াগুলি শিখতে পারেন এবং ঈশ্বরের সাথে আপনার নিজস্ব ব্যক্তিগত সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারেন।

ওয়াইএসএস পাঠমালায় পরমহংস যোগানন্দ নিম্নলিখিত প্রক্রিয়াটি (ওয়াইএসএস/এসআরএফ আরোগ্য প্রক্রিয়ার অতিরিক্ত) প্রদান করেন:

Paramahansa Yogananda with a man on a wheelchair.“প্রথমে, ভ্রূদুটি একটু সঙ্কুচিত করো, তারপর চোখ বন্ধ করো। যাকে তুমি নিরাময়শক্তি পাঠাতে চাও তার কথা চিন্তা করো।

“দুই ভ্রূর মধ্যবিন্দুতে মনঃসংযোগ করো এবং মনে মনে বলো: ‘হে পরমপিতা, তোমার ইচ্ছার দ্বারাই আমি ইচ্ছা করি। আমার ইচ্ছা, তোমারই ইচ্ছা। তোমার সর্ববিদ্যমান ইচ্ছার সাহায্যে, হে পরমপিতা, আমি আমার সমস্ত হৃদয় দিয়ে, আমার সমস্ত প্রাণমন দিয়ে ইচ্ছা করি যে এই ব্যক্তিটি নিরাময় লাভ করুক।’

“এই কথা বলার সময় চিন্তা করো যে তোমার দুই ভ্রূর মধ্যবিন্দু থেকে যাকে তুমি সাহায্য করতে চাইছ তার দুই ভ্রূর মধ্যবিন্দুর ভিতরে এক বিদ্যুৎপ্রবাহ চলে যাচ্ছে। অনুভব করো যে তোমার কূটস্থ থেকে তুমি যাকে সুস্থ করতে চাইছ, তার কূটস্থের মধ্যে তুমি এক বিদ্যুৎপ্রবাহ প্রেরণ করছো।”

আরও গভীরভাবে মনঃসংযোগ করো, দেখবে যে তোমার দুই ভ্রূয়ের মধ্যবিন্দুতে তাপ অনুভব করছ। তোমার ইচ্ছাশক্তি যে বিকশিত হচ্ছে, এই তাপের অনুভূতিই তার প্রমাণ।

“আরও গভীরভাবে মনঃসংযোগ করো। মনে মনে বলো: ‘তোমার ইচ্ছার সাহায্যেই আমি সর্বব্যাপি শক্তির এক জ্যোতি প্রেরণ করছি। পরমপিতা, এটি সেখানে প্রকট হয়েছে।

“পনের থেকে কুড়ি মিনিট এটি অভ্যাস করতে হবে। যখন তুমি এটি করবে, তোমার ইচ্ছাশক্তি বিকশিত হবে; আর যা কিছুই ঘটুক না কেন, এই বিকশিত ইচ্ছাশক্তি তোমার এবং অন্যের প্রয়োজনে সাহায্য করার জন্য নিরন্তর তোমার সাথে থাকবে।”

আমরা প্রার্থনার মাধ্যমে ঈশ্বরের শক্তি প্রকাশ করতে পারি

Daya Mata: Third president of YSS/SRF.কখনো কখনো লোকেরা জিজ্ঞাসা করে, “অন্যদের জন্য প্রার্থনা করার সবচেয়ে ভালো উপায় কী?” শ্রীশ্রী দয়ামাতা বলেছেন:

“অন্যদের জন্য প্রার্থনা করা উচিত এবং ভালো…সর্বোপরি, এই প্রার্থনা করা যে তারা যেন ঈশ্বরকে গ্রহণ করে এবং তার ফলে পার্থিব, মানসিক এবং আধ্যাত্মিক সাহায্য সরাসরি সেই দিব্য চিকিৎসকের হাত থেকে লাভ করে। সমস্ত প্রার্থনার এটিই ভিত্তি। ঈশ্বরের আশীর্বাদ সদাই রয়েছে; গ্রহণক্ষমতারই অভাব। প্রার্থনা গ্রহণক্ষমতাকে বাড়ায়…।

“যখন তুমি অন্যের বা তোমার নিজের নিরাময়ের কথা প্রত্যয়ের সঙ্গে বলো, মানসপটে কল্পনা করো যে ঈশ্বরের নিরাময়ক্ষমতার প্রচণ্ড শক্তি একটি সাদা আলোর বলয় তোমাকে বা যার জন্য তুমি প্রার্থনা করছ তাকে ঘিরে আছে। অনুভব করো যে এই আলো সমস্ত রোগ এবং অপূর্ণতাকে বিগলিত করছে। প্রতিটি চেতনা-উত্থানকারী চিন্তা যা আমরা চিন্তা করি, প্রতিটি প্রার্থনা যা আমরা উচ্চারণ করি, প্রতিটি ভালো কাজ যা আমরা করি, ঈশ্বরের শক্তিতে পরিপূর্ণ। আমাদের বিশ্বাস যত শক্তিশালী হতে থাকে, আর ঈশ্বরের প্রতি আমাদের ভালোবাসা গভীরতর হতে থাকে, ততই এই শক্তি আমরা আরও বেশি ভাবে প্রকাশ করতে পারি।”

“চিন্তা একটি শক্তি; এর ক্ষমতা অসীম। এই কারণেই আমি বিশ্বব্যাপী প্রার্থনাচক্রে এত গভীরভাবে বিশ্বাস করি যা পরমহংস যোগানন্দ শুরু করেছিলেন। আশা করি আপনারা সবাই এর সাথে জড়িত আছেন। যখন মানুষ বিশ্বব্যাপী প্রার্থনাচক্রে ব্যবহৃত আরোগ্যকারী প্রক্রিয়ার অনুসরণে শান্তি, ভালোবাসা, সদিচ্ছা এবং ক্ষমার একাগ্র, সুনিশ্চিত চিন্তাশক্তি প্রেরণ করে, তখন সেটি এক মহান শক্তি তৈরি করে। সর্বসাধারণ তাই করলে মঙ্গলের এমন এক স্পন্দন সৃষ্টি হবে যা বিশ্বকে বদলে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট শক্তিশালী হবে।”

প্রার্থনার দ্বারা কীভাবে তুমি বিশ্বশান্তি এবং নিরাময়ে সাহায্য করতে পারো

এই শেয়ার করুন