
পরমহংস যোগানন্দের প্রজ্ঞার উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া
প্রকৃত ভক্তরাও মাঝে মাঝে ভাবেন যে ভগবান তাদের প্রার্থনায় সাড়া দেন না। তাঁর নিয়মের মাধ্যমে তিনি নীরবে উত্তর দেন বটে, কিন্তু ভক্তটি সম্বন্ধে সম্পূর্ণ নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত তিনি খোলাখুলি উত্তর দেন না; তিনি ভক্তটির সঙ্গে কথা বলেন না। বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের প্রভু এতটাই নিরভিমান যে তিনি কথা বলেন না, পাছে তিনি ভক্তের স্বাধীন ইচ্ছাশক্তির দ্বারা তাঁকে স্বীকার বা প্রত্যাখ্যান করার ক্ষমতাকে প্রভাবিত করে ফেলেন।

ঈশ্বর বাসনাপূর্তির মাধ্যমে জবাব দেন
যে প্রার্থনা দৃঢ় এবং গভীর তা ঈশ্বরের প্রত্যুত্তর অবশ্যই পাবে.…সকলেই কোনো না কোনো সময়ে তাদের কিছু বাসনা প্রার্থনার দ্বারা পূরণ হতে দেখেছে। তোমার ইচ্ছা যখন খুব প্রবল হয়, তা পরমপিতাকে স্পর্শ করে এবং পরমপিতা ইচ্ছা করেন যে তোমার বাসনা পূর্ণ হোক।
কখনো কখনো জবাবে তিনি এমন একজনের মনে একটি চিন্তা ঢুকিয়ে দেন, যে তোমার ইচ্ছা বা প্রয়োজন মেটাতে পারে; সেই ব্যক্তিটি তখন বাঞ্ছিত ফল আনয়নের জন্য ভগবানের যন্ত্র হয়ে কাজ করে।

কখনো কখনো তাঁর জবাব হয় “না”
লোকেরা মনে করে ঈশ্বর তাদের প্রার্থনায় সাড়া দেন না, কারণ তারা বোঝে না যে তাদের প্রত্যাশা বা চাহিদার উত্তর ঈশ্বর কখনো কখনো অন্যভাবেও দিয়ে থাকেন। তিনি সবসময় তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী উত্তর দেবেন না যতক্ষণ না তারা তাঁর ইচ্ছামতো নিজেরা পূর্ণতা অর্জন করছে।

অনেক সময় আমরা যা চাই বলে মনে করি তা যে পাই না, সে খুবই ভালো। একটি শিশু আগুনের শিখা স্পর্শ করতে চাইলেও মা তাকে অনিষ্ট থেকে রক্ষা করার জন্য তার ইচ্ছা মঞ্জুর করেন না।
শান্তি এবং আনন্দের অনুভূতিই হল ঈশ্বরের প্রত্যুত্তর
যদি তুমি ক্রমশ আরও গভীর মনঃসংযোগের সঙ্গে তাঁকে বারবার ডাকতে থাকো, তিনি তোমার প্রার্থনায় সাড়া দেবেন। তোমার হৃদয়ে হঠাৎই এক আনন্দ এবং শান্তির উদয় হবে। যখন তা আসবে, তুমি জানবে যে তোমার ঈশ্বরসংযোগ হয়েছে।
ভক্তির সাথে ভগবানের নাম নেওয়া এবং নামের প্রতিটি উচ্চারণের সাথে সাথে আরো বেশি একাগ্রতা ও ভক্তি ঢেলে দেওয়া, এ হল তাঁর উপস্থিতির সাগরে মনকে গভীর থেকে গভীরতর ভাবে নিমজ্জিত করা, যতক্ষণ না এক দিব্য শান্তি ও পরমানন্দের অতল গভীরতায় পৌঁছোন যায় – তোমার প্রার্থনা যে ঈশ্বরকে স্পর্শ করেছে তার সুনিশ্চিত প্রমাণ।

বাহ্যিক পরিস্থিতির দ্বারা প্রভাবিত নয় এমন এক নিঃশর্ত সহজাত অভ্যন্তরীণ আনন্দ ঈশ্বরের প্রতিবেদনশীল উপস্থিতির স্পষ্ট প্রমাণ।
ভগবানের প্রত্যুত্তর অন্তর্জ্ঞানের মাধ্যমে কোনো সমস্যার সমাধান রূপেও আসতে পারে
আমাদের সমস্ত চাহিদা দুভাবে মেটানো যেতে পারে। এক হল পার্থিব, যেমন অসুস্থ হলে আমরা চিকিৎসার জন্য ডাক্তারের কাছে যেতে পারি। কিন্তু এমন এক সময় আসে যখন কোনো মানুষ সাহায্য করতে পারে না। তখন আমরা অন্য দিকে তাকাই–আমাদের শরীর, মন এবং আত্মার নির্মাতা, আধ্যাত্মিক শক্তির দিকে। পার্থিব শক্তি সীমিত আর যখন তা ব্যর্থ হয়ে যায়, আমরা অপরিমিত ঐশ্বরিক শক্তির দিকে তাকাই। একই ভাবে, যখন যথাসাধ্য চেষ্টার পরেও আমাদের আর্থিক চাহিদা অপূর্ণ থেকে যায়, আমরা সেই অন্য শক্তির দিকে তাকাই…। যখন আমরা প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে পড়ি, তখন আমরা আমাদের ধারণা অনুসারে প্রথমে পার্থিব পরিবর্তনের দ্বারা আমাদের পরিবেশকে বদলাতে চেষ্টা করি। কিন্তু যখন আমরা এমন অবস্থায় এসে পৌঁছোই যে বলি – “এখন অবধি যা কিছু চেষ্টা করেছি, সবই ব্যর্থ হয়েছে; এখন কি করি?” – তখন আমরা মনেপ্রাণে সমাধান খুঁজতে থাকি। যখন আমরা যথেষ্ট গভীরভাবে চিন্তা করি, আমাদের ভিতর থেকে সমাধান বেরিয়ে আসে। এটি এক ধরণের প্রার্থনার প্রত্যুত্তর।

মনে রেখো, মনের লক্ষ্য যুক্তিবিচারের চেয়েও বড়ো হল অন্তরে শান্তি অনুভব না করা পর্যন্ত বসে বসে ভগবানের ধ্যান করা। তারপর ভগবানকে বলো, “লক্ষ-কোটি বার নানা চিন্তা করেও আমি একলা আমার সমস্যার সমাধান করতে পারব না; কিন্তু সমস্যাটিকে তোমার হাতে তুলে দিয়ে, প্রথমে তোমার নির্দেশ প্রার্থনা করে এবং তারপর বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে সম্ভাব্য সমাধানের বিবেচনা করে, আমি এর সমাধান করতে পারব।” যে নিজেকে সাহায্য করে ঈশ্বর সত্যই তাকে সাহায্য করেন। ধ্যানে ভগবানের কাছে প্রার্থনা করে যখন তোমার মন শান্ত এবং বিশ্বাসে ভরপুর, তুমি তোমার সমস্যার বিভিন্ন সমাধান দেখতে পাবে; এবং যেহেতু তোমার মন শান্ত, তুমি সবচেয়ে ভালো সমাধানটি বেছে নিতে সমর্থ হবে। সেই সমাধানটিকে অনুসরণ করো, সাফল্য পাবে। এই হল দৈনন্দিন জীবনে ধর্ম-বিজ্ঞানের প্রয়োগ।”
তোমার সাফল্যের জন্য ভগবান তোমার ইচ্ছাশক্তিকে অতিরিক্ত উদ্দীপ্ত করে সাড়া দেন
গঠনমূলক কাজের মধ্য দিয়ে অবিরাম ইচ্ছাশক্তিকে প্রয়োগ করে যাও। যখন তুমি হার না মেনে সমানে লেগে থাকো, তোমার ইচ্ছার লক্ষ্যবস্তুটিকে মূর্ত হতেই হয়। যখন তুমি অনবরত তোমার চিন্তা এবং কাজের মধ্য দিয়ে ইচ্ছাশক্তির প্রয়োগ চালিয়ে যাও, তখন তুমি যা ইচ্ছা করছ তা সফল হতে বাধ্য। এমন কি যদি পৃথিবীতে তোমার ইচ্ছার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ কিছুই না থাকে, তোমার ইচ্ছা অবিচল থাকলে, কোনো না কোনো ভাবে তোমার আকাঙ্ক্ষিত ফল প্রকট হবেই। সেই ধরণের ইচ্ছাশক্তির মধ্যেই ভগবানের জবাব নিহিত আছে; কারণ ইচ্ছাশক্তি ভগবানের কাছ থেকে আসে আর অবিচলিত ইচ্ছাই ঈশ্বরের ইচ্ছা।
এই শেয়ার করুন
