ওয়াইএসএস যুব শিবিরে এক গ্রীষ্মে আনন্দময়তা, একাগ্রতা ও সৎসঙ্গ

২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ওয়াইএসএস-এর ভক্ত ও বন্ধুদের সন্তান শিশু এবং কিশোর-কিশোরীরা বার্ষিক মেয়েদের ও ছেলেদের গ্রীষ্মকালীন যুব শিবিরে, আনন্দ ও সৌহার্দ্যে ভরা এক সপ্তাহ কাটিয়েছে যা প্রতি বছর এপ্রিল, মে ও জুন মাসে অনুষ্ঠিত হয়। রাঁচি, নয়ডা ও চেন্নাইয়ের যোগদা সৎসঙ্গ আশ্রমে ৭ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিশু ও কিশোরদের এক সপ্তাহের ধ্যান, আনন্দদায়ক কার্যক্রম ও অনুপ্রেরণায় পরিপূর্ণ জীবন-উন্নয়নমুখী শিবিরে স্বাগত জানিয়েছে যা শরীর, মন ও আত্মার সমন্বিত বিকাশকে পুষ্ট করেছে।

গুরুদেব পরমহংস যোগানন্দের সম্যক জীবনযাপন শিক্ষার ভিত্তিতে এই শিবিরগুলো যুবসমাজের জন্য তাঁর আধ্যাত্মিক শিক্ষার আদর্শকে লালন করে — শিশুদের এমন এক ভারসাম্যপূর্ণ জীবনযাপন শেখায়, যেখানে ধ্যান ও সৎকর্মের মধ্যে সমন্বয় আছে। প্রতিটি আশ্রমে অনুষ্ঠিত শিবিরের কর্মসূচি শিশু ও কিশোরদের ভিন্ন বয়সের প্রয়োজন অনুসারে সুন্দরভাবে সাজানো হয়েছিল। এতে ছিল শক্তিসঞ্চার ব্যায়াম, দলগত ধ্যান, সন্ন্যাসীদের পরিচালনায় সৎসঙ্গ, গল্প বলা, পুষ্টিকর আহার এবং বহিরাঙ্গণ ক্রীড়া।

রাঁচি আশ্রম:

৭-১২ বছর বয়সী শিশু এবং ১৩-১৭ বছর বয়সী কিশোর-কিশোরীরা পবিত্র ওয়াইএসএস রাঁচি আশ্রম প্রাঙ্গণে সাত দিনের যুব শিবিরে অংশগ্রহণ করে। আধ্যাত্মিক নিত্য কর্মসূচিতে ছিল শক্তিসঞ্চার ব্যায়াম ও ধ্যান, যার মধ্যে ভক্তিমূলক কার্যক্রম যেমন ভজন, সমবেত কীর্তন এবং কৃষ্ণ কথা — শ্রীভগবান কৃষ্ণের বাল্যকাহিনির পুনর্কথনের মতো অনুষ্ঠান অন্তর্ভুক্ত ছিল। ধ্যানের জন্য একটি বিশেষ তাঁবু তৈরি করা হয়েছিল, যার নাম দেওয়া হয় “বাবাজির গুহা” যেখানে অংশগ্রহণকারীরা হিমালয়ের বাবাজির আসল গুহার শান্ত স্পন্দন অনুভব করার মতো এক ধ্যানমগ্ন পরিবেশে মনোনিবেশ করতে পেরেছিল।

সম্যক জীবনযাপন প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবে শিশুদের সৃজনশীল ও আত্মোন্নয়নমূলক নানা কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে উৎসাহিত করা হয়েছিল, যেমন সামাজিক শিষ্টাচার, মালা তৈরি, বাগান করা এবং হস্তশিল্প। সচেতন ও দায়িত্বশীল আচরণ গড়ে তুলতে প্রতিদিন এক ঘণ্টার “স্বনির্দেশিত কার্যক্রম” সময় নির্ধারণ করা হয়েছিল, যেখানে শিশুরা দিনলিপি লেখা, আত্মবিশ্লেষণ বা আশ্রম পরিদর্শনে অংশ নিতে পারত।

আনন্দপূর্ণ খেলার পর শিশুরা পুরস্কার সংগ্রহ করছে
কিশোর-কিশোরীরা ‘বাবাজির গুহা’-তে ধ্যানে নিমগ্ন

স্মরণীয় সপ্তাহটির সমাপ্তি হয়েছিল এক আনন্দমুখর “পালকি শোভাযাত্রা”-র মাধ্যমে যেখানে শিশু ও কিশোর-কিশোরীরা ভক্তিভরে সারা সপ্তাহ জুড়ে ভালোবাসা দিয়ে সাজানো পালকিতে গুরুদের ছবি বহন করে এনেছিল আর সাথে ভজন গেয়েছিল। সেইসঙ্গে তারা অংশ নিয়েছিল এক আধ্যাত্মিক কুইজ, গুপ্তধন সন্ধান, গুরুদেবের শৈশব জীবন নিয়ে একটি বিশেষ প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী এবং শিবিরের একটি স্লাইড শো যা তাদের বিগত সপ্তাহের কথা মনে করিয়ে দিয়েছিল।

নয়ডা আশ্রম:

ওয়াইএসএস নয়ডা আশ্রমে মে ও জুন মাসে পৃথকভাবে ছেলেদের ও মেয়েদের জন্য দুটি সপ্তাহব্যাপী শিবির অনুষ্ঠিত হয়। শগ্রহণকারীদের চারটি দলে বিভক্ত করে অভিজ্ঞ ও স্নেহময় প্রশিক্ষিত দলনেতাদের তত্ত্বাবধানে রাখা হয়েছিল।

একজন ওয়াইএসএস সন্ন্যাসীর পরিচালনায় শক্তিসঞ্চার ব্যায়াম দিয়ে ছেলেদের দিনের শুরু
একজন স্বেচ্ছাসেবক সঙ্কীর্তনের সঙ্গে গুরু-কথা পরিচালনা করছেন

আশ্রমে সকালে অনুষ্ঠিত জপ-যাত্রা ছিল এই শিবিরের আধ্যাত্মিক নিত্যকর্মের অন্যতম আকর্ষণ, যা শিশুদের দিনটির জন্য সঠিক মানসিকতা গড়ে তুলতে সাহায্য করেছিল। গুরু-কথা ও প্রতিদিনের সুন্দরকান্ড পাঠ তাদের ভক্তিভাবকে আরও গভীর করে তুলেছিল। পরমহংস যোগানন্দজির সম্যক জীবনযাপন শিক্ষার ভিত্তিতে নেওয়া পাঠের ব্যতিরেকে শিবিরে জীবনের প্রয়োজনীয় দক্ষতা বিকাশের বিষয়েও নানা পর্যায় অনুষ্ঠিত হয়েছিল, যেমন ডিজিটাল নিরাপত্তা ও জরুরি পরিস্থিতিতে প্রাথমিক চিকিৎসা। ছোটদের জন্য ছিল সন্ন্যাসীদের সঙ্গে সরাসরি আদানপ্রদানের সুযোগ, যেখানে তারা তাদের আধ্যাত্মিক কৌতূহলের পিপাসা মেটাতে পেরেছিল।

চেন্নাই আশ্রম:

নবনির্মিত যোগদা সৎসঙ্গ ওয়াইএসএস চেন্নাই আশ্রমে এপ্রিলের শেষ সপ্তাহ এবং মে মাসের প্রথম সপ্তাহে পৃথকভাবে বালক ও বালিকাদের জন্য দুটি গ্রীষ্মকালীন শিবির অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিটি শিবিরের সূচনা হয় সন্ন্যাসীদের স্নেহপূর্ণ আয়োজনে অনুষ্ঠিত এক আন্তরিক আলাপ-পরিচয়-অনুষ্ঠানের মাধ্যমে, যেখানে অভিভাবক ও শিশুদের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিচয় বিনিময় ঘটে। শিবিরের সূচি সাজানো হয়েছিল মননশীলভাবে নির্বাচিত একটি সুন্দর বিষয়কে কেন্দ্র করে “শিশুদের জন্য আত্মিক গুণাবলি।” প্রতিদিনই একটি নির্দিষ্ট আধ্যাত্মিক গুণকে কেন্দ্র করে দিনব্যাপী কার্যক্রম পরিকল্পিত হয়েছিল, যেমন করুণা, নম্রতা, আনন্দ, সাহস, প্রজ্ঞা ও ভক্তি।

বালিকারা “কৃতজ্ঞতা পাত্র” টিতে যে বিষয়ের জন্য তারা কৃতজ্ঞ সেই বিষয় লেখা চিরকুটে পূর্ণ করে সেটিকে বেদীতে স্থাপন করেছিল।
বালকেরা পাত্র রঙ করার একটি ক্লাসে মগ্ন ছিল

হস্তশিল্প, অ্যানিমেশন চলচ্চিত্র প্রদর্শন এবং নানা খেলার মতো কার্যক্রমগুলোকে এমনভাবে পরিকল্পনা করা হয়েছিল যাতে সেগুলি প্রতিদিনের বিষয়বস্তুর সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হয় এবং শিশুদের মধ্যে আধ্যাত্মিক গুণাবলির গভীরতর বোধ জাগিয়ে তোলে। রন্ধন ও বিশ্রামের বিশেষ পর্ব শিশুদের মধ্যে স্বাস্থ্য ও সুস্থতার একটি সমন্বিত ধারণা গড়ে তুলতে সাহায্য করেছিল।

যোগদা সৎসঙ্গ আশ্রমগুলিতে অনুষ্ঠিত এই গ্রীষ্মকালীন শিবিরে শুধু শিক্ষণীয় ও আধ্যাত্মিক অবকাশই নয় বরং পরমহংস যোগানন্দজির সার্বজনীন ও চিরন্তন শিক্ষার মাধ্যমে নিজেদের অন্তর্নিহিত সম্ভাবনাকে আবিষ্কার করার জন্য এক সঠিক সময়। শিবির শেষে শিশুরা ও কিশোররা ঘরে ফিরেছে অনুপ্রেরণা, প্রজ্ঞা ও স্নেহময় স্মৃতির ভান্ডার নিয়ে এবং অনেকেই গুরুদেবের সঙ্গে এক গভীরতর সম্পর্ক অনুভব করে, নিজেদের অন্তর্জীবনকে লালন করার প্রেরণা নিয়ে ঘরে ফিরেছে।

প্রশংসা বাক্য:

শিবিরে অংশগ্রহণকারী শিশু ও অভিভাবকেরা তাদের অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন:

শিশুরা বলেছে: 

পিতামাতাগণ:  

গ্রীষ্মকালীন শিবিরের শিশুদের লেখা “গুরুদেবকে চিঠি”

রাঁচি যুব শিবির ২০২৫ চলাকালীন নবীন ভক্তেরা ব্যক্তিগত চিঠি লেখার মাধ্যমে গুরুদেব শ্রীশ্রী পরমহংস যোগানন্দজির প্রতি তাদের গভীর ভক্তি প্রকাশ করতে শিখেছিল। নীচে কয়েকটি চিঠির উদ্ধৃতি দেওয়া হল:

প্রিয় গুরুদেব,
… আপনি কেমন আছেন? আশা করি ভালো আছেন। আমার ইচ্ছা, আমি যেন আরও ভালো ধ্যান করতে পারি, অন্যদের সাহায্য করতে পারি, পড়াশোনায় আরো ভালো ফল করে আমার বাবা-মায়ের মুখ উজ্জ্বল করতে পারি। আমি সবসময় সৎ চিন্তা করতে চাই, আমি জানি আপনি সর্বদা আমার সঙ্গে আছেন। জয় গুরু!

আপনার শিষ্য।
– এস

প্রিয় গুরুদেব,
আমি এখানে খুব আনন্দে আছি। আপনি কেমন আছেন? কয়েকদিন আগে আমি আপনাকে ডেয়ারি মিল্ক চকলেট দিয়েছিলাম। আশা করি আপনার ভালো লেগেছে। আমি বিজ্ঞান শাখা নিয়েছি… আমার অনেক আশা আছে। প্রসঙ্গত, আপনার চোখগুলো খুব সুন্দর। আমি প্রতিদিন ধ্যান করি না, কিন্তু আমি চেষ্টা করব।

স্নেহভরে,
– এম কে

দিব্য গুরুদেব,
আপনি কেমন আছেন? আমি এখানে ভালো আছি। একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ কথা বলার আছে।
আপনি কবে আমার কাছে আসবেন? কবে আপনার দর্শন দেবেন? আগেরবার যখন আপনাকে দেখেছিলাম, সেই আনন্দ এখনো মনে আছে… আমি জানি, আপনি একবার এলে আর দর্শন দিলে জীবনের সব সমস্যা দূর হয়ে যাবে। আমার ইচ্ছাশক্তি দৃঢ় করতে আপনার আশীর্বাদ চাই। গুরুদেব, আপনি কি জানেন আমি আপনাকে ভালোবাসি? আপনি জানেন। তাই না? শুধু আমাকে সাহায্য করুন, যাতে আমি আপনাকে এমন ভালোবাসতে পারি “যতক্ষণ না আপনি-ই আমার একমাত্র ভালোবাসা হয়ে ওঠেন।”

আপনার স্নেহভাজন কন্যা,
– ডি

গুরুদেব, আপনি কেমন আছেন? আমি ভালো আছি। আমাকে এই আশ্রমের শিবিরে আনার জন্য ধন্যবাদ। এখানে খুব মজা পেয়েছি। গত বছর থেকেই এখানে আসার অপেক্ষায় ছিলাম। আমি খুব খুশি। ধন্যবাদ গুরুদেব। আমি আপনাকে ভালোবাসি।

– কে

প্রিয় গুরুদেব,
আশা করি আপনি আমার ইচ্ছেটা শোনার মতো সময় পাবেন। আমি লিখছি এটা বলতে যে, আমি চাই আপনি যেন আমার সঙ্গে কথা বলেন এবং আমার জীবনে আমাকে পথ দেখান। আর একটা ছোট ইচ্ছা আছে। আমি আপনার লিচুর গাছ থেকে কয়েকটা লিচু চাই।

ভালোবেসে,
– এ ভি

এই শেয়ার করুন