যোগদা সৎসঙ্গ সোসাইটি অফ ইন্ডিয়া/সেল্ফ-রিয়লাইজেশন ফেলোশিপ – এর তৃতীয় অধ্যক্ষ ও সংঘমাতা, শ্রী দয়ামাতা (সোসাইটির মাতৃস্বরূপ) যিনি তাঁর এই ভূমিকায় ১৯৫৫ থেকে ২০১০এ তাঁর মহাসমাধি অবধি সেবাদান করেছেন, তাঁর প্রদত্ত একটি বার্তা নীচে দেওয়া হল। এই বার্তাটি প্রথমে “শ্রী দয়ামাতাজির একটি পত্র” এই শিরোনামের সাথে ২০১০-এর যোগদা সৎসঙ্গ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল; এই ধরণের বার্তা থেকে যে বিশেষ অনুপ্রেরণা ও জ্ঞানগর্ভ উপদেশ পাওয়া যায়, তার ফলে বছরের পর বছর ধরে পত্রিকার পাঠকদের কাছে তা বিশেষভাবে সমাদৃত হয়ে আসছে।

ঈশ্বর অনুসন্ধানের পথে — এবং জীবনে অন্যান্য লক্ষ্য-প্রাপ্তির জন্য যখন আমরা কঠোর সংগ্রাম করে থাকি, সে সময়ে — আমাদের নিজেদের সম্বন্ধে স্বাস্থ্যকর এবং আস্থাশীল ধারণা পোষণ করা অত্যন্ত জরুরি।
গুরুদেব পরমহংস যোগানন্দ সর্বদা এই বিষয়ে জোর দিতেন যে, যা কিছুই আমরা দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে চিন্তা করি, নিজেদের জীবনে তা আমরা পেতে বা ঘটাতে পারি। যদি আমরা আনন্দময় মনোভাবের সাথে নিজেদের আত্মা রূপে দেখতে থাকি এবং নিজেদের আধ্যাত্মিক সম্ভাবনা এবং সহজাত গুণের প্রতি যদি আমাদের আস্থা থাকে এবং আমরা তাদের উন্নতিসাধন করতে থাকি, তাহলে আমাদের প্রকৃত সত্তাকে, অর্থাৎ নিজেদের দিব্য আত্মাকে আমরা আরও স্পষ্টভাবে প্রকাশ করতে পারি।
নিজের অসামান্য গুণগুলিকে অতুলনীয়রূপে প্রকাশ করার জন্য ঈশ্বর প্রতিটি ব্যক্তিসত্তাকে বিশেষভাবে সৃষ্টি করেন। এই তত্ত্বটির ওপর কিছুকাল মনোনিবেশ করা প্রকৃতই রোমাঞ্চকর! জন্মগতভাবে আমাদের কোনো কিছুরই অভাব নেই। ধ্যানসাধনার শক্তি প্রয়োগ করে এবং সম্যক জীবনযাপন করে সেই পরিপূর্ণতাকে আমাদের খুঁজে বার করতে হবে যা স্বভাবতই আমাদের মধ্যে আছে।
পরমহংসজি বলেন, “তুমি আকুল হয়ে যা কিছু পেতে বা যার মতো হতে চেয়েছ, তা থেকে তুমি এখন ঠিক যেমনটি আছ, তা অনেক মহৎ, অনেক বিশাল। ঈশ্বর তোমার মধ্যে যেভাবে প্রকাশিত হয়েছেন সেভাবে তিনি আর কোনো মানুষের মধ্যে প্রকটিত হননি। তোমার মুখ আর কারও মতো নয়, তোমার অন্তরাত্মা আর কারও মতো নয়, তুমি যা, তোমার নিজের জন্য সেটাই যথেষ্ট; কারণ, সেই ঈশ্বর তোমার অন্তরাত্মার মধ্যে বিরাজমান, যিনি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সম্পদ।”
এই উপলব্ধি, এই বিশ্বাস দৃঢ়তর করতে হবে। নিজেদের ওপর কেন আমরা সীমাবদ্ধতা আরোপ করবো, অথবা কেন অতীতের ভুলভ্রান্তির স্মৃতিতে ডুবে থাকব? ঈশ্বরের স্বতঃস্ফূর্ত প্রেমের ওপর এবং আমাদের আন্তরিক ও একটানা প্রচেষ্টায় তাঁর সক্রিয় সহযোগিতার ওপর ভরসা রেখে প্রতিদিন নতুন উদ্যম নিয়ে শুরু করতে হবে। অবিশ্বাস ও নিরাশার বিষণ্ণতাকে আনন্দের উজ্জ্বল কিরণ দিয়ে দূর করে নতুন চিন্তাধারা নিয়ে নবীন উদ্যমে কাজ শুরু করতে হবে; যে কোনো পরিস্থিতিতে এইভাবে কাজ করাই হল অন্তরাত্মার স্বাভাবিক পদ্ধতি।
নিজের মধ্যে যে দিব্য গুণগুলি রয়েছে সেগুলিকে উপলব্ধি করুন এবং সেগুলিকে বিকশিত করুন; আত্মম্ভরিতা নিয়ে নয়; যে পরমপ্রিয় পরমেশ্বর আপনাকে পরমস্নেহে প্রতিপালন করছেন, তিনি নিজের কিছু অংশ আপনার মাধ্যমে এই পৃ্থিবীতে বিতরণ করতে চান, সেই জন্য।
পরমহংসজি বলেছেন, “সর্বদা গৌরবান্বিত বোধ করবে যে তুমি ঈশ্বরের এক সন্তান; তাঁরই শক্তি তোমাকে কথা বলতে, নড়াচড়া করতে, অনুভব করতে শক্তি যোগায়; নিজের অন্তরেই তুমি তাঁর সাথে আলাপন করতে পারো; নিয়মিত ধ্যান করবে; বন্ধন থেকে তুমি মুক্তি পাবে; তোমার প্রভাবে অন্যেরা নিজেদের মুক্তির পথ খুঁজে পাবে।”