জুলাই ১৯১৫-তে, পরমহংস যোগানন্দ ভারতীয় প্রাচীন স্বামী সন্ন্যাস সম্প্রদায়ে দীক্ষিত হন, যখন তাঁর গুরু স্বামী শ্রীযুক্তেশ্বর ভারতের শ্রীরামপুরে তাঁকে সন্ন্যাসের (সংসার ত্যাগের) ব্রত প্রদান করেন। এই ঘটনা শুধুমাত্র বাইশ বছর বয়সী মুকুন্দলাল ঘোষের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় ছিল তাই নয় — যিনি সেই মুহূর্তে স্বামী যোগানন্দ গিরি নামে পরিচিত হন — বরং এটি বিংশ শতাব্দী এবং তার পরবর্তী কালের বিশ্বব্যাপী আধ্যাত্মিক জাগরণের ওপর তাঁর গভীর প্রভাবের পূর্বাভাস দেয়। বিশেষত, এটি সেই সন্ন্যাসী পরম্পরার ভিত্তি স্থাপন করেছিল যা তাঁর চিরস্থায়ী উত্তরাধিকারের অংশ হয়ে আছে।
পরমহংস যোগানন্দ যে প্রাচীন স্বামী সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন, তা আজও সমৃদ্ধ হয়ে চলেছে যোগদা সৎসঙ্গ সোসাইটি অফ ইন্ডিয়া/সেল্ফ-রিয়লাইজেশন ফেলোশিপ-এর সন্ন্যাসী সম্প্রদায়ে, যেখানে বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন দেশের সন্ন্যাসীরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন। এই সন্ন্যাসী পরম্পরা ওয়াইএসএস/এসআরএফ-এর বিশ্বব্যাপী প্রসারকে অব্যাহত রেখেছেন এবং সমস্ত জাতির মধ্যে যোগের ব্যাপক বিস্তারে সহায়তা করছেন।
বর্তমানের সন্ন্যাস ব্রত অনুষ্ঠান
বৃহস্পতিবার, ২১শে মার্চ ২০২৪, লস অ্যাঞ্জেলস-এ সেল্ফ-রিয়লাইজেশন ফেলোশিপ আন্তর্জাতিক প্রধান কার্যালয়ের প্রধান প্রার্থনাগৃহে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে, যোগদা সৎসঙ্গ সোসাইটি অফ ইন্ডিয়ার দুইজন সন্ন্যাসী এবং সেল্ফ-রিয়লাইজেশন ফেলোশিপের এগারোজন সন্ন্যাসী ওয়াইএসএস/এসআরএফ-এর অধ্যক্ষ ও আধ্যাত্মিক প্রধান শ্রীশ্রী স্বামী চিদানন্দ গিরির থেকে সন্ন্যাসের চূড়ান্ত ব্রতে দীক্ষা গ্রহণ করেন।
যখন একজন সন্ন্যাসী (বহু বছরের সন্ন্যাস প্রশিক্ষণ ও আত্মশৃঙ্খলা পালনের পর) সন্ন্যাসের চূড়ান্ত ব্রত গ্রহণ করেন, তখন তাঁকে একটি নতুন নাম দেওয়া হয়, যা একটি নির্দিষ্ট দৈব গুণের মাধ্যমে তাঁর ভগবান বা অনন্ত আনন্দের সাথে মিলিত হবার আকাঙ্ক্ষাকে ব্যক্ত করে, যেমনটি পরমহংসজি তাঁর যোগী-কথামৃত গ্রন্থে (“সন্ন্যাস লইয়া স্বামী আখ্যা গ্রহণ” অধ্যায়ে) ব্যাখ্যা করেছেন।
নীচে ২১শে মার্চের সন্ন্যাস ব্রত অনুষ্ঠান সমাপ্তির পরেই তোলা নতুন সন্ন্যাসীদের একটি ছবি রয়েছে।
সন্ন্যাসীদের নতুন নামের অর্থ
স্বামী অসীমানন্দ: অসীমের সঙ্গে একাত্মতার মাধ্যমে আনন্দ; স্বামী গণেশানন্দ: প্রজ্ঞা ও সাফল্যের অধিষ্ঠাতার প্রতি ভক্তির মাধ্যমে আনন্দ, “বিঘ্নবিনাশী”; স্বামী বোধানন্দ: ঈশ্বর চেতনা জাগ্রত করার মাধ্যমে আনন্দ; স্বামী সঞ্জয়ানন্দ: দিব্য অন্তর্দৃষ্টির দ্বারা প্রাপ্ত পূর্ণ আত্মজয়ের মাধ্যমে আনন্দ; স্বামী শান্তিময়: যিনি (বা যিনি আকাঙ্খা করেন) শান্তি, ঐশ্বরিক প্রশান্তি দ্বারা পরিব্যাপ্ত; স্বামী পুণ্যানন্দ: সৎ কর্মের মাধ্যমে আনন্দ; স্বামী শংকরানন্দ: কল্যাণকারী ঈশ্বরের প্রতি ভক্তির মাধ্যমে আনন্দ; স্বামী শরণানন্দ: ঈশ্বরের আশ্রয়ে বা শরণাগতের মাধ্যমে আনন্দ; স্বামী যোগেশানন্দ: যোগের সিদ্ধির মাধ্যমে আনন্দ; স্বামী সাখ্যানন্দ: প্রভুকে অন্তরঙ্গ সখারূপে ভালোবাসার মাধ্যমে আনন্দ; স্বামী বিদ্যানন্দ: ঈশ্বরের দিব্য প্রজ্ঞা ও জ্ঞানের মাধ্যমে আনন্দ; স্বামী মৈত্রীময়: প্রেমময় করুণায় পরিপূর্ণ; স্বামী নির্মলানন্দ: পবিত্রতার মাধ্যমে আনন্দ।
পরমহংস যোগানন্দের কর্মধারার প্রসারে
যোগদা সৎসঙ্গ সোসাইটি অফ ইন্ডিয়া-র সন্ন্যাসীরা প্রতিদিনের ক্রিয়াযোগ ধ্যান সাধনার পাশাপাশি পরমহংসজির কাজকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে সেবা প্রদান করে থাকেন। এর মধ্যে রয়েছে — ভারত এবং প্রতিবেশী দেশেতে সর্বসাধারণের জন্য বক্তৃতা ও ক্লাস পরিচালনা করা; সাধনা সঙ্গমে বক্তৃতা প্রদান; সর্বসাধারণের জন্য আঞ্চলিক অনুষ্ঠানের আয়োজন; অফিস পরিচালনা; সোসাইটির আশ্রম, কেন্দ্র ও নিভৃতাবাসের প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন; ওয়াইএসএস-এর বই ও রেকর্ডিং প্রকাশ এবং বিতরণের তত্ত্বাবধান করা; এবং আধ্যাত্মিক বিষয়ে জিজ্ঞাসুদের পরামর্শ প্রদান।
আপনি পরমহংস যোগানন্দের আশ্রমগুলিতে সন্ন্যাসী জীবনের বিভিন্ন পর্যায় সম্পর্কে আরও জানতে পারেন আমাদের ওয়েবসাইটের “সন্ন্যাসী সম্প্রদায়” বিভাগে।



















