এই ব্লগপোস্টটি ২০২৫-এর সেল্ফ-রিয়লাইজেশন ফেলোশিপ বিশ্ব সমাবর্তন -এ ওয়াইএসএস/এসআরএফ-এর অধ্যক্ষ স্বামী চিদানন্দ গিরিজির এক সৎসঙ্গ থেকে সম্পাদিত অংশ। পুরো বক্তৃতাটি — “হাউ-টু-লিভ স্কিলস টু সারভাইভ, থ্রাইভ, এন্ড বি ভিকটোরিয়াস ইন দ্য মেটিরিয়াল ওয়ার্ল্ড” — এসআরএফ ইউটিউব চ্যানেলে দেখা যেতে পারে।.

আমি পরমহংস যোগানন্দের একটি কাহিনী আপনাদের শোনাতে চাই, যা আমাদের প্রাণোচ্ছলতা, উদ্দীপনা এবং প্রকৃত অর্থে শিষ্যত্বের মর্ম বুঝতে সাহায্য করে। অনেক আগে ১৯৪১-এ “মানুষের চিরন্তন অন্বেষণ” বক্তৃতায় তিনি এই গল্পটি বলেছিলেন।
তিনি বলেছিলেন: “গত গ্রীষ্মে আমি একটি মঠে গিয়েছিলাম, যেখানে আমার এক পুরোহিতের সঙ্গে দেখা হয়েছিল। তিনি ছিলেন এক মহৎ ব্যক্তি। আমি তাঁকে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘আপনি কতদিন ধরে সন্ন্যাসীজীবনে আছেন?’
তিনি উত্তর দিলেন, ‘প্রায় পঁচিশ বছর।’
তারপর আমি প্রশ্ন করলাম, ‘আপনি কি খ্রিস্টকে দেখেছেন?’
তিনি বললেন, ‘আমি তার যোগ্য নই। হয়তো মৃত্যুর পর তিনি আমাকে দর্শন দেবেন।’
তখন আমি তাঁকে আশ্বস্ত করলাম, ‘না, আজ রাত থেকেই আপনি তাঁকে দেখতে পাবেন, যদি আপনি মনস্থির করেন।’”
পরমহংসজি বললেন, “তাঁর চোখে জল ভরে উঠেছিল, আর তিনি নীরব হয়ে গিয়েছিলেন।”
“আজ রাত থেকেই আপনি তাঁকে দেখতে পারবেন,যদি মনস্থির করেন।” যোগানন্দজি কেবলমাত্র ইচ্ছাশক্তির পরম প্রয়াস বা অতিরিক্ত চেষ্টা বোঝাচ্ছিলেন না। অবশ্যই অধিকতর আন্তরিক প্রয়াসের প্রয়োজন আছে; কিন্তু আরও গুরুত্বপূর্ণ হল, আমরা যেন মনস্থির করি যে আমরা যোগ্য, যে আমরা সেই আশীর্বাদ লাভ করতে পারি, আমরা সেই আধ্যাত্মিক চেতনা অর্জন করতে পারি।
ধ্যান এবং আধ্যাত্মিক জীবনে কত আশীর্বাদ যে আমাদের কাছে অপ্রাপ্য হয়ে থাকে, শুধু এই ভুল ধারণার কারণে যে আমরা যোগ্য নই! কিন্তু আপনি যোগ্য। “মনস্থির করুন,” আমাদের গুরু বলেছিলেন, “আজ রাত থেকেই।”
শুধু ভাবুন : ধরুন, একটি ঘরে কেউ আস্তে করে আপনাকে বলছে, কতটা সে আপনাকে ভালোবাসে, আপনাকে কত উচ্চমানের মানুষ মনে করে , কতখানি শ্রদ্ধা ও প্রশংসা করে। অথচ একই সঙ্গে আপনি নিজেকে বলছেন, “না, আমি ভালো নই; না, আমি মূল্যহীন।” ফলে সেই স্নেহের মধুর কণ্ঠস্বর আপনি নিজেই ডুবিয়ে দিচ্ছেন। কথাটায় মিল পাচ্ছেন তো? আমরাও প্রায়শই ঈশ্বর ও গুরুর সঙ্গে আমাদের সম্পর্কে ঠিক এই ভুলটাই করি?
আমি আগে উল্লেখ করেছি, কতখানি আমি নির্ভর করি এবং উপকৃত হই পরমহংসজির কসমিক চান্টস থেকে,যেমন আমি নিশ্চিত আপনারা সকলেই হয়ে থাকেন। আধ্যাত্মিক জীবনের একেবারে শুরুর সময় থেকে, একটি বিশেষ গান আমার হৃদয়ে গভীরভাবে অনুরণিত হয়েছিল — কারণ আমার এটার ভীষণ দরকার ছিল এবং সেই সময় আমার মানসিকতায় এক বিরাট শুন্যতাকে পূর্ণ করেছিল এই সঙ্গীত। সেই গানটি হল অনুপম সুন্দর ভজন “ডোর অফ মাই হার্ট ”:
“হৃদয় দ্বার আমার, খোলা রাখি তোমা লাগি।
আসিবে কি আসিবে? একবার আসিবে?
বিফলে কি যাবে দিন তোমারে না হেরিয়ে?
নিশিদিন নিশিদিন পথ চাহি নিশিদিন।”
সেই ভজনটি আমাকে আমার আধ্যাত্মিক পথের শুরুর দিকে অনেক বছর ধরে এগিয়ে নিয়ে গেছে।
কিন্তু “যোগ্যতা” প্রসঙ্গে আমি আপনাদের সামনে যা তুলে ধরতে চাই তা হল,এক সময় আমি বুঝতে পারলাম, “দেখো, আমি তো এই ভজনটির কেবল অর্ধেক অর্থই উপলব্ধি করেছি।” কারণ যতটা শক্তিশালীভাবে এই ভজন আমাদের ভক্তি, আকুলতা, তীব্র সাধনা ও অধ্যবসায় বাড়িয়ে তোলে — “আসিবে কি আসিবে? একবার আসিবে? — এর আরেকটি দিকও আছে। সেটি হল যখন আমরা উপলব্ধি করি যে আসলে ঐ ভজনটি জগন্মাতা নিজেও সেই আমাদের উদ্দেশ্যে গাইছেন।
আপনি একে অভ্যাসে রূপ দিতে পারেন। ভাবনাটি উল্টে নিন, আপনি তাঁকে আহ্বান জানানোর বদলে ভাবুন তিনি-ই আমাদের আহ্বান জানাচ্ছেন। কল্পনা করুন! তিনি আমাদের প্রত্যেককে বলছেন: “আমার প্রিয় সন্তানগণ, আমার হৃদয়ের দ্বার তোমাদের জন্য উন্মুক্ত রাখা আছে। “আসিবে কি আসিবে? একবার আসিবে? কারণ তিনি জানেন, আমরা যদি একবারও তাঁর কাছে যাই, আর কখনো তাঁকে ছেড়ে যেতে চাইব না।
তারপর আমাদের আত্মা প্রতিউত্তর দেয়, “মা, আমার দিনগুলো কি তোমাকে না দেখে এভাবেই চলে যাবে?” আর তিনি সরাসরি উত্তর দেন না, কেবল পুনরাবৃত্তি করেন: “নিশিদিন নিশিদিন,পথ চাহি নিশিদিন।”
এটিকে আপনার ধ্যানের অভ্যাসে নিয়ে আসুন, আর দেখুন কেমন করে যে আপনি যোগ্য নন এটি সেই ভ্রান্ত ধারণাটিকে দূর করে দেয়।

আপনি এটি শুনতে পারেন এসআরএফ- এর সন্ন্যাসিনীদের কীর্তন দল পরিবেশিত “হৃদয় দ্বার আমার” ভজনটি, তব প্রেমদীপখানি জ্বালো হে রেকর্ডিং থেকে (যা, ওয়াইএসএস ও এসআরএফ-এর আরও অনেক ভজন রেকর্ডিং সহ, ওয়াইএসএস বুকস্টোরে পাওয়া যায়)।