
আন্তর্জাতিক যোগ দিবস
পরমহংসজি অত্যন্ত আনন্দিত হতেন জেনে যে আজ সারা বিশ্ব প্রতি বছর যোগদর্শন ও যোগবিজ্ঞানের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করছে, যেহেতু তাঁর জীবন সকল সত্যসন্ধানীদেরকে কালজয়ী যোগীয় ধ্যান প্রণালীর সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য উৎসর্গীকৃত হয়েছে। প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে, যোগের প্রতি আজকের বিশ্বব্যাপী আগ্রহের বেশিরভাগই পরমহংস যোগানন্দের শিক্ষার ফল, যা তিনি এক শতাব্দীরও অধিক আগে ভারত থেকে আমেরিকায় নিয়ে গিয়েছিলেন। “যদি ভারতের আন্তর্জাতিক যোগ দিবস পালনের ধারণা জাতিসংঘে সহজেই গ্রহণযোগ্য হয়ে থাকে, তবে তার বেশিরভাগ কৃতিত্ব অবশ্যই পরমহংস যোগানন্দের, যিনি আমেরিকায় ভারতের প্রথম যোগ গুরু” — এমনটাই জানিয়েছে একটি অনলাইন সংবাদমাধ্যম। “এক শতাব্দী আগে আমেরিকায় যোগের ভিত্তি স্থাপনে তিনি এক বিশাল ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন।”
পরমহংস যোগানন্দ তাঁর বহুল প্রশংসিত ভগবদগীতা অনুবাদ ও ভাষ্যগ্রন্থ (গড টক্স উইথ অর্জুন)-এ ব্যাখ্যা করেছেন: “যোগ শব্দটি আত্মার সঙ্গে মনের মিলনের ফলস্বরূপ যথার্থ ভারসাম্য বা মানসিক সমতাকে সূচিত করে। যোগ সেই আধ্যাত্মিক ধ্যান প্রক্রিয়াকেও সূচিত করে, যার মাধ্যমে পরমাত্মার সঙ্গে সংযোগ ঘটে। এছাড়াও যোগের অর্থ হল যে কোনো কর্ম যা ঐশ্বরিক মিলনের পথ প্রদর্শন করে।”
অনুষ্ঠান সম্পর্কে
২১শে জুন আন্তর্জাতিক যোগ দিবস উপলক্ষ্যে, যোগদা সৎসঙ্গ সোসাইটি অফ ইন্ডিয়া (ওয়াইএসএস) শারীরিক, মানসিক ও আত্মিক সমৃদ্ধির জন্য অনলাইন এবং প্রত্যক্ষ উভয় ধরণের অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল।
অনলাইন অনুষ্ঠানসমূহের রেকর্ডিং নিম্নে উপলব্ধ রয়েছে।
সব অনলাইন অনুষ্ঠান
“ক্রিয়াযোগ ধ্যানের ভূমিকা”
(একটি নির্দেশিত ধ্যানের অধিবেশন সহ)
ওয়াইএসএস সন্ন্যাসীরা ইংরেজি ও বিভিন্ন ভারতীয় ভাষায় যোগ-ধ্যান সম্পর্কে প্রাথমিক অধিবেশন পরিচালনা করেছিলেন। কিভাবে দৈনন্দিন জীবনের সকল পরিস্থিতির মাঝেও অন্তস্থিত ভারসাম্য ও শান্তি বজায় রাখা যায় তা অনুসন্ধানের জন্য এই অধিবেশনগুলি বিশেষভাবে ঈশ্বর সন্ধানীদের উদ্দেশ্যে পরিকল্পিত হয়েছিল — পরমহংস যোগানন্দের ক্রিয়াযোগ শিক্ষার অনুশীলনের মাধ্যমে, যা অন্তরে পরমানন্দ জাগ্রত করে এবং শেষ পর্যন্ত আত্মোপলব্ধির দিকে পরিচালিত করে।
এই সকল অনুষ্ঠান পরমহংস যোগানন্দ ও তাঁর শিক্ষাবলির একটি উপস্থাপনার মাধ্যমে আরম্ভ হয়েছিল। এরপর, ওয়াইএসএস সন্ন্যাসীরা অংশগ্রহণকারীদের একটি নির্দেশিত ধ্যান অধিবেশনের মাধ্যমে পরিচালিত করেছিলেন, যার মধ্যে ছিল সঠিক দেহভঙ্গির অভ্যাস, প্রাথমিক শ্বাস-প্রশ্বাস অনুশীলন, একটি সংকল্প এবং একটি মানসদর্শন অনুশীলন।
ইংরেজি অধিবেশন
(স্বামী ললিতানন্দ গিরি)

হিন্দি অধিবেশন
(স্বামী চৈতন্যানন্দ গিরি)

তামিল অধিবেশন
(স্বামী শুদ্ধানন্দ গিরি)

তেলুগু অধিবেশন
(স্বামী কেদারানন্দ গিরি)


পরমহংস যোগানন্দ সম্বন্ধে
পরমহংস যোগানন্দ তাঁর সর্বাঙ্গীণ শিক্ষার মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবনে গভীর প্রভাব ফেলেছেন। “পশ্চিমে যোগের জনক” হিসেবে সুপরিচিত, পরমহংসজি প্রথম এমন এক বিশ্বব্যাপী শিক্ষা সূচিত করেন, যা বিজ্ঞানসম্মত প্রাণায়াম (প্রাণশক্তি নিয়ন্ত্রণ) প্রক্রিয়ার একটি সম্পূর্ণ পদ্ধতি তুলে ধরে। যোগের চূড়ান্ত লক্ষ্য হল নিজেকে সর্বজ্ঞ, সর্বব্যাপী আত্মা রূপে উপলব্ধি করা। যোগানন্দজির কর্মসূচি — যোগদা সৎসঙ্গ পাঠমালাতে বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হয়েছে — যা ধর্মের অন্তর্নিহিত ভিত্তির প্রতি একটি বাস্তববাদী দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করে। এ এক প্রণালী, যা ক্রমশ আরও বেশি সংখ্যক মানুষকে আকৃষ্ট করছে: যারা শুধুমাত্র হঠযোগের শারীরিক উপকারের জন্য নয়, বরং মানসিক শক্তির বিকাশ এবং সর্বোপরি আত্মিক বিকাশের জন্য আগ্রহী।
তাঁর শিক্ষা ও তিনি যে ধ্যান প্রক্রিয়াগুলি শিখিয়েছিলেন, সেগুলো আজ উপলব্ধ রয়েছে:
- যোগদা সৎসঙ্গ পাঠমালা, একটি সর্বাঙ্গীণ ঘরে-বসে পাঠের পাঠ্যক্রম যা যোগানন্দজি নিজেই শুরু করেছিলেন। এটি ডিজিটাল অ্যাপেও উপলব্ধ
- ওয়াইএসএস-এর বই, রেকর্ডিং এবং অন্যান্য প্রকাশনা, যা তিনি তাঁর শিক্ষাবলি বিশ্বব্যাপী প্রচারের জন্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
- দেশজুড়ে যোগদা সৎসঙ্গ সোসাইটি অফ ইন্ডিয়ার সন্ন্যাসী পরিচালিত পরিক্রমা অনুষ্ঠিত হয় যেখানে তাঁরা যোগের শক্তিসঞ্চার, একাগ্রতা এবং ধ্যানের বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ব্যাখ্যা করেন।
- সন্ন্যাসীগণ কর্তৃক পরিচালিত নিভৃতাবাস
- সাধনা সংগম
- শিশুদের জন্য ধ্যান ও আধ্যাত্মিক জীবনযাপনের অনুষ্ঠানসূচি
অন্যরা যা বলেছেন
"আমি ১৯৩৫-এ কলকাতায় পরমহংস যোগানন্দের সঙ্গে সাক্ষাৎ করি। আমি তখন থেকেই আমেরিকায় তাঁর কর্মধারার বিবরণ অনুসরণ করে আসছি। অন্ধকারের মধ্যে একটি উজ্জ্বল আলো যেমন দীপ্তি ছড়ায়, তেমনি ছিল এই পৃথিবীতে যোগানন্দের উপস্থিতি। এমন মহাত্মা কদাচিৎ পৃথিবীতে অবতীর্ণ হন, যখন মানুষের মধ্যে প্রকৃত প্রয়োজন দেখা দেয়।"

“আজ যোগদা সৎসঙ্গ সোসাইটি অফ ইন্ডিয়া/সেল্ফ-রিয়লাইজেশন ফেলোশিপের বিশ্বব্যাপী কেন্দ্রগুলো পরমহংস যোগানন্দের কর্মের প্রতিনিধি। এরা নিজেদের বহুগুণ বাড়িয়ে একটি ঘনিষ্ঠ বুননের আধ্যাত্মিক চুম্বকীয় জাল তৈরি করবে, যা বিশ্বে শান্তি ও আনন্দ বর্ষণ করবে।”

“আমি যোগদা সৎসঙ্গ সোসাইটি অফ ইন্ডিয়া/সেল্ফ-রিয়লাইজেশন ফেলোশিপে (পরমহংস যোগানন্দের প্রতিষ্ঠিত) সর্বোচ্চ আধ্যাত্মিকতা, সেবা এবং ভালোবাসা পেয়েছি।”

“আমি এই বইটি ভালোবাসি। যারা তাদের চিন্তাভাবনা এবং আদর্শকে চ্যালেঞ্জ জানাতে যথেষ্ট সাহসী, তাদের অবশ্যই এটি পড়া উচিত। এই পুস্তকে প্রদত্ত জ্ঞানের বোধগম্যতা ও প্রয়োগ আপনার সমগ্র দৃষ্টিভঙ্গি এবং জীবনকে সম্পূর্ণরূপে পরিবর্তিত করবে। ঈশ্বরের ওপর বিশ্বাস রাখুন এবং ভালো কাজে দৃঢ়ভাবে অগ্রসর হোন #এককপ্রেম #কৃতজ্ঞথাকুন #একেঅপরকেসাহায্যকরুন”

"১৯৩০-এর দশকে আমি বালক অবস্থায় দুবার পরমহংস যোগানন্দকে দেখেছি.... কুড়ি বছর পরে আমাকে কেউ যোগী-কথামৃত দেয়.... সেই বই পড়া শুরু করার সঙ্গে সঙ্গে সেটি আমার ওপর এমন প্রভাব ফেলেছিল যা আমি বর্ণনা করতে পারি না। আমি যোগীদের লেখা যোগ সম্পর্কে অনেক বই পড়েছি; কিন্তু কখনও এই বইয়ের মতো মুগ্ধ হইনি। এতে যেন এক ধরনের যাদু আছে।"

"আমি বাড়িতে যোগী-কথামৃত বইয়ের স্তূপ করে রাখি এবং প্রায়ই এটি মানুষকে উপহার দিই। যখন কেউ নতুন করে নিজেকে গড়ে তোলার প্রয়োজন বোধ করে, আমি বলি — এই বইটি পড়ো, কারণ এটি প্রতিটি ধর্মের হৃদয়ে পৌঁছে যায়।"


যোগদা সৎসঙ্গ সোসাইটি অফ ইন্ডিয়া সম্পর্কে
গত ১০০ বছর ধরে, যোগদা সৎসঙ্গ সোসাইটি অফ ইন্ডিয়া (ওয়াইএসএস), এর প্রতিষ্ঠাতা ও পশ্চিমে যোগের জনক রূপে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণীয় শ্রীশ্রী পরমহংস যোগানন্দের আধ্যাত্মিক ও মানবহিতৈষী কর্মধারাকে অব্যাহত রাখতে উৎসর্গীকৃত।
পরমহংস যোগানন্দ হাজার হাজার বছর পূর্বে ভারতে উদ্ভূত পবিত্র আধ্যাত্মিক বিজ্ঞান ক্রিয়াযোগের সর্বজনীন শিক্ষাগুলি সকলের জন্য উপলব্ধ করার উদ্দেশ্যে ১৯১৭-তে যোগদা সৎসঙ্গ সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করেন। এই অ-সাম্প্রদায়িক শিক্ষাগুলি একটি পূর্ণাঙ্গ দর্শন ও জীবনযাত্রার পথ নির্দেশ করে, যা সার্বিক সাফল্য ও কল্যাণ অর্জনে সহায়ক, এবং জীবনের চূড়ান্ত লক্ষ্য — আত্মার সঙ্গে পরমাত্মার (ঈশ্বরের) মিলনের জন্য ধ্যানের প্রণালীও প্রদান করে।
পরমহংস যোগানন্দ তাঁর বহুল প্রশংসিত ভগবদগীতা অনুবাদ ও ভাষ্যগ্রন্থ (গড টক্স উইথ অর্জুন)-এ ব্যাখ্যা করেছেন: “যোগ শব্দটি আত্মার সঙ্গে মনের মিলনের ফলস্বরূপ যথার্থ ভারসাম্য বা মানসিক সমতাকে সূচিত করে। যোগ সেই আধ্যাত্মিক ধ্যান প্রক্রিয়াকেও সূচিত করে, যার মাধ্যমে পরমাত্মার সঙ্গে সংযোগ ঘটে। এছাড়াও যোগের অর্থ হল যে কোনো কর্ম যা ঐশ্বরিক মিলনের পথ প্রদর্শন করে।”
