ক্রিয়াযোগের ওপর পরমহংস যোগানন্দ — নিত্য নবীন আনন্দের চাবিকাঠি

১৬ আগস্ট, ২০২৩

ভূমিকা:

আমাদের জীবন একে অপরের থেকে যতই পৃথক হোক না কেন, জ্ঞানচক্ষুর মাধ্যমে তাকালে আমরা দেখব যে আমরা সকলে যার খোঁজ করছি তা অভিন্ন। পরমহংস যোগানন্দ বলেছেন, “সকলে অন্তরে যে অনুভূতির সন্ধান করছে, তা হল এমন এক আনন্দ যা মনোরমভাবে বৈচিত্রময়, যদিও মৌলিকভাবে অপরিবর্তনীয়।”

সমস্যা হল যে আমরা বেশিরভাগ সময়ই ভুল স্থানে ওই ধরণের স্থায়ী আনন্দের সন্ধান করি। আমরা একটা ইচ্ছা পূর্ণ করি, কিন্তু দেখি যে আর এক ইচ্ছা উৎপন্ন হওয়ার সাথে-সাথে আগের ইচ্ছাটি পূর্ণ হওয়ার আনন্দ ম্লান হয়ে গেছে। আমরা প্রচুর অর্থ বা কৃতিত্বের অধিকারী হওয়ার পরেও অনুভব করতে পারি যে আমাদের “আরও কিছুর” জন্য গভীর বাসনা আছে।

ওই বাসনা কি এই জন্মে পূর্ণ হবে? বাস্তবেই এমন এক আনন্দ লাভ করা কি সম্ভব যা কখনও আমাদের ক্লান্তিকর মনে হবে না, সকল আধ্যাত্মিক পথের সাধু-মহাত্মারা যার সম্পর্কে বলেছেন যে তা আমাদের জন্মগত অধিকার?

পরমহংসজি ব্যাখ্যা করেছেন যে এই আধুনিক যুগে তাঁর প্রসিদ্ধ গুরু পরম্পরার দ্বারা পুনরুজ্জীবিত করা ধ্যান-বিজ্ঞান অর্থাৎ ক্রিয়াযোগের নিত্য প্রয়োগ দ্বারা এই চিরন্তন প্রশ্নের উত্তর আপনারা নিজেরাই সুনিশ্চিতভাবে দিতে পারবেন।

যে সাধক ক্ষণস্থায়ী সুখের মিথ্যা প্রতিশ্রুতির থেকে শ্রেষ্ঠতর কিছুর আকাঙ্ক্ষা করে, সে ধাপে ধাপে ওই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অন্তরের গভীরে প্রবেশ করে ক্রমে প্রমাণ পাবে যে তার আত্মাই হচ্ছে সেই বহুকালের কাঙ্ক্ষিত নিত্য-নবীন আনন্দ, ও তারপর সে সেই আনন্দ দ্বারা জীবনের সকল ক্ষেত্রকে প্লাবিত করতে সক্ষম হবে।

পরমহংস যোগানন্দের বাণী ও রচনার উদ্ধৃতাংশ:

আমরা সকলেই আনন্দের সন্ধান করছি, এমন এক আনন্দের যা আসা-যাওয়া করে না। আমরা স্থায়ী আনন্দ চাই – যে আনন্দ নিত্য-নবীন ও চিরন্তন। আমরা এমন আনন্দ চাই না যা বাসি হয়ে যাবে। আমরা নিত্য-নবীন আনন্দ চাই।

আমি কোনো জাগতিক সুখের মধ্যে ক্রিয়াযোগের আধ্যাত্মিক আনন্দের মতো এত তৃপ্তি খুঁজে পাই না। পাশ্চাত্য জগতের সকল আরাম ও বিশ্বের যাবতীয় সোনার বিনিময়েও আমি তা ছাড়তে পারব না। ক্রিয়াযোগের মাধ্যমে আমি আমার আনন্দকে সর্বদা বহন করে চলতে সক্ষম হয়েছি।

গভীরভাবে অভ্যাস করলে ক্রিয়াযোগ শ্বাস-প্রশ্বাসকে মনে, মনকে স্বজ্ঞায়, স্বজ্ঞাকে আত্মার আনন্দময় অনুভূতিতে ও আত্মাকে পরমাত্মার বিশ্বব্যাপী পরমানন্দে বিলীন করে।

যেকোনো সুকর্ম চেতনারূপী মৃত্তিকায় কোদালের মতো খনন করে ঈশ্বরের আনন্দের ফোয়ারা থেকে এক ছোট্ট ফিনকি বার করে আনে। তবে সর্বোচ্চ সুকার্য ধ্যানের কোদাল চেতনার অভ্যন্তরীণ উপরিতল উন্মোচিত করে জীবনের সকল আনন্দকে উৎসারিত করে।

যোগ হচ্ছে আত্মার সাথে পরমাত্মার মিলন, অর্থাৎ সকলে যে মহান পরমানন্দের সন্ধান করছে, তার সাথে পুনরায় যুক্ত হওয়া। এ কি এক অপূর্ব সংজ্ঞার্থ নয়? পরমাত্মার নিত্য-নবীন পরমানন্দের মধ্যে উপলব্ধি করা যায় যে এই আনন্দ অন্য যে কোনো সুখের চেয়ে শ্রেষ্ঠতর ও কোনোকিছুই আর তোমাকে নামাতে পারবে না।

নিউ ইয়র্ক-এ আমার এক অতি ধনী ব্যক্তির সাথে দেখা হয়েছিল। নিজের জীবন সম্বন্ধে কিছু বলতে গিয়ে সে আমাকে বলল, “আমি সাংঘাতিক রকমের ধনী, ও সাংঘাতিক রকমের স্বাস্থ্যবান —” ও সে তার কথা শেষ করার আগেই আমি বললাম, “কিন্তু আপনি সাংঘাতিক রকমের সুখী নন! আমি আপনাকে শেখাতে পারি যে কীভাবে নিত্য-নবীন আনন্দলাভের প্রতি সদা আগ্রহী থাকা যায়।” তিনি আমার ছাত্র হলেন। ক্রিয়াযোগের অভ্যাস ও সম্যক জীবনযাপন করে, সদা অন্তরে ঈশ্বরের প্রতি ভক্তিপূর্ণ থেকে, তিনি বৃদ্ধ বয়স পর্যন্ত নিত্য নবীন আনন্দে পরিপূর্ণ দীর্ঘ জীবনযাপন করেছিলেন।

আমরা আপনাদের পরমহংস যোগানন্দের এক ভাষণের অংশবিশেষ পাঠ করতে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি, যাতে তিনি চেতনার সাধারণ স্তর ও অন্তরে পরমাত্মার নিত্য-নবীন আনন্দের অনুভূতির মধ্যে পার্থক্যের আরও ব্যাখ্যা করেছেন।

আপনারা প্রকৃত আনন্দলাভ ও চেতনার সম্পূর্ণ রূপান্তর সাধনের ক্ষেত্রে ক্রিয়াযোগের ক্ষমতা সম্বন্ধে পরমহংস যোগানন্দের বক্তব্যও শুনতে পারেন।

এই শেয়ার করুন