পাশ্চাত্যে পরমহংস যোগানন্দের প্রথম বক্তৃতা এবং এর কালজয়ী বার্তা

৪ঠা অক্টোবর, ২০২৪

২০২০-র সেপ্টেম্বরের সংবাদ সংকলন থেকে অনুপ্রেরণা 

১৯২০-র অক্টোবরে বোস্টনে আয়োজিত ইন্টারন্যাশনাল কংগ্রেস অফ রিলিজিয়াস লিবারেলস-এ সহ প্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগানন্দজি — আমেরিকার যে অনুষ্ঠানে “ধর্মবিজ্ঞান” এর ওপর তিনি তাঁর প্রথম বক্তৃতা দিয়েছিলেন

১৯২০-র ১৯শে সেপ্টেম্বর পরমহংস যোগানন্দের গুরুত্বপূর্ণ আমেরিকা আগমনের বার্ষিকী এই মাসে আমরা পালন করি।

এখানে আগমনের পরেই যোগানন্দজি সেই সংগঠনের সূচনা করেছিলেন যার পরবর্তীকালে নাম রেখেছিলেন সেল্ফ-রিয়লাইজেশন ফেলোশিপ। ভারতবর্ষ থেকে আনীত ক্রিয়াযোগ বিজ্ঞানের প্রচারের উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত এসআরএফ গুরুদেবের জীবৎকালের মধ্যেই প্রসারলাভ করে ও বিশ্বব্যাপী সদস্যতা লাভ করে। (ভারতবর্ষ ও প্রতিবেশী দেশগুলিতে পরমহংসজির কার্য যোগদা সৎসঙ্গ সোসাইটি অফ ইন্ডিয়া নামে পরিচিত।) ১৯৫২-তে তাঁর দেহাবসানের পরবর্তীকালে যোগানন্দজির শিক্ষা ক্রমবর্ধমান বিশ্বব্যাপী অনুগামী দ্বারা পরিবেষ্টিত হয়ে তার প্রভাব বিস্তার করে চলেছে।

শত বৎসর পূর্বে বোস্টনে যোগানন্দজির ঐতিহাসিক অবতরণের সম্মানে আমরা আমেরিকায় তাঁর সর্বপ্রথম বক্তৃতা “ধর্মবিজ্ঞান”-এর স্মৃতিচারণ করছি। তাঁর আগমনের দুই সপ্তাহের কিছুকাল পরেই বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত ধর্মীয় নেতাদের সভায় আলোচনার পর যোগানন্দজি ভারতবর্ষের সর্বজনীন আধ্যাত্মিকতাকে জোরালোভাবে উপস্থাপন করেছিলেন — চিরন্তন অথচ সময়োপযোগী আদর্শমালা যা বেশিরভাগ পাশ্চাত্যবাসীর কাছেই নতুন ছিল এবং যা আধুনিক বৈজ্ঞানিক যুগের সঙ্গে মানানসই।

যোগানন্দজি নিশ্চিত করেছিলেন যে প্রকৃত ধর্ম গোঁড়া নয়, সর্বজনীন এবং পরমেশ্বরকে আনন্দরূপে কল্পনার মধ্যেই নিহিত। তিনি প্রকৃত ঈশ্বরোপলব্ধির জন্য আত্মজ্ঞানের শক্তির কথাও উল্লেখ করেছিলেন যা কেবলমাত্র যুক্তি দ্বারা সম্ভব নয়। শ্রোতাদের উদ্দেশ্যে তাঁর প্রদত্ত বক্তৃতার মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ছিল ঈশ্বর উপলব্ধির জন্য সুপ্ত আত্মজ্ঞানের শক্তি জাগরণের উদ্দেশ্যে প্রযুক্ত ব্যবহারিক বিধি। জীবনী শক্তিকে সচেতনভাবে নিয়ন্ত্রণের কৌশল এই বিধির অন্তর্গত — যে কৌশলের সমন্বয়ে গঠিত ক্রিয়াযোগ বিজ্ঞানে তিনি তাঁর জীবৎকালে প্রায় ১,০০,০০০ মানুষকে দীক্ষিত করেছিলেন। তাঁর ওয়াইএসএস/এসআরএফ পাঠমালার মাধ্যমে বর্তমানে এর বিস্তার হয়ে চলেছে।

নিম্নে উল্লিখিত নির্বাচিত সংক্ষিপ্ত অংশটি পুস্তকরূপে যোগানন্দজির বিশিষ্ট বক্তৃতার সংকলন ধর্মবিজ্ঞান থেকে উদ্ধৃত যা ১৯২০- তে প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল এবং ওয়াইএসএস/এসআরএফ দ্বারা সর্বদা প্রকাশিত হয়ে এসেছে।

আমাদের ঈশ্বরচিন্তা কিছু সময়ের জন্য নয়, প্রতিনিয়ত আমাদের পথপ্রদর্শক হওয়া উচিত। প্রাত্যহিক জীবনের মাঝেই তাঁকে আকাঙ্খার জন্য গভীর ঈশ্বরচিন্তা দ্বারা আমাদের আলোড়িত হওয়া উচিত।

ঈশ্বরকে এইভাবে চিন্তা করতে না পারলে তাঁকে ছাড়া কোনো আকাঙ্খার সন্তুষ্টি সাধন হবে না, মানুষের প্রতি আচরণে, অর্থ উপার্জনে, বই পাঠে, কোনো পরীক্ষায় কৃতকার্য্য হতে, সামান্যতম বা সর্বোচ্চ কর্তব্য পালনে, তখন এটাই সুস্পষ্টরূপে প্রতীয়মান হয় যে আমরা ঈশ্বর ও জীবনের মধ্যে কোনো সংযোগ অনুভব করি নি।

আমাদের ধীশক্তি কোনো বিষয়ে শুধুমাত্র আংশিক ও পরোক্ষ ধারণাই প্রদান করে। শুধু বুদ্ধিচালিত হলে কোনো বিষয়কে তার সাথে একাত্ম হয়ে বিবেচনা করা যায় না: এর অর্থ কোনো বিষয় থেকে পৃথক হয়ে তার বিবেচনা করা। কিন্তু স্বজ্ঞা…হল সত্যের প্রত্যক্ষ উপলব্ধি। আনন্দ-চেতনা বা ঈশ্বর-চেতনা এই স্বজ্ঞার মধ্য দিয়েই অনুভূত হয়।

যদি আমরা চাই, এই আনন্দ-চেতনা বা ঈশ্বর-চেতনা আমাদের সমস্ত কার্য ও মানসিক ভাবকে পরিব্যাপ্ত করতে পারে।

আত্মজ্ঞানের দ্বারাই আমরা ঈশ্বরকে জানতে পারি, কারণ আমাদের প্রকৃত স্বরূপ তাঁরই অনুরূপ। মানুষ পরমপিতার ভাবমূর্তিতেই সৃষ্ট। এখানে প্রস্তাবিত প্রক্রিয়া আন্তরিকভাবে অধ্যয়ন ও অনুশীলন করলে আপনি নিজেকে এক আনন্দময় আত্মারূপে চিনতে পারবেন ও আপনার ঈশ্বরানুভূতি হবে।

ধর্মবিজ্ঞান পুস্তকটি ক্রয়ের জন্য অনুগ্রহ করে ওয়াইএসএস অনলাইন বুকস্টোরটি দেখুন।

এই শেয়ার করুন