যোগের প্রকৃত মর্মার্থ

৭ই জুন, ২০২৪

যোগবিজ্ঞান এবং জীবনের উদ্দেশ্য

যোগের উৎসে কি আছে?

পরমানন্দের সাথে প্রত্যেকের কাঙ্খিত পুনর্মিলন — পরমাত্মার সাথে আত্মার মিলনই হল যোগ। এটা কি এক অপরূপ ব্যাখ্যা নয়? পরমানন্দের চিরনবীন আনন্দে আত্মহারা হলে তুমি জানতে পারবে যে এই স্বর্গীয় আনন্দ অন্য যে কোনও সুখের থেকে গভীর আর এর পরে আর কোনো কিছুই তোমাকে দুঃখ দিতে পারে না।

— পরমহংস যোগানন্দ

অতি প্রাচীনকাল থেকেই ধ্যান ভারতের যোগদর্শনের হৃদয়স্থলে রয়েছে। যোগ শব্দের আক্ষরিক অর্থেই এর উদ্দেশ্য বোঝা যায়: অসীম, স্বর্গীয় আনন্দ বা পরমাত্মার সাথে আমাদের স্বীয় চৈতন্য বা আত্মার—“মিলন”।

পরমাত্মার আনন্দময় চৈতন্যের সাথে এই মিলন ঘটাতে হলে—আর এইভাবে সমস্ত দুঃখদুর্দশা থেকে নিজেদের মুক্ত করতে চাইলে—সময়-পরীক্ষিত এবং নিয়মানুগ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে ধ্যানের ধৈর্যশীল অনুশীলনের প্রয়োজন। অর্থাৎ, আমাদের একটা বিজ্ঞান প্রয়োগ করতে হবে।

সহস্রাব্দ ধরে চলে আসা ভারতের সনাতন ধর্মের (“চিরন্তন ধর্ম”) যোগশাস্ত্রে নির্দেশিত ধ্যানের শৃঙ্খলাক্রম ও সঠিক ক্রিয়ার আবশ্যকীয় অনুশীলন—রাজযোগ, ঈশ্বর-উপলব্ধির জন্য একটা সম্পূর্ণ বিজ্ঞান। সকল যথার্থ ধর্মের কেন্দ্রস্থিত এই গুপ্তবিদ্যা কালজয়ী ও বিশ্বজনীন যোগবিজ্ঞানের মূল সূত্র।

ক্রিয়াযোগের ভিত্তির ওপর নির্ভর করে শরীর, মন ও চিত্তের যথার্থ বিকাশে যোগদা সৎসঙ্গের রাজযোগ শিক্ষা এক রূপরেখা প্রদান করে যার সাথে প্রাণায়াম (জীবনীশক্তির নিয়ন্ত্রণ) প্রক্রিয়া সংযুক্ত যা ভগবদ গীতায় ভগবান কৃষ্ণ বা যোগসূত্রে ঋষি পতঞ্জলি উল্লেখ করলেও ব্যাখ্যা করেননি। বিগত বহু শতাব্দী ধরে সাধারণ মানুষের জন্য হারিয়ে যাওয়া ক্রিয়াযোগকে আধুনিককালে প্রসিদ্ধ যোগগুরু মহাবতার বাবাজি, লাহিড়ী মহাশয়, স্বামী শ্রীযুক্তেশ্বরপরমহংস যোগানন্দ পুনরুজ্জীবিত করেন।

পরমহংস যোগানন্দকে তাঁর শ্রদ্ধেয় গুরুকুল ক্রিয়াযোগ বিজ্ঞানকে পাশ্চাত্যে এনে সারাবিশ্বে ছড়িয়ে দেবার জন্যে নির্বাচিত করেন; আর এই উদ্দেশ্যেই তিনি ১৯২০-তে সেল্ফ-রিয়লাইজেশন ফেলোশিপ প্রতিষ্ঠা করেন।

সুষম ক্রিয়াযোগ পথের মূলে আছে যোগদা সৎসঙ্গ পাঠমালায় পরমহংস যোগানন্দের শেখানো বিজ্ঞানভিত্তিক ধ্যান প্রক্রিয়ার দৈনিক অনুশীলন। ধ্যান অনুশীলনের মাধ্যমে আমরা শিখতে পারি শরীর ও মনের অস্থিরতা কিভাবে শান্ত করা যায়, তাই আমাদের চারপাশে যাই ঘটুক না কেন আমাদের সত্ত্বার স্বরূপ হিসেবে দীর্ঘস্থায়ী শান্তি, প্রেম, জ্ঞান ও আনন্দ আমরা উপলব্ধি করতে পারি।

ধ্যানের আরও গভীরে যাও। এ যে কত মধুর তুমি তা এখনও জানতে পারোনি। অর্থ উপার্জন বা মনুষ্যপ্রেম অথবা অন্য যা কিছুই তুমি ভাবতে পারো না কেন, তার জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা তোমার সময় ব্যয় করার থেকে ধ্যান করা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তুমি যত ধ্যান করবে আর এতে তোমার মন যত বেশি আধ্যাত্মিকতায় কেন্দ্রীভূত থাকবে, তুমি তত বেশি খুশি থাকতে পারবে। আমি এখন ঈশ্বরের সেই পরমানন্দের অনুভূতিতে, সর্বদা সেখানেই থাকি। কোনো কিছুই আমাকে বিচলিত করে না; আমি একা থাকি বা মানুষের মাঝে, পরমানন্দ সর্বদা ঘিরে থাকে। আমি আমার খুশি অব্যাহত রাখতে পেরেছি—তবে নিরন্তরভাবে এটা অর্জনের জন্য নিরলস প্রচেষ্টা করতে হয়েছে! তোমার মধ্যেও একই খুশি আছে; হৃদয়ের সেই একই সুখ আর আনন্দ আছে। তোমাদের এটা অধিকার করতে হবে না তবে এদের আবার জাগিয়ে তুলতে হবে

— পরমহংস যোগানন্দ

ধ্যানের গবেষণাগারের অভ্যন্তরে

যেসব অভিজ্ঞতার কথা তোমাদেরকে আমি বলেছি বিজ্ঞানসম্মতভাবে তা সবই অর্জন সম্ভব। আধ্যাত্মিক নিয়মসকল পালন করলে ফল অবশ্যম্ভাবী।

— পরমহংস যোগানন্দ

ঠিক যেমন কোনো একটি বিশেষ পরীক্ষার ফলাফল যাচাই করতে বিজ্ঞানী গবেষণাগারে যান, তেমনই ভারতের ও যে কোনো দেশের বা যে কোনো সময়ের ঋষিগণ ও প্রত্যেক ঈশ্বরসন্ধানীর প্রমাণিত একই ফলাফল লাভে — সত্যের অন্তরে উঁকি দিতে যোগী ধ্যানের “গবেষণাগার”-এ যান।

বিজ্ঞান আমাদের কোনোকিছুই অন্ধভাবে বিশ্বাস বা মতের ভিত্তিতে মেনে নিতে বলে না। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে নির্দিষ্ট ধ্যানপদ্ধতি যার ফলাফল যোগী-বিজ্ঞানীগণ প্রদর্শন ও প্রতিরূপযোগ্য করেছেন, আমাদের নিজেদের জন্য এর কার্যকারিতা আমরাই প্রমাণ করতে পারি — আর এই সীমিত শরীরটাই যে আমরা এমন অসত্য অথচ বদ্ধমূল ধারণা ধীরে ধীরে কাটিয়ে উঠতে পারি। এভাবে আমরা সত্য আবিষ্কার করতে পারি — যে পৃথিবীর দ্বৈততা ও মায়া সত্ত্বেও আমরা অনাহত অন্তর্যামী সত্তা, আত্মা; অসীম পরমানন্দের সাথে সতত আমরা এক হয়ে আছি। অবশেষে এরূপ সুগভীর অন্তর্দৃষ্টি সদগুরুর নির্দেশিত ধ্যানের সঠিক প্রক্রিয়া অনুশীলনকারী প্রত্যেকেরই আসতে পারে — যিনি পরমাত্মার সাথে তাঁর স্বরূপ সম্যক উপলব্ধি করেছেন।

এই বিজ্ঞানের যুগে যখন এই বিশাল বিস্তৃতি থেকে শুরু করে মহাবিশ্বের ক্ষুদ্রতম কণা পর্যন্ত অনুসন্ধান চলছে, তখন আধ্যাত্মিক ক্ষেত্রকে অনুধাবন করার জন্য অনুরূপ রোমাঞ্চকর ও বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রয়োজন। শুধুমাত্র ধর্ম বিশ্বাসের ওপর আলোচনার থেকে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতাতে সত্যকে জেনে পরিতৃপ্তি পাবার জন্য আমাদের আধ্যাত্মিক অনুসন্ধানকে উন্নত করতে হবে। আর এই ধরণের জ্ঞান প্রদানকারী পদ্ধতি এবং নিয়মশৃঙ্খলা অনুসরণে ইচ্ছুক যে কেউ এই একই সত্যটি যাচাই করতে পারবে।

একজন আধ্যাত্মিক বিজ্ঞানী হিসেবে, যোগী তাঁর নিজের চেতনায় দিব্য সংযোগের স্পর্শযোগ্য শান্তি, প্রেম, প্রজ্ঞা ও আনন্দকে পরিশোধিত করার জন্য ধ্যানের প্রক্রিয়া অনুশীলন করেন — এটিই একমাত্র গবেষণাগার যেখানে আত্মা ও পরমাত্মার শাশ্বত প্রকৃতি সম্পূর্ণ স্পষ্টরূপে, নির্ভুলভাবে এবং যথাযথ সম্ভ্রমের সাথে অনুভব করা যায়।

যোগ-ধ্যানে, ধ্যানী প্রাণায়াম (জীবনীশক্তি নিয়ন্ত্রণ) বলে পরিচিত এক প্রক্রিয়ায় সংজ্ঞাবহ ও বহির্মুখী স্নায়ুতন্ত্র থেকে জীবনীশক্তি (প্রাণ) প্রত্যাহার করে — আর মেরুদন্ড ও মস্তিষ্কস্থিত সচেতনতার উচ্চতর কেন্দ্রে চালিত করে। অভ্যন্তরাভিমুখী অপসৃত প্রাণ স্বয়ংক্রিয়ভাবে বহির্মুখিতা ছেড়ে অন্তঃস্থ অনন্তের রাজ্যে যাত্রা করে। চিন্তাভাবনার অসার মানসিক প্রক্রিয়া অথবা দার্শনিক বিবেচনা থেকে বহুদূর ছাড়িয়ে প্রাণায়াম ধ্যান আত্মার অসীম সম্ভাবনা উদ্ঘাটনের এক কাল-প্রমাণিত ধারা।

বিজ্ঞানীরা শুধুমাত্র আবেদনের মাধ্যমে নয়, বরং প্রকৃতির নিয়ম প্রয়োগের মাধ্যমেই আবিষ্কার করেন। একইভাবে, যিনি নিয়ম পালন করেন, ধ্যানের বিজ্ঞান প্রয়োগ করেন ঈশ্বর তাঁর কাছেই আসেন। মানুষ ধর্মতত্ত্বের অরণ্যে ঘুরে বেরিয়ে নিজেদেরকেই হারিয়ে ফেলে। ঈশ্বরকে খুঁজতে বৃথাই আমি মন্দিরে মন্দিরে ঘুরেছি; কিন্তু যখন আমি ঈশ্বরের মহান প্রেমিকদের আত্মার মন্দির খুঁজে পেলাম, তখন দেখতে পেলাম যে তিনি সেখানে রয়েছেন। সুন্দর অট্টালিকা দিয়ে তাঁকে ভোলানো যায় না। তিনি হৃদয়ের সেই অশ্রুসিক্ত বেদীতে আসেন যা নিরন্তর তাঁকে আহ্বান করে। ঈশ্বর সত্য। যে গুরুগণ বছরের পর বছর ধ্যানে নিজেদের নিবেদিত রেখেছেন, তাঁরা তাঁকে পেয়েছেন।

— পরমহংস যোগানন্দ

আনন্দ আমাদের প্রেরণাস্বরূপ

তোমাদের নানারকম প্রচেষ্টার মধ্যে দিয়ে বাস্তবে তোমরা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে তোমাদের চাহিদা পূরণের মাধ্যমে সুখ খুঁজছো…। তাহলে সোজাসুজি আনন্দ খুঁজছো না কেন?

— পরমহংস যোগানন্দ

the-science-of-religion-bengali-paperback-by-sri-sri-paramahansa-yogananda-yss-front.jpg

পরমহংস যোগানন্দ আমেরিকায় তাঁর সর্বপ্রথম বক্তৃতায় আর তাঁর গ্রন্থ ধর্ম বিজ্ঞান-এ সদ্-চিৎ-আনন্দ — সদা বিদ্যমান, সদা সচেতন, সদা নবীন আনন্দ — ঈশ্বরের সুপ্রাচীন বৈদিক ভাবনার সাথে পাশ্চাত্যবাসীদের পরিচয় করিয়েছিলেন।

আমাদের সবরকম চাহিদা পূরণের পিছনে কি মূলত সুখের জন্য আকুলতা আর যন্ত্রণা থেকে মুক্তির আকাঙ্খা থাকে না? পরমহংসজি সর্বসাধারণের জন্য তাঁর বক্তৃতায় উপস্থিত সকলকে আর পরবর্তীতে তাঁর ক্রিয়াযোগ শিক্ষার্থীদের সুখের প্রত্যক্ষ সন্ধানে — যোগ ধ্যানের বিজ্ঞানভিত্তিক পদ্ধতি অনুশীলন করে তাদের নিজেদের মধ্যে পরমানন্দ অন্বেষণে আমন্ত্রিত করেছিলেন।

ধ্যানে পরমানন্দকে জানার সুযোগ সম্বন্ধে বলতে গিয়ে পরমহংসজি বলেছেন: “তিনি সবার নিস্তরঙ্গ অনুভবের মধ্যে আসেন। আমরা তাঁকে সেই আনন্দ-চেতনার মধ্যে উপলব্ধি করি। তাঁর অস্তিত্বের আর অন্য কোনো প্রত্যক্ষ প্রমাণ থাকতে পারে না। আমাদের আধ্যাত্মিক আশা-আকাঙ্খা তাঁর আনন্দরূপেই পূর্ণতা পায়, আমাদের ভক্তি ও প্রেম দিশা খুঁজে পায়।”

যে আনন্দ সবসময় পরিবর্তিত হয়ে যায় কিন্তু নিজে অপরিবর্তনীয় থাকে তেমন কিছুই আমরা খুঁজি, যেমন একজন অভিনেতা বিভিন্ন ভূমিকায় ও ভঙ্গিতে অভিনয় করে বিনোদন দেন। শুধুমাত্র নিয়মিত গভীর ধ্যানে এরকম আনন্দ পাওয়া যায়। একমাত্র অন্তরের এই অপরিবর্তনীয় নিত্য নূতন আনন্দের নির্ঝর আমাদের তৃষ্ণা নিবারণ করতে পারে। এর নিজস্ব প্রকৃতি অনুসারে, এই পরমানন্দ একমাত্র আকর্ষণ যাতে মন কখনই ক্লান্ত হয় না বা আমাদেরকে অন্য কিছুর সাথে এর বিনিময়ে ইচ্ছুক করে না।

— পরমহংস যোগানন্দ

যোগের বিশ্বজনীনতা

ভারতে ২০১৭-তে ওয়াইএসএস/এসআরএফ অধ্যক্ষ এবং আধ্যাত্মিক প্রধান স্বামী চিদানন্দ গিরি বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেন: “ভারত সহস্রাব্দ ধরে সমগ্র মানবজাতির জন্য উন্নত আধ্যাত্মিক সত্যের ধারক। আর পরমহংসজি ভারতের এই শ্রেষ্ঠত্ব প্রথমে পাশ্চাত্যে আর তারপর সারা বিশ্বে এমনকি তাঁর প্রিয় ভারতে ফিরিয়ে আনারও বিশেষ ব্যবস্থা করেন। তিনি ভারতের উন্নত যুগের, সেই স্বর্ণযুগের সর্বজনীন আধ্যাত্মিকতার সার বিশুদ্ধ রূপে ফিরিয়ে আনেন। এটাই যোগ। এটা বিজ্ঞান, কোনো ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মূল্যবোধ নয়; আর তাই এই আধ্যাত্মিক ব্যবস্থা—যোগের আলো—সামগ্রিকভাবে সারা বিশ্বে মানবজাতির জন্য যথার্থ আশীর্বাদ হয়ে উঠতে পারে।”

পরমহংস যোগানন্দ প্রায়শই নির্দেশ করতেন যে যোগ অনুশীলন করতে এবং এর মহৎ উপকারিতা লাভ করতে কোনো নির্দিষ্ট জাতীয়তা, বর্ণ বা ধর্মের প্রয়োজন নেই। একটি বিজ্ঞান হিসেবে এর প্রকৃত সর্বজনীনতা এই সত্যের মধ্যে নিহিত যে, পূর্ব বা পশ্চিম যে কোনো জাতির যে কেউ এর ফলাফল লাভ করতে পারেন।

যোগ ধ্যানের নিয়মিত অনুশীলনের মাধ্যমে আমরা সবাই গভীরতর আনন্দ, প্রেম, সহানুভূতি, শান্তি উপলব্ধি করতে পারি এবং আমাদের মধ্যে এইসকল পরিবর্তন যখন ঘটে, এদের প্রভাব কোনো এক অদৃশ্য নিয়মে বহির্মুখী হয়ে প্রথমে নিকট পরিবার ও সমাজে আর তারপর বৃহত্তর জগতে ছড়িয়ে পড়ে। পরমহংসজি যেমন বলেছেন, “নিজের সংস্কার করো, তাহলেই তুমি হাজার হাজার মানুষের সংস্কার করতে পারবে।”

যোগের একটা বড়ো লাভ হল ধ্যানীর মধ্যে সমগ্র মানবজাতির সাথে একত্বের অনুভূতির বিকাশ। আধ্যাত্মিকতায় বিশ্বাস থাকুক বা না থাকুক, যে কেউ যোগের বিজ্ঞান অনুশীলন করলে অবশেষে উপলব্ধি করে যে ঈশ্বর সর্বত্র ও সবার মাঝেই বিদ্যমান।

প্রযুক্তিগত অগ্রগতির ফলে আমাদের পৃথিবী যখন দ্রুতহারে সংকুচিত হয়ে আমাদের সবাইকে খুব কাছাকাছি নিয়ে এসেছে, তখন এমন বিশ্বজনীনতায় সিক্ত হৃদয় ও মন সত্যিই আমাদের সময়ের সবচেয়ে জরুরি প্রয়োজন। ১৯৫১-তে এক সাক্ষাৎকারকালে পরমহংসজির কাছে বিশ্বের প্রতি তাঁর বার্তার সারমর্ম জানতে চাওয়া হয়েছিল। তিনি মানবজাতির জন্য অপরিহার্য ঐক্যের স্বীকৃতির মৌলিক প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন—তিনি যেসময় এই ভবিষ্যদ্বাণীমূলক কথা বলেছেন, তখনকার থেকেও এখনকার সময়ে এই কথা বেশি গুরুত্বপূর্ণ:

“বিশ্বজুড়ে আমার ভাই ও বোনেরা: মনে রাখবেন ঈশ্বর এক এবং তিনি আমাদের সবার পিতা। আমরা সবাই তাঁর সন্তান, আর তাই বিশ্ব তথা এক সংযুক্ত রাষ্ট্রের আদর্শ নাগরিক হতে একে অপরকে শারীরিক, মানসিক, আর্থিক ও আধ্যাত্মিকভাবে সহায়তা করতে আমাদের গঠনমূলক উপায় রপ্ত করতে হবে। যদি এক হাজার মানুষের একটি সম্প্রদায়ের প্রত্যেকে দুর্নীতি, দ্বন্দ্ব ও প্রতারণার মাধ্যমে অন্যকে প্রতারিত করে নিজেকে সমৃদ্ধ করতে চায়, তবে প্রত্যেকেরই নয় শত নিরানব্বই জন শত্রু থাকবে; সেখানে, যদি প্রত্যেকে অন্যদের সাথে শারীরিক, মানসিক, আর্থিক ও আধ্যাত্মিকভাবে সহায়তা করে, তবে প্রত্যেকেরই নয় শত নিরানব্বই জন বন্ধু থাকবে। যদি সব দেশ অন্তরঙ্গতার সাথে একে অন্যকে সহায়তা করে, তবে সবার সমৃদ্ধির পর্যাপ্ত সুযোগের সাথে সমস্ত পৃথিবী শান্তিতে বসবাস করবে…।

“রেডিও ও টেলিভিশনের মতো মাধ্যম এবং বিমান ভ্রমণের সুবিধা আমাদের আগের থেকে অনেক বেশি একত্রিত করেছে। আমাদের বুঝতেই হবে যে বিশ্ব পরমপিতার অধীনে একটা সংযুক্ত রাষ্ট্র, যেখানে প্রতিটি মানুষই শরীর, মন ও আত্মিক পরিপূর্ণতার সবরকম সুযোগ সহ বিশ্বের আদর্শ নাগরিক হতে পারবে, এশিয়ানদের জন্য এশিয়া, ইউরোপিয়ানদের জন্য ইউরোপ, আমেরিকানদের জন্য আমেরিকা এমনটি আর নয়।

“বিশ্বের কাছে এটাই আমার বার্তা, এটাই আমার উত্তর।”

দেহ, মন ও আত্মায় আদর্শ বিশ্বনাগরিক হিসেবে একে অপরের বিকাশে সহায়তা করার জন্য সর্বাধিক গভীরভাবে প্রভাবশালী “গঠনমূলক উপায়” যোগবিদ্যার সর্বজনীন বিজ্ঞানে খুঁজে পাওয়া যায়।

রাজযোগের অষ্টাঙ্গ মার্গ

ভারতের সবথেকে প্রিয় যোগশাস্ত্র গীতার রূপক বর্ণনায় যোগবিজ্ঞানের সমগ্রতা বর্ণিত হয়েছে, একথা পরমহংস যোগানন্দ তাঁর নির্দিষ্ট ভাষান্তর ও ভাষ্য গড টক্স উইথ অর্জুন: দ্য ভগবদ গীতা-তে উদ্ঘাটন করেছেন।

পতঞ্জলি ঋষি, যিনি গীতার অন্তর্নিহিত যোগের বার্তা অনুধাবন করেছেন, তিনি তাঁর সংক্ষিপ্ত কিন্তু সুদক্ষ রচনা যোগসূত্র-তে রাজযোগ মার্গের সারাংশ এক সরল ও সুসংবদ্ধ ধারায় সংযোজিত করেছেন।

পরমহংস যোগানন্দ বলেছেন, “ঈশ্বর-সংযোগের অত্যন্ত বিপুল ও জটিল বিজ্ঞানকে সংক্ষিপ্ত জ্ঞানগর্ভ বাণীর পরম্পরায় পতঞ্জলি উপস্থাপন করেছেন—অবিচ্ছেদ্য পরমাত্মার সাথে মানব মিলনের পদ্ধতিটি এত সুন্দর, স্পষ্ট ও সংক্ষিপ্তভাবে উপস্থাপন করেছেন যে যোগসূত্রকে যোগের প্রাচীনতম মুখ্য রচনা বিবেচনায় প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে পন্ডিতরা স্বীকৃতি দিয়েছেন।”

ঈশ্বর-উপলব্ধির পরম লক্ষ্যে পৌঁছে দেওয়া পতঞ্জলির যোগ পদ্ধতি অষ্টাঙ্গ মার্গ নামে পরিচিত।

যোগের অষ্টাঙ্গ মার্গ:
  • যম (যে সব আচরণ থেকে বিরত থাকা উচিত সেই নৈতিক নিয়মাবলি): অন্যকে আঘাত করা, অসত্যতা, চুরি, অসংযম (যৌন প্রবৃত্তির ওপর নিয়ন্ত্রণের অভাব) ও লালসা
  • নিয়ম (যে সব আধ্যাত্মিক গুণাবলি ও আচরণের বিকাশ করতে হবে): দেহ ও মনের পবিত্রতা, সকল পরিস্থিতিতে সন্তুষ্ট থাকা, আত্মনিয়ন্ত্রণ, স্বাধ্যায় (মনোনিবেশ) এবং ঈশ্বর ও গুরুর প্রতি ভক্তি
  • আসন: সঠিক দেহভঙ্গি
  • প্রাণায়াম: শরীরের সূক্ষ্ম জীবনীস্রোত, প্রাণের নিয়ন্ত্রণ
  • প্রত্যাহার: বাহ্যিক বিষয় থেকে ইন্দ্রিয়কে প্রত্যাহার করে চেতনার অন্তর্মুখীকরণ
  • ধারণা: কোনো একটামাত্র চিন্তা বা বস্তুতে মনকে নিবদ্ধ রেখে একনিষ্ঠ একাগ্রতা
  • ধ্যান: সমগ্র মহাবিশ্বে পরিব্যাপ্ত ঈশ্বরের অসীম রূপ, যেমন — আনন্দ, শান্তি, দিব্য জ্যোতি, দিব্য নাদ, প্রেম, জ্ঞান ইত্যাদি — যে কোনো একটিতে গভীরভাবে মগ্ন হয়ে তাঁর বিপুলতার ধারণায় নিমগ্নতা
  • সমাধি: পরমাত্মার সাথে জীবাত্মার মিলনের অতিচেতন উপলব্ধি

রাজযোগের বিজ্ঞানভিত্তিক ধ্যান পদ্ধতির প্রয়োগে প্রাণায়ামের (জীবনী শক্তির নিয়ন্ত্রণ, অষ্টাঙ্গ মার্গের চতুর্থ ধাপ) উচ্চতম অনুশীলনের প্রাথমিক লক্ষ্য চেতনার অন্তর্মুখীকরণ (প্রত্যাহার) ও চূড়ান্ত লক্ষ্য পরমাত্মার সাথে একত্ব অর্জন (সমাধি)।

সাধারণভাবে, জীবনীশক্তি স্নায়ুতন্ত্র ও ইন্দ্রিয় হয়ে ক্রমাগত বহির্মুখী প্রবাহিত হয়, যার ফলে আমরা নিজেদের চারপাশের জগৎকে উপলব্ধি করতে পারি। প্রাণায়ামের পদ্ধতির মাধ্যমে সেই জীবনীশক্তি (প্রাণ) অন্তর্মুখী হয়ে মেরুদন্ড ও মস্তিষ্কের আধ্যাত্মিক জাগরণের উচ্চতর কেন্দ্রগুলিতে চালিত হয়, ফলত আমরা নিজেদের মধ্যে ব্রহ্মান্ডের অসীমত্ব অনুধাবন করতে পারি।

যোগদা সৎসঙ্গ পাঠমালা-তে ওয়াইএসএস-এর শেখানো ধ্যান প্রক্রিয়া, বিশেষত রাজযোগ প্রাণায়াম প্রক্রিয়ার মধ্যে ক্রিয়াযোগ প্রক্রিয়া সর্বোত্তম। এটাই পরমানন্দের সাথে জীবাত্মার পুনর্মিলনের দ্রুততম উপায় বলে পরমহংস যোগানন্দ অনেকবার বলেছেন।

প্রাণায়াম অনুশীলনের মাধ্যমে শরীরে প্রাণশক্তির প্রবাহকে নিয়ন্ত্রণ করে আমরা সরাসরি জীবনের নানা বিক্ষেপ থেকে মনোযোগ মুক্ত করি — অন্যথায় এই প্রাণশক্তি আমাদের চেতনাকে বহির্মুখী করে রাখে। এভাবে আমরা নিজেদের আসল স্বরূপ অক্ষয় অমর আত্মা হিসেবে জানতে বাধা দেওয়া অস্থির চিন্তা ও অশান্ত আবেগকে শান্ত করি — এই আত্মা আর পরমাত্মা সর্বদা এক।

মানবতার সর্বাপেক্ষা উন্নত প্রযুক্তি

পথ-যোগ-পরমানন্দের-সঙ্গে-মিলন-ধ্যান-প্রযুক্তির-মাধ্যমে

আমাদের জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রযুক্তি এক গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক। তবে আমাদের বিভিন্ন ডিজিটাল যন্ত্রের সাথে খুব বেশি সময় ধরে সংযুক্ত থাকার কারণে, আমরা অন্তরের শান্তি, সারল্য, সম্প্রীতি ও স্বাভাবিক সম্ভ্রমের অনুভূতি থেকে প্রায়শঃ বিচ্ছিন্নতার বৃদ্ধি অনুভব করতে পারি।

সহজভাবে বললে, কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছোনর জন্য বিশেষ পদ্ধতির ব্যবহারই হল প্রযুক্তি। তত্ত্বগতভাবে, প্রযুক্তির ব্যবহার আমাদের সুখ, নিরাপত্তা এবং আমাদের বাসস্থান এই পৃথিবীর সাথে আমাদের সম্পর্ক গভীরভাবে বোঝার ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

মানবজাতির সর্বাধিক উন্নত প্রযুক্তি রাজযোগ পদ্ধতিতে খুঁজে পাওয়া যায়, যোগ ধ্যানের প্রক্রিয়াসমূহের ব্যবহারে, বিশেষত ক্রিয়াযোগের প্রক্রিয়াসমূহে।

তাঁর যোগী-কথামৃত গ্রন্থে, “ক্রিয়াযোগ বিজ্ঞান” অধ্যায়ে পরমহংসজি বলেছেন: “যোগের নিশ্চিত ও সুশৃঙ্খল কার্যকারিতা সম্বন্ধে বলতে গিয়ে কৃষ্ণ প্রায়োগিক যোগীর প্রশংসা করে বলেছেন: ‘শরীর-সংযমী তপস্বীর থেকে যোগী মহৎ, এমনকি জ্ঞানের মার্গ (জ্ঞানযোগ) অথবা কর্মের মার্গ (কর্মযোগ) অনুসরণকারীর থেকেও মহৎ; হে শিষ্য অর্জুন, তুমি যোগী হও!’”

“প্রায়োগিক যোগী” — অর্থাৎ, যোগের লক্ষ্য অর্জনের জন্য যে ঈশ্বরসন্ধানী বিশেষ প্রক্রিয়াকে কাজে লাগান — বস্তুত, একটি নিশ্চিত পদ্ধতি অনুসরণ করেন, আর এমন এক পদ্ধতি যা জীবনের শক্তি ও আনন্দকে নিঃশেষ করে না, বরং আনন্দময় অমর আত্মার সাথে যোগাযোগের মাধ্যমে দেহ ও মনের অসীম পুনর্নবীকরণ ও পুনর্যৌবন লাভের দিকে পরিচালিত করে।

ভগবদগীতায় ভগবান কৃষ্ণের আদর্শ শিষ্য অর্জুনের মতো, আমরাও ক্রিয়াযোগ পদ্ধতি অনুশীলন করে এমন স্থিতি ও প্রশান্ত অন্তরের অবস্থায় পৌঁছোতে পারি যাতে আমাদের স্বাভাবিক পূর্ণতা ও সুস্থতার বোধ না হারিয়ে আজকের প্রযুক্তি নির্ভর বিশ্বে কিভাবে বেঁচে থাকা যাবে তা জানতে আত্মনিষ্ঠা ও বুদ্ধিবৃত্তি অর্জন করতে পারি।

মূল চাবিকাঠি নিহিত রয়েছে পরমহংসজির ভাষায় “শান্তভাবে সক্রিয় এবং সক্রিয়ভাবে শান্ত” হওয়ার মধ্যে। আমাদের জীবনে (অনলাইন এবং অফলাইন) শান্তভাবে সক্রিয় হওয়ার জন্য, আমাদের প্রথমে ধ্যানে “সক্রিয়ভাবে শান্ত” হয়ে উঠতে হবে — এবং আমাদের সমসাময়িক জগতের অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতি এবং ত্বরান্বিত গতিকে পরিচালনা করার জন্য প্রয়োজনীয় প্রজ্ঞা অর্জন করতে হবে।

যোগদা সৎসঙ্গ পাঠমালায় শেখানো রাজযোগের ধ্যান প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মানবজাতি সবচেয়ে উন্নত প্রযুক্তি লাভ করেছে। এর মাধ্যমে প্রকৃত বিজয়ীর জীবনযাপন করা যায়, যা সর্বদা শান্তি ও নিত্য-নতুন আনন্দে পরিপূর্ণ থাকে এবং আমাদের সর্বোচ্চ সম্ভাবনা অর্জনে সাহায্য করে।

তোমার প্রশান্তির দ্বার উন্মুক্ত করো এবং নীরবতার পদধ্বনিকে তোমার সকল কর্মের মন্দিরে ধীরে ধীরে প্রবেশ করতে দাও। শান্তভাবে, শান্তিরসে আপ্লুত হয়ে সমস্ত কর্তব্য সম্পাদন করো। তোমার হৃদস্পন্দনের গভীরে তুমি ঈশ্বরের শান্তির স্পন্দন অনুভব করবে। তোমার হৃদয়কে ধ্যানের শান্তিতে পরিপূর্ণ করো।

— পরমহংস যোগানন্দ

ভক্তি সহযোগে ক্রিয়াযোগ

পরমহংস যোগানন্দ ঘোষণা করেছেন: “ক্রিয়াযোগের সাথে ভক্তির সংযোগ অঙ্কের মতো কাজ করে; বিফলে যেতে পারে না।”

যোগ এবং ধ্যানের প্রক্রিয়া যিনি নতুন শিখছেন, যেমন ক্রিয়াযোগ মার্গে যাদের শেখানো হয়, তাদের হৃদয়ে ঈশ্বর সম্বন্ধে গভীর ও ধৈর্যশীল সম্পর্কের সনির্বন্ধ ধারণা গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা ওয়াইএসএস তুলে ধরে। সর্বোপরি, পরমহংসজি স্পষ্ট করে বলেছেন: “ঈশ্বর সন্ধানে সম্পূর্ণ যোগবিজ্ঞানের দক্ষতার থেকেও ব্যক্তিগত প্রচেষ্টা বেশি গুরুত্বপূর্ণ।” অনন্তের দ্বারে পৌঁছোতে আমাদের যোগীয় বিজ্ঞান অনুসরণ করতেই হবে তবে সেই দ্বার দিয়ে আমাদের নিয়ে যাবার জন্যে আমাদের প্রেম, আমাদের ব্যক্তিগত বাসনা ঈশ্বরের প্রয়োজন।

ঈশ্বরকে আপনার পছন্দমতো পরমপিতা বা জগন্মাতা অথবা সখা বা প্রিয় রূপে কল্পনা করতে পারেন। কেউ কেউ ঈশ্বরকে একজন সদগুরুরূপে অথবা খ্রিস্ট বা কৃষ্ণের মতো দৈব অবতার রূপে অথবা অনন্ত প্রেম, আনন্দ ও জ্ঞানের মতো নিরাকার ধারণায় আকৃষ্ট হতে পারেন। দিব্যত্বের যে রূপই আপনার হৃদয়কে সর্বাধিক স্পর্শ করুক না কেন, পূর্ণ হৃদয়ে সেই পরমকে খুঁজুন, এই সচেতনতার সাথে যে পরমাত্মার প্রতি ভক্তি ও তাঁর সাথে চূড়ান্ত মিলনের মধ্য দিয়ে আপনি এমন এক আকাঙ্ক্ষা পূর্ণ করবেন যা অন্য কিছুতেই সম্ভব নয়।

পরমহংসজি বলেছেন, “পরমপিতা তোমার হৃদয়ের কথা শোনেন — যে কথা তোমার সত্তার গভীর থেকে উঠে আসে।” তিনি উপদেশ দিয়েছেন, ধ্যান প্রক্রিয়া অনুশীলনের পরে নিশ্চলতায় নিবিষ্ট হতে সময় দিয়ে, কোনোরকম আনুষ্ঠানিকতা, কোনোরকম ভনিতা ছাড়াই — সরলভাবে আপনার হৃদয়ের ভাষায় কথা বলুন। আপনি জগন্মাতাকে তাঁর সন্তান হিসাবে বলতে পারেন “প্রকাশিত হও, দেখা দাও।” এমনকি, আপনার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে দৈব ধীশক্তির কাছে আন্তরিকভাবে নির্দেশ চাইতে পারেন।

রাজযোগ শিক্ষার ভিত্তি হল যোগ ধ্যানের বিজ্ঞান, যা ঈশ্বরের সাথে আমাদের সরাসরি যোগাযোগ ঘটায়। গভীরতম সংবেদনশীলতার সেই অবস্থায় আমরা তখন নিজেদের স্বতঃস্ফূর্ত হতে দিয়ে সত্তার গভীরতা থেকে সংলগ্ন থাকি — আমাদের হৃদয়, মন ও অন্তঃকরণে সম্পূর্ণ নিজস্বভাবে সেই ব্যক্ত ধারণা সঞ্চারিত করে। স্বাভাবিকভাবে, সময়ের সাথে সাথে সেই আলাপন অতি মহিমান্বিত দ্বি-মুখী প্রেমের প্রকাশে রূপান্তরিত হয়ে যায়। পরমহংসজি বলেছেন, “প্রকৃত ভক্তি সীসার গোলার মতো ঈশ্বর উপলব্ধির সাগরতলে তলিয়ে যায়।”

আধ্যাত্মিক পথের পথিকের কাছে ঈশ্বরের যে রূপটিই আকর্ষণীয় হোক না কেন, পরমহংসজির নিম্নলিখিত এই কথায় একটি অনুনাদী ও সান্ত্বনাদায়ী অঙ্গীকার সে শুনতে পায়: “তাঁর মাঝেই তুমি সকল হৃদয়ের সমস্ত প্রেম খুঁজে পাবে। তুমি সম্পূর্ণতা খুঁজে পাবে। পৃথিবী তোমাকে সবকিছু দিয়ে পরে সব কেড়ে নিয়ে তোমাকে যন্ত্রণা বা মোহভঙ্গের মাঝে ফেলে দেয়, ঈশ্বরের মাঝে আরও মহোত্তরভাবে তুমি সব খুঁজে পাবে আর তা কোনো দুঃখের পরিণতি ছাড়াই।”

এই শেয়ার করুন