এই নিভৃতাবাস ছিল এক অসাধারণ অভিজ্ঞতার সম্ভার, যা আমাকে শান্তি অনুভব করতে, ঈশ্বর এবং গুরুর প্রতি আমার ভক্তি আরও গভীর করতে এবং মানসিক চাপ থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করেছিল।
— এম.আর., ঝাড়খণ্ড
রাঁচির যোগদা সৎসঙ্গ শাখা মঠে ২০২৫-এর ৫ই মার্চ থেকে ১০ই মার্চ পর্যন্ত তরুণ সাধকদের জন্য এই ধরণের প্রথম একটি বিশেষ নিভৃতাবাসের আয়োজন করা হয়। এটি তরুণ অধ্যাত্ম সন্ধানী — ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সী ওয়াইএসএস ভক্ত ও ক্রিয়াবানদের মধ্যে এক নিবিষ্ট ও রূপান্তরকারী অভিজ্ঞতারূপে অনুভূত হয়েছিল। এই নিভৃতাবাসের লক্ষ্য ছিল গুরুদেবের শিক্ষার সাথে তাদের সংযোগ আরও গভীর করা, ধ্যান প্রক্রিয়া, অভ্যন্তরীণ প্রতিফলন, ভক্তি, আত্ম-শৃঙ্খলার নিবিড় অনুশীলন এবং অন্যান্য নবীন ভক্তদের সাথে সাহচর্যের সুযোগ প্রদান করা।
৭ই মার্চ এবং ৯ই মার্চ পরমহংস যোগানন্দজি এবং স্বামী শ্রীযুক্তেশ্বরজির মহাসমাধি দিবসে এই নিভৃতাবাস সমাপতিত হয়েছিল যা একে বিশেষ আশীর্বাদধন্য অনুষ্ঠানে পরিণত করেছিল। আধ্যাত্মিক আলোচনা, ভক্তিমূলক কর্মসূচি, সেবা এবং হুন্ড্রু জলপ্রপাতে এক অনুপ্রেরণামূলক ভ্রমণসহ গভীর ও দীর্ঘ ধ্যানের সাম্যতা বজায় রাখতে এটি সুচিন্তিতভাবে সংগঠিত হয়েছিল।
একজন নিভৃতাবাসী সংক্ষেপে তাঁর অভিজ্ঞতার কথা জানালেন:
ওয়াইএসএস রাঁচি আশ্রমে ছয় দিনের এই নিভৃতাবাস ধ্যান, আত্ম-সংযম এবং গুরুসেবার মাধ্যমে আধ্যাত্মিক বিকাশের সহায়তা করে ঈশ্বর ও গুরুর সাথে গভীর সংযোগ গড়ে তোলে।
— এস.এন., ঝাড়খণ্ড
কেন্দ্রীভূত এবং নিমজ্জিত হওয়া
নিভৃতাবাসের শুরুতে সমস্ত অংশগ্রহণকারীদের সঠিক মানসিকতা তৈরি করতে, তাদের লক্ষ্য স্পষ্ট করতে এবং নিভৃতাবাস থেকে সর্বাধিক সুবিধা অর্জনের জন্য এক পরিচয়সূচক ব্যবস্থা করা হয়।
এরপর স্বামী শঙ্করানন্দ এবং শ্রেয়ানন্দ ওয়াইএসএস রাঁচি আশ্রম প্রাঙ্গণে আধ্যাত্মিক ভ্রমণের মাধ্যমে নিভৃতাবাসীদের আশ্রমের ইতিহাস সম্পর্কে বলেন এবং গুরুদেবের স্পর্শধন্য বিভিন্ন সুন্দর স্থানের তাৎপর্য উপলব্ধি করতে তাদের সাহায্য করেন।
একটি সুগঠিত প্রাণবন্ত দৈনিক কার্যসূচি
প্রতিটি দিন শুরু হতো একটি সমবেত ধ্যানসহ এক প্রতিফলনশীল এবং শান্তিপূর্ণ আবহ স্থাপনের মাধ্যমে। এরপর আধ্যাত্মিক অধ্যয়ন, প্রবীণ সন্ন্যাসীদের সাথে পারস্পরিক সৎসঙ্গ অধিবেশন এবং সমবেত কর্মসূচির মাধ্যমে অংশগ্রহণকারীদের গুরুদেবের শিক্ষা সম্পর্কে ধারণাকে আরও শক্তিশালী করতে সাহায্য করেছিল। নিভৃতাবাসীরা স্মৃতি মন্দির, লিচু বেদী, অথবা গুরুদেবের ঘরে দ্বিপ্রহরের ধ্যানের জন্য বিরতি নিয়েছিলেন। ব্যাডমিন্টন, টেবিল টেনিস, ক্রিকেট এবং জপ পদচারণার মতো হালকা বিনোদনমূলক কার্যসূচি সন্ধ্যাকে প্রাণবন্ত করে তোলে যা শারীরিক, মানসিক এবং আধ্যাত্মিক সুস্থতার সামগ্রিক অভিজ্ঞতাকে নিশ্চিত করে।
স্মৃতি মন্দিরের ভেতরে এবং লিচু বেদীতে ধ্যানরত নিভৃতাবাসীগণ
এই বিক্ষিপ্ত পৃথিবীতে লক্ষ্য স্থির করা
মাতৃ মন্দিরে স্বামী নির্মলানন্দের পরিচালনায় “এই বিক্ষিপ্ত পৃথিবীতে লক্ষ্যে স্থির থাকা” শীর্ষক সৎসঙ্গ ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ আকর্ষণ। আত্মদর্শনমূলক অনুশীলনের মাধ্যমে, অংশগ্রহণকারীরা সাধারণ বিক্ষেপগুলি চিহ্নিত করেছিলেন — সামাজিক গণমাধ্যম, অতিরিক্ত স্ক্রিন দেখার সময় এবং অস্থির চিন্তাভাবনা। তাঁদের রিট্রিটের সময় সচেতনভাবে ফোন ব্যবহার সীমিত করতে উৎসাহিত করা হয়েছিল, যাতে তাঁরা ধ্যান এবং আত্ম-সচেতনতায় গভীরভাবে নিমজ্জিত হতে পারেন। বেশ কয়েকজন তরুণ সাধক, কীভাবে হং-স প্রক্রিয়া তাঁদের মনসংযোগ ও দৈনন্দিন জীবনে শৃঙ্খলা আনতে সাহায্য করেছে, সে বিষয়ে আলোচনা করেন।
গুরু-সেবা: ভালোবেসে কাজ করা
“শুধুমাত্র ভালোবাসাই আমার স্থান নিতে পারে” গুরুদেবের এই উক্তি থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে “ভালোবেসে কাজ করা — গুরু-সেবার আশীর্বাদ” শীর্ষক সম্যক জীবনযাপন কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়, যার মধ্যে নিঃস্বার্থ সেবা কীভাবে ঈশ্বর ও গুরুর সাথে মানুষের সংযোগকে শক্তিশালী করে সে সম্পর্কে একটি দলগত আলোচনা অন্তর্ভুক্ত ছিল। আলোচনার পরে শ্রবণালয় ভবন এবং আশ্রমের বাগানে সেবার মাধ্যমে ভালোবেসে কাজ করার একটি ব্যবহারিক অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়।
গুরুগণের সম্মান জ্ঞাপন: মহাসমাধি স্মারক অনুষ্ঠান
গুরুদেব এবং স্বামী শ্রীযুক্তেশ্বরজির মহাসমাধি দিবস (৭ই এবং ৯ই মার্চ) দীর্ঘ ধ্যান, ভক্তিমূলক বন্দনাগান, পুষ্পাঞ্জলি, গল্পের উল্লেখ এবং সন্ন্যাসীদের সাথে গভীর ধ্যান ও সেবা করার বিষয়ে প্রশ্নোত্তর পর্বের মাধ্যমে পালিত হয়েছিল। এই অধিবেশন তরুণ সাধকদের ধ্যান প্রক্রিয়া, ব্যক্তিগত প্রতিকূলতা এবং গুরু-শিষ্য সম্পর্কের নির্দেশনালাভের একটি সুযোগ করে দিয়েছিল। স্বামী শ্রেয়ানন্দের বার্তা, “গুরু-শিষ্য সম্পর্ক এই বিশ্বের অন্যান্য সম্পর্কের তুলনায় সর্বোচ্চ সম্পর্ক, কারণ এটি বিশুদ্ধ, নিঃশর্ত এবং নিঃস্বার্থ প্রেমের উপর প্রতিষ্ঠিত,” যা তরুণ সাধকদের মনে অনুরণিত হয়েছিল।
হুন্ড্রু জলপ্রপাত ভ্রমণ: প্রকৃতির মধ্যে এক আধ্যাত্মিক নিভৃতাবাস
গুরুদেব মাঝে মাঝে তাঁর শিষ্যদের বেড়াতে নিয়ে যেতেন। তাই, তরুণ সাধকদের জন্য হুন্ড্রু জলপ্রপাতে এক দিনের ভ্রমণের আয়োজন করা হয়েছিল। জলপ্রপাতটিতে পৌঁছনোর পর, অংশগ্রহণকারীরা শান্ত পরিবেশের মধ্যে দলগত ধ্যান, ক্রীড়া কর্মসূচি এবং আত্মসমীক্ষণের নীরবতায় রত হন। আশ্রমে ফিরে আসার পর, সাধকরা গুরুদেবের জীবনের ওপর একটি তথ্যচিত্রের বিশেষ প্রদর্শনের জন্য সমবেত হন।
একটি আনন্দময় সমাপ্তি
অন্তিম দিনে,“বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার চিন্তাভাবনা” শীর্ষক একটি অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়েছিল, যেখানে নিভৃতাবাসের শিক্ষাকে দৈনন্দিন জীবনে একীভূত করার জন্য ব্যবহারিক নির্দেশনা প্রদান করা হয়। অংশগ্রহণকারীরা স্বচ্ছতা, নিষ্ঠা এবং অভ্যন্তরীণ শক্তির নতুন অনুভূতি নিয়ে বিদায় জানান।
অনেকেই এই নিভৃতাবাসের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন এবং একজন অংশগ্রহণকারী সুন্দরভাবে নিজ অভিজ্ঞতার সারসংক্ষেপ তুলে ধরেছেন:
তারাভরা রাত এবং সূর্যোদয়ের ধ্যানের মধ্য দিয়ে, ভজন, প্রার্থনা এবং সংকল্পবাক্যের এক অবিরাম গুনগুন আমাদের হৃদয়কে পূর্ণ করেছিল। নীরবতার মধ্যেও, আমরা একে অপরের কাছ থেকে বিচ্ছুরিত প্রেমে আচ্ছন্ন ছিলাম। এই নিভৃতাবাস আমাকে মনোযোগ, নিষ্ঠা এবং আত্ম-শৃঙ্খলার সাথে জীবন পরিচালনা করার সরঞ্জাম দিয়েছে।
— কে. এ., চণ্ডীগড়
তরুণ সাধকদের এই নিভৃতাবাস ছিল একটি সত্যিকারের আনন্দের মুহূর্ত — এটি ছিল এক পবিত্র বিরতি, নিজের সাথে পুনরায় সংযোগ স্থাপনের সুযোগ এবং এটি স্মরণ করিয়ে দেয় যে শান্তির পথটি অন্তরেই নিহিত।
ওয়াইএসএস যুব পরিষেবা সম্পর্কে আরও জানতে অনুগ্রহ করে নিচের বোতামে ক্লিক করুন।



















