“আমার গুরুদেবের থেকে আধ্যাত্মিক সাফল্যের রহস্য” — শ্রী দয়ামাতা

১০ অক্টোবর, ২০২৪

নিম্নলিখিত অংশটি যোগদা সৎসঙ্গ সোসাইটি অফ ইন্ডিয়া/সেল্ফ-রিয়লাইজেশন ফেলোশিপ-এর সংঘমাতা এবং তৃতীয় অধ্যক্ষ শ্রী দয়ামাতার বার্তা থেকে গৃহীত যিনি ১৯৫৫ থেকে ২০১০-এ তাঁর দেহাবসানের আগে পর্যন্ত সেবাপ্রদান করেছেন। দয়ামাতাজি ১৯৩১-এ ১৭ বছর বয়সে পরমহংস যোগানন্দের আশ্রমে প্রবেশ করেন। এই বার্তাটি মূলত ১৯৮৪-তে যোগদা সৎসঙ্গ পত্রিকায় “শ্রী দয়ামাতার একটি পত্র” রূপে প্রকাশিত হয়। এরূপ বার্তা কয়েক দশক ব্যাপী পত্রিকার পাঠকদের কাছে অনুপ্রেরণা এবং জ্ঞানগর্ভ পরামর্শের জন্য খুব প্রিয়।  

বহুদিন পূর্বে গুরুদেব পরমহংস যোগানন্দের এই বিশেষ সাবধান বাণী আমার চেতনাকে প্রভাবিত করেছিল: “কখনও উৎসাহহীন হবে না।” বহু বৎসরব্যাপী যা মহৎ শক্তির এক উৎস হয়ে এসেছে। এটি আধ্যাত্মিক উন্নতির গুরুত্বপূর্ণ রহস্য। 

ভক্তের উন্নতিতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে উদ্যমহীনতা মায়ার একটি প্রিয় অস্ত্র। এটি আমাদের সাফল্যলাভের পূর্বেই উদ্যমী ইচ্ছাকে দুর্বল করে মহোত্তর প্রচেষ্টার উদ্দেশ্যে আমাদের আকাঙ্খাকে রুদ্ধ করে। কিন্তু আমাদের সর্বোচ্চ লক্ষ্য — ঈশ্বর সংযোগের উদ্দেশ্যে আমাদের সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রমের উপলব্ধি করতে হবে। এমনকি ত্রুটিগুলির বারংবার অবির্ভাবেও আমাদের উদ্যমে নিরুৎসাহ হওয়া উচিত নয়। 

নৈরাশ্যের অনুভূতি এবং দুর্বলতার ভাবনা হল আমাদের উন্নতি প্রতিহত করার জন্য মায়ার বিভ্রান্তিকর যুক্তি। আমরা আধ্যাত্মিকভাবে সফল হব যদি আমরা তাদের উপেক্ষা করে সাহস ও বিশ্বাসের সঙ্গে দৃঢ় পায়ে অগ্রসর হই। এটাই পরমহংসজির আদর্শ। তখন তিনি যেমন বলেছিলেন, “অন্ধকার এমনভাবে দূরীভূত হবে যেন তা কখনই ছিল না।” 

যখন গুরুদেব বাইরে ছিলেন, একজন অল্পবয়সী ভক্তরূপে একবার আমি অল্প সময়ের জন্য গভীর নিরুৎসাহতা অনুভব করেছিলাম। প্রত্যাবর্তনের পর ধ্যানরত অবস্থায় তাঁর এক দিব্যদর্শন হয়েছিল: তিনি আমার লড়াই-এর পশ্চাতে প্রথমে নেতিবাচক শক্তিসমূহ এবং তারপর আমার চতুর্দিকে জ্যোতির্বলয় দ্বারা পরিব্যাপ্ত স্বয়ং জগন্মাতাকে প্রত্যক্ষ করেছিলেন। 

প্রতিটি প্রতিবন্ধকতায় আমাদের প্রত্যেকের কাছেই বিকল্প আছে: হতাশ হয়ে মায়ার কাছে আত্মসমর্পণ করা বা আস্থাপূর্ণ উদ্যমের সঙ্গে জ্ঞাত হওয়া যে জগন্মাতা সর্বদাই কাছে আছেন এবং মায়াকে অতিক্রম করতে আমাদের সাহায্যার্থে তাঁর শক্তি ও কৃপা প্রদান করছেন। 

আধ্যাত্মিক পথে মনে হতে পারে যে আমরা প্রায়ই তিন ধাপ এগিয়ে যাচ্ছি এবং দুই ধাপ পিছিয়ে আসছি। কিন্তু বাস্তববাদী হলে আমরা এর দ্বারা হতাশ হব না বা অতীতের ভুলের জন্য গভীরভাবে চিন্তা করে সময় নষ্ট করব না। 

পরমহংসজি আমাদের ভুলত্রুটি থেকে শিক্ষা নিয়ে পরিবর্তনের জন্য সংকল্পবদ্ধ হতে এবং তারপর সেসব ভুলে যেতে শিখিয়েছেন। ঈশ্বর আমাদের পদস্খলনের জন্য কোনো শাস্তি প্রদান করেন না, সেজন্য আমাদের অযথা নিজেদের ভর্ৎসনা করা উচিত নয়। 

তার পরিবর্তে ঈশ্বরকে আরও ভালোবাসো। তাঁকে এত ভালোবাসো যে ত্রুটিগুলি তোমাকে আতঙ্কিত করতে পারবে না, তাঁর কাছে ছুটে যাওয়া থেকে তোমাকে প্রতিহত করতে পারবে না। 

তিনি সকল দয়ার ও সকল করুণার প্রতিমূর্তি; তাঁর প্রেমের অনন্ত পরিপূর্ণতায় তোমাকে উপনীত হতে তাঁর থেকে আর কেউ বেশি আগ্রহী নয়। আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে তাঁর দিকে অগ্রসর হও, ধ্যান করো ও অটল ভক্তির সঙ্গে তাঁকে অন্বেষণ করো এবং তখনই তুমি তাঁকে জানতে পারবে। 

এই শেয়ার করুন