স্বকীয় শান্তি এবং বিশ্বশান্তি স্থাপনে পরমহংস যোগানন্দ

১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

শান্তিস্থাপনের পথ কী? প্রতিবছর সেপ্টেম্বর মাসে সংযুক্ত রাষ্ট্রসংঘের আন্তর্জাতিক শান্তিদিবস উদযাপন উপলক্ষ্যে পারস্পরিক সৌহার্দ্যবোধ, সম্মান এবং বিভিন্ন জাতি ও দেশের মধ্যে মুক্তমনে আলোচনার মাধ্যমে শান্তি স্থাপনের আদর্শকে প্রাধান্য দেওয়া হয়।

পরমহংস যোগানন্দ এবং পৃথিবীর অন্যান্য সকল মহাপুরুষগণ এই শিক্ষাই দিয়ে গেছেন যে ওই লক্ষ্যে পৌঁছোতে হলে আমাদের তা শুরু করতে হবে নিজেকে দিয়েই — নিজের মধ্যে ঐশ্বরিক শান্তি ও সম্প্রীতির অনুভূতি বোধের মধ্য দিয়ে।

পরমহংসজি বলেছেন, “আমার বিশ্বাস, যদি বিশ্বের প্রত্যেক নাগরিককে ঈশ্বরের সাথে বার্তালাপ করার পদ্ধতি শেখানো হয় (তাঁকে শুধুমাত্র বুদ্ধিমত্তা দিয়ে জানা নয়), একমাত্র তাহলেই শান্তিস্থাপনা হতে পারে, তার আগে নয়।” “যখন অটল ধ্যানে ঈশ্বরের সাথে কথোপকথনের মাধ্যমে ঈশ্বরোপলব্ধি হবে, তখন তোমার হৃদয় সমগ্র মানবজাতিকে আপন করে নেবার জন্য প্রস্তুত।”

ওয়াইএসএস/এসআরএফ-এর অধ্যক্ষ ও আধ্যাত্মিক প্রধান স্বামী চিদানন্দ গিরি ২০২৪-এ আয়োজিত সমাবর্তনে তাঁর বক্তৃতায় আমাদের আশ্বস্ত করে বলেন: আমরা যখন সম্মিলিতভাবে প্রাত্যহিক ধ্যানের পবিত্র বিজ্ঞানকে প্রয়োগ করতে শিখি এবং বিশ্ব সভ্যতার ক্রমবিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় আবিষ্কার ও উন্নয়নগুলিকে গঠনমূলকভাবে কাজে লাগাতে পারি, তখন “পৃথিবীতে সমৃদ্ধি, সম্প্রীতি, আধ্যাত্মিক উপলব্ধি, এবং বিশ্বশান্তির এক নতুন যুগের আগমন ঘটবে।”

আমরা আশা করি যে এই সংবাদ সংকলনটি আপনার জন্য অপেক্ষমান আত্মিক শান্তির খোঁজে এবং সকল মানবজাতির সঙ্গে অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক গভীরভাবে অনুভবের জন্য আপনাকে ধ্যানাভ্যাসে অনুপ্রাণিত করে।

পরমহংস যোগানন্দের বক্তৃতা এবং রচনাবলি থেকে:

যখন অন্তর থেকে ধীর ও শান্ত অবস্থায় থাকো তখন তুমি সবাইকে ভালোবাসো এবং সবাইকে আপন মনে করো। ঈশ্বর তাঁর সৃষ্টির জন্য এইরূপ সম্প্রীতিই চেয়েছিলেন।

ধ্যানলব্ধ প্রশান্তিই হল ঈশ্বরের ভাষা এবং ঈশ্বর সুখাবেশের লক্ষণ। তোমার অন্তরের শান্তির সিংহাসনেই তিনি অবস্থান করেন। প্রথমে সেখানেই তাঁর অনুসন্ধান করো, তাহলে তুমি তাঁকে জীবনের সকল শুভ এবং অর্থবহ উপহারে খুঁজে পাবে: প্রকৃত বন্ধু, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, উত্তম পুস্তক, গভীর ভাবাবেশ এবং উন্নত আকাঙ্খায়।

প্রতিদিন রাত্রে নিদ্রাবস্থায় তুমি শান্তি ও আনন্দের স্বাদ গ্রহণ করো। তুমি যখন গভীর নিদ্রায় নিমগ্ন থাকো, তখন ঈশ্বর তোমাকে অতিচেতনার প্রশান্তিতে অধিষ্ঠিত রাখেন যা ইহজীবনের সমস্ত ভীতি এবং দুশ্চিন্তা রহিত। ধ্যানের মাধ্যমে তুমি জাগ্রত অবস্থাতে এই পবিত্র মানসিক অবস্থার অনুভূতিলাভ করতে পারো এবং শান্তিসুখে সর্বদা নিমগ্ন থাকতে পারো।

যোগী সর্বক্ষণ তার প্রত্যেক কাজে এবং অন্যান্যদের সাথে তার আচরণে ধ্যানলব্ধ মানসিক প্রশান্তিকে অটুট রাখতে চেষ্টা করে।

যারা নিষ্ঠাপূর্ণ প্রাত্যহিক ধ্যানাভ্যাসের মাধ্যমে শান্তি উৎপন্ন করে তারাই প্রকৃত শান্তির অগ্রদূত।…অন্তরতম শান্তির ঐশ্বরিক অনুভূতিলাভের পর ভক্ত কামনা করে যে তার ঘরে, তার প্রতিবেশীদের মধ্যে, স্বদেশে এবং অন্যান্য সকল দেশ ও জাতির মধ্যে শান্তিপ্রদানকারী ঈশ্বর যেন সর্বদা বিরাজ করেন।

যখন আমরা প্রত্যেকে নিজের জীবনকে জিশুখ্রিস্ট, কৃষ্ণ, বুদ্ধের আদর্শ অনুযায়ী গড়ে তুলব, তখনই আমরা এখানে শান্তি পাবো, তার আগে নয়। এই কাজ আমাদের এখনই নিজেদের দিয়েই শুরু করতে হবে। যে সকল দিব্যপুরুষ যুগে যুগে ধরায় অবতীর্ণ হয়ে আমাদের পথ দেখিয়ে গেছেন, তাঁদের অনুসরণ করার চেষ্টা করতে হবে। তাঁদের উপদেশ ও উদাহরণ মতো একে অপরের সঙ্গে প্রেমভাব বজায় রেখে এবং আমাদের উপলব্ধিকে নির্মল রেখে অগ্রসর হলে শান্তি আসবে।

এই প্রজ্ঞাকে অবিলম্বে কার্যকরী করার জন্য আমরা আপনাকে এসআরএফ সন্ন্যাসী স্বামী সেবানন্দ গিরি পরিচালিত “Guided Meditation on Inner Peace From Paramahansa Yogananda,” -এ অংশগ্রহণ করার আমন্ত্রণ জানাই। এই ভিডিওটিতে ধ্যানের ভঙ্গি এবং পরমহংসজির শিক্ষা অনুসারে ধ্যানের পূর্বে কিছু প্রাথমিক শ্বাস প্রশ্বাসের ব্যায়ামের ওপর উৎকৃষ্ট আলোচনা রয়েছে।

এই শেয়ার করুন