রাঁচিতে নতুন কিশোর কর্মসূচির উদ্বোধন

১লা নভেম্বর, ২০২৪
ওয়াইএসএস রাঁচি আশ্রমে নতুন কিশোর কর্মসূচির উদ্বোধনী দিনে ওয়াইএসএস ও এসআরএফ সন্ন্যাসী-সন্ন্যাসিনীদের সঙ্গে কিশোর কর্মসূচির কিশোর-কিশোরী ও শিশুরা

কিশোরদের আত্মিক ও ব্যক্তিগত বিকাশকে উৎসাহিত করতে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে, যোগদা সৎসঙ্গ সোসাইটি অফ ইন্ডিয়া (ওয়াইএসএস) ১৩ থেকে ১৯ বছর বয়সীদের জন্য একটি নতুন কিশোর কর্মসূচির উদ্বোধন করল। রাঁচির ওয়াইএসএস আশ্রমে শিব মন্দিরে অনুষ্ঠিত এই বিশেষ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন স্বামী শঙ্করানন্দ এবং আমেরিকার এসআরএফ আশ্রম থেকে আগত দুই বিশেষ অতিথি — স্বামী সরলানন্দ ও স্বামী পদ্মানন্দ।

অনুষ্ঠানের সূচনায়, স্বামী পদ্মানন্দ গুরুদেব শ্রীশ্রী পরমহংস যোগানন্দের ছবির সামনে একটি আনুষ্ঠানিক প্রদীপ প্রজ্বলন করেন এবং উপস্থিত কিশোর-কিশোরীরা আনন্দের সঙ্গে “জয় গুরু” উচ্চারণ করে। এরপর তিনি এক অনুপ্রেরণামূলক সূচনা বার্তা প্রদান করেন, যেখানে তিনি এসআরএফ-এর তরুণদের সঙ্গে তাঁর বহু বছরের কাজের অভিজ্ঞতা থেকে মনোমুগ্ধকর গল্প শোনান — যেমন সান ডিয়েগো মন্দিরে ইয়ং অ্যাডাল্ট সংঘের অধিবেশন পরিচালনা এবং এসআরএফ-এর গ্রীষ্মকালীন যুব শিবিরে ধ্যানের অধিবেশন নেওয়া। প্রায় ২৫ জন কিশোর-কিশোরীর সঙ্গে অত্যন্ত আন্তরিকভাবে সংযোগ স্থাপন করে তিনি বলেন: “মনে রেখো, তোমরা যেখানেই যাও না কেন, গুরুদেব সর্বদা তোমাদের সঙ্গে আছেন। জীবনের প্রতিটি পরিস্থিতিতে বিশ্বাস ও আশার সঙ্গে যদি তোমরা তাঁর সাহায্যের হাত খুঁজতে থাকো, তাহলে তিনি নানা ঘটনার মাধ্যমে তাঁর উপস্থিতি প্রকাশ করবেন।”

অনুষ্ঠানের শুরুতে একজন অংশগ্রহণকারী কিশোর প্রার্থনা ও কীর্তন পরিচালনা করে। এরপর অন্যান্য কিশোর-কিশোরীরা শিশু সৎসঙ্গ তাদের জীবনে কীভাবে প্রভাব ফেলেছে, তা নিয়ে হৃদয়স্পর্শী অনুভব ভাগ করে নেয়। ১৩ বছর বয়সী অনিমেষ বলে, কীভাবে শিশু সৎসঙ্গ তাকে অনুপ্রাণিত করেছে, এবং ১৬ বছর বয়সী আদ্যা জানায়, এই নতুন কিশোর কর্মসূচির মাধ্যমে সে কিছু শেখার ও তার মানসিক বিকাশের আশা রাখে। তাদের বক্তব্য ওয়াইএসএস-এর কিশোর-কিশোরীদের জন্য পরিচালিত কর্মসূচিগুলোর রূপান্তরকারী প্রভাবের প্রমাণ রাখে।

অনিমেষের বক্তব্যের একটি অংশ: “আমি পরম সুযোগ ও আশীর্বাদ লাভ করেছি যে প্রায় আট বছর ধরে রাঁচির ওয়াইএসএস শিশু সৎসঙ্গে অংশগ্রহণ করতে পেরেছি এবং গ্রীষ্মকালীন শিবির, বার্ষিক বনভোজন, তীর্থযাত্রা ইত্যাদিতেও অংশ নিতে পেরেছি। আমি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে জিনিসটি শিখেছি, তা হল আমাদের জীবনে ঈশ্বর ও গুরুদের গুরুত্ব, ধ্যানে গুরুদেবের সঙ্গে যোগাযোগ করার উপায় এবং গুরুদেব সবসময় আমার সঙ্গে আছেন, আমাকে পথ দেখাচ্ছেন ও রক্ষা করছেন এটা জেনে কীভাবে আনন্দময় ও সৎ জীবনযাপন করা যায়।”

নিজের বক্তব্যে আদ্যা জানায়, “আমি এই নতুন কিশোর কর্মসূচি থেকে আশা রাখি আমরা ধ্যান করা শিখব এবং আমাদের মনোযোগের ক্ষমতা বাড়াব। কারণ এই বয়সে অনেক বিভ্রান্তি থাকে এবং স্কুলে আমাদের শেখানো হয় না কীভাবে এগুলোর মোকাবিলা করতে হয়। বিভিন্ন সমস্যা থাকে, যার কয়েকটা হল—সহপাঠীদের চাপ, নিরাপত্তাহীনতা, আত্মসম্মানের অভাব, নেতিবাচক চিন্তা, ভয়, উদ্বেগ, একাকীত্ব ইত্যাদি।

“বর্তমান যুগের অনেক কিশোর বিশেষ করে যখন পরীক্ষায় খারাপ নম্বর পায়, তখন বিষণ্ণ হয়ে পড়ে। বারবার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হলে তারা এইভাবে ভাবে: ‘এটা আমার সঙ্গে কেন হচ্ছে? আমি কী করলাম যে এমন হল?’ কেউ কেউ আবার নিজের দুর্ভাগ্যের জন্যে ঈশ্বরকেও দোষারোপ করতে শুরু করে। তাই আমি খুব আশাবাদী যে এই কর্মসূচির মাধ্যমে আমরা বাস্তবসম্মত উপায়ে এইসব সমস্যার সমাধান শিখব, যেগুলো আজকাল কেউই ঠিকঠাকভাবে আলোচনা করে না, যদিও সেগুলি অত্যন্ত জরুরি। এই প্রজন্ম রূপকথা ও মিথ্যে গল্পে বিশ্বাস করে না। তারা বাস্তবসম্মত সমাধান ও প্রমাণ চায়, আর গুরুদেবের শিক্ষাই সঠিক দিশা দেখাবে। আমি বিশ্বাস করি গুরুদেবের ব্যবহারিক শিক্ষাগুলি আমাদের অভ্যন্তরীণ সংগ্রামে জয়ী হতে সাহায্য করবে।”

স্বামী শঙ্করানন্দ তাঁর ভাষণে বলেন, “গুরুদেবের সম্যক-জীবনযাপন শিক্ষাগুলি আমাদের শেখায় কীভাবে আমাদের অন্তর্নিহিত আত্মিক শক্তির ওপর নির্ভর করে জীবনের সমস্যাগুলির মোকাবিলা করতে হয়। এই শিক্ষাগুলি একটি সুখী জীবনের জন্য সমতাপূর্ণ ও সর্বাঙ্গীন বিকাশের গুরুত্ব তুলে ধরে যেমন—শারীরিক স্বাস্থ্য, মানসিক দক্ষতা বাড়ানো, ও ধ্যানের মাধ্যমে আত্মিক অন্তর্দৃষ্টি জাগানো। পাশাপাশি, কীভাবে আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে হয়, যেমন ব্যর্থতা, ভয় বা ক্ষতির সঙ্গে গঠনমূলকভাবে মোকাবিলা করা যায়—তাও শেখানো হয়। এটি আমাদের দৃঢ়তা এবং জীবনের ধাক্কা সামলে আবার উঠে দাঁড়ানোর ক্ষমতা গড়ে তোলে।” 

তিনি আরও বলেন, “এই নতুন কিশোর কর্মসূচিতে আমরা নানা রকম উপায়ে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করব — যেমন দলগত আলোচনা, নাটিকা, হস্তশিল্প, খেলা, কিছু হাতে কলমে করে দেখানো এবং সেবামূলক কাজের মাধ্যমে। পরীক্ষিত শিক্ষাদান পদ্ধতির সাহায্যে আমরা আগামী কয়েক সপ্তাহ ও মাসে আপনাদের যোগানন্দজির শিক্ষার গভীরতা ও পরিধির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেব।” 

তিনি কিশোরদের জীবনে পিতা-মাতা ও প্রাপ্তবয়স্ক অভিভাবকদের গুরুত্ব তুলে ধরার জন্য যোগী-কথামৃত গ্রন্থ থেকে গুরুদেবের পিতা, ভগবতী চরণ ঘোষ-এর একটি উদাহরণ দেন — যেখানে দেখা যায় কীভাবে মুকুন্দর (পরমহংস যোগানন্দের বাল্যকালের নাম) পিতা বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে নিজ সন্তানদের অনুরোধ বিবেচনা করছেন এবং ভারসাম্যপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে পিতা ও মাতার স্বাভাবিক দায়িত্ব কর্তব্যের উদাহরণস্বরূপ হয়ে উঠছেন।

এক কিশোর অংশগ্রহণকারীর পরিচালিত অপরের জন্য প্রার্থনা, আরোগ্যকারী পদ্ধতির অভ্যাসের মধ্যে দিয়ে এবং সমাপ্তি প্রার্থনার মাধ্যমে অনুষ্ঠানটি শেষ হয়। শেষে স্বামী সরলানন্দ ও স্বামী পদ্মানন্দ প্রসাদ বিতরণ করেন এবং উপস্থিত সকলকে আশীর্বাদ প্রদান করেন। (নীচে দেখুন)। 

এই শেয়ার করুন