পরমহংস যোগানন্দ আমাদের এই শিক্ষা দিয়েছেন যে আমরা প্রত্যেকেই ঈশ্বরের প্রিয় সন্তান, প্রকৃতই আমরা সর্বশক্তিমান ও সদানন্দময় আত্মা।
তা সত্ত্বেও জীবনে চলার পথে, যেসব ভুলভ্রান্তি এবং সাময়িক বদভ্যাস আছে বলে আমাদের মনে হয়, সেগুলির প্রতি অতি মাত্রায় সচেতন থাকার ফলে অতি সহজেই আমরা নিজেদের ওপর বিশ্বাস হারাই — মনে প্রশ্ন জাগে, আমরা কি সত্যিই আমাদের মহৎ স্বপ্ন পূরণ করতে এবং মহান সাধু-সন্ন্যাসীরা যে উচ্চতর চেতনার অবস্থাসমূহের কথা বলেন, আদৌ তার যোগ্য কি না।
কিন্তু পরমহংসজি, তাঁর শিক্ষাবলির মাধ্যমে, নিরন্তর আমাদের স্মরণ করিয়ে দেন যে আমরা তো অনাদি অনন্তকাল ধরে ঈশ্বরেরই অংশ এবং ধ্যান সাধনার মাধ্যমে এই জীবনেই ঈশ্বর-চেতনায় অধিষ্ঠিত থাকার সম্ভাবনা আমাদের প্রত্যেকেরই আছে।
ঈশ্বর-প্রেম ও পরমানন্দ আরও গভীরভাবে উপলব্ধি করার যে জন্মসিদ্ধ দিব্যঅধিকার আপনার আছে, দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে তা দাবি করার জন্য আরও বেশি প্রত্যয়ের এবং অধ্যাত্মমণ্ডিত দৃষ্টিভঙ্গির অনুশীলন কী ভাবে করা যায়, সে সম্বন্ধে পরমহংসজির দেওয়া অত্যন্ত কার্যকরী নির্দেশ নীচেই আপনারা পাবেন।
পরমহংস যোগানন্দজির ভাষণ ও রচনা সংকলন থেকে:
আপনি যে পরমাত্মারই এক অংশ সেটা উপলব্ধি করুন; অনুভব করুন যে আপনার জীবন যেন এক ক্ষুদ্র অগ্নিকণিকা আর তার ঠিক পিছনেই রয়েছে অনন্তের লেলিহান অগ্নিশিখা; আপনার বিচারবুদ্ধির যে ক্ষীণ আলোক, ঠিক তার পিছনেই আছে বিশাল দিব্য জ্যোতি।
আপনি যা কিছু পেতে চেয়েছেন বা অন্য যে কোনো মানুষের মত হতে চেয়েছেন, সে সবের চেয়ে আপনি নিজে অনেক বিশাল, অনেক মহৎ। ঈশ্বর ঠিক যেভাবে আপনার মধ্যে প্রকটিত হয়েছেন সেভাবে তিনি আর কোনো মানুষের মধ্যে প্রকটিত হননি। আপনার মুখ অন্য কারো মত নয়, আপনার আত্মা অন্য সকলের থেকে ভিন্ন,আপনি স্বয়ংসম্পূর্ণ; কারণ আপনার অন্তরাত্মার মধ্যে স্থিত সর্বাধিক মূল্যবান সম্পদ — ঈশ্বর।
বিশ্বাস করবেন না আপনি কোনো কিছু করতে অপারগ। যখন অকৃতকার্য হন, তার কারণ এই যে মনে মনে আপনি স্থির করে রেখেছেন সে কাজ আপনি পারেন না। কিন্তু যখন আপনি আপনার মনকে তার কর্মসিদ্ধির শক্তি সম্পর্কে দৃঢ়ভাবে প্রত্যয়ী করেন, তখন আপনি যে-কোনো কিছুই করতে পারেন!
ঈশ্বর সংযোগ হলে আপনি নশ্বর সত্তা থেকে অমর সত্তায় রূপান্তরিত হন। যখন আপনি তা করেন, তখন আপনাকে নিয়ন্ত্রণ করে এমন সকল বন্ধন ভেঙে যায়। এ এক অলৌকিক বিধান, যা মনে রাখা উচিৎ।
অনেক কাল আগে ধ্যান করার সময় আমি মনে মনে ভাবতাম, “কখনো কি আমার সমাধিলাভ হবে?” আমার আশঙ্কা ছিল যে সমাধিলাভ আমার কখনোই হবে না। কিন্তু যে মুহূর্তে আমি ভয়ভীতি ত্যাগ করলাম, আমার অভীষ্ট সিদ্ধ হল। নিজের মনে ভাবলাম: “কী আশ্চর্য! আমার ভয় ছিল যে আমার যা চঞ্চল মন, ঈশ্বরপ্রাপ্তি আমার কখনোই হবে না।” ঈশ্বরের দেখা কোনোদিনই না পাবার সেই যে ভয়, তা আমি যখন ত্যাগ করলাম, আমি তাঁর দর্শন পেলাম।
আপনার মনে ঈশ্বর-দত্ত সহজাত দক্ষতার যে বীজ নিহিত আছে, কীভাবে তাদের বিকশিত করা যায় তা শিখে নিন…। এগুলির ওপরে সীমাবদ্ধতার যে বেড়ি আপনি পরিয়ে রেখেছেন, তা যদি আপনি পরিত্যাগ করেন, তাহলে আশ্চর্য হয়ে দেখবেন এগুলি দিয়ে কত কিছু করা যায়।
২০২৫-এ এসআরএফ-এর বিশ্ব সমাবর্তনে, ওয়াইএসএস/এসআরএফ-এর অধ্যক্ষ স্বামী চিদানন্দজির যে সৎসঙ্গ, তার একটি উদ্ধৃতাংশ, যার শিরোনাম, “আমরা অধ্যাত্ম চৈতন্যের আশীর্বাদের যোগ্য” অবশ্যই পড়বেন। এতে তিনি পরমহংস যোগানন্দজির বলা একটি প্রেরণাদায়ক কাহিনী আমাদের শুনিয়েছেন; তা ছাড়াও তিনি ব্যাখ্যা করে বুঝিয়েছেন যে কীভাবে পরমহংসজির “কসমিক চ্যান্টস্” বইটি থেকে একটি কীর্তনের অনুশীলন করে আমরা তার ভাবের গভীরে প্রবেশ করতে পারি — তা থেকে আমরা বুঝতে পারি যে করুণাময় ঈশ্বর কত গভীর ভাবে আমাদের স্নেহ করেন।