ভূমিকা:
সংকল্প কী? নিজের সদর্থক মানসিকতার এবং সুস্থতা সমন্বিত বোধ গড়ে তুলতে সংকল্প এত বহুল ব্যবহৃত ও প্রশংসিত পদ্ধতি হয়ে উঠেছে বলে এটা একটা অবান্তর প্রশ্ন মনে হতে পারে।
তবে যখন থেকে পরমহংস যোগানন্দ — ১৯২৪-এ যিনি প্রথম তাঁর বক্তৃতা ও পাঠশ্রেণীতে সংকল্পের প্রবর্তন করে সংকল্প বিষয়ে গভীর আত্মজ্ঞান প্রদান করেন, সময়ে সময়ে এমন প্রশ্ন আসা শিক্ষাপ্রদ হতে পারে: “সংকল্প আসলে কী? কী তাদের এই শক্তি যোগায়? আমার উন্নত সত্ত্বা আর শরীর, মন ও আত্মার সামগ্রিকতাকে উপলব্ধি করার জন্য সহযোগিতা করতে এটা কতটা সক্ষম?” তবে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ হল: “আমি কীভাবে আমার আধ্যাত্মিক অভ্যাসে এগুলো মূর্ত করে তুলতে পারি?”
পরমহংসজি বলেছেন: গতানুগতিক ধরণের প্রার্থনার থেকে সংকল্প শ্রেয়। নিজের কি আছে, আর বিস্মৃতির কারণে সাময়িকভাবে কি হারিয়ে গেছে তাও এগুলো মনে করিয়ে দেয়। সংকল্প হল সর্বশক্তিমান সত্যের বয়ান, তা ভিক্ষার প্রার্থনা থেকে অনেক আলাদা। ভিক্ষুকেরা পরমপিতার কাছে যা চায়, তা সবসময় পায় না। পরন্তু, যে ঈশ্বর-সংযোগের মাধ্যমে ‘ঈশ্বরের পুত্র’ রূপে এক নতুন সচেতনতায় নিজের সংস্কার করতে পেরেছে; সে যা চায় তাই পেতে সংকল্পের মাধ্যমে সৃজনশীল তরঙ্গের সার্বজনীন নিয়মের প্রয়োগ করতে পারে।”
পরমহংসজি বলেছেন — আমরা যতই ভিন্নতা অনুভব করি বা নিজেদের বিচ্ছিন্ন ভাবি না কেন, বাস্তবে আমাদের প্রত্যেকেই “পরমপিতার সাথে এক অবিচ্ছেদ্য একতা” ধারণ করি — এই সত্য থেকেই সংকল্পের সমর্থনে শক্তি আসে।
সংকল্পের মাধ্যমে ক্রমাগত অতিচেতনার সংস্পর্শে এসে — আত্মার স্বজ্ঞাত, সদা-আনন্দময় চেতনা — আর ধীরে ধীরে আমাদের জীবনে দিব্য সচেতনতা ও প্রত্যয়ের প্রকাশে আমরা আরও বেশি করে একত্ব উপলব্ধি করতে পারি। আমরা আশা করি এই মাসের সংবাদ সংকলনের মাধ্যমে আপনি পরমহংসজির প্রজ্ঞার অনুশীলনে ঠিক এমনটা উপলব্ধি করতে পারবেন।
আমরা আশা করি নিচে উল্লিখিত এবং আমাদের “সংকল্প” পৃষ্ঠায় দেওয়া পরমহংসজির প্রজ্ঞার অনুশীলনে ঠিক এমনটা উপলব্ধি করতে পারবেন।
পরমহংস যোগানন্দের বক্তৃতা ও রচনা থেকে:
পরমপিতার যথার্থ মনন যেমন মহাবিশ্ব সৃষ্টি করেছে আর সুষমভাবে ও ছন্দে রেখেছে, সেইভাবে তাঁর সন্তানদের সঠিক চিন্তা যথাযথ শব্দে উচ্চারিত হলে অথবা সংকল্প প্রকাশিত হলে, মহাবিশ্ব ও উচ্চারণকারীর মধ্যে অনুরূপ ছন্দ, অপার্থিব অনুরণন উৎপন্ন হয়। এই সৃষ্টিশীল অনুরণন প্রকারান্তরে সকল পরিস্থিতিকে ঐক্যতানে নিয়ে আসে আর কাঙ্খিত ফলের বিকাশে প্রয়োজনীয় শক্তিকে সক্রিয় করে তোলে।
আন্তরিকতা, দৃঢ় বিশ্বাস, আস্থা ও অনুভূতি সম্পৃক্ত শব্দগুলি প্রচন্ড বিস্ফোরণশীল বোমার মতো, যখন সেগুলি ফাটে, প্রতিবন্ধকতার পাহাড় চূর্ণবিচূর্ণ করে দেয় আর আকাঙ্খিত পরিবর্তন নিয়ে আসে।
সচেতন মনের সকল সংকল্পই অবচেতনতাকে অভিভূত করে রাখার জন্য যথেষ্ট হৃদয়গ্রাহী হতে হবে, যা প্রকারান্তরে স্বতঃস্ফূর্তভাবে সচেতন মনকে প্রভাবিত করে। এভাবে দৃঢ় সচেতন সংকল্প অবচেতনতার মাধ্যমে মন ও শরীরের ওপর সক্রিয় হয়। আরও দৃঢ়তর সংকল্প শুধুমাত্র অবচেতন নয়, এমনকি অলৌকিক শক্তির মোহিনী ভান্ডার — অতিচেতন মনেও পৌঁছোয়।
সুস্পষ্ট উপলব্ধি ও গভীর মনঃসংযোগের সাথে উচ্চারিত যে কোনো শব্দের মূর্ত হওয়ার যোগ্যতা আছে….সমস্ত আণবিক শক্তির পিছনে যে মহাজাগতিক অনুরণন শক্তি, সৃষ্টিশীল শব্দ ওউম হতে উদ্ভূত শব্দের অসীম কার্যকারিতা। ধ্যান ও অতিচেতন অনুভূতিতে অতিসূক্ষ ওম অনুরণনের সাথে মন যখন সম্পৃক্ত হয়ে থাকে তখনই এই তত্ত্বের পূর্ণ শক্তির সদ্ব্যবহার সম্ভব।
উপলব্ধি, অনুভূতি ও স্ব-ইচ্ছায় পুনরাবৃত্তি করা আন্তরিকতাপূর্ণ শব্দ বা সংকল্প অবশ্যই চরাচরব্যাপী মহাজাগতিক অনুরণনশীল শক্তিকে আপনার বিপত্তির সমাধান প্রদানে আলোড়িত করে। সমস্ত দ্বন্দ্ব সরিয়ে চূড়ান্ত আত্মবিশ্বাসের সাথে এই শক্তির কাছে প্রার্থনা করুন; অন্যথায় আপনার মনোযোগের লক্ষ্য নিশানাচ্যুত হবে।
ধারণাগুলি কার্যকর করার আগে সেগুলি বুঝতে হবে এবং সঠিকভাবে প্রয়োগ করতে হবে। মানুষের মনে প্রথমে ধারণাসকল স্থূল বা অসংহত অবস্থায় আসে; গভীর অনুধ্যানের মাধ্যমে সেগুলি অঙ্গীভূত করে নিতে হবে। আত্মিক প্রত্যয় ভিন্ন যে কোনো ভাবনাই মূল্যহীন। ঠিক এইজন্যই — ঈশ্বর ও মানুষের অবিচ্ছেদ্য একত্ব — যারা এই সত্য হৃদয়ঙ্গম না করে সংকল্পের ব্যবহার করে তারা সামান্যই ফল পেতে পারে আর ধারণার কোনো নিরাময় শক্তি নেই বলে অভিযোগ করে।
প্রথমে উচ্চস্বরে, তারপরে ফিসফিস করে আর অবশেষে শুধুমাত্র মনে মনে সংকল্প করো: “পিতা, তুমি আর আমি এক।” শুধুমাত্র সচেতন মনের বুদ্ধিদীপ্ত ধারণা ও অবচেতন কল্পনা থেকে নয় বরং অতিচেতন প্রত্যয় হিসাবে এই সংকল্প বারবার করতে থাকো যতক্ষণ না তাঁর সাথে একত্ব অনুভব করছ। সংকল্পের শব্দগুলিকে সজ্ঞাত ধারণার বুদ্ধিদীপ্ত শিখায় মিলিয়ে নাও। তারপর সেই উজ্জ্বল গভীর ভাবপূর্ণ সংকল্প তোমার অবিচলিত, প্রশান্ত, সুদৃঢ় প্রত্যয়ে ভরিয়ে নাও। সেখানে তোমার অপরিণত শব্দগুলি ঝলমলে সোনালী মালা হয়ে পরমপিতার চরণে উৎসর্গিত হয়ে যাবে।
এছাড়াও ১৯৪০-এ পরমহংস যোগানন্দের ক্যালিফোর্নিয়ার এনসিনিটাসে প্রদত্ত ভাষণের নির্বাচিত অংশ “এস্টাবলিশিং পজিটিভ থটস ইন ইওর সাবকনসিয়াস মাইন্ড উইথ অ্যাফার্মেশনস” ওয়াইএসএস ব্লগে আপনি পড়তে পারেন। সন্দেহ ও প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করতে সংকল্প কিভাবে আপনাকে সাহায্য করার শক্তিশালী যন্ত্র হয়ে উঠতে পারে সে ব্যাপারে আরও জ্ঞান আহরণ করুন — আর অবশেষে পরমানন্দ উপলব্ধি করুন।